আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৬৩১: ঈদের প্রথম জামাতে শরিক না হলে কুরবানি সহিহ হবে কি?

No Comments



জিজ্ঞাসা -১২৬৩১:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

عن انس بن مالك رضى الله عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من ذبح قبل الصلوة فانما يذبح لنفسه ومن ذبح بعد الصلوة فقد تم نسكه واصاب سنة المسلمين ،(بخارى 5139)

মূহতারাম,উপরের হাদীসের আলোকে জানার বিষয় হলো, যদি কেহ ঈদের সালাত না পায় তার কুরবানী কি হবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, একজন শরিক প্রথম জামাত পায় নি এখন অন্য শরিকরা জবেহ করলে কোন অসুবিধা হবে কি না?


তারিখ:  ১৮/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  নুরুল ইসলাম, খুলনা  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, কুরবানির সহিহ হওয়ার জন্য ঈদের জামাত পাওয়া শর্ত নয়, 


দ্বিতীয় কথা হলো,  শুধু একজন নয়, সাতজনও ঈদের প্রথম জামাতে শরিক না হয়, কুরবানি করলে কোন অসুবিধা নেই।



মূল বিষয় হলো, নিজ  এলাকায় জামাত অনুষ্ঠিত হলেই কুরবানি সহিহ হবে। দলিল:


হাদিস নং -০১

6213 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ خُشَيْشٍ، قَالَ: ثنا الْحَجَّاجُ بْنُ الْمِنْهَالِ، قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , أَنَّ رَجُلًا ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَتُودًا جَذَعًا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُجْزِئُ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ» وَنَهَى أَنْ يَذْبَحُوا قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ النَّهْيَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا قُصِدَ بِهِ إِلَى النَّهْيِ عَنِ الذَّبْحِ قَبْلَ الصَّلَاةِ , لَا قَبْلَ ذَبْحِهِ , وَهُوَ لَا يَجُوزُ أَنْ يَنْهَاهُمْ عَنِ الذَّبْحِ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ إِلَّا وَهُوَ يُرِيدُ بِذَلِكَ إِعْلَامَهُمْ إِبَاحَةَ الذَّبْحِ لَهُمْ بَعْدَ مَا يُصَلِّي , وَإِلَّا لَمْ يَكُنْ لِذِكْرِهِ الصَّلَاةَ مَعْنًى. وَقَدْ رُوِيَ فِي ذَلِكَ أَيْضًا عَنْ غَيْرِ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُوَافِقُ هَذَا  

 আব্দুল্লাহ্ ইবন মুহাম্মাদ ইব্‌ন খাশীশ ...... হযরত জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) -এর নামায আদায় করার পূর্বে একটা ছােট ছাগল যবেহ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তােমার পরে আর অন্য কারাে জন্য (এই ছােট বাচ্চা ছাগল) যথেষ্ট হবে না এবং তাকে তিনি নামাযের পূর্বে যবেহ করতে নিষেধ করলেন। 

আবু জাফর বলেন, এখানে প্রমাণিত হলাে যে, নিষেধের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈদের নামায পড়ার পূর্বে কুরবানী না করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর যবেহ করার পূর্বে যবেহ্ না করা, তাঁর নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য নয়। আর নামাযের পরে তাদের জন্য যবেহ করা জায়েয হবার ঘােষণা দেয়া উদ্দেশ্য না হলে তাে নামাযের পূর্বে যবেহ করা হতে তাদেরকে নিষেধ করা জায়েয হয় না। আর নামাযের পর যবেহ করা জায়েয না হলে নামাযের কথা উল্লেখ করারও কোন প্রয়ােজন হয় না। হযরত জাবির (রাযিঃ) ব্যতীত অন্যান্য সাহাবা-ই কিরাম নবী (ﷺ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।


—ত্বহাবী শরীফ, হাদীস নং ৬২১৩



হাদিস নং -০২

6222 - حَدَّثَنَا ابْنُ مَرْزُوقٍ قَالَ: ثنا أَشْهَلُ بْنُ حَاتِمٍ , قَالَ: ثنا شُعْبَةُ , عَنْ سَعِيدِ بْنِ مَسْرُوقٍ , عَنِ الشَّعْبِيِّ , عَنْ أَبِي سَرِيحَةَ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , كَانَا لَا يُضَحِّيَانِ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: أَفَتَرَى مَا ضَحَّى فِي تِلْكَ السِّنِينَ أَحَدٌ , إِذْ كَانَ إِمَامُهُمْ لَمْ يُضَحِّ , أَوَ لَا تَرَى أَنَّ إِمَامًا لَوْ تَشَاغَلَ يَوْمَ النَّحْرِ بِقِتَالِ عَدُوٍّ أَوْ غَيْرِهِ , فَشَغَلَهُ ذَلِكَ عَنِ النَّحْرِ , أَمَا لِغَيْرِهِ مِمَّنْ أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ , فَلَهُ أَنْ يُضَحِّيَ؟ فَإِنْ قَالَ: إِنَّهُ لَيْسَ لِأَحَدٍ أَنْ يُضَحِّيَ فِي عَامِهِ ذَلِكَ , خَرَجَ بِهَذَا مِنْ قَوْلِ الْأَئِمَّةِ. وَإِنْ قَالَ: لِلنَّاسِ أَنْ يُضَحُّوا إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ لِذَهَابِ وَقْتِ الصَّلَاةِ , فَقَدْ دَلَّ ذَلِكَ عَلَى أَنَّ مَا يَحِلُّ بِهِ النَّحْرُ , مَا كَانَ فِي وَقْتِ صَلَاةِ الْعِيدِ , فَإِنَّمَا هُوَ الصَّلَاةُ , لَا نَحْرُ الْإِمَامِ , فَإِذَا صَلَّى الْإِمَامُ , حَلَّ النَّحْرُ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْحَرَ. أَوَ لَا تَرَى أَنَّ الْإِمَامَ لَوْ نَحَرَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ لَمْ يُجْزِهِ ذَلِكَ , وَكَذَلِكَ سَائِرُ النَّاسِ. فَكَانَ الْإِمَامُ وَغَيْرُهُ، فِي الذَّبْحِ قَبْلَ الصَّلَاةِ، سَوَاءً فِي أَنْ لَا يُجْزِئَهُمْ. فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ الْإِمَامُ , وَسَائِرُ النَّاسِ أَيْضًا , سَوَاءً فِي الذَّبْحِ بَعْدَ الصَّلَاةِ. فَكَمَا كَانَ ذَبْحُ الْإِمَامِ بَعْدَ الصَّلَاةِ يُجْزِئُهُ , فَكَذَلِكَ ذَبْحُ سَائِرِ النَّاسِ بَعْدَ الصَّلَاةِ يُجْزِئُهُمْ. هَذَا هُوَ النَّظَرُ فِي هَذَا , وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ

 

 ইবন মারযূক ...... শাবী আবু শারীহা হতে বর্ণনা করেন, হযরত আবু বকর ও উমর (রাযিঃ) কুরবানী করতেন না।


সালিহ্ ইব্ন আব্দুর রহমান ও রাওহ ইবনুল ফারজ ......... শাবী, আবু শারীহা হতে বর্ণনা করেন, আমি হযরত আবু বকর ও উমর (রাযিঃ)-কে দেখেছি তারা কুরবানী করতেন না।

আবু জা'ফর তাহাভী (রাহঃ) বলেন, আপনি কি মনে করেন, যখন মুসলমানদের ইমাম (কোন কারণবশত) কুরবানী না করেন, সে বছর অন্য কেউ কুরবানীই করেনি? আপনি কি এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করেন না যে, যদি ইমাম ইওয়ামুন নাহর-এ কোন রণক্ষেত্রে যুদ্ধের কারণে অথবা অন্য কোন অনিবার্য কাজে লিপ্ত হওয়ার কারনে কুরবানী করতে না পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে অন্য লােক যারা কুরবানী করতে চায়, তারা কি কুরবানী করবে না, যদি কেউ বলেন, ঐ বছর কারাে জন্য কুরবানী করা জায়েয হবে না, তবে তিনি সম্মিলিত মত হতে বের হয়ে যাবেন। আর যদি বলেন, সূর্য হেলে যাবার পর তাদের জন্য কুরবানী করার অনুমতি হবে। কারণ তখন ঈদুল আযহার নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তবে তার এ কথা এটাই প্রমাণ করে, যার মাধ্যমে কুরবানী করা হালাল হয়, তা হলাে ঈদুল আযহার ওয়াক্তের মধ্যে ঈদুল আযহার নামায আদায় করা, ইমামের কুরবানী করা নয়। 

অতএব ইমাম যখন নামায পড়ে শেষ করবেন, তখন যে কুরবানী করতে ইচ্ছা করবে, তার জন্য কুরবানী করা হালাল হরে। আপনি কি দেখছেন না যে, ইমাম যদি নামায পড়ার পূর্বেই কুরবানী করেন, তবে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে না। একইভাবে অন্য সমস্ত লােকও অনুরূপ। সুতরাং ইমাম ও অন্য সকল নােক নামাযের পরে যবেহ করা যথেষ্ট না হবার ব্যাপারে সমান। অর্থাৎ তাদের কারাে জন্য তা যথেষ্ট হবে না। অতএব নযর ও যুক্তির দাবি হলাে, নামাযের পর যবেহ করার ব্যাপারেও ইমাম ও অন্যান্য সকল ব্যক্তি সমান হবে। নামায়ের পর যেমন

ইমামের কুরবানী করা তার জন্য যথেষ্ট হবে, অনুরূপভাবে অন্য সকলের জন্য নামাযের পরই কুরবানী করা যথেষ্ট হবে। 

এ অনুচ্ছেদ এটাই নযর ও যুক্তি দাবি। আর এটাই ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর মত ও মাযহাব।

—ত্বহাবী শরীফ, হাদীস নং ৬২২২


 তৃতীয় কথা হলো, যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

প্রশ্ন:ক। বিদেশ অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানি কি তার ঈদের নামাজ আদায় করার আগে সহীহ হবে?

উত্তর: ক।কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮


সারকথা হলো,  আপনার প্রশ্নের আলোকে, যদি কেহ ঈদের সালাত না পায় তার কুরবানীর কোন সমস্যা নেই। দ্বিতীয় বিষয় হলো, একজন শরিক প্রথম জামাত পায়নি এখন অন্য শরিকরা জবেহ করলে কোন অসুবিধা হবে না।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক