আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৪৬২: ইসলামে নখ - চুল কাটা সম্পর্কে বিধান?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৪৬২:  মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। নখ কাটা, চুল কাটা সম্পর্কে রেফারেন্স সহ কিছু হাদীস প্রয়োজন। জাঝাকাল্লাহ


 তারিখ: ০৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম রাজশাহী থেকে



  জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোধগম্যের জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।

ক। চুলের বিধান:

চুল বলতে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন, মাথার চুল, গোঁফ, দাড়ি, বগলের চুল নাভির নিচে চুল ইত্যাদি।


প্রশ্ন: ক। মাথার চুলের বিধান?

উত্তর: ক।  চুল রাখার পদ্ধতি হলো তিনটি বাবরী রাখা, ছোট করে রাখা এবং হলক বা ন্যাড়া করা।

০১. বাবরী রাখা: পুরুষের জন্য এভাবে রাখা সুন্নত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই বাবরী রেখেছেন। 

বাবরী তিনি কিভাবে রাখতেন?

এ বিষয়ে তিন ধরণের বর্ণনা এসেছে। যথা-

১. ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল। দলিল:

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4185)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল তাঁর দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল।  {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫}


২. লিম্মা তথা গর্দান ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা। দলিল:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَالْجُمَّةِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث–4187

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল ঘাড়ের উপর এবং কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৭}


৩.জুম্মা তথা ঘাড় পর্যন্ত আলম্বিত চুল। দলিল:


عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ: «لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4183)

হযরত বারা বিন আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী, লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহঃ অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৩}

০২. চুল ছোট  চারদিকে সমান করে রাখা: সাহাবায়ে কেরাম চুল ছোট করে রেখেছেন। দলিল:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ، وَسُفْيَانُ بْنُ عُقْبَةَ السُّوَائِيُّ، - هُوَ أَخُو قَبِيصَةَ - وَحُمَيْدُ بْنُ خُوَارٍ عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَلِي شَعْرٌ طَوِيلٌ فَلَمَّا رَآنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " ذُبَابٌ ذُبَابٌ " . قَالَ فَرَجَعْتُ فَجَزَزْتُهُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ مِنَ الْغَدِ فَقَالَ " إِنِّي لَمْ أَعْنِكَ وَهَذَا أَحْسَنُ " .

ওয়ায়েল ইবনে হুজ্‌র (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নবী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হই, আর এ সময় আমার মাথার চুল খুবই লম্বা ছিল। তিনি আমাকে দেখে বলেনঃ অশুভ! অমঙ্গলজনক! তিনি বলেনঃ তখন আমি ফিরে আসি এবং চুল কেটে ফেলি (ছোট করি)। পরদিন আমি যখন তাঁর কাছে আসি, তখন তিনি বলেনঃ আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি, ইহাই উত্তম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৪২ (আন্তর্জাতিক নং ৪১৯০)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)


০৩. হলক বা ন্যাড়া করা: রাসূলুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডাতেন। এছাড়া তিনি কখনো মাথা মুণ্ডাননি। এ সময় তিনি মাথা মুণ্ডানোকে চুল ছোট করে রাখার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এজন্য ইমাম তাহতাবী রহ. বলেন, মাথা ন্যাড়া করাও সুন্নাত । আর কিছু অংশ মুণ্ডানো ও কিছু রেখে দেয়া নিষেধ।

কতিপয় ফকিহদের দৃষ্টিতে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলাও সুন্নত। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৫/১৪৯, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/৪৩


০২. দাড়ি রাখার বিধান: এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -১৩১ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। লিংকটি পুনরায় শেয়ার করা হবে।

০৩. গোঁফ, বগলের নিচে চুল  ও নাভির নিচের চুল এর বিধান:

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ‏"‏ ‏.‏ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ ‏.‏ قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ ‏.‏
 ‏

 আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …… 'আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ দশটি জিনিস ফিতরাত বা মানবীয় স্বভাবজাত। তা হলোঃ গোঁফ ছোট করে কাটা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকের ছিদ্রপথ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলের ময়লা ধৌত করা বগলের পশম উপড়ে ফেলা নাভির নিচের পশম পারিষ্কার করা ও শৌচ করা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা।
যাকারিয়া (র) বলেন, মুসআব (রা) বলেছেনঃ আমি দশম জিনিসটির কথা ভুলে গেছি, তবে
সম্ভবত তা হলো কুলি করা।

—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯৩ (আন্তর্জাতিক নং ২৯৩)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)

নোট: কেননা হাদীছে যে সকল শব্দ (أَحْفُوْا، أَنْهِكُوْا، جُزُّوْا) ব্যবহৃত হয়েছে তা গোঁফ মুন্ডানো নয়, বরং ছাঁটার অর্থ বহন করে (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/২৮৭; আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২০৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮৪, ১২৮)। এমনকি গোঁফ চেঁছে ফেলাকে ইমাম মালেক বিদ‘আত বলেছেন, যেটি লোকদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আছে। এরূপ আমলকারী ব্যক্তিকে প্রহার করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন (বায়হাক্বী ১/১৫১ পৃ., হা/৬৮২

প্রশ্ন: ক।  অবাঞ্ছিত লোম  এবং নখ কাটার বা পরিষ্কার করার কোন সময়সীমা আছে কি? না করলে কোন গুনাহ হবে কি?

উত্তর: ক। হ্যা, চল্লিশ দিন।  ৪০ দিন অতিক্রান্ত  হলে গুনাহ হবে। দলিল:

 حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، كِلاَهُمَا عَنْ جَعْفَرٍ، - قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، - عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الْجَوْنِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً .

অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাড়ির নীচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, চল্লিশ দিনের অধিক যেন না রাখি। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯২ (আন্তর্জাতিক নং ২৫৮)


খ। নখ কাটার বিধান:


يُسَنُّ تقليمُ الأظفارِ، وهذا باتِّفاقِ المَذاهِبِ الفِقهيَّةِ الأربَعةِ: الحنفيَّة، والمالكيَّة، والشَّافعيَّة، والحنابلةِ، وحُكِيَ الإجماعُ على ذلك
الأدلَّة مِن السُّنَّةِ:

অর্থাৎ নখ কাটা সুন্নত এ বিষয়ে ফিকহি চার ইমাম (ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.) ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সূত্র: আলইনাইয়াতু শরহুল হিদায়া -১/৫৬

সুন্নাতের দলিল:

হাদিস নং -০১

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ الْفِطْرَةُ خَمْسٌ - أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ - الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ ‏"‏ ‏.

অর্থ: আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ফিতরাত পাঁচটি, অথবা পাঁচটি জিনিস মানবীয় স্বভাবজাত। খতনা করা, নাভীর নিচের লোম সাফ করা, নখসমূহ কাটা, বগলের পশম তুলে ফেলা এবং গোঁফ ছোট করে কাটা।

—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯২ (আন্তর্জাতিক নং ২৯২)

হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ‏"‏ ‏.‏ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ ‏.‏ قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ ‏.‏
 ‏

 আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …… 'আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ দশটি জিনিস ফিতরাত বা মানবীয় স্বভাবজাত। তা হলোঃ গোঁফ ছোট করে কাটা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকের ছিদ্রপথ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলের ময়লা ধৌত করা বগলের পশম উপড়ে ফেলা নাভির নিচের পশম পারিষ্কার করা ও শৌচ করা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা।
যাকারিয়া (র) বলেন, মুসআব (রা) বলেছেনঃ আমি দশম জিনিসটির কথা ভুলে গেছি, তবে
সম্ভবত তা হলো কুলি করা। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯৩ (আন্তর্জাতিক নং ২৯৩)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)


প্রশ্ন: ক। শুক্রবারে নখ -গোফ কাটা কি সুন্নাত বা কোন হাদিস আছে?

উত্তর: ক।  শুক্রবারের নখ ও গোঁফ কাটার বিষয়ে কোনো হাদিস নেই। তবে সাহাবায়ে কেরাম শুক্রবার নখ-চুল কেটেছেন  বলে প্রমাণিত আছে। দলিল:

وقد ورد أن ابن عمر أنه كان يفعله، فقد روى البيهقي في السنن الكبرى: عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ، كَانَ يُقَلِّمُ أَظْفَارَهُ، وَيَقُصُّ شَارِبَهُ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ. وهو أثر صحيح ذكره الإمام النووي في خلاصة الأحكام، ثم قال بعده: رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَاد صَحِيح، وَصَححهُ. انتهى.

لهذا يذكره الفقهاء في كتبهم مما يستحب فعله يوم الجمعة، قال الإمام النووي في المجموع: وَقَدْ نَصَّ الشَّافِعِيُّ وَالْأَصْحَابُ -رَحِمَهُمْ اللَّهُ- عَلَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ تَقْلِيمُالْأَظْفَارِ، وَالْأَخْذُ مِنْ هَذِهِ الشُّعُورِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ. انتهى.

আজাদ নাফে রহমাতুল্লাহ আলাই বর্ণনা করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. প্রত্যেক শুক্রবারে নখ-গোফ কাটতেন। সুনানে বাইয়াকি

নোট: সনদ সহিহ।

 আর এ কারণেই ফোকাহায়ে কেরাম শুক্রবারে নখ-গোফ কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। সূত্র: তাকলিমুল আযফার সুন্নাতুন, ফতোয়া নং -২০৪৭

প্রশ্ন: খ।  কর্তনকৃত নখ কি মাটিতে দাফন করা জরুরি?

উত্তর: খ। يجوز رَمْيُ الظُّفر في أيِّ مكانٍ، ولا يجِبُ دَفنُه. سُئل ابن باز: هل يجب دَفنُ الشَّعرِ المتساقِطِ والأظافر المقصوصة في التُّراب؟ فقال: (ليس بلازمٍ؛ يُلقيها في القمامة، والحمدُ لله، ما فيه دليلٌ على دفنها، إذا ألقاها في القمامةِ كفَى، والحمد لله). ((فتاوى نور على الدرب لابن باز بعناية الشويعر)) (5/62

অর্থাৎ যেকোনো জায়গায় নখ ফেলা জায়েজ আছে এবং দাফন করা ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে শায়েখ ইবনে বাজ রহ কে জিজ্ঞেস করা হলো, নখ এবং চুল মাটিতে দাফন করা কি ওয়াজিব? তিনি জবাবে বললেন আবশ্যক নয়। সূত্র: ফাতাওয়া নুরি আলাল দারব লিইবনে বাজ-৫/৬২

তবে অবশ্য না হলেও ওলামায়ে কেরাম পছন্দ করেছে। যেমন, 

فقد استحب العلماء دفن ما انفصل من الأظافر والشعر، وسئل الإمام أحمد عن ذلك فأمر فيه بالدفن، وراجع فيه الفتوى رقم:  38921.

অর্থাৎ আলেমগণ নখ ও চুল থেকে যা আলাদা করা হয়েছে তা দাফন করার সুপারিশ করেছেন এবং ইমাম  আহমাদকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তাতে দাফনের নির্দেশ দেন ।
 ফাতওয়া নং-৩৮৯২১


প্রশ্ন: গ। নখ কাটার তারতীব বা ধারাবাহিকতা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি?


উত্তর: গ।  এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন,

وقال ابن حجر أيضًا: (لم يثبُت في ترتيبِ الأصابِعِ عند القصِّ شيءٌ مِن الأحاديث) ((فتح الباري)) (10/345). وقال السَّخاويُّ: 
কাটার সময় আঙ্গুলের বিন্যাস সম্পর্কে কোন হাদীসে প্রমাণিত নয়। সূত্র: ফাতহুল বারী -১০ খণ্ড,৩৪৫ পৃষ্ঠা।

তবে  ভিন্ন কিতাবে যে তারতীবগুলো বর্ণিত হয়েছে তা সুন্নত মনে না করে কাটলে সমস্যা নেই। যেমন,

উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামি, ৬/৪০৬; ফাতওয়ায়ে আলমগিরি, ৫/৩৫৮


প্রশ্ন: ঘ। নখ বড় রাখলে নামাজ হবে কি?

উত্তর: ঘ। নামাজ হবে। কিন্তু

والحد المطلوب في قص الظفر إزالة ما يزيد على ما يلامس رأس الإصبع، وذلك حتى لا يمنع الوسخ وصول الماء إلى البشرة في الطهارة ولو لم يُصَلِّ بَطَل الوضوء .

নখ কাটার ক্ষেত্রে যে সীমা প্রয়োজন তা হল আঙ্গুলের অগ্রভাগে যা স্পর্শ করে তার চেয়ে বেশি সরিয়ে ফেলা, যাতে ময়লা পরিষ্কার করার সময় ত্বকে পানি পৌঁছাতে বাধা না দেয়, এমনকি যদি না পৌঁছায় তবে অযু নষ্ট হয়ে যায়।

মূল কথা হলো,নখ বড় হওয়ার দরুন কোনো কারণে যদি নখের গোড়ায় পানি না পৌঁছে, তাহলে অজু শুদ্ধ হয় না। সূত্র: খুলাসাতুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ২২


নিচের হাদিস শরিফ সেদিকে ইঙ্গিত করে।

وطولها يخدِش ويضرُّ، يقول أبو أيوب الأنصاري: جاء رجل إلى النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فسأله عن خبر السماء، فنظر إليه النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فرأى أظفاره طِوالاً فقال ” يسأل أحدكم عن خبر السماء وأظفاره كأظفار الطير يجمع فيها الجَنابة والتَّفَث ” وهو الخبث. ” تفسير القرطبي ج2 ص 102 ” .

অর্থ: আবু ওয়াসিল বলেন, আমি আবু আইয়ুব (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। মুসাফাহার সময় তিনি আমার নখ বড় দেখে বললেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ কেউ আসমানের খবর জিজ্ঞাসা করো, অথচ তার হাতের নখগুলো পাখির নখের মতো, যাতে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে! তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩০১১; তাফসিরে কুরতুবি-২য় খণ্ড,১০২ পৃষ্ঠা


 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক