আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৪১: ঈদের নামাজের আগে জবেহ করা হলে কুরবানি সহিহ হবে কি?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৬৪১:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমার জানার বিষয় হল, ঈদুল আযহার নামাজের পূর্বে পশু জবাই করলে সেটি কোরবানি হবে না এ মর্মে দলিল দরকার। (উল্লেখ্য যে, আমার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মতে জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকেই কোরবানি শুরু হয়, সুতরাং তার মতে ঈদুল আযহার নামাজের পূর্বে জবাই করলেও কোরবানি হবে)। তাই বিস্তারিত দলিল ভিত্তিক আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।

তারিখ:  ০৩/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, কোনো এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে জবেহ করা হলে তা কুরবানী হিসেবে তা গণ্য হবে না।


দলিল:

আয়াত নং -০১

Surah Al-Kauther, Verse 2:

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। সূরা কাওসার -০২

এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় আগে নামাজ পরে কুরবানি। যেমন,

لأن الأُضْحِيَّة لا تكون إلا بالذبح بعد صلاة العيد كما هو مقرر شرعا؛ لقوله تعالى: «فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ»[الكوثر: 2].

নিশ্চয়ই কোরবানি হলো, ঈদের সালাতের পর ছাড়া জবেহ বা কুরবানি হবে না। যেমন তা হলো শরীয়ত কর্তৃক স্বীকৃত। আল্লাহ তাআলার বাণী-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। সূরা কাওসার -০২

সূত্র: হুকুমু মিন যাবহিল উদহিয়াতু কবলাল সালাতাল ঈদ-২২/২০২২




হাদিস নং -০১

5556 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا مُطَرِّفٌ، عَنْ عَامِرٍ، عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: ضَحَّى خَالٌ لِي، يُقَالُ لَهُ أَبُو بُرْدَةَ، قَبْلَ الصَّلاَةِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «شَاتُكَ شَاةُ لَحْمٍ» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ عِنْدِي دَاجِنًا جَذَعَةً مِنَ المَعَزِ، قَالَ: «اذْبَحْهَا، وَلَنْ تَصْلُحَ لِغَيْرِكَ» ثُمَّ قَالَ: «مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَإِنَّمَا يَذْبَحُ لِنَفْسِهِ، وَمَنْ ذَبَحَ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ وَأَصَابَ سُنَّةَ المُسْلِمِينَ» تَابَعَهُ عُبَيْدَةُ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، وَإِبْرَاهِيمَ، وَتَابَعَهُ وَكِيعٌ، عَنْ حُرَيْثٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، وَقَالَ عَاصِمٌ، وَدَاوُدُ، عَنِ الشَّعْبِيِّ: «عِنْدِي عَنَاقُ لَبَنٍ» وَقَالَ زُبَيْدٌ، وَفِرَاسٌ، عَنِ الشَّعْبِيِّ: «عِنْدِي جَذَعَةٌ» وَقَالَ أَبُو الأَحْوَصِ: حَدَّثَنَا مَنْصُورٌ: «عَنَاقٌ جَذَعَةٌ» وَقَالَ ابْنُ عَوْنٍ: «عَنَاقٌ جَذَعٌ، عَنَاقُ لَبَنٍ»

 মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... বারা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বুরদাহ (রাযিঃ) নামক আমার এক মামা নামায আদায়ের পূর্বেই কুরবানী করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন তোমার বকরী কেবল গোশতের বকরী হল। তিনি বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার নিকট একটি ঘরে পোষা বকরীর বাচ্চা রয়েছে। নবী (ﷺ) বললেনঃ সেটাকে কুরবানী করে নাও। তবে তা তুমি ব্যতীত অন্য কারোর জন্য ঠিক হবে না। এরপর তিনি বললেন যে ব্যক্তি; নামায আদায়ের পূর্বে যবেহ করেছে, সে নিজের জন্যই যবেহ করেছে (কুরবানীর জন্য নয়) আর যে ব্যক্তি নামায আদায়ের পর যবেহ করেছে তার কুরবানী পূর্ণ হয়েছে। আর সে মুসলমানদের নীতি-পদ্ধতি অনুসরণই করেছে। তাখরিজ: বুখারি -৫৫৫৬; মুসলিম -১৯৬১



হাদিস নং -০২

623 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ خُشَيْشٍ، قَالَ: ثنا الْحَجَّاجُ بْنُ الْمِنْهَالِ، قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , أَنَّ رَجُلًا ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَتُودًا جَذَعًا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُجْزِئُ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ» وَنَهَى أَنْ يَذْبَحُوا قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ النَّهْيَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا قُصِدَ بِهِ إِلَى النَّهْيِ عَنِ الذَّبْحِ قَبْلَ الصَّلَاةِ , لَا قَبْلَ ذَبْحِهِ , وَهُوَ لَا يَجُوزُ أَنْ يَنْهَاهُمْ عَنِ الذَّبْحِ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ إِلَّا وَهُوَ يُرِيدُ بِذَلِكَ إِعْلَامَهُمْ إِبَاحَةَ الذَّبْحِ لَهُمْ بَعْدَ مَا يُصَلِّي , وَإِلَّا لَمْ يَكُنْ لِذِكْرِهِ الصَّلَاةَ مَعْنًى. وَقَدْ رُوِيَ فِي ذَلِكَ أَيْضًا عَنْ غَيْرِ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُوَافِقُ هَذَا  

 আব্দুল্লাহ্ ইবন মুহাম্মাদ ইব্‌ন খাশীশ ...... হযরত জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) -এর নামায আদায় করার পূর্বে একটা ছােট ছাগল যবেহ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তােমার পরে আর অন্য কারাে জন্য (এই ছােট বাচ্চা ছাগল) যথেষ্ট হবে না এবং তাকে তিনি নামাযের পূর্বে যবেহ করতে নিষেধ করলেন। ত্বহাবী শরীফ, হাদীস নং ৬২১৩



হাদিস নং -০৩

968 - حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ البَرَاءِ، قَالَ: خَطَبَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ النَّحْرِ، قَالَ: «إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ عَجَّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ [ص:20] النُّسُكِ فِي شَيْءٍ» ، فَقَامَ خَالِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَا ذَبَحْتُ قَبْلَ أَنْ أُصَلِّيَ وَعِنْدِي جَذَعَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُسِنَّةٍ قَالَ: " اجْعَلْهَا مَكَانَهَا - أَوْ قَالَ: اذْبَحْهَا - وَلَنْ تَجْزِيَ جَذَعَةٌ عَنْ أَحَدٍ بَعْد "

সুলাইমান ইবনে হারব (রাহঃ) ......... বারাআ ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল নামায আদায় করা। তারপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি নামাযের আগেই যবেহ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানীর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তখন আমার মামা আবু বুরদা ইবনে নিয়ার (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো নামাযের আগেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা ‘মুসিন্না’* মেষের চাইতেও উত্তম। তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ তার স্থলে এটিই কুরবানী করে নাও। অথবা তিনি বললেনঃ এটিই যবেহ কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষশাবক যথেষ্ঠ হবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯১৭ (আন্তর্জাতিক নং ৯৬৮)


হাদিস নং -০৪

أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ مُحَمَّدٍ الأَخْنَسِيِّ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ وَالْفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . وَفَسَّرَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ هَذَا الْحَدِيثَ فَقَالَ إِنَّمَا مَعْنَى هَذَا أَنَّ الصَّوْمَ وَالْفِطْرَ مَعَ الْجَمَاعَةِ وَعُظْمِ النَّاسِ .

 মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ রোযা হল যেদিন তোমরা রোযা পালন কর। ঈদুল ফিতর হল যেদিন তোমরা ইফতার কর। আর ঈদুল আযহা হল যেদিন তোমরা কুরবানী কর। - ইবনে মাজাহ ১৬৬০জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৭ (আন্তর্জাতিক নং ৬৯৭)

ব্যাখ্যা: "ঈদুল ফিতর হল যেদিন তোমরা ইফতার কর। আর ঈদুল আযহা হল যেদিন তোমরা কুরবানী কর। " ইসলামের শুরু হতে সাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদুল ফিতর আর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালন হয়ে আসছে।


সুতরাং মুসলিম উম্মাহর নিরবিচ্ছিন্ন আমল এর বিপরীত কথা ভয়ানক, বিদআত।



ফোকাহায়ে উম্মতের মতামত:

أن أول وقت ذبح الأضحية هو يوم عيد الأضحى بعد صلاة العيد، ولا يجزىء قبل ذلك،

নিশ্চয়ই কুরবানির পশু জবাই করার প্রথম সময় হলো ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজের পর।  নামাজের আগে জবেহ জায়েজ নেই। সূত্র: ওয়াক্তি যাবহিল উদহিয়া-৩৯৮৯২


সারকথা হলো, জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কুরবানি, এটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।  কোন এলাকায় প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কুরবানি জায়েজ, যে এলাকায় জুমাআ- ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব নয় অথবা বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত না হলে ঈদের নামাজের সময় অতিবাহিত হলে কুরবানি সহিহ হবে। যা আমরা জিজ্ঞাসা -১২৬৩৫ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে।


কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ঈদের নামাজের আগে জবেহ করা হলে কুরবানি সহিহ হবে না। এটাই উম্মাহর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।


এর বাহিরে কোন নস নেই, থাকলে প্রমাণ পেশ করার জন্য অনুরোধ রইল।



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক