জিজ্ঞাসা-১৪৯: কোন প্রতিষ্ঠান/সংস্থার পক্ষে কুরবানি করা জায়েজ হবে কি?এ ব্যাপারে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
তারিখ: ১২/০৬/২২ ঈসায়ি
মাওলানা শহীদুল যশোর থেকে
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। আপনার প্রশ্নকে সহজে বুঝার জন্য কয়েকটিভাবে ভাগ করছি। সামনে কুরবানি আসছে অনেকের উপকার হবে বলে আশা করি।
প্রশ্ন: ক। প্রথমে জানবো, কুরবানি কার ওপর ওয়াজিব।
উত্তর: ক। ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে যেসব মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক, মুকিম ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে অর্থাৎ স্বীয় হাজাতে আসলিয়্যাহ (পানাহার, বাসস্থান, উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি) ছাড়া অতিরিক্ত এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ (টাকার অংকে আনুমানিক আজকে (১২জুন ২০২২) ১,৫১৬*৫২.৫= ৭৯,৫৯০ হাজার টাকা ) হয়, সে ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা; আল হিদায়া, ১ম খন্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা
প্রশ্ন: খ। কোন সংস্থা/সংঘ/সংগঠন/কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের ওপর কুরবানি করা কি ওয়াজিব/জরুরি এবং তাদের পক্ষে কুরবানি সহিহ হবে কি?
উত্তর: খ। কোন সংস্থা/সংঘ/সংগঠন/কোম্পানি ওপর কুরবানি করা কি ওয়াজিব/জরুরি নয়।
কুরআন দ্বারা দলীল: .
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ﴾
তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও পশু কুরবানি করো। সূরা কাউসার-০২
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার রসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো সংস্থাকে নির্দেশ দেননি।
হাদিস দ্বারা দলীল:
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
«مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا»
যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে। আহমাদ, আলমুসনাদ-১৬/৪৬৬; ইবনু মাজাহ, আসসুনান-৩১২৩
এ হাদিস শরীফে মান তথা ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে; কোনো সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়নি।
আছার থেকে দলীল: কোনো ব্যাটয়িন/ইউনিট তথা সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, কোম্পানি ইত্যাদি একটি ছোট সংস্থা আর রাষ্ট্র হলো বড় সংস্থা। ৬৩২ খৃ. থেকে ৬৬১ খৃ. পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর খোলাফায়ে রাশেদার যুগ ছিল, এ সময় বায়তুল মালে তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অনেক টাকা পয়সা ছিল, উনারা কি ইসলামি রাষ্ট্রের পক্ষে কুরবানি করেছেন। এমন কোন নজির কেউ কি দেখাতে পারবে?
নবীজি (ﷺ) ফরমান- فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ -তোমাদের উপর আমার সুন্নাত তথা তরিকা-পন্থা-সিরাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফায়ে রাশেদাগণের সুন্নাত আঁকড়ে ধরা আবশ্যক। আবু দাউদ- ৪৬০৭, জামিউত তিরমিযী- ২৬৭৬
তাছাড়া প্রিয় নবি (ﷺ) মদিনার রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি কি বায়তুল মাল থেকে কুরবানি করেছেন। বরং তিনি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। দলীল:
(১) হজরত ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ১০ বছর মদিনায় অবস্থান করেছেন। মদিনায় অবস্থানকালীন প্রত্যেক বছরেই কুরবানি করেছেন। মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি
(২) হযরত আলী রা.কে আদেশ করেছেন যেন তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়। হযরত আলী রা. প্রতি বছর নিজের কুরবানীর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস ৮৪৩, ১২৭৮, আবু দাউদ হাদীস ২৭৮৭
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো কুরবানি ব্যক্তির ওয়াজিব, কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নয়। অত্রতব কোনো প্রতিষ্ঠান/সংস্থার পক্ষে কুরবানি করলে সহিহ হবে না।
فتجب علي حر مسلم مقيم)بمصري او قريه او بادية عيني.فلا تجب علي حاجة مسافر موسر يسار الفكرة عن نفسه لا عن طفله علي الظواهر الفتاوي الشامي ٩.البداءع الصناءع
সূত্র: নানে আবু দাউদ ২৭৮৮ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১২৪ হাদীস৷ আল মুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫ পৃষ্ঠা৷
প্রশ্ন: গ। অন্যের পক্ষ হতে অনুমতি ব্যতীত কুরবানি করলে তা আদায় হবে কি না?
উত্তর : গ। কারো পক্ষ হতে তার বিনা অনুমতিতে কুরবানি করলে যদি ওই ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তবে তার কুরবানি আদায় হবে না। আর যদি ওয়াজিব না হয়ে থাকে তবে কুরবানি হয়ে যাবে। কাজিখান-৩/৩৫২, আলমগিরি-৫/৩০২, মাহমুদিয়া-১৭/৩২২
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক