জিজ্ঞাসা-১০৮: আপনার এই লেখাটি পড়ে দুইটি প্রশ্ন জানতে পারলাম খাসি/অন্ডকোষ বিহীন প্রাণী যারা কোরবানি হবে কিনা আর চাউল সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত নয় কেননা এতে জ্বালানির অপচয় হয়। তারিখ-২৭/০৬/২২ ঈসায়ি/ই ইংরেজি।
মাওলানা মোঃ নুরুল আমিন
জবাব: আপনার ফেসবুকের লেখাটি পডলাম, কিন্তু দুঃখজনক হলো তিনি কোন নস উল্লেখ করেননি। ইসলামী শরীয়তের কোন বিষয়কে হারাম বা মাকরূহে তাহরীমী সাব্যস্ত করতে হলে শক্তিশালী নসের প্রয়োজন হয়। যাইহোক আপনার প্রশ্ন কেউ সহজ ভাবে বুঝার জন্য দুটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। খাসি বা অন্ডকোষ বিহীন প্রাণীর দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, খাসি বা অণ্ডকোষ বিহীন গরু ছাগল ভেড়া দুম্বা দ্বারা কুরবানী হবে এতে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই। দলিল: ০১ নং হাদিস
عن جابر رضی الله تعالی عنه قال ذبح النبی صلی الله علیه وسلم یوم الذبح کبشین اقرنین املحین موجوئین۔
অর্থাৎ, হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের শিং বিশিষ্ট দু’টি খাসী ছাগল কোরবানী ঈদের দিন জবেহ করেছেন। তাখরিজ: আবু দাউদ শরীফ, ৩৮৬ পৃ. মিশকাত শরীফ, ২২৮ পৃষ্ঠা
২ নং হাদিস
حدثنا محمدبن یحی ثنا عبد الرزاق ابن سفیان الثوری عبد الله بن محمد بن عقیل عن ابی سلمة عن عاٸشة و عن ابی هریرة ان رسول الله صلی الله علیه وسلم کان اذا اراد ان یضحی اشتری کبشین عظیمین سمینین اقرنین املحین موجوأین فذبح احدهما عن امته لمن شهد لله بالتوحید و شهد له بالبلاغ و ذبح الاخر عن محمد وعن ال محمد صلی الله علیه وسلم۔
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ও হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোরবানীর ইচ্ছা করতেন তখন দু’টি মোটা তাজা, গোশতযুক্ত, শিং যুক্ত, সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের ও খাসীকৃত দুম্বা (মেষ) ক্রয় করতেন। অত:পর এর একটি আপন উম্মতের যারা আল্লাহ’র তাওহীদের স্বাক্ষী দেয় এবং তার নবুওয়াতের প্রচারের স্বাক্ষী দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার পরিবার বর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন। তাখরিজ: ইবনু মাজাহ শরীফ, ২২৫ পৃষ্ঠা।
সারকথা: খাসীকৃত প্রাণী ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ এটি ছাগলের কোন রোগ নয়। বরং খাসীর গোশত তুলনামূলক পবিত্র, দুর্গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে সর্বদা দু’টি করে ‘খাসী’ (خَصِيَّيْنِ- مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন (হাকেম হা/৭৫৪৭; আহমাদ হা/২৩৯১১; ইরওয়া হা/১১৪৭, সনদ ছহীহ)। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসী’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারি ১০/১২)। ইবনু কুদামা বলেন, খাসীই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’টি খাসী দিয়েই কুরবানী করতেন (মির‘আত ৫/৯১)।
প্রশ্ন: খ। সেদ্ধ চাল খাওয়া উচিত নয় কারণ, এতে জ্বালানির অপচয় হয়।
উত্তর: খ। উক্ত ব্যক্তি যে একটি খাড়া যুক্তি খাড়া অজুহাত উল্লেখ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয় কেননা আমাদের পৃথিবীতে হাজারো রকমের খাবার যা চাল গম ভুট্টা থেকে প্রক্রিয়াজাত হয়ে নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে, এতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হচ্ছে। যা রাসূল (ﷺ) এর জমানায় ছিল না, তাহলে এসব কি হারাম, খাওয়া যাবেনা। খাবারে মূল বিষয় হল হালাল হওয়া। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ: হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা-১৬৮
নোট: কেউ যদি আদিল্লায়ে আরবা ব্যতীত কোন কথা বলে আমাদের উচিত, বিব্রত না হওয়া, বরং তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা যাতে তারা স্তব্ধ হয়ে যায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক