আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৬১৫: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি মানুষ,নূরের নয় ; এই বিষয়ে কুরআন ও হাদীস কি বলে?

No Comments

  জিজ্ঞাসা-১২৬১৫:


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি মানুষ,নূরের নয় ; এই বিষয়ে কুরআন ও হাদীস কি বলে?

তারিখ:  ০৮/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা আব্দুল হামিদ, নওগাঁ  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা আমাদের আকিদা বিশ্বাস হলো আল্লাহর পরে আমাদের রসূল শ্রেষ্ঠ। যেমন -

حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدِ بْنِ جُدْعَانَ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ فَخْرَ وَبِيَدِي لِوَاءُ الْحَمْدِ وَلاَ فَخْرَ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ يَوْمَئِذٍ آدَمُ فَمَنْ سِوَاهُ إِلاَّ تَحْتَ لِوَائِي وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الأَرْضُ وَلاَ فَخْرَ   

ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ..... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আমিই হব বনী আদমের সরদার। এতে কোন অহংকার নেই; আমার হাতেই থাকবে হামদের পতাকা, এতে কোন অহংকার নেই; আদম এবং অন্যান্য সকল নবীই ঐ দিন আমার পতাকার নীচে থাকবেন। আমিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মাটি বিদীর্ণ করে উঠবে, এতে কোন অহংকার নেই। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী- ৩১৪৮

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)



দ্বিতীয় কথা হল, আমাদের পবিত্র ইসলাম দলিল প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং দলিলের ভিত্তিতে যেটি মজবুত শক্তিশালী জমহুর ওলামা কেরামের যেটা মত সেটা আমরা অগ্রাধিকার দিব, এটাই হলো ইনসাফ কোন কথা।  আর আমাদের প্রিয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের মহব্বতের বিষয় কোন মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ঝগড়া নেই। সব শ্রেণীর,  সব তবকার মুসলমানরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে, তবে পদ্ধতিগত ভিন্নতা, ভুল হতে পারে।



যাই হোক আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মাটি না নূরের তৈরি এ বিষয়ে দুটি মতামত রয়েছে। 



০১. নূরের তৈরি :  যারা নূরের তৈরি বলেন, তাদের দলিলগুলো নিম্নরূপ:

আয়াত নং -০২

مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ

 তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। সূরা মায়েদা-১৫


ব্যাখ্যা: এই আয়াতে নূর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি।


হাদিস নং -০১

عن جابر رصي الله عنه قال قلت يا رسول صلي الله عليه و سلم بابي انت و امي اخبرني عن اول شييء خلق الله تعالي قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالي ولم يكن في ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جتة ولا نار ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جني ولا انسي ….الي اخر

হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা, মাতা আপনার জন্য কুরবানি হোক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন?

তিনি বলেন, হে জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম সব কিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই নূর মুবারক আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতের মাঝে ঘুরছিলো।আর সে সময় লওহো, ক্বলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জ্বিন কিছুই ছিলো না। সূত্র: দালায়েলুন নবুওয়াত ১৩/৬৩, মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১/৯



হাদিস নং -০২

عبد بن قيس الزعفرانى عن عبد الملك بن عبد الله بن الوليد عن ذكران ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر، ذكره السيوطى فى “الخصائل الكبرى-1/122)

অর্থঃ-      “নূরের দলীল হিসেবে ছায়াহীন দেহের যে       রেওয়ায়াত      পেশ      করা       হয়,       তা        হচ্ছে- “দিনের  সূর্যের  আলো  কিংবা   রাতের   চাঁদের আলো-       কোনটিতেই       হুযুর      [ﷺ]-এঁর      দেহ মোবারকের       ছায়া   পড়তো   না।   কারণ    তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” সূত্র: ইমাম      কাযী      আয়ায      (رحمة         الله      عليه) শিফা             শরীফের             ১ম              খন্ড            ২৪২            পৃষ্ঠা



হাদিস নং -০৩

عن  عائشة   رضي  الله عنها انها  قالت كنت اخيط  في السحر ثوبا لرسول الله صلى الله عليه وسلم فانطفا   المصباح   وسقطت   الابرة  من  يدي   فدخل على     رسول     الله    صلى    الله     عليه     وسلم     فأضاء البيت من نور وجهه فوجدت الابرة.

অর্থঃ- হযরত   আয়েশা (رضي  الله   عنها)  হতে বর্ণিত-      ”তিনি         বলেন,      আমি       রাত্রে       বাতির আলোতে  বসে নবী করীম [ﷺ]-এঁর কাপড়  মোবারক      সেলাই      করছিলাম।      এমন      সময়  প্রদীপটি      (কোন      কারণে)     নিভে      গেল     এবং আমি সুঁচটি হারিয়ে ফেললাম। এর পরপরই নবী        করীম       [ﷺ]       অন্ধকারে       আমার         ঘরে প্রবেশ     করলেন।       তাঁর     চেহারা     মোবারকের  নূরের            জ্যোতিতে           আমার            অন্ধকার            ঘর আলোময়              হয়ে            গেল            এবং             আমি              (ঐ আলোতেই)       আমার       হারানো         সুঁইটি        খুঁজে পেলাম।” সূত্র: ইমাম  ইবনে   হাজর   হায়তামী   (رحمة   الله عليه)        ’আন-নে’মাতুল       কোবরা’      গ্রন্থের      ৪১ পৃষ্ঠা


হাদিস নং -০৪

وَعَن العِرْباض بن ساريةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: إِنِّي عِنْدَ اللَّهِ مَكْتُوبٌ: خَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لِمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ وَسَأُخْبِرُكُمْ بِأَوَّلِ أَمْرِي دَعْوَةُ إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةُ عِيسَى وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ حِينَ وَضَعَتْنِي وَقَدْ خَرَجَ لَهَا نُورٌ أَضَاءَ لَهَا مِنْهُ قُصُورُ الشَّامِ «. وَرَاه فِي» شرح السّنة

اسنادہ حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 207 ح 3626) [و احمد (4 / 127 ح 17280 ، 4 / 128 ح 17281) و صححہ ابن حبان (الموارد : 2093) و الحاکم (2 / 600)

অর্থাৎ ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি  বলেন: আল্লাহ তা’আলার কাছে আমি তখনো ’খাতামুন্‌ নাবিয়্যিন’ হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম যখন আদম আলায়হিস সালাম ছিলেন মাটির খামিরায়। আমি তোমাদেরকে আরো বলছি যে, আমার নুবুওয়াতের প্রথম প্রকাশ হলো ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর দু’আ এবং ঈসা আলায়হিস সালাম -এর ভবিষ্যদ্বাণী আর আমার মায়ের সরাসরি স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসবকালে দেখেছিলেন যে, তাঁর সামনে একটি আলো উদ্ভাসিত হয়েছে, যার আলোতে তিনি সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ পর্যন্ত দেখতে পান। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ ১৭১৯১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৭৩, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯৭১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৪০৪, 


মনীষীদের বাণী -০৫


   আশ্রাফ   আলী   থানবী   সাহেব   তার   شُكْرُ  النِّعْمَةِ        بِذِكْرِرَحْمَةِ        الرَّحْمَة       গ্রন্থের       ৩৯       পৃষ্ঠায় স্বীকার করেছেন:- 

يه   بات  مشهور  هے  كه   همارے   حضور  صلى  الله عليه     وسلم       كے     جسم    كا      سايه    نهين     تها    (اس لۓكے)       همارے       حضور       صلى       الله       عليه       وسلم  سرتاپا نور هى نور تہے 


অর্থঃ- “একথা  সর্বজন স্বীকৃত ও প্রসিদ্ধ যে, আমাদের  হুযুর  [ﷺ]-এঁর দেহের  ছায়া ছিল না।  কেননা   আমাদের   হুযুর   [ﷺ]-এঁর  মাথা  মোবারক    হতে   পা   মোবারক    পর্যন্ত   শুধু   নূর আর নূর ছিলেন।” (শোক্‌রে নে’মত)


২. মাটির তৈরি: এটা বুঝতে কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি।


প্রশ্ন: ক। মানুষ কিসের তৈরি?


উত্তর: ক। কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়। দলিল:


আয়াত নং -০১

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِن طِينٍ (71

অর্থাৎ যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন-আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব। সূরা সোয়াদ-৭১



আয়াত নং -০২

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ (26

 নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা। সূরা হিজর-২৮



প্রশ্ন: খ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মানুষ না ফিরেশতা ?


উত্তর: খ। নবীজী সাঃ কি ছিলেন? মানুষ? না জিন? না ফেরেস্তা? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি জিন নন, এ ব্যাপারে সকলে একমত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। কথা হচ্ছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরী ফেরেস্তা কি না? নাকি মাটির তৈরী মানুষ?


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা?


ফিরেশতা ছিল না তার দলিল নিম্নরূপ: 


আয়াত নং -০১

قُل لَّا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ 

আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। সূরা আনআম-৫০


আয়াত নং -০২

قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً (93) وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً (94) قُل لَّوْ كَانَ فِي الأَرْضِ مَلآئِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء مَلَكًا رَّسُولاً (95

 বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম। {সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}



আয়াত নং -০৩

وَقَالُواْ لَوْلا أُنزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌ وَلَوْ أَنزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِيَ الأمْرُ ثُمَّ لاَ يُنظَرُونَ (8) وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلاً وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُونَ (9

তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে। {সূরা আনআম-৮,৯}



ব্যাখ্যা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন?


এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে।


সুতরাং বুঝা গেল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ফেরেস্তা নয়। আর মানুষ কিসের তৈরী? তা সুষ্পষ্টই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেছেন।


প্রশ্ন:   গ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন তার দলিল কি ?

উত্তর: গ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন। দলিল:


আয়াত নং -০১

قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً (93) وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً (94) قُل لَّوْ كَانَ فِي الأَرْضِ مَلآئِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء مَلَكًا رَّسُولاً (95


অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম। সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫


আয়াত নং -০২

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110

অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। সূরা কাহাফ-১১০



আয়াত নং -০৩

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (6

অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব তারই প্রতি একাগ্র হও, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরেকদের জন্য রয়েছে। দুর্ভোগ। সূরা হা-মীম সাজদা-৬



আয়াত নং -০৪

وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ (34

অনুবাদ-আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? {সূরা আম্বিয়া-৩৪}


হাদিস নং -০১

عن أمها أم سلمة قالت سمع النبي صلى الله عليه و سلم جلبة خصام عند بابه فخرج عليهم فقال ( إنما أنا بشر وإنه يأتيني الخصم فلعل بعضا أن يكون أبلغ من بعض أقضي له بذلك وأحسب أنه صادق فمن قضيت له بحق مسلم فإنما هي قطعة من النار فليأخذها أو ليدعها (صحيح البخارى-كتاب الأحكام، باب القضاء في كثير المال وقليله، رقم الحديث-6762

অনুবাদ-হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমিতো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম-৪৫৭২, তাহাবী শরীফ-৫৬৮০, মুসনাদুশ শামীন-৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী-১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা-২০৩২১



হাদিস নং -০২

ولكن إنما أنا بشر مثلكم أنسى كما تنسون فإذا نسيت فذكروني (صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب التوجه نحو القبلة حيث كان، رقم الحديث-392

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১



হাদিস নং -০৩

جابر بن عبد الله يقول سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « إنما أنا بشر وإنى اشترطت على ربى عز وجل أى عبد من المسلمين سببته أو شتمته أن يكون ذلك له زكاة وأجرا (صحيح مسلم، كتاب البر والصلة والآدب، باب من لعنه النبى -صلى الله عليه وسلم- أو سبه أو دعا عليه وليس هو أهلا لذلك كان له زكاة وأجرا ورحمة، رقم الحديث-6790

অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০



হাদিস নং -০৪

إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ: قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী (ﷺ)বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন। তাখরিজ: সহীহ ইবনে খুযাইমার টীকা হাদীস নং ১৭৩৩, ড. মুছতাফা আজমী


ব্যাখ্যা: 

مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ

এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। সূরা তহা-৫৫



উক্ত সাহাবি উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে বলেছেন যে, মাটির মানুষ মাটিতে মিশে যাবে। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটি থেকে তৈরি।


উল্লেখ্য যে, নবীদের দেহ মাটি যেন হারাম করেছেন এর অর্থ এই নয় যে নবীরা নূরের তৈরি। কারণ এই পৃথিবীতে অনেক নেককার বান্দার কবরে অক্ষত লাশ পাওয়া গেছে, তাহলে কি এ নেককার মানুষেরা নূরের তৈরি?


উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু মানুষ ছিলেন। ফেরেস্তা বা জিন নয়। আর মানুষ মাটির তৈরী হয় একথা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে স্পষ্টই বলেছেন। যা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে।



প্রশ্ন: ঙ। নূরের পক্ষের দলিলের ব্যাখ্যা এবং খণ্ডন কিভাবে ?


উত্তর: ঙ।

مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ

 তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। সূরা মায়েদা-১৫


ব্যাখ্যা: মুফাস্সিরে কিরাম বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো এই আয়াতে নূর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। 


জবাব: এই নূর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম উদ্দেশ্য হলেও, তিনি নূরের তৈরি একথা প্রমাণ করে না।


বিশ্ব বিখ্যাত কয়েকটি তাফসীরের ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হলো:


দলিল নং ১ বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) এর বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে আববাস এর মধ্যে আছে- ﻗﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻭ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻲ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺅﺳﻠﻢ - অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে ইবনে আববাস পৃষ্ঠা ৭২)। 


দলিল নং ২ ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত্-তবারী (রা) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে জারীর এর মধ্যে বলেন- ﻗﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻭ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻲ ﺑﺎﺍﻟﻨﺆﺭ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺅﺳﻠﻢ ﺍﻟﺬﻱ ﺍﻧﺎﺭ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﺍﻇﻬﺮﺑﻪ ﺍﻻﺳﻼﻡ ﻭﻣﺤﻖ ﺑﻪ ﺍﻟﺸﺮﻙ - অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, যে নূর দ্বারা আল্লাহ সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। ( তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৬, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।


 দলিল নং ৩ মুহীউস্সুন্নাহ আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহাম্মদ (রাঃ) (যিনি ‘খাজিন’ নামে পরিচিত) তাফসীরে খাজেনের মধ্যে বলেন- ﻗﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻭ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻰ ﺑﺎﺍﻟﻨﺆﺭ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻧﻤﺎ ﺳﻤﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﺍﻻﻧﻪ ﻳﻬﺪﺍﻯ ﺑﺎﻟﻨﻮﺭ ﻓﻲ ﺍﻟﻈﻼﻡ - অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নামকরণ করেছেন নূর, কারণ তাঁর নূরেতে হেদায়ত লাভ করা যায়। যেভাবে অন্ধকারে নূর দ্বারা পথ পাওয়া যায়। (তাফসীরে খাজিন ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)। 


দলিল নং ৪ ইমাম হাফেজ উদ্দীন আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ আন- নাসাফী (রা) এই আয়াত শরীফ ( ﻗﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻭ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺒﻴﻦ ) প্রসঙ্গে বলেন- ﻭﺍﻟﻨﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻻﻧﻪ ﻳﻬﺘﺪﺍﻱ ﺑﻪ ﻛﻤﺎ ﺳﻤﻲ ﺳﺮﺍﺟﺎ ﻣﻨﻴﺮﺍ - আর নূর হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা তাঁর নূরেতে হেদায়ত লাভ করা যায়, যেমন তাঁকে উজ্জ্বল প্রদীপ বলা হয়েছে। (তাফসীরে মাদারিক ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)। 



দলিল নং ৫ ইমামুল মুতাকাল্লেমীন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রা) এই আয়াত শরীফ ( ﻗﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻭ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺒﻴﻦ ) প্রসঙ্গে বলেন- ﺍﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﻨﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺑﺎﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ - অর্থঃ নিশ্চয়ই নূর দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কিতাব দ্বারা আল কোরআন মজীদকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে কবীর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৫, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)



সমস্ত তাফসীর কারক একথা বলেছেন যে নূর দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার হিদায়তের নূর ব্যাখ্যা করেছেন। 


সুতরাং এ আয়াতে কারিমা দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাতি নূর প্রমাণিত নয়।



হাদিস নং -০১

عن جابر رصي الله عنه قال قلت يا رسول صلي الله عليه و سلم بابي انت و امي اخبرني عن اول شييء خلق الله تعالي قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالي ولم يكن في ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جتة ولا نار ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جني ولا انسي ….الي اخر

হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা, মাতা আপনার জন্য কুরবানি হোক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন?


তিনি বলেন, হে জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম সব কিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই নূর মুবারক আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতের মাঝে ঘুরছিলো।আর সে সময় লওহো, ক্বলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জ্বিন কিছুই ছিলো না। সূত্র: দালায়েলুন নবুওয়াত ১৩/৬৩, মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১/৯



জবাব: আসমাউল রিজাল শাস্ত্রবিদদের নিকট হাদিসটি জাল। যেমন,


 মুহাদ্দিসগণ এজাতীয় শব্দমালা দিয়ে গঠিত হাদিসগুলোকে মাওযু বা জাল বলেছেন। যেমন শায়েখ আবুল ফায়েয আহমাদ আলগুমারী বলেন,


هو حديث موضوع، لو ذكره بتمامه لما شك الواقف عليه في وضعه، وبقيته تقع في نحو ورقتين من القطع الكبير مشتملة على ألفاظ ركيكة ومعان منكرة

হাদিসটি জাল। যদি সম্পূর্ণ হাদিসটা উল্লেখ করা হয় তাহলে পাঠক এর জালিয়াতি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ করবে না। হাদিসের অবশিষ্ট বক্তব্য দীর্ঘ প্রায় দুই পৃষ্ঠা, যাতে বহু নিস্তেজ শব্দ ও প্রত্যাখ্যাত অর্থ বিদ্যমান। (আল-মুগীর, বৈরুত, দারুর রায়িদ আল-আরাবী, ভূমিকা: পৃষ্ঠা ৬-৭)


জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. বলেন,


ليس له إسناد يعتمد عليه

হাদীসটির কোনো সনদ নেই যার উপর নির্ভর করা যায়। (আল হাবী ১/৩২৫)



হাদিস নং -০২

لَمْ  يَكُنْ  لَهٗ  صَلَّى  الله  عَلَيْهِ  وَسَلَّمَ  ظِلُّ  فِى  شَمْسٍ  وَلاَ قَمَرٍ لِاَنَّهٗ كَانَ نُوْرًا

অর্থঃ-      “সূর্য       চন্দ্রের       আলোতে       নবী      করীম  [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না। কেননা,      তিনি      ছিলেন      আপাদমস্তক         নূর।” যারকানী     শরীফ    ৪র্থ     খন্ড     ২২০    পৃষ্ঠ

জবাব:


এ বর্ণনাটি জাল ও ভিত্তিহীন। কেননা, প্রথমত তার সূত্রে রয়েছে আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী, যার সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের কঠোর মন্তব্য রয়েছে।


বিজ্ঞ রিজাল শাস্ত্রবীদ আব্দুর রহমান বিন মাহদী এবং ইমাম আবু যরআ রহঃ তাকে মিথ্যুক বলেছেন।

আবু আলী সালেহ ইবনে মুহাম্মদ রহঃ বলেন-

كلن عبد الرحمن بن قيس الزعفرانى يضع الحديث

صالح بن محمد

" كان يضع الحديث 

انظر " تاريخ بغداد " (10/251 - 252)

তথা আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী হাদীস জাল করতো। তারীখে বাগদাদ-১০/২৫১-২৫২, মীযানুল ই’তিদাল-২/৫৮৩, তাহযীবুত তাহযীব-৬/২৫৮


 দ্বিতীয় কথা হলো, এ হাদিসের বিপরীতে সহিহ হাদিস রয়েছে। যেমন,

ويئست منه فلما كان شهر ربيع الأول دخل عليها فرأت ظله فقالت إن هذا لظل رجل وما يدخل علي النبي صلى الله عليه وسلم فمن هذا فدخل النبي صلى الله عليه وسلم

এমনকি হযরত যায়নব রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর আগমন থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন। রবীউল আওয়ালে তার নিকট যান। ঘরে প্রবেশের প্রক্কালে যয়নব রাঃ তার ছায়া দেখতে পান এবং বলেন-এতো কোন পুরুষ মানুষের ছায়া বলে মনে হয়। তিনিতো আমার কাছে আসেন না। তাহলে এ ব্যক্তি কে? ইত্যবসরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৮৬৬; হাদীস-মুস্তাদরাকে হাকীম-৫/৬৪৮, হাদীস নং-৮৪৫



হাদিস নং -০৩

عن  عائشة   رضي  الله عنها انها  قالت كنت اخيط  في السحر ثوبا لرسول الله صلى الله عليه وسلم فانطفا   المصباح   وسقطت   الابرة  من  يدي   فدخل على     رسول     الله    صلى    الله     عليه     وسلم     فأضاء البيت من نور وجهه فوجدت الابرة.

অর্থঃ- হযরত   আয়েশা (رضي  الله   عنها)  হতে বর্ণিত-      ”তিনি         বলেন,      আমি       রাত্রে       বাতির আলোতে  বসে নবী করীম [ﷺ]-এঁর কাপড়  মোবারক      সেলাই      করছিলাম।      এমন      সময়  প্রদীপটি      (কোন      কারণে)     নিভে      গেল     এবং আমি সুঁচটি হারিয়ে ফেললাম। এর পরপরই নবী        করীম       [ﷺ]       অন্ধকারে       আমার         ঘরে প্রবেশ     করলেন।       তাঁর     চেহারা     মোবারকের  নূরের            জ্যোতিতে           আমার            অন্ধকার            ঘর আলোময়              হয়ে            গেল            এবং             আমি              (ঐ আলোতেই)       আমার       হারানো         সুঁইটি        খুঁজে পেলাম।” সূত্র: ইমাম  ইবনে   হাজর   হায়তামী   (رحمة   الله عليه)        ’আন-নে’মাতুল       কোবরা’      গ্রন্থের      ৪১ পৃষ্ঠা


জবাব:  আল্লামা আব্দুল হাই নাখনোভী রহ. এটাকে জাল আখ্যা দিয়ে বলেন,

و منها ما يذكره الوعاظ عند الذكر الحسن الحمدي أنه في ليلة من الليالي سقطت من عائشة رضي الله عنها. ابرته ففقدت...... وهذا و إن كان مذكوروا في معارج النبوية. و من الكتاب......و لكنه لم  يثبت رواية

অর্থাৎ “ফযীলতসংক্রান্ত জাল ও মনগড়া রেওয়ায়াতসমূহের অন্যতম একটি রেওয়ায়াত, যা বক্তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্যের বিবরণ দিতে গিয়ে উল্লেখ করে থাকেন, তা হল কোন এক রাতে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর হাত থেকে একটি সুই পড়ে যায়


“উক্ত রেওয়ায়াতটি বানোয়াট ও জাল; যদিও তা 'মাআরেজে নবুওয়্যাহ' সহ এমন কিছু সীরাতগ্রন্থে উল্লেখ আছে, যেগুলোতে শুদ্ধ-অশুদ্ধ সবধরনের কথাই স্থান পেয়েছে। এ প্রকার গ্রন্থাদির সবকিছুকে গাফেল ব্যক্তিই প্ৰমাণ হিসেবে পেশ করতে পারে। তাছাড়া পূর্বোক্ত কথাটির সূত্র ও বক্তব্য কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়।” সূত্র: আল আসারুল মারফুআ : ৪৬


এই হাদিসের বিপরীত সহিহ হাদিস রয়েছে। যেমন,

- حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ أَبِي النَّضْرِ مَوْلَى [ص:109] عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا قَالَتْ: «كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلاَيَ فِي قِبْلَتِهِ، فَإِذَا سَجَدَ غَمَزَنِي، فَقَبَضْتُ رِجْلَيَّ، فَإِذَا قَامَ بَسَطْتُهُمَا» ، قَالَتْ: وَالبُيُوتُ يَوْمَئِذٍ لَيْسَ فِيهَا مَصَابِيحُ

আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ..... নবী (ﷺ) এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে শুয়ে থাকতাম আর আমার পা দুটো থাকত তাঁর কিবলার দিকে। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন আমাকে টোকা দিতেন, আর আমি আমার পা সরিয়ে নিতাম। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে পুনরায় পা দুটো প্রসারিত করে দিতাম। আয়িশা (রাযিঃ) বলেনঃ তখন ঘরে কোন বাতি ছিল না।(তাই অন্ধকারে আমি দেখতে পেতাম না যে, তিনি কখন সেজদা করেছেন।)। তাখরিজ: বুখারি -৫১৩; মুসলিম -১/১৯৮; নাসায়ি -১৬৪

সুতরাং প্রমাণিত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের উপস্থিতিতেও বাহ্যিক অন্ধকার দূরবীভূত হওয়ার জন্য দৃশ্য নূরের (আলোর) প্রয়োজন হতো। 



হাদিস নং -০৪

وَعَن العِرْباض بن ساريةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: إِنِّي عِنْدَ اللَّهِ مَكْتُوبٌ: خَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لِمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ وَسَأُخْبِرُكُمْ بِأَوَّلِ أَمْرِي دَعْوَةُ إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةُ عِيسَى وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ حِينَ وَضَعَتْنِي وَقَدْ خَرَجَ لَهَا نُورٌ أَضَاءَ لَهَا مِنْهُ قُصُورُ الشَّامِ «. وَرَاه فِي» شرح السّنة

اسنادہ حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 207 ح 3626) [و احمد (4 / 127 ح 17280 ، 4 / 128 ح 17281) و صححہ ابن حبان (الموارد : 2093) و الحاکم (2 / 600)

অর্থাৎ ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলার কাছে আমি তখনো ’খাতামুন্‌ নাবিয়্যিন’ হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম যখন আদম আলায়হিস সালাম ছিলেন মাটির খামিরায়। আমি তোমাদেরকে আরো বলছি যে, আমার নুবুওয়াতের প্রথম প্রকাশ হলো ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর দু’আ এবং ঈসা আলায়হিস সালাম -এর ভবিষ্যদ্বাণী আর আমার মায়ের সরাসরি স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসবকালে দেখেছিলেন যে, তাঁর সামনে একটি আলো উদ্ভাসিত হয়েছে, যার আলোতে তিনি সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ পর্যন্ত দেখতে পান। (শারহুস্ সুন্নাহ্) 

মুসনাদে আহমাদ ১৭১৯১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৭৩, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯৭১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৪০৪, দারিমী ১৩, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৫০৩৪


জবাব: হাদিসটির সনদ সহিহ। নবিজির জন্মের মুজিযা,  কিন্তু নূরের তৈরি প্রমাণ হয় না।



মনীষীদের বাণী -০৫


   আশ্রাফ   আলী   থানবী   সাহেব   তার   شُكْرُ  النِّعْمَةِ        بِذِكْرِرَحْمَةِ        الرَّحْمَة       গ্রন্থের       ৩৯       পৃষ্ঠায় স্বীকার করেছেন:- 

يه   بات  مشهور  هے  كه   همارے   حضور  صلى  الله عليه     وسلم       كے     جسم    كا      سايه    نهين     تها    (اس لۓكے)       همارے       حضور       صلى       الله       عليه       وسلم  سرتاپا نور هى نور تہے 

অর্থঃ- “একথা  সর্বজন স্বীকৃত ও প্রসিদ্ধ যে, আমাদের  হুযুর  [ﷺ]-এঁর দেহের  ছায়া ছিল না।  কেননা   আমাদের   হুযুর   [ﷺ]-এঁর  মাথা  মোবারক    হতে   পা   মোবারক    পর্যন্ত   শুধু   নূর আর নূর ছিলেন।” (শোক্‌রে নে’মত)

জবাব: এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত বা উভয় পক্ষের দলিলের সমন্বয় অংশে। আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।



নিজস্ব মতামত ও উভয় পক্ষের দলিলের সমন্বয়: 

      একথা সত্য যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মোবারকে এক ধরনের নূর, জ্যোতি ছিল। দলিল:



আয়াত নং -০১


مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ 


মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । সূরা হুজুরাত -২৯


ব্যাখ্যা: নবীর সাহাবীদের চেহারা যদি সেজদার, এবাদতের বিশেষ চিহ্ন, নূর, থাকে, তাহলে নবীর চেহারাতেও কি তার চেয়ে বেশি সিজদা/ইবাদতের চিহ্ন, নূর থাকবে তার সহজে অনুমেয়।



হাদিস নং -০১


حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبٍ، قَالَ: سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ، يُحَدِّثُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ تَبُوكَ، قَالَ: فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُورِ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ، وَكُنَّا نَعْرِفُ ذَلِكَ مِنْهُ "

আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) কে তার তাবূক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) কে সালাম দিলাম, খুশী ও আনন্দে তাঁর চেহারা মুবারক ঝলমল করে উঠলো। তাঁর চেহারা এমনি-ই খুশী ও আনন্দে ঝলমল করতো। মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরা। তাঁর চেহারা মুবারকের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে সক্ষম হতাম। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৬


হাদিস নং -০২

হযরত হিন্দ ইবনে আবি হালা রা. বলেন,


يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهُ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْر


অর্থাৎ নবীজির সা. চেহারা পূর্নিমার চাঁদের মত ঝলমল করতো।

সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৬৪৭৫



হাদিস নং -০৩


হযরত হিন্দ ইবনে আবি হালা রা. বলেন,


يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهُ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْر


অর্থাৎ নবীজির সা. চেহারা পূর্নিমার চাঁদের মত ঝলমল করতো।

সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৬৪৭৫



হাদিস নং -০৪


হযরত রুবাইয়্যি বিনতে মুয়াওবিয ইবনে আফরা (নামক মহিলা সাহাবী যখন অনেক বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন তার ছেলে একদিন) তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা মা, আল্লাহর রাসূল দেখতে কেমন ছিলেন?” জবাবে রুবাইয়া বলেছিল


يا بُنيَّ لو رأيتَه لرأيتَ الشَّمسَ طالِعةً


অর্থাৎ বাবা, তুমি যদি তাঁকে দেখতে পেতে, তাহলে মনে করতে এই বুঝি সুর্য উঠেছে!

সূত্র: দারেমী হাদিস: ৬০



হাদিস নং -০৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,

كَأَنَّ الشَّمْسَ تَجْرِي فِي وَجْهِهِ

অর্থাৎ যেন সূর্য তার চেহারায় (মুখমণ্ডলে) বিচরণ করছে।

সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ৩৬৪৮


হাদিস নং -৬

হযরত আলী রা. তাঁর শশুর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. সম্পর্কে বলেছেন,

كأنَّ العَرَقَ في وجْهِه اللُّؤلُؤُ

অর্থাৎ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. এর চেহারার উপর ঘাম মুক্তার মত ঝলমল করতো।

সূত্র: তাবাকাতে ইবনে সা’আদ হাদিস: ১০৬২ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ: ৮ পৃ: ২৭৫ তারিখে দিমাশক খ: ৩ পৃ: ২৬২ দালায়েলুন নবুওয়াহ (বাইহাকী) খ: ১ পৃ: ২১৬


হাদিস নং -০৬

ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

كان رسولُ اللهِ إذا تكلَّم رُئِي كالنُّورِ يخرُجُ مِن بَيْنِ ثَناياه

অর্থ: যখন তিনি কথা বলতেন, তখন এই দাঁত মোবারক হতে যেন নূর ঠিকরে পড়তো।

সূত্র: তাবরানী খ: ১ পৃ: ২৩৪



হাদিস ও মনীষীদের মন্তব্য নং -৭


নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৌন্দর্য সম্পর্কে ইবনে কায়্যিম রহ. বলেন,

قالت طائفة المراد منه أن يوسف أوتي شطر الحسن الذي أوتيه محمد صلي الله عليه وسلم

অর্থাৎ কিছু উলামায়ে কেরাম বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, নবীজি মুহাম্মাদ সা. কে যে সৌন্দর্য দান করা হয়েছিলল তার অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল ইউসুফ আ. কে।

সূত্র: বাদায়িউল ফাওয়ায়েদ পৃ: ১১৬৭


কথাটি বুঝতে হযরত আনাস রা.এর হাদিসটি খুব সহায়ক হবে।


ما بعث اللَّهُ نَبِيًّا إِلا حَسَنَ الصَّوْتِ حَسَنَ الْوَجْهِ وَكَانَ نَبِيُّكُمْ صلى الله عليه وسلم أَحْسَنَهُمْ وَجْهًا وَأَحْسَنَهُمْ صَوْتًا

অর্থাৎ সকল নবীদেরকে আল্লাহ সবচে সৌন্দর্য এবং সবচে সুন্দর কণ্ঠ দিয়ে পাঠিয়েছেন। তবে তোমাদের নবী তাঁদের চেয়েও সুন্দর কন্ঠ ও সৌন্দর্যের অধিকারী।

সূত্র: ফাতহুল বারী খ: ৭ পৃ: ১৬২


প্রশ্ন: চ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা ও দেহ মোবারকের উপর নূরের হাকিকত কি?

উত্তর: চ। নূরের ডিপো/খনি  হলো মহান আল্লাহ তাআলা। যেমন,


Surah Al-Araf, Verse 143:

وَلَمَّا جَاءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي وَلَٰكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ


তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কস্মিনকালেও দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে দেখতে থাক, সেটি যদি স্বস্থানে দঁড়িয়ে থাকে তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে। তারপর যখন তার পরওয়ারদগার পাহাড়ের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। অতঃপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এল; বললেন, হে প্রভু! তোমার সত্তা পবিত্র, তোমার দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করছি। সূরা আরাফ -১৪৩



ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ তায়ালার নূরের এক ঝলকেই পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ, তাহলে মহান রাব্বুল আলামিনের জাত কেমন হবে? এজন্যই আহলে সুন্নাত জামাতের মতামত হলো, চর্মচক্ষু দ্বারা এই দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়।



দ্বিতীয় কথা হলো, এই মহান নূরের সত্তার সাথে যার ঘনিষ্ঠতা, সে ততো নূরের অধিকারী হবে, এটাই বাস্তবতা।


তৃতীয় কথা হলো, মিরাজ রজনীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে দেখেছেন কি না এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত আনাস রাঃ, হযরত ইকরিমা রহঃ, হযরত হাসান রহঃ, হযরত রাবী বিন সুলাইমান রহঃ, হযরত ইবনে খুযাইমা রহঃ, হযরত কা’বে আহবার রহঃ, হযরত যুহরী রহঃ, হযরত উরওয়া বিন যুবায়ের রহঃ, হযরত মা’মার রহঃ, হযরত আশআরী রহঃ এবং ইমাম আহমাদ রহঃ, ইমাম নববি রহ. এর বক্তব্য অনুপাতে সরাসরি আল্লাহকে দেখেছেন। দলিল:




আয়াত নং -০১

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ

নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। সূরা নজম -১৩

হাদিস নং -০১

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” رَأَيْتُ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি আমার রব আল্লাহকে দেখেছি। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৮০, সুনানে কুরবা নাসায়ী, হাদীস নং-১১৪৭৩,মু’জামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৬৮৫

নোট: হাদিসটির সনদ সহীহ।


হাদিস নং -০২

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا أَبِي ح، وَحَدَّثَنِي حَجَّاجُ بْنُ الشَّاعِرِ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، كِلاَهُمَا عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَقِيقٍ، قَالَ قُلْتُ لأَبِي ذَرٍّ لَوْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَسَأَلْتُهُ فَقَالَ عَنْ أَىِّ شَىْءٍ كُنْتَ تَسْأَلُهُ قَالَ كُنْتُ أَسْأَلُهُ هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ قَالَ أَبُو ذَرٍّ قَدْ سَأَلْتُ فَقَالَ " رَأَيْتُ نُورًا " .

মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার, হাজ্জাজ ইবনে শাইর (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবু যর (রাযিঃ) কে বললাম, যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাক্ষাত পেতাম, তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করতাম। আবু যর (রাযিঃ) বললেন, কি জিজ্ঞাসা করতেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম যে, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? আবু যর (রাযিঃ) বলেছেন, এ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেছেনঃ আমি নূর দেখেছি। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪১ (আন্তর্জাতিক নং ১৭৮-২)

চূড়ান্ত কথা হলো, কোন কোন হাদীসে এসেছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেননি, এসব হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হল, পূর্ণ দেখেননি। আর যেসব হাদীসে এসেছে দেখেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আংশিক হলেও দেখেছেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখের ভেতর কি পরিমাণ নূর নিম্নের ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়?

ঘটনা 



নিচের এই কবিতাটি দ্বারা বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে।


পারস্যের কবি শেখ সাদী রাহমাতুল্লাহর বিখ্যাত কবিতা সৎ সঙ্গ যার বাংলা অনুবাদ করেছেন শেখ হাবিবুর রহমান।



গন্ধ মধুর কর্দম মোরে একদা

দিলেন বন্ধু , ছিলাম যখন নাইতে ।

কহিলাম তারে , কস্তরী কিবা কি তুমি ?

সুবাসে তোমার পাগল এমন তাইতে

কহিল সে মোরে তুচ্ছ কর্দম আমি গো

ফুলসহ ছিনু কতকাল এক ঠাঁইতে ;

সংগীর গুন পশিয়াছে মম মাঝে গো ,

নইলে কাদার সুবাতাস কি এতো পাইতে ?

_____শেখ সাদী




ফুলের সাহচর্যের কারণে  কাদা থেকে যদি ফুলের সুঘ্রাণ আসতে পারে, তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে তার চেহারায় এবং দেহ মোবারকে সেই নূরের প্রতিচ্ছবি কেন প্রকাশ পাবে না।



অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম সত্ত্বাগতভাবে মাটির তৈরি হলেও আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যের কারণে তার চেহারা এবং শরীরে সেই নূরের ছিটা বিরাজমান ছিল।



হাদিস নং -০১

 حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، سَمِعْتُ أَبَا صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ  

উমর ইবনে হাফস (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেন, আমি সেইরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। তাখরিজ: ৭৪০৫; মুসলিম -২৬৭৫



হাদিস নং -০২

 نْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ الله تَعَالَى قَالَ : مَنْ عَادَى لِي وَلِيّاً فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا، وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ». رواه البخار

 বাংলা অনুবাদ: আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা---যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরয ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে লাগি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে! আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দিই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিই। তাখরিজ: বুখারি-৬৫০২


হাদিস নং -০৩

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ سَلَمَةَ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: رَكْعَةً، ثُمَّ اضْطَجَعَ فَنَامَ حَتَّى نَفَخَ، وَكَانَ إِذَا نَامَ نَفَخَ، فَآذَنَهُ بِلاَلٌ بِالصَّلاَةِ، فَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ، وَكَانَ يَقُولُ فِي دُعَائِهِ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَفِي بَصَرِي نُورًا، وَفِي سَمْعِي نُورًا، وَعَنْ يَمِينِي نُورًا، وَعَنْ يَسَارِي نُورًا، وَفَوْقِي نُورًا، وَتَحْتِي نُورًا، وَأَمَامِي نُورًا، وَخَلْفِي نُورًا، وَاجْعَلْ لِي نُورًا» قَالَ كُرَيْبٌ: وَسَبْعٌ فِي التَّابُوتِ، فَلَقِيتُ رَجُلًا مِنْ وَلَدِ العَبَّاسِ، فَحَدَّثَنِي بِهِنَّ، فَذَكَرَ عَصَبِي وَلَحْمِي وَدَمِي وَشَعَرِي وَبَشَرِي، وَذَكَرَ خَصْلَتَيْنِ

 হজরত ইবনে আব্বাস রা হতে বর্ণিত। তার অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঘুমে নাক ডাকাতেন। এরপর বিলাল (রাযিঃ) এসে তাকে জাগালেন। তখন তিনি নতুন উযু না করেই নামায আদায় করলেন। তার দুআর মধ্যে এ দুআও ছিলঃ “ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে বামে, আমার উপর-নীচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন।


কুরায়ব (রাহঃ) বলেন, এ সাতটি আমার তাবুতের মত। এরপর আমি আব্বাসের পুত্রদের একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তিনি আমাকে এ সাতটি অঙ্গের কথা বর্ণনা করলেন এবং রগ, গোশত, রক্ত, চুল ও চামড়ার উল্লেখ করলেন এবং আরো দুটির কথা উল্লেখ করেন। তাখরিজ:সহীহ বুখারী-৬৩১৬

নোট: এই হাদিস থেকে দুটি জিনিস প্রমাণিত হয়, এক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি নয়, তাহলে আল্লার কাছে আবার নূর চাইতেন না।


আর দ্বিতীয়টি হলো, সাধারণত আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলদের দোয়া  ফেরত দেন না। দুনিয়া বা আখেরাতে দান করেন। সেই দোয়ার প্রতিফলনের জ্যোতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মোবারকে ঝলমল করত।


প্রিয় পাঠক। উপরোক্ত কারণে কোন কোন বুজুর্গানে দ্বীন বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আপাদমস্তক নূর, কিন্তু এ দ্বারা তিনি নূরের তৈরি সেটা বোঝাননি। অনেকে সেটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।


সারকথা হলো, দলিল প্রমাণের দিক দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি সেটাই বলিষ্ঠভাবে প্রমাণিত। আর যারা নূরের তৈরি বলেন তাদের দলিল দুর্বল। যা শক্তিশালী দলিলের কাছে টিকে না।



তবে বাস্তবতা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম আল্লাহর নৈকট্যেশীল বান্দা হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলার সেই নূরের জ্যোতি তার চেহারা ও দেহ মোবারকে প্রকাশমান ছিল।


সেটাই অনেকে নূরের তৈরি বলে দাবি করে। তবে এ সত্য যে, সব মুসলমান তথা উভয় পক্ষই  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে ভালোবাসে।



সুতরাং  যারা নূরের তৈরি মানে না ,তাদেরকে কাফের- ওহাবী ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করা ঠিক নয়।



আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে সহি বুঝ দান করুন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বতকে আমাদের নাজাদের উসিলা হিসেবে কবুল করুন। যেমন, হাদিস শরিফে এসেছে -


حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ بَقِيَّةَ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، عَنْ يُونُسَ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَأَيْتُ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرِحُوا بِشَىْءٍ لَمْ أَرَهُمْ فَرِحُوا بِشَىْءٍ أَشَدَّ مِنْهُ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ يُحِبُّ الرَّجُلَ عَلَى الْعَمَلِ مِنَ الْخَيْرِ يَعْمَلُ بِهِ وَلاَ يَعْمَلُ بِمِثْلِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ " .

 ওয়াহাব ইবনে বাকীয়া (রাহঃ) ..... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী করীম (ﷺ)-এর সাহাবীগণকে কখনও এরূপ সন্তুষ্ট হতে দেখিনি, যেরূপ তারা সন্তুষ্ট হয়েছিল একথায়, যখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! একব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে তার ভাল কাজের জন্য ভালবাসে, কিন্তু সে নিজে সে কাজ করতে পারে না? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ মানুষ তারই সঙ্গী হবে, সে যাকে ভালবাসে। তাখরিজ: আবু দাউদ -৫১২৭


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক