আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৬৩০: জানাজা নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয় না কেন?

No Comments



জিজ্ঞাসা-১২৬৩০:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

মুহতারাম! জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহা পড়া হয়না কেনো?


তারিখ:  ১৮/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। কুমিল্লা থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, সালাতুল জানাযা  মূলত নামাজ নয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর  আমল দ্বারা প্রমাণিত নয়। যদিও দু একটি আসার  সূরা ফাতিহা পাঠ করার পক্ষে রয়েছে কিন্তু তা দুর্বল এবং এর বিপরীত বর্ণনার সামনে তা টিকে না। এ জন্য সূরা ফাতিহা,অন্যান্য সূরা এবং রুকু সিজদা নেই। আপনার প্রশ্নকে দালিলিক ভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি প্রশ্ন আকারে ভাগ করছি।



প্রশ্ন : ক।  সালাতুল জানাযা কি আসলেই নামাজ না দুআ?


উত্তর: ক। সালাতুল জানাজা আসলে কোন পূর্ণাঙ্গ নামাজ নয়, এটা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া। দলিল:


হাদিস নং - ০১

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : ( إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء

যখন তোমরা মাইয়্যেতের জন্য জানাযার নামায পড়, তখন ইখলাসের সাথে দুআ কর। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০৭৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২০১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৯৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬৭৫৫}


তাবেয়িদের আমল -০১

 سَأَلْتُ أَبَا الْعَالِيَةِ عَنِ الْقِرَاءَةِ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الْجِنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَقَالَ: “مَا كُنْتُ أَحْسَبُ أَنَّ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ تُقْرَأُ إِلَّا فِي صَلَاةٍ فِيهَا رُكُوعٌ وَسُجُودٌ” 

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাবেয়ী আবুল আলিয়া রাহ.-এর একটি বাণী মনোযোগের দাবিদার। আবুল মিনহাল বলেন- আমি আবুল আলিয়া রাহ.-কে সালাতুল জানাযায় ফাতিহা পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, আমার তো ধারণাও ছিল না যে, ফাতিহাতুল কিতাব রুকু-সিজদা বিশিষ্ট সালাত ছাড়া অন্য কোনো সালাতে পড়া হবে?! -আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১১৫২৪


নোট:আবুল আলিয়া রাহ. প্রথম সারির তাবেয়ীগণের অন্তর্ভুক্ত। বিশুদ্ধ মত অনুসারে ৯৩ হিজরীতে তাঁর ইন্তিকাল। সূত্র:তাহযীবুল কামাল ও তাহযীবুত তাহযীব


প্রশ্ন: খ। জানাযা নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা বা না করার সম্পর্কে কয়টি মতামত আছে?


উত্তর: খ। এ বিষয়ে তিনটি মতামত পাওয়া যায়। যেমন,


وتنازع العلماء في القراءة على الجنازة على ثلاثه أقوال : قيل : لا تستحب بحال , كما هو مذهب أبي حنيفة ومالك ، وقيل : بل يجب فيها القراءة بالفاتحة ، كما يقوله من يقوله من أصحاب الشافعي وأحمد ، وقيل : بل قراءة الفاتحة فيها سنة , وإن لم يقرأ بل دعا بلا قراءة جاز , وهذا هو الصواب " انتهى .


" الفتاوى الكبرى " ( 2 / 121 ) .

জানাজায় তেলাওয়াত করার ব্যাপারে আলেমগণ তিনটি কারণে মতভেদ করেছেন: 


০১. এটি কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়, যেমনটি আবু হানিফা ও মালিকের মত।


 ০২. ইমাম শাফি এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর মতে ওয়াজিব।


০৩. কেউ কেউ বলেন, সুন্নাত/ মুস্তাহাব।তিনি তিলাওয়াত করেননি, বরং তিনি তেলাওয়াত ছাড়া দুআ করেছেন, যা জায়েয এবং এটাই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। সূত্র: আল ফাতাওয়াল কাবির -২/১২১

 

প্রশ্ন: গ। ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালেক রহ এর দলিল কি?


উত্তর: গ। ইমামদ্বয়ের দলিল নিম্নরূপ:


আসার/হাদিস নং -০১

 قال ابن أبي شيبة : حدثنا محمد بن فضيل عن العلاء بن المسيب عن أبيه عن علي أنه كان إذا صلى على ميت يبدأ يحمد الله ويصلى على النبي صلى الله عليه وسلم ثم يقول : اللهم اغفر لأحيائنا و أمواتنا وألف بين قلوبنا وأصلح ذات بيننا واجعل قلوبنا على قلوب خيارنا .

অর্থ: হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন কোনো মায়্যেতের জানাযার নামায পড়তেন তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করতেন তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়তেন অতপর এই বলে দুআ করতেন :


اللهم اغفر لأحيائنا وأمواتنا وألف بين قلوبنا وأصلح ذات بيننا واجعل قلوبنا على قلوب خيارنا.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৪৯৪


ব্যাখ্যা: খলীফায়ে রাশেদ হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর আমল হলো সূরা ফাতিহা পাঠ না করা।


নোট:এই বর্ণনার রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য।




হাদিস/ আসার নং -০২

مالك عن نافع أن عبد الله بن عمر كان لا يقرأ في الصلاة على الجنازة

অর্থ: নাফে রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়তেন না। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস ৫২৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৫২২


হাদিস/আসার নং -০৩

ما لك عن سعيد بن أبي سعيد المقبري عن أبيه أنه سأل أبا هريرة كيف تصلي على الجنازة؟ فقال أبو هريرة أنا لعمر الله أخبرك أتبعها من أهلها فإذا وضعت كبرت وحمدت الله وصليت على نبيه ثم أقول اللهم إنه عبدك وابن عبدك وابن أمتك كان يشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا عبدك ورسولك وأنت أعلم به اللهم إن كان محسنا فزد في إحسانه وان كان مسيئا فتجاوز عن سيئاته اللهم لا تحرمنا أجره ولا تفتـنا بعده.

অর্থ: আবু সাঈদ মাকবুরী থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আবু হুরায়রা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কীভাবে জানাযার নামায পড়েন? আবু হুরাইরা রা. বললেন, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি তোমাকে বলব। আমি মায়্যেতের (ঘর থেকে) পরিবারের সাথে আসি। অতপর যখন মায়্যেতকে রাখা হয় আমি তাকবীর দেই এবং আল্লাহর প্রশংসা করি। তারপর নবীর উপর দরূদ পড়ি। অতপর এই দুআ করি... اللهم।

-মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৫২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৬৪২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৪৯৫


তাবেয়িদের আমল -০১

মক্কা মুকাররমার বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ এর ফতোয়া :

عَنْ حَجَّاجٍ قَالَ : سألت عطاء عن القراءة على الجنازة فقال ما سمعنا بهذا إلا حديثا.

হাজ্জাজ রহ. বলেন, আমি আতাকে জানাযার নামাযে কুরআন পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমরা তো একথা নতুন নতুন শুনছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫২৭ )


তাবেয়িদের আমল -০২

মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত তাবেয়ী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ হযরত সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন,


لا قراءة على الجنازة .

জানাযায় কোন কুরআন পাঠ নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫৩২)



তাবেয়িদের আমল -০৩

মদীনার আরেক প্রখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব র. বলেন,

ما نعلم في الصلاة على الميت من قراءة ولا دعاء شيئا معلوما

জানাযার নামাযে নির্দিষ্ট কোন কেরাত ও দুআ আছে বলে আমার জানা নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৬৪৩৬)



তাবেয়িদের আমল -০৪


কুফা নগরীর বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত শাবী রহ. বলেন,


ليس في الجنازة قراءة .

জানাাযার নামাযে কুরআন পাঠ নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫২৮ )



তাবেয়িদের আমল -০৫


কুফার-ই আরেক প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন,

لا قراءة على الجنازة ولا ركوع ولا سجود ولكن يسلم عن يمينه وعن شماله إذا فرغ من التكبير. (كتاب الآثار لمحمد ، ২৩৬)

জানাযার নামাযে কোন কিরাআত নেই, কোন রুকু-সেজদা নেই। বরং তাকবীর বলা শেষ হলে ডানে-বামে সালাম ফিরাতে হবে। (কিতাবুল আছার, হাদীস : ২৩৬)


শাবী রহ. বরং স্পষ্ট করে বলেছেন,

التكبيرة الاولى على الميت ثناء على الله والثانية صلاة على النبي صلى الله عليه و سلم والثالثة دعاء للميت والرابعة تسليم

জানাযার নামাযে প্রথম তাকবীর আল্লাহর প্রশংসা, দ্বিতীয় তাকবীর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়া, তৃতীয় তাকবীর মৃতের জন্য দুআ করা এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে সালাম ফিরানো। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৬৪৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৩৭৫, ১১৩৭৮)




প্রশ্ন: ঘ। ইমাম শাফি, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এবং আহলে হাদিসের দলিল কি?



উত্তর: ঘ। তাদের দলিলগুলো নিম্নরূপ:


হাদিস নং -০১

لَا صَلَاةَ لِمَن لَمْ يَقْرَأْ بفَاتِحَةِ الكِتَابِ.

الراوي : عبادة بن الصامت | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري

الصفحة أو الرقم: 756 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]

অর্থাৎ সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ নেই। তাখরিজ: বুখারি -৭৫৬


হাদিস/আসার নং -০২

عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ قَالَ: لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ

ত্বলহা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আওফ রাহ. বলেন- আমি ইবনে আব্বাস রা.-এর পেছনে জানাযার নামায আদায় করেছি। নামাযে তিনি সূরা ফাতিহা পড়েছেন। (নামায শেষে) বলেছেন, (আমি ফাতিহা পড়েছি) যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাহ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৩৫


প্রশ্ন: ঙ। যারা মুস্তাহাব বলে তাদের দলিল কি?


উত্তর: ঙ। জানাজা নামাজে সুরা ফাতেহা পড়ার নির্দেশনা নেই, তবে আসার রয়েছে তাই এটি মুস্তাহাব। যেমন,


وذهب بعض أهل العلم إلى أنها

 مستحبة فقط، وقالوا: الأدلة السابقة تدل على الاستحباب فقط.

قال شيخ الإسلام ابن تيمية[6]: "وهذا الصواب".

শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ এর মতে মুস্তাহাব। সূত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া-২২/২৭৪


প্রশ্ন: চ। সূরা ফাতিহা পাঠ করার দলিলগুলো খণ্ডন কিভাবে?


উত্তর: চ। দলিল দুটি উল্লেখকরত খণ্ডন নিম্নরূপ:


হাদিস নং -০১

لَا صَلَاةَ لِمَن لَمْ يَقْرَأْ بفَاتِحَةِ الكِتَابِ.

الراوي : عبادة بن الصامت | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري

الصفحة أو الرقم: 756 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]

অর্থাৎ সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ নেই। তাখরিজ: বুখারি -৭৫৬


খণ্ডন বা জবাব: সূরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হবে না, জানাজা নামাজে এ হুকুম প্রযোজ্য নয়। আমরা কয় নম্বর প্রশ্নে প্রমাণ করেছি জানাজার নামাজ মূলত পূর্ণাঙ্গ নামাজ নয়, এটি দুআ। যেমন,

বিখ্যাত হানাফী ফকীহ আল্লামা কাসানী রাহ. (মৃত্যু ৫৮৭ হি.) এ বাস্তবতা এভাবে বর্ণনা করেছেন-

وَقَوْلُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ “لَا صَلَاةَ إلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ” وَلَا صَلَاةَ إلَّا بِقِرَاءَةٍ لَا يَتَنَاوَلُ صَلَاةَ الْجِنَازَةِ؛ لِأَنَّهَا لَيْسَتْ بِصَلَاةٍ حَقِيقَةً إنَّمَا هِيَ دُعَاءٌ وَاسْتِغْفَارٌ لِلْمَيِّتِ، أَلَا تَرَى أَنَّهُ لَيْسَ فِيهَا الْأَرْكَانُ الَّتِي تَتَرَكَّبُ مِنْهَا الصَّلَاةُ مِنْ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ إلَّا أَنَّهَا تُسَمَّى صَلَاةً لِمَا فِيهَا مِنْ الدُّعَاءِ، وَاشْتِرَاطُ الطَّهَارَةِ، وَاسْتِقْبَالُ الْقِبْلَةِ فِيهَا لَا يَدُلُّ عَلَى كَوْنِهَا صَلَاةً حَقِيقِيَّةً كَسَجْدَةِ التِّلَاوَةِ؛

 আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ‘লা সালাতা ইল্লা বিফাতিহাতিল কিতাব’ ও‘লা সালাতা ইল্লা বি কিরাআ’ সালাতুল জানাযাকে শামিল করে না। কারণ মূলত তা ‘সালাত’ নয়। মাইয়েতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার। লক্ষ করুন, যে সকল ‘রোকন’ দ্বারা সালাত যেমন রুকু-সিজদা, তা-ই তো এতে নেই। একে ‘সালাত’ বলা হয় কারণ তা দুআ। আর পবিত্রতা ও কিবলামুখী হওয়া জরুরি হওয়ার দ্বারা তা হাকীকী সালাত হওয়া প্রমাণ হয় না। কারণ ওগুলো তো তিলাওয়াতের সিজদাতেও জরুরি। -বাদায়েউস সানায়ে ১ : ৩১৪



সূরা ফাতিহা না থাকার আরেকটি বড় কারণ হল, জানাযার নামাযে কেরাত নেই। আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে,


قلت لعبد الرحمن بن القاسم: أي شيء يقال على الميت في قول مالك؟ قال: الدعاء للميت. قلت: فهل يقرأ على الجنازة في قول مالك؟ قال: لا(المدونة الكبرى، كتاب الجنائز، باب ما جاء فى القرائة على الجنائز-1/158

অর্থাৎ আমি আব্দুর রহমান বিন কাসেম রহঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ইমাম মালিক রহঃ এর মাযহাবে মৃতের জন্য কী পড়া হয়? তিনি বললেনঃ মৃতের জন্য দুআ পড়া হয়। আমি বললামঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মতে কি জানাযার নামাযে কিরাত আছে? তিনি বললেনঃ না। সূত্র: আল মুদাওয়ানুতল কুবরা-১/১৫৮


আর সূরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হবে না এ হাদিসের রাবির বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন,


জানাযার নামাযে ফাতিহা পাঠ প্রমাণ করার জন্য গাইরে মুকাল্লিদ বন্ধুগণ হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রা.-এর সূত্রে বর্ণিত এ প্রসিদ্ধ হাদীস উদ্ধৃত করে থাকেন-


لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب.

‘যে ফাতিহাতুল কিতাব পড়েনি তার নামায নেই।’-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৫৬


অথচ উপরোক্ত বর্ণনায় পাওয়া গেল যে, স্বয়ং উবাদা ইবনুস সামিত রা.-ই জানাযার নামায ফাতিহা ছাড়া পড়ার নিয়ম জানতেন ও মানতেন। সাহাবী আবু হুরায়রা রা.-এর প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই নিয়মেরই উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা রা.-ও এ নিয়ম জানতেন ও মানতেন। ইতিপূর্বে তাঁর বিবরণও উল্লেখিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকেও সহীহ মুসলিমে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে-


لا صلاة إلا بقراءة

(কুরআন) পড়া ছাড়া নামায নেই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৯৬


এর পরিষ্কার অর্থ এই যে, তাঁরা ‘সালাতুল জানাযা’কে এই হাদীসের বিধানের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না।। বরং এ পর্যন্ত উল্লেখিত বড় বড় মনীষী সাহাবীর কর্ম ও সিদ্ধান্ত এবং মুসলিম জাহানের বড় বড় কেন্দ্রগুলোর প্রতিষ্ঠিত কর্মধারাও একথাই প্রমাণ করে যে, ‘সালাতুল জানাযা’ উপরোক্ত হাদীসের নির্দেশনার আওতাভুক্ত নয়। সুতরাং এ হাদীসকে সালাতুল জানাযার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা শুধু দলীলহীন প্রয়োগ নয়; দলীলবিরোধী প্রয়োগ বটে।



হাদিস/আসার নং -০২

عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ قَالَ: لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ

ত্বলহা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আওফ রাহ. বলেন- আমি ইবনে আব্বাস রা.-এর পেছনে জানাযার নামায আদায় করেছি। নামাযে তিনি সূরা ফাতিহা পড়েছেন। (নামায শেষে) বলেছেন, (আমি ফাতিহা পড়েছি) যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাহ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৩৫


জবাব/ খণ্ডন: এ হাদিসের সনদ সম্পর্কে হাফেয ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর একটি উক্তি উল্লেখ করা যায়, যাকে আমাদের ঐ বন্ধুরাও নিজেদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব বলে দাবি করে থাকেন। তিনি বলেছেন:


ويذكر عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه أمر أن يقرأ على الجنازة بفاتحة الكتاب ولا يصح إسناده

অর্থ: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এর সনদ সহীহ নয়। -যাদুল মা‘আদ ১/৪৮৬


দ্বিতীয় কথা হলো, হজরত আব্বাস রা এর বিপরীত আমল/আসার রয়েছে। যেমন,

তাবেয়ী আবু হামযা রাহ. বলেন-


قلت له : كيف أصلي في الكعبة؟

আমি তাঁকে (ইবনে আব্বাস রা.- কে) জিজ্ঞাসা করলাম, কা‘বার ভিতরে নামায কীভাবে পড়ব? তিনি উত্তরে বললেন-


كما تصلي في الجنازة تسبح وتكبر ولا تركع ولا تسجد ثم عند أركان البيت سبح وكبر وتضرع واستغفر، ولا تركع ولا تسجد

যেভাবে সালাতুল জানাযা পড়; তাসবীহ পড়বে, তাকবীর দিবে, তবে রুকু-সিজদা করবে না। এরপর বাইতের রোকনগুলোর কাছে তাসবীহ করবে, তাকবীর দিবে, রোনাযারি করবে ও ইস্তিগফার করবে। তবে রুকু করবে না ও সিজদা করবে না। -ফতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী ৩ : ৪৬৯


নোট: এ বর্ণনার সনদ সহীহ।


প্রশ্ন: ছ। প্রাধান্য বা গ্রহণযোগ্য মত কোনটি ?


উত্তর: অধিকাংশ সাহাবা, তাবেয়িদের মতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাহ নয়। যেমন,


আল্লামা ইবনে বাত্তাল রাহ. বলেন-

وَمِمَّنْ كَانَ لَا يقْرَأ فِي الصَّلَاة على الْجِنَازَة وينكر: عمر بن الْخطاب وَعلي بن أبي طَالب وَابْن عمر وَأَبُو هُرَيْرَة، وَمن التَّابِعين: عَطاء وطاووس وَسَعِيد بن الْمسيب وَابْن سِيرِين وَسَعِيد بن جُبَير وَالشعْبِيّ وَالْحكم، وَقَالَ ابْن الْمُنْذر: وَبِه قَالَ مُجَاهِد وَحَمَّاد وَالثَّوْري، وَقَالَ مَالك: قِرَاءَة الْفَاتِحَة لَيست مَعْمُولا بهَا فِي بلدنا فِي صَلَاة الْجِنَازَة،

যাঁরা জানাযায় ফাতিহা পড়তেন না, বরং ইনকার করতেন, তাঁদের কয়েকজন হলেন- ওমর ইবনুল খাত্তাব, আলী ইবনে আবি তালিব, ইবনে ওমর, আবু হুরাইরা রা.। আর তাবেঈগণের মাঝে তাঁদের কয়েকজন হলেন- আত্বা, তা‘উস, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, ইবনে সিরীন, সাঈদ ইবনে জুবায়ের, শা‘বী, হাকাম রহ. প্রমুখ। ইবনুল মুনযির রাহ. বলেছেন, একই মত পোষণ করেছেন মুজাহিদ, হাম্মাদ ও সুফইয়ান ছাওরী রাহ.। ইমাম মালেক রাহ. বলেছেন, জানাযায় ফাতিহা পড়ার ওপর আমাদের শহরে (মদীনা) আমল করা হয় না। (উমদাতুল কারী, ৮ : ১৩৯)



প্রশ্ন: জ। দুএক সাহাবা রা. সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন এর কারণ কি?



উত্তর: জ। এ ব্যাপারে ইমাম তাহাবী রাহ. বলেছেন-


لعل قراءة من قرأ الفاتحة من الصحابة كان على وجه الدعاء لا على وجه التلاوة.

সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ যে ফাতিহা পাঠ করেছেন বলে পাওয়া যায় সম্ভবত সেটি ছিল দুআ হিসেবে, কুরআন তিলাওয়াত হিসেবে নয়। -উমদাতুল ক্বারী ৮/১৪১

নোট: কেননা সূরা ফাতিহার অপর নাম সূরাতুত দুআ।


সারকথা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ সাহাবা, তাবেয়ি, ইমাম এবং দলিলের মজবুতি দিক দিয়ে সূরা পাঠ করা ওয়াজিব বা সুন্নাত নয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো জায়েজ মাত্র।



সুতরাং যে সমাজে/ এলাকায় জানাজা নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করার প্রচলন নেই, সেখানে আমল করে নতুন করে ফিতনা না করা উচিত।


তথ্য সহায়তায়: মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল -২০১৫


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক