আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৬১২: স্বামী নিখোঁজ/ নিরুদ্দেশ হলে স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কি?

No Comments

  জিজ্ঞাসা-১২৬১২:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ,  মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হলো, এক মহিলার স্বামী ১৬ বছর নিরুদ্দেশ, এলাকার কেউ কেউ বলে মনেহয় মারা গেছে? এখন মহিলা ১ বছর আগে বিবাহ করেছেন। এক্ষেত্রে তার বিবাহের কোন সমস্যা হবে কি? স্বামীকে কিন্তু এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।  বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম। 

তারিখ:  ০৪/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা মোঃ জালাল উদ্দিন চাঁদপুর থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইসলামে সরাসরি নারীর তালাক দেওয়ার অধিকার নেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, বিশেষ পদ্ধতিতে সুযোগ রয়েছে। 


দ্বিতীয় কথা হলো, কোন স্বামী যদি দীর্ঘ দিন অর্থাৎ চার বছর নিখোঁজ/ নিরুদ্দেশ থাকে, তাহলে দুটি পদ্ধতিতে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে।


প্রথম পদ্ধতি: কাবিননামার ১৮ নং কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা দেয়াকে তালাক-ই-তৌফিজ বলে। এই তালাক-ই-তৌফিজ এর ক্ষমতা দেয়া থাকলে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।


দ্বিতীয় পদ্ধতি:  যদি ‘তাফভীজে তালাক’ প্রদান করা হয়ে না থাকে, এমতাবস্থায় জমহুর ফুক্বাহায়ে কেরাম (অধিকাংশ ইসলামী আইনবিদ)এর মতে উক্ত স্ত্রী যখন স্বামীর খোঁজ পাওয়ার ব্যাপারে গভীর নিরাশ হয়ে পড়বে এবং স্বামীর নিখোঁজ থাকার সময় ন্যূনতম চার বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় উক্ত স্ত্রী কোর্টের মাধ্যমে তালাক নিয়ে ইদ্দত পালন করার পর অন্যত্র দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে।


প্রশ্ন: ক। স্বামী ৪ বছর নিরুদ্দেশ থাকলে, স্ত্রী তালাকের মাধ্যমে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে তার দলিল কি?


উত্তর: ক।  স্বামী ৪ বছর নিরুদ্দেশ থাকলে, স্ত্রী তালাকের মাধ্যমে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে তার দলিল হলো নিম্নরূপ:


হাদিস/ আসার নং -০১

عن عُمرَ رَضِيَ اللهُ عنه في امرأةِ المفقودِ أنَّه: (أمَرَها أن تتربَّصَ أربَعَ سِنينَ مِن حينَ رَفَعَتْ أمْرَها إليه، ثمَّ دعا ولِيَّه فطَلَّقَ، وأمَرَها أن تعتَدَّ أربعةَ أشهُرٍ وعَشرًا، قال: ثمَّ جئتُ بعدما تزوَّجَتْ فخَيَّرَني عمَرُ بينها وبين الصَّداقِ الذي أصدَقْتُ.أخرجه من طرقٍ: عبدُ الرزاق في ((المصنف)) (12320) واللفظ له، وابن أبي شيبة في ((المصنف)) (16985)، والبيهقي (15977). ذكَرَ الشافعي في ((الأم)) (8/657)، وابن تيمية في ((مجموع الفتاوى)) (20/576)، وابن القيم في ((إعلام

অর্থ: নিখোঁজ ব্যক্তির স্ত্রীর বিষয়ে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রে: (তিনি তাকে তার বিষয়টি তাঁর কাছে আনার সময় থেকে চার বছর অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, তারপর তিনি তাকে ডাকলেন। তার অভিভাবক এবং তিনি তালাক দিয়েছিলেন, এবং তিনি তাকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি বলেন, তারপর আমি তার বিবাহের পর আসি এবং উমর আমাকে তার এবং তার মধ্যে যে মোহরানাটি বিশ্বাস করেছিলাম তা দিয়েছিলেন। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -১২৩২০; মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা -১৬৯৮৫



হাদিস/ আসার নং -০২

عن ابنِ المسَيِّب: (أنَّ عُمَرَ وعُثمانَ قَضَيا في المفقودِ أنَّ امرأتَه تتربَّصُ أربَعَ سِنينَ وأربعةَ أشهرٍ وعَشرًا بعد ذلك، ثمَّ تُزَوَّجُ، فإن جاء زوجُها الأوَّلُ خُيِّرَ بين الصَّداقِ وبينَ امرأتِه.أخرجه عبد الرزاق في ((المصنف)) (12317) واللفظ له، وابن أبى شيبة في ((المصنف)) (16988). صحَّحه ابن حزم في ((المحلى)) (9/371).

অর্থাৎ ইবনুল মুসাইয়্যিব রহ থেকে বর্ণিত। উমর ও উসমান নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে রায় দেন যে তার স্ত্রী চার বছর, চার মাস এবং দশ দিন অপেক্ষা করেছিল, তারপরে তিনি বিয়ে করেছিলেন, এবং যদি তার প্রথম স্বামী আসে, তাকে যৌতুক এবং তার স্ত্রীর মধ্যে পছন্দ দেওয়া হয়েছিল।তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -১২৩১৭; মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা -১৬৯৮৮; আলমহল্লি-৯/৩৭১, ইবনে হাযম রহ.


সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত নারী যদি  উপরোক্ত দুটি পদ্ধতি অবলম্বন না করেন,  তাহলে তার বিবাহটা শুদ্ধ হয়নি।


তাই এখন  তালাকে তাফভীজ মাধ্যমে অথবা আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছিন্ন করে, ইদ্দত পালনের পর, আবার নতুন করে আবদ্ধ হতে হবে।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক