জিজ্ঞাসা-১২৬২৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
১। সংখ্যা দ্বারা তাবিজ দেওয়া কি শরীয়াতে বৈধ?
২। মানুষের ব্যবহৃত কাপড়, রক্ত, পশম বা চুল দিয়ে তদবীর করার হুকুম কী?
৩। বিভিন্ন প্রাণীর পশম, রক্ত বা হাড্ডি দিয়ে তদবীর করার হুকুম কী?
৪। জাদুকরের মুসলিম স্ত্রীর বিবাহ কি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে?
৫। জেনে-বুঝে যারা জাদু গ্রহণ করে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের হুকুম কী?
তারিখ: ০৩/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শহিদুল ইসলাম, খুলনা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, তাবিজ জায়েজ আছে কি না এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
প্রথম মত: সর্ব প্রকার তাবিজ হারাম, অনেকে শিরক বলে।
দ্বিতীয় মত: যে তাবিজে শিরক, শরিয়ত বিরোধী কথা নেই। অর্থাৎ এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত, দোয়ায়ে মাসূরা থাকে, তাহলে জায়েজ। দলিল:
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْفَزَعِ كَلِمَاتٍ " أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ " . وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ عَقَلَ مِنْ بَنِيهِ وَمَنْ لَمْ يَعْقِلْ كَتَبَهُ فَأَعْلَقَهُ عَلَيْهِ .
. মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... আমর ইবনে শুআয়েব (রাহঃ) তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণিত করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বিপদের সময় এ দুআ পড়তে বলতেনঃ আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতে মিন গাযাবিহি ওয়া শাররি ইবাহিদি ওয়া মিন হামাযাতিশ শায়াতিনে ওয়া আই- ইয়াহ দুরূনী।
আর আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) তার বয়স্ক ছেলে মেয়েদের এ দুআ শিখিয়ে দিতেন এবং ছোট বাচ্চাদের গলায় তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে দিতেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৫৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৯৩)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
যাই হোক, আপনার প্রশ্নের আলোকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য চার ভাগে করছি:
প্রশ্ন: ১। সংখ্যা দ্বারা তাবিজ দেওয়া কি শরীয়াতে বৈধ?
উত্তর: ১। যে সংকেত, সংখ্যা বুঝা যায় না, তা দ্বারা তাবিজ জায়েজ কিনা। এ বিষয়ে দুটি মতামত আছে।
প্রথমত: যে সংকেত বা সংখ্যা বোঝা যায় না, তারা তাবিজ লেখা মাকরুহ।
আর দ্বিতীয়টি হলো, যদি কুফুরি না হয়, শরীয়ত বিরোধী না হয়, তাহলে জায়েজ আছে। সূত্র:
সূত্র: ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়া -২ খণ্ড, ১৬৫ পৃষ্ঠা, ইমদাদুল মুফতীন-২৩৭
প্রশ্ন: ২। মানুষের ব্যবহৃত কাপড়, রক্ত, পশম বা চুল দিয়ে তদবীর করার হুকুম কী?
উত্তর: ২। সাধারণত পাক বস্তু দ্বারা তদবির করা জায়েজ আছে, নাপাক তদবির করা জায়েজ নেই। দলিল:
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ، حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الدَّوَاءِ الْخَبِيثِ .
হারুন ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হারাম জিনিস দিয়ে তৈরী ঔষধ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৩২ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৭০)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
উল্লেখ্য যে, শুধু বৈধ কাজে জায়েজ, অবৈধ কাজে জায়েজ নেই। উদাহরণত মনোমালিন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা পয়দার জন্য তদবির করা জায়েজ কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিছিন্ন তৈরি করা জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: ৩। বিভিন্ন প্রাণীর পশম, রক্ত বা হাড্ডি দিয়ে তদবীর করার হুকুম কী?
উত্তর: ৩। প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা তদবির করা জায়েজ আছে। সূত্র: সূরা বাকারা -৭৩ নং আয়াত
প্রশ্ন: ৪। জাদুকরের মুসলিম স্ত্রীর বিবাহ কি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে?
উত্তর: ৪। জাদু করা : জাদু করা বা কুফরি কালাম ব্যবহার করে তাবিজ-কবজ করলে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে ব্যক্তি ঈমানচ্যুত হয়। দলিল:
وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ
তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে জাদু শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। সূরা বাকারা-১০২
আর দ্বিতীয় কথা হলো, কোন মুমিন কুফরি করলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। যেমন,
وإذا ارتد أحد الزوجين عن الإسلام وقعت الفرقة بغير طلاق، وهذا عند أبي حنيفة، وأبي يوسف - رحمهما الله - وقال محمد - رَحِمَهُ اللَّهُ -: إن كانت الردة من الزوج فهي فرقة بطلاق هو يعتبره بالإباء، والجامع بينهما ما بيناه. وأبو يوسف - رَحِمَهُ اللَّهُ - مر على ما أصلنا له في الإباء. وأبو حنيفة - رَحِمَهُ اللَّهُ - فرق بينهما. ووجهه أن الردة منافية للنكاح؛
অর্থাৎ, দম্পতিযুগলের কোন একজন যদি ইসলাম ধর্মত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে স্বামী কর্তৃক তালাক দেয়ার আগেই উভয়ের মাঝে (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়ে যাবে। এটা আবূ হানীফা (রহ.) এর মতামত। মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ যদি ঘটে থাকে স্বামীর ধর্মত্যাগের কারণে, তাহলে সেটা তালাক হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি এই মাসআলাটিকে- স্বামী তালাক দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে বিচারক তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে (আপন নির্বাহী ক্ষমতাবলে) স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবেন। তবে সেটি স্বামী কর্তৃক তালাক প্রদান বলেই বিবেচিত হবে- এই মাসয়ালার উপর কিয়াস ( সাদৃশ্যতা নিরূপণ) করেছেন। আর উভয়ের মাসআলার মাঝে বিধানগত অভিন্নতার কারণ হলো সেটি, যা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি।
স্বামী তালাক দিতে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে করণীয় নিরূপণে আমরা যেই মূলনীতি নির্ধারণ করেছি, আবু ইউসুফ (রহ.) সেই মুলনীতিটিই এই মাসআলার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছেন। তবে আবু হানীফা (রহ.) উভয় মাসআলার মাঝে বিধানগত পার্থক্য করেছেন। তার কারণ হলো, স্বামী বা স্ত্রীর কোন একজন ধর্মত্যাগ করামাত্রই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক টুটে যায়। (যেহেতু বিয়েই বহাল থাকছেনা, সুতরাং আলাদাভাবে তালাকে প্রদানের মাধ্যমে দাম্পত্যের অবসানের প্রশ্নটাই অবান্তর।)
প্রশ্ন: ৫। জেনে-বুঝে যারা জাদু গ্রহণ করে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের হুকুম কী?
উত্তর: ৫। স্বামী স্ত্রীর কেউ মুরতাদ হয়ে গেলে তাৎক্ষনিকভাবে তাদের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাই পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা যদি সংসার করতে চায় তাহলে মোহর ধার্যসহ বিবাহ নবায়ন করতে হবে।
সূত্র: সূরা মায়েদা-৫৪, ফতওয়ায়ে শামী-৬/৩৬৬, তাতারখানিয়া-৭/২৮২,তাবয়িনুল হাকায়েক-৪/১৮০, ফতওয়ায়ে দ
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক