আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৮২: ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীকে রেখে কতদিন দূরে থাকা বৈধ?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-২৮২:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার জিজ্ঞাসা শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী কতদিন একে অন্যকে ছাড়া (Intercourse)দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করতে পারবে।এর কি কোনো শরঈ সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং বিবাহ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাচ্ছি। প্লিজ জানাবেন। মাআসসালাম।

তারিখ:  ২২/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  মোঃ রমজান সৈয়দপুর নীলফামারি থেকে-----




 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  কথা হলো, আপনার প্রশ্ন আলোকে আলোচনাটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করছি।


প্রশ্ন:  ক।   শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী কতদিন একে অন্যকে ছাড়া (Intercourse) দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করতে পারবে।এর কি কোনো শরঈ সিদ্ধান্ত রয়েছে?


উত্তর:  ক।  প্রথম কথা হলো,  স্ত্রীর মৌলিক চাহিদার  মধ্যে একটি হলো জৈবিক চাহিদা পূরণ করা।  যেমন, পবিত্র হাদিসে এসেছে-


إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا، ولِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، ولِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فأعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ. فأتَى النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، فَذَكَرَ ذلكَ له، فَقَالَ النَّبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: صَدَقَ سَلْمَانُ.


الراوي : وهب بن عبدالله السوائي أبو جحيفة | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري


الصفحة أو الرقم: 1968 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]

 অর্থাৎ  নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার রবের, তোমার দেহের এবং তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও। বুখারি-১৯৬৮


من حقّ الزّوجة على زوجها أن يقوم بإعفافها ، وذلك بأن يطأها ، وقد ذهب جمهور الفقهاء – الحنفيّة والمالكيّة والحنابلة – إلى أنّه يجب على الزّوج أن يطأ زوج

‘স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের মাধ্যমে তার পবিত্র জীবন যাপনের প্রতি যত্নশীল হবে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহর মতে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।’ সূত্র: আল মাউসুয়া’তুল ফিকহিয়্যা-৩০/১২৭


দ্বিতীয় কথা হলো, স্বামী স্ত্রী কতদিন একে অন্যকে ছাড়া (Intercourse) দাম্পত্য জীবন করতে পারবে এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসে সরাসরি কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে ঈঙ্গিত দেওয়া হয়েছে-


আয়াত নং-০১

لِلَّذِیۡنَ یُؤۡلُوۡنَ مِنۡ نِّسَآئِہِمۡ تَرَبُّصُ اَرۡبَعَۃِ اَشۡہُرٍ ۚ فَاِنۡ فَآءُوۡ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

অর্থঃ যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষামাকারী দয়ালু।  সূরা বাকারা-২২৬


আয়াত নং-০২

وَالَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡکُمۡ وَیَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِہِنَّ اَرۡبَعَۃَ اَشۡہُرٍ وَّعَشۡرًا ۚ فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَہُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِہِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

অর্থ: আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে। সূরা বাকারা-২৩৪


উপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা বুঝা যায়, একজন নারী চার (০৪) মাস স্বামী ছাড়া থাকতে পারবে। যদিও আয়াতদ্বয়ের অন্যান্য হিকমাহও রয়েছে।    


তবে আসারে (সাহাবাদের আমল-নির্দেশনা) সুস্পষ্ট রয়েছে।  উল্লেখ্য যে,  খুলাফায়ে রাশেদীন,সাহাবি, তাবেয়ি-তাবে, তাবেয়ি গণের আমল-কথাও শরিয়তের দলিলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, ইমাম মালেক রহ. বর্ণনা করেন,


হাদিস/আসার নং-০১

خَرَجَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنَ اللَّيْلِ فَسَمِعَ امْرَأَةً تَقُولُ : تَطَاوَلَ هَذَا اللَّيْلُ وَاسْوَدَّ جَانِبُهُ وَأَرَّقَنِى أَنْ لاَ حَبِيبٌ أُلاَعِبُهُ فَوَاللَّهِ لَوْلاَ اللَّهُ إِنِّى أُرَاقِبُهُ تَحَرَّكَ مِنْ هَذَا السَّرِيرِ جَوَانِبُهُ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ لِحَفْصَةَ بِنْتِ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا : كَمْ أَكْثَرُ مَا تَصْبِرُ الْمَرْأَةُ عَنْ زَوْجِهَا؟ فَقَالَتْ : سِتَّةَ أَوْ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ.


فَقَالَ عُمَرُ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ : لاَ أَحْبِسُ الْجَيْشَ أَكْثَرَ مِنْ هَذَ


অর্থ: হজরত  উমর ইবনুল খাত্তাব রা. একদিন রাতে বের হলেন। অতঃপর তিনি  নারীকে এই কবিতা পাঠ করতে শুনলেন—


تَطَاوَلَ هَذَا اللَّيْلُ وَاسْوَدَّ جَانِبُهُ وَأَرَّقَنِى أَنْ لاَ حَبِيبٌ أُلاَعِبُهُ فَوَاللَّهِ لَوْلاَ اللَّهُ إِنِّى أُرَاقِبُهُ تَحَرَّكَ مِنْ هَذَا السَّرِيرِ جَوَانِبُهُ

বীভৎস এ রজনী হয়েছে আরও প্রলম্বিত নাহি আজ প্রেমাস্পদ মোর আকাঙ্ক্ষিত। আল্লাহর ভয় যদি না থাকতো এ অন্তরে পালঙ্ক মোর কলঙ্কিত হতো প্রণয়ের ভারে।


এরপর তিনি তার কন্যা উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মেয়েলোক স্বামী ছাড়া সর্বোচ্চ কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকতে পারে?’ হাফসা বললেন, ‘চার মাস অথবা ছমাস।’


তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘মুজাহিদদের মধ্যে কাউকে আমি এ সময়ের অধিক যুদ্ধে আটকে রাখব না।’ তিনি খলীফাতুল মুসলিমিন হিসেবে সব সেনাপতিকে লিখে পাঠালেন। উপরোক্ত সময়ের অধিক কোনো বিবাহিত মুজাহিদই যেন তার স্ত্রী-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকে।  তাখরিজ: সুনানে  বাইহাকি-১৮৩০৭


হাদিস/আসার নং-০২

لما أصبح عمر أرسل إلى المرأة فسأل عنها فقيل هذه فلانة بنت فلان وزوجها غاز فى سبيل الله فأرسل إليها امرأة فقال كونى معها حتى يأتى زوجها وكتب إلى زوجها فأقفله ثم ذهب عمر إلى حفصة بنته فقال لها يا بنية كم تصبر المرأة عن زوجها فقالت له يا أبه يغفر الله لك أمثلك يسأل مثلى عن هذا فقال لها إنه لو لا أنه شى أريد أن انظر فيه للرعية ما سألتك عن هذا قالت أربعة أشهر أو خمسة أشهر أو ستة أشهر فقال عمر يغزو الناس يسيرون شهرا ذاهبين ويكونون فى غزوهم أربعة أشهر ويقفلون شهرا فوقت ذلك للناس فى سنتهم فى غزوهم.


سنن سعيد بن منصور 2/ 210 ح (2463)، وعمر بن شبة في تاريخ المدينة 1/ 403، وذكره ابن قدامة في المغني 10/ 42.

অর্থাৎ তখন হাফসা রা. বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে উমর রা. চার মাস অন্তর তার মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন। সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, হাদীস ২৪৬৩ ; ইবনে কুদামা-১০/৪২


 


হাদিস/আসার নং-০৩

فأصبح عمر فأرسل إليها فقال أنت القائلة كذا وكذا قالت نعم قال ولم قالت أجهزت زوجي في هذه البعوث قال فسأل عمر حفصة كم تصبر المرأة من زوجها فقالت ستة أشهر فكان عمر بعد ذلك يقفل بعوثه لستة اشهر.


مصنف عبد الرزاق 7/ 152 ح 12594.

অর্থাৎ ওমর রা. তার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন কতদিন একজন নারী স্বামী ছাড়া ধৈর‌্য ধরতে পারে, তিনি বলণে, ছয় মাস। তাখরিজ:  মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১২৫৯৪


উপরোক্ত হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ফোকাহায়ে কেরামগণ বলেন,   চার মাসের কম হলে স্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন নেই।স্বামী তার  স্ত্রীর অনুমতিক্রমে   সর্বোচ্চ ছয় মাস দূরে থাকতে পারবে।  আর সন্তোষজনক অনুমতি ব্যতীত ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে গুনাহ হবে। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে উসমানি : ২/৩১১, কিতাবুন নাওয়াজিল : ৮/৫৩২


বিয়ে করার পর বউ রেখে অনেকেই বিদেশ চলে যায়; এটা মোটেও উচিত নয়। কত খারাপি হচ্ছে তা আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।


প্রশ্ন:  খ। সরকারি কাজে বা অর্থ উপার্জনের জন্য ৬ মাসের বেশি সময় বিদেশগমণ করা কি জায়েজ।

উত্তর:  খ।   ফুকাহায়ে কিরামগণ! কয়েকটি শর্তাসাপেক্ষে স্বামীকে সরকারি কাজে বা অর্থ উপার্জনের জন্য ৬ মাসের বেশি সময় বিদেশগমণ করা অনুমতি দিয়েছেন।



(০১)   চার মাসের অধিক হলেও স্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন।


(০২)  ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে যাওয়া।


(০৩)  পর্দার ব্যবস্থা করে যাওয়া।  যেমন,  আল্লাহ তাআলা বলেন,


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর। সূরা তাহরিম-০৬


 নবি (ﷺ) বলেন,‘দাইয়ূছ (যে ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে পর্দায় রাখে না তাকে দাইয়ূছ বলে) জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ দারামি-৩৩৯৭


(০৪) ফিতনার আশঙ্কা থাকতে পারবে না।যদি দূরে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী কোনো গুনাহে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে চার মাসের কম সময়ও স্ত্রী থাকা জায়েজ নেই।  সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামি-৪/৩৭৯;  ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২৯/৪৮


প্রশ্ন: গ।  বিবাহ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কি?


উত্তর: গ। বিবাহের প্রকারভেদ ও তার হুকুম: ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম তারতম্য আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-  قَالَ لَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“ وِجَاءٌ.


অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় এক.শারীরিক শক্তি দুই. আর্থিক (শক্তি) স্বাবলম্বী।  বিবাহ মোট ৬ প্রকার। যথা:


১.ফরজ ২.ওয়াজিব৩.সুন্নাত ৪. মুবাহ ৫.মাকরুহ ৬.হারাম। নিম্নে আলোচনা করা হলো-


১. ফরজ: বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার নিশ্চিত বা প্রবল আশংকা। বিবাহ একমাত্র রাস্তা তাকে যিনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন-(১) وَ لۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ ٌ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা সঙ্গী বিহীন পুরুষ বা মহিলা তোমরা তাদেরকে বিবাহ দাও আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাব মুক্ত না করা পর্যন্ত যেন তারা সংযম অবলম্বন করে। সূরা নূর-৩৩


 (২) وَذَرُوۡا ظَاہِرَ الۡاِثۡمِ وَبَاطِنَہٗ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡسِبُوۡنَ الۡاِثۡمَ سَیُجۡزَوۡنَ بِمَا کَانُوۡا یَقۡتَرِفُوۡنَ অর্থ: তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গুনাহে করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃত কর্মের শাস্তি পাবে। সূরা আনআম-১২০

(৩)    وَلَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَسَآءَ سَبِیۡلًا  অর্থ: আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২


তবে কারো যদি শারীরিক  শক্তি থাকে কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা নাই তার উপর বিবাহ ফরজ নয় সে রোজা রাখবে আর ছবর করবে । যেমন হাদিসে শরীফে আছে-  قَالَ لَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“ وِجَاءٌ. অর্থ:  আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪


২. ওয়াজিব: বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার  আশংকা। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ওয়াজিব। যেমন,  نْ عَبْدِاللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ t: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ..

অর্থ; হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪

আর আর্থিক শক্তি না থাকলে রোজা রাখবে।



৩. সুন্নাত: উপযুক্ত বয়স হলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবাহ করা  সুন্নাত। কেননা অধিকাংশ নবি বিবাহ করেছেন।


 দলিল: وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا رُسُلًا مِّنۡ قَبۡلِکَ وَ جَعَلۡنَا لَهُمۡ اَزۡوَاجًا وَّ ذُرِّیَّۃً ؕ

 অর্থ: আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। সূরা রাদ-৩৮


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-  وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي অর্থ:  আমি নারীকে বিবাহ করি। ( তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। বুখারি-৫০৫৬; মুসলিম-৩৪৬৯


৪. মুবাহ:  যার বিবাহ না করলে পাপকার্যে লিপ্ত হবার আশংকা নাই। বরং আল্লাহ প্রেমে বিভোর-বিহ্বল , দ্বীনি কাজে ব্যস্ত যে, স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার বিবাহ না করা জায়েজ, বরং না করাই উত্তম।  সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-২৩৭ পৃষ্ঠা, বয়ানুল কুরআন, মাআরিফুল কুরআন


ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. বিবাহ করেন নি। হজরত ইয়াহইয়া আ. সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে।   দলিল:


اَنَّ اللّٰہَ یُبَشِّرُکَ بِیَحۡیٰی مُصَدِّقًۢا بِکَلِمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ وَسَیِّدًا وَّحَصُوۡرًا وَّنَبِیًّا مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ

অর্থ: আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন। সূরা ইমরান-৩৯


৫. মাকরুহ: যে ব্যক্তি বিবাহ করলে বিবির হক আদায়ে সন্দিহান তার বিবাহ করা মাকরুহ। দলিল:

 عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ  «إنَّ    الْحَلَالَ بَيِّنٌ، وَالْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ،

অর্থ: হালাল সুস্পষ্ট, হারাম ও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট-সন্দেহজনক বিয়ষ রয়েছে। তাখরীজ: নাসায়ি-৪৪৫৩; ইবনে মাজাহ-৩৯৮৪; বুখারি-২০৫১, মুসলিম-১৫৯৯


৬. হারাম: যার শারীরিক শক্তি নেই, একেবারে অক্ষম, নপুংশক (পুরুষত্বহীন) তার বিবাহ করা হারাম। দলিল:


আয়াত নং-০১


 لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

অর্থ: তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। সূরা বাকারা-২৭৯


এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি অপরের  অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন এবং জীবনে কালি লাগিয়ে দেয়, তাকে ক্ষতি করারই নামান্তর।   


يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ  অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে।  الْبَاءَة – অর্থ সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় একটি হলো.শারীরিক শক্তি, সহবাস করার করার শক্তি।   সুতরাং  শারীরিক শক্তি না থাকলে বিবাহ হারাম।  সূত্র: মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস-৯৮ পৃষ্ঠা লেখক             :  মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক ধর্মীয় পরামর্শ দানকারী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।


 সারকথা কথা হলো,  স্ত্রীর অনুমতিক্রমে ছয় মাস দূরে থাকা যাবে। আর উভয়ের যে কোন একজন পাপে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে চার মাসের কম সময় হলেও দূরে থাকতে পারবে না।  আর উপরে শর্তাবলিগুলো পূরণ করতে পারলে, স্বামী সরকারি কাজে বা অর্থ উপার্জনের জন্য প্রবাসে থাকতে পারবেন।  এবং ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম বিভিন্ন হয়ে থাকে।   যা আমি দলিলসহ  উল্লেখ করেছি।



 والله اعلم بالصواب