আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১: দাড়ি কাটা যে কবীরাহ গুনাহ তার দলীল কী?

No Comments
আল-বুরহান: ইসলামি জীবন জিজ্ঞাসা-সমাধান ও দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দালিলিক বিশ্লেষণ সম্পর্কিত ব্লগ

জিজ্ঞাসা-১৩১:  

দাড়ি কাটা যে কবীরাহ গুনাহ তার দলীল কী?

 

  মাওলানা মাহবুব কক্সবাজার থেকে

 

উত্তর। দাড়ি রাখার হুকুম কিএক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। বেতরদুই ঈদের নামাজ যেমন ওয়াজিব। এ বিষয়ে আলেমদের কোন দ্বিমত নাই। অবশ্য দুএকজন বিছিন্ন মত দিয়েছেন তা উম্মতের কাছে পরিত্যাজ্য।  নিম্নে দলিল পেশ করা হলো।

কুরআনুল কারিম দ্বারা দলিলআল্লাহ তাআলা বলেছেন

আয়াত নং -০১

  فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ    অর্থ:   তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ এটাই আল্লাহর প্রকৃতি যার উপর মানুষ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই এটাই সরল-সঠিক ধর্ম কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না সূরা রূম-৩০

কাজেই যারা দাড়ি কামায় তারা আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতিতে বিকৃত করে যা হারাম

(   أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَ  অর্থ:  তাঁরা সে সব মানব (নবি-রাসূলযাদেরকে আল্লাহ তাআলা হেদায়েত দান করেছেনকাজেই তাদের পথই তোমরা অনুসরণ কর সূরা আনয়াম-৯০

 দাড়ি রাখা এক লাখ চব্বিশ হাজার (এ রকম-বেশি  আল্লাহ ভাল জানেনবি-রাসূলের সম্মিলিত বা ঐক্যমতের সুন্নাত (এ সম্পর্কে ৪নং হাদিস দেখুন)।  তাঁদের মুবারক-পবিত্র জামাতের অনুসরণ করতে উক্ত আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

 

 

হাদিসে নববি দ্বারা দলিল:

 

 (انْهَكُوا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوا اللِّحَى»  অর্থআব্দুল্লাহ  ইবনে  উমর রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ ()  বলেছেন, তোমরা গোঁফ বেশী ছোট রাখবে এবং দাড়ি বড় রাখবে। বুখারি-৫৪৬৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

( خَالِفُوا المُشْرِكِينَ: وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ  অর্থতোমরা মুশরিকের বিপরীত করদাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফকে কর ছোট বুখারিমুসলিম-২৫৯ ই.ফা.; মুসনাদে আহমদ-২১২৫২

(রাসূলুল্লাহ ()  বলেছেন

«وفروا اللحى «

অর্থদাড়ি বাড়াও (লম্বা-ঘন কর) সহীহ বুখারীহাদীস নং ৩৪৬২সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২১০৩।

 সুপ্রিয় ভাইগণ। উপরোক্ত তিনটি হাদিসে আমাদের প্রিয়  নবি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  দাড়ির লম্বা করতে আমরের সীগা ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করা অবশ্য কর্তব্য/ওয়াজিব। তার দলিল হল পবিত্র কুরআনের এ আয়াতগুলো- (  وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا  অর্থরসূল তোমাদেরকে যা দেনতা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেনতা থেকে বিরত থাক। সূরা হাশর-০৭

( لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ  অর্থ নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  এর মাঝে আছে উত্তম আদর্শ। তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।[৩৩ আল-আহযাব : ২১]  ইবনে কাসির রবলেছেন: এই মহান আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  এর প্রতিটি কথাকাজ ও প্রতিটি মুহূর্ত অনুসরণের ব্যাপারে একটি মহান মূলনীতি। তাফসীরে ইবনে কাসির-৩/৭৫৬

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ  অর্থ: হে ঈমানদারগণতোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর এবং নির্দেশ মান্য কর রসূলের। সূরা নিসা-৫৯

 

(দাড়ি রাখা আর মোচ কাটা শুধু অমুসলিমদের বিরোধিতাই নয় বরং এটা ফিতরাত বা স্বভাবজাত কাজও। যেমন,

«عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " قَالَ زَكَرِيَّا: قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ زَادَ قُتَيْبَةُ، قَالَ وَكِيعٌ: " انْتِقَاصُ الْمَاءِ: يَعْنِي الِاسْتِنْجَاءَ ».

অর্থদশটি বিষয় ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত: মোচ কাটাদাড়ি লম্বা রাখামিসওয়াক করানাকে পানি দেওয়ানখ কাটাচামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধৌত করাবগলের নিচের চুল তুলে ফেলানাভীর নিচের চুল মুণ্ডানো, (হাম্মাম বা বাথরুমের প্রয়োজন পূরণের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেনদশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছিযদি না তা হয় কুলি করা সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২৬১।

 

 (আমর ইবন শুয়াইব তার বাবা থেকেআর তার বাবা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَيْسَ مِنَّا مَنْ [ص:57] تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى....

যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলেসে আমাদের দলভুক্ত নয়তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (চাল-চলনবেশ-ভূষায় তাদের অনুকরণ করো না)। তিরমিযীহাদীস নং ২৬৯৫,

      এ প্রসঙ্গে বোখারী শরিফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি  রহবলেছেনতৎকালে মোশরেক-মজুসীরা দাড়ি ছেঁটে-কেটে ছোট করে রাখত তাদের কেহ কেহ সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলত সুতরাং দাড়ি সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা যে রূপ ইসলামের আদর্শের পরিপন্থীতদ্রূপ কেঁটে-ছেটে বিশেষ পরিমাণ হতে ছোট করে ফেলা ও ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী সূত্রবোখারি  শরিফ -৬ষ্ঠখণ্ড২৫০ পৃ.আল্লামা আজিজুল হক রহ.



ইজমা দ্বারা দলিল:

 হাফেয আল্লামা আবু মুহাম্মদ আলি ইবন হাযম (মৃত: ৪৫৬ হি.) বলেন,

اتفق العلماء على أن قص الشارب وإعفاء اللحية فرض.

সমস্ত আলেম একমত যেমোচ কাটা এবং দাড়ি রাখা ফরয (ওয়াজিব)।

শেখ আলী মাহফুয আল আযহারী বলেন৪ মাযহাবের আলেমগণ একমত যেদাড়িকে ঘন রাখা ওয়াজিবশেভ করা হারাম। প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকহবিদগণও দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলা বা শেভ করাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।যেমন-

হানাফী মাযহাব:

হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ  গ্রন্থ র্দুরে মুখতারে (২য় খণ্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছেপুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যেদাড়ি এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা হারাম যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ি সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইয়াহুদি ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।”মালেকী মাযহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম (আল আদাভি আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানি ৮ম খণ্ড ৮৯ পৃঃ)


মালেকী মাযহাব:

১. মালেকী মাযহাব মতেও দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত ছেটে ফেলাও হারাম।

২. মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী আল-মালেকী সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আলমুফহিম এ লিখেন দাড়ি মুণ্ডানো ও উপড়ানো কোনোটাই বৈধ নয়।

৩. মালেকী মাযহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খণ্ড৮৯ পৃ.)


শাফেঈ মাযহাব:

ইমাম শাফেঈ (রহ.) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আলউম্ম’ উল্লেখ করেছেন যেদাড়ি কর্তন করা হারাম শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম হাওয়াশি শারওয়ানি ৯ম খণ্ড ৩৭৬ পৃ.


হাম্বলী মাযহাব:

১. শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেনদাড়ি মুণ্ডানো বা শেভ করা হারাম।

২. ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের মাযহাবের আলেমগণও দাড়ি শেভ করাকে হারাম বলেছেন। দালায়েলুল আ-সার।

কিয়াস দ্বারা দলিল:  ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেন,

«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ»

অর্থযেসব পুরুষ নারীর সাথে এবং যেসব নারী পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশ-ভূষা গ্রহণ করেরাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত হওয়ার বদ-দোআ করেছেন সহীহ বুখারীহাদীস নং ৫৮৮৫আবূ দাঊদহাদীস নং ৪০৯৮তিরমিযীহাদীস নং ২৭৮৪নাসাঈহাদীস নং ১৯০৪। 

প্রিয় বন্ধুগণদাড়ি মুণ্ডানোর দ্বারা মহিলাদের সাদৃশ্য নয়?

 

দাড়ি সম্পর্কে আলেমদের মতামতদাড়ি বিখ্যাত আলেমদের মতামত নিম্নে তুলে ধরা হল-

 (ইমাম ইবন আবদিল বার্‌র রহ. (মৃত: ৪৬৩ হি.) তার তামহীদ কিতাবে বলেন,

يحرم حلق اللحية ولا يفعله إلا المخنثون من الرجال يعني بذلك المتشبهين بالنساء

দড়ি শেভ করা হারাম। আর এ কাজটি মুখান্নাচ বা নারীর বেশ ধারণকারীই করেকোনো পুরুষের কাজ নয় এটি।

৩- ইমাম কুরতুবী (রহ.) (মৃত: ৬৭১ হি.) বলেনদাড়ি শেভ করা বা উঠিয়ে ফেলা বা কাট-চাট করে ষ্টাইল করে রাখা নাজায়েয। দাড়ি রাখাবাড়িয়ে ও ঘন করে রাখা ফরয। দাড়ি শেভকারী তার এ গোনাহকে সবার সামনে প্রকাশ করেযা অতি কঠিন হারাম কাজ। সহীহ বুখারীর হাদীসে রয়েছেরাসূল (ﷺ) বলেন,

«كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا المُجَاهِرِينَ،».

আমার উম্মতের সবাইকে আল্লাহর রহমতে মাফ করা হবেতবে তারা ব্যতীত যারা গোনাহ ও নাফরমানীকে সকলের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়...... সহীহ বুখারীহাদীস নং ৬০৬৯।

৪- শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেনদাড়ি শেভ করা হারাম।

৫- আবুল হাসান ইবনুল কাত্তান আল মালেকী রহ. বলেনআলেমরা একমত যেদাড়ি শেভ করা অঙ্গবিকৃতি করার মতো হারাম কাজ।

৬- সৌদী আরবের সামাহাতুশ শাইখ আল্লামা শায়খ ইবন বায (রহ.) (মৃত: ১৪২০ হি.) বলেনদাড়িকে সংরক্ষণ করাপরিপূর্ণঘণ রাখা ও ছেড়ে দেওয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়। আর দাড়ি মুণ্ডানো (শেভ করা) ও ছোট করা হারাম।

৭- শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. (মৃত: ১৪২১ হি.) বলেনদাড়ি রাখা ওয়াজিবতা শেভ করা হারাম (কবীরা গুনাহ)।

৮- আলেমে দীন হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. তাঁর বিখ্যাত ইসলাহুর রুসুম গ্রন্থে লিখেছেন যে সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-আফুল লূহা ওয়া আহ্ফুস্ শাওয়ারেব যার অর্থ: তোমরা দাড়ি বড় কর ও মোচ ছোট কর। রাসূল (ﷺ)  করেছেন ছিগায়ে আমর দ্বারা অর্থাৎ হুকুমবাচক ক্রিয়াপদ দ্বারা। আর আমর (আদেশ) হাকীকাতান (মূলত) ওয়াজিবের জন্য ব্যবহার হয়।


প্রশ্ন: ক। দাড়ি কি খাটো না লম্বা এ বিষয়ে কুরআনিক দলিল? 


উত্তর: ক। 

অনেক ভাই বলে  রাসূল (ﷺ)  দাড়ি রাখতে বলেছেনসুতরাং রাখলেই চলবেলম্বা করা প্রয়োজন নেই। তাদের জবাবে এ আয়াতে পেশ করছিমহান আল্লাহ নবী হারূন আলাইহিস সালামের প্রসঙ্গ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনযখন হারূন আলাইহিস সালাম তার ভাই মূসা আলাইহিস সালামকে বলেন,

﴿قَالَ يَبۡنَؤُمَّ لَا تَأۡخُذۡ بِلِحۡيَتِي وَلَا بِرَأۡسِيٓۖ إِنِّي خَشِيتُ أَن تَقُولَ فَرَّقۡتَ بَيۡنَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ وَلَمۡ تَرۡقُبۡ قَوۡلِي ﴾ [طه

হারূন বললেন: হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল ধরবেন না। আমি আশংকা করেছিলাম যেআপনি বলবেন: তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো ও আমার কথা শোনায় যত্নবান হও নি। সূরা তহা- ৯৪

জ্ঞানবান ব্যক্তির কাছে প্রশ্ন। ইনসাফের সাথের বলুন দাড়ি যদি লম্বা না হতেনহজরত মুসা আহারুন আকে টান দিলেন কি করেসুতরাং এ আয়াত  প্রমানিত হলো নবি-রসূলদের দাড়ি লম্বা ছিল। যুগ যুগ ধরে এ আমলই চলে আসছে।

 

প্রশ্ন: খ। দাড়ি কি পরিমাণ লম্বা রাখা উচিত বা ওয়াজিব?

 উত্তর: খ। এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব।

হজরত ইবনে  ওমর রাযখন হজ করতেনতখন নিজ দাড়িকে হাতের মুঠার  মধ্যে ধরে একমুষ্ঠি চেয়ে বাড়তি অংশ কেটে ফেলতেন। বুখারি  ২য় খণ্ড৮৭৫ পৃষ্ঠা। এরূপ আমল হজরত ওমর রা.  এবং আবু হুরাইরা রাহতেও বর্ণিত আছে। ফাতহুল বারি -১০/২৮৮

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা ১৩/১১২হাদীস নং ২৫৯৯২২৫৯৯৯।

আল্লামা শামিরহলিখেছেন-  অর্থাৎ যেভাবে কিছু মাগরেবের (স্পেন,মরক্কোবাসিন্দা ও হিজড়া লোকেরা এক মুষ্ঠির চেয়ে খাট  করে দাড়ি  কেটে ফেলেকোন ইমামের (আলেমমতেই তা জায়েজ নাই। সূত্রফতোয়ায়ে শামি ২য় খণ্ড১২২ পৃষ্ঠা।

অনেকে দাড়ি বেশি লম্বা করেএটা ঠিক নয়। কারণ ইহুদিরা এখন লম্বা দাড়ি রাখে। আর হজরত  ইবনে ওমর রাএর চেয়ে আমরা বেশি সুন্নাতে অনুসারী নয়। তিনিই যখন এক মুষ্ঠির বাড়তি অংশ কেটে ফেলেছেন তথন আমাদের কি করণীয় ?

বিস্তারিত দেখুননায়লুল হাজাহ শরহে সুনানে ইবনেব মাজাহ-৩১৪ পৃষ্ঠামাআরেফে আবরার-১৪০ পৃষ্ঠাদাড়ি কা ওজুব দাড়ি রাখার আবশ্যকীয়তা

উপসংহার:

মুমিন!

তুমি কি চাও না যে

তোমার মুখচ্ছবিটি হোক ঠিক ঐ রকম

যে রকম ছিল তোমার প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ

()  এর মুখচ্ছবি ।

 

সূত্রঃ  মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস”-১৬২-১৬৫ পৃ.

 লেখক             :  মাওলানা মুফতি  মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসিরদাওরায়ে হাদিসআততাখাস্সুস লিলআদব)