জিজ্ঞাসা-২১৫:
السلام عليكم ورحمة الله
আমার প্রশ্ন হলো একজন ইমাম কি একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে কি না? তারিখ-০৪/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সালেহ আহমদ, আলীকদম, বান্দরবান থেকে--
জবাব: অলাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। একজন ইমাম কি একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে?
উত্তর: ক। না, একজন ইমাম একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে না। নবি-খোলাফা-সাহাবা- তাবেয়ি দ্বারা প্রমাণিত নয়।
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَلاَ تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ،
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ)ইরশাদ করেছেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়, তাই তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭২২
হাদীসে ইমামের বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে, আর ইমাম যখন নফল নামায পড়ছে, আর মুসল্লিগণ তার পিছনে ওয়াজিব নামাযের নিয়তে দাঁড়ায়, তাতো পরিস্কার তার বিরুদ্ধাচরণ। এভাবে ইক্তিদা কিভাবে সহীহ হতে পারে?
হাদিস/আসার নং-০২
হযরত কাতাদাহ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও হাসান বসরী রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি যোহরের জামাত মনে করে আসরের নামায আদায়রত জামাতে শরীক হল এবং নামাযের পর সে জানতে পারল, তারা আসর আদায় করেছে, উক্ত ব্যক্তি আসর ও যোহর উভয় নামায পুনরায় পড়বে।’-মুসন্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
এই হাদিসে আমরা দেখতে পাই মুক্তাদির ইমামের বিপরীত নামাজ হওয়ার কারণে নামাজ হয়নি। সুতরাং ওয়াজিব নামায আদায়কারী ব্যক্তি নফল নামাজ হবে কিভাবে?
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ইমাম যখন ঈদের নামায পড়বেন, তিনি অতিরিক্ত তাকবীরের সাথে পড়াবেন। অথচ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো নফল নামাযে ঈদের নামাযের মতো অতিরিক্ত তাকবীর নেই। বিশেষ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ জীবনে কখনো আদায়কৃত ঈদের নামায পুনরায় পড়াননি। কোনো সাহাবীকে এমন করতে আদেশও করেননি বা কোনো সাহাবী এমন করেছেন তার প্রমাণ নেই।
হাদিস নং -০৩
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, কোনো নামায একদিনে একাধিকবার পড়ো না। তাখরিজ: আবু দাউদ ১/৮৫
দ্বিতীয় কারণ হল এতদাঞ্চলে ফিকহে হানাফী অনুযায়ী কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করা হয়। তাই শরীয়তসম্মত প্রয়োজন ছাড়া বিপরীত ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা দ্বীনী মাসলাহাতের পরিপন্থী। সূত্র: আততামহীদ ২৪/৩৬৭; আলমাজমূ’ ৪/১৬৯; ফাতহুল বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্ম ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে তায়মিয়া ১/৬৩২; তাসহীলুল ২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
প্রশ্ন: খ। মুয়াজ ইবনে জাবাল রা তো ইমামতি করতেন।
উত্তর: খ।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ: «أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَرْجِعُ، فَيَؤُمُّ قَوْمَهُ»
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ রাসূল (ﷺ)-এর সাথে সালাত আদায় করতেন, তারপর ফিরে গিয়ে তার কওমের ইমামতী করতেন। তাখরিজ: বুখারী-৭০০
বুখারীর হাদীসে মুয়াজ রাঃ যে নামায নবীজীর পিছনে পড়তেন, ঠিক সেই নামাযটির ইমামতীই আবার গিয়ে করতেন কি না? তা পরিস্কার আসেনি।
কিন্তু অন্যান্য কিতাবে তা এসেছে।
এখানে বিষয় হল, এটি মুয়াজ রাঃ এর একটি ব্যক্তিগত আমল ছিল। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন নাকি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন? আরেকটি বিস্তারিত হাদীস দেখলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ رِفَاعَةَ الزُّرَقِيُّ: أَنَّ رَجُلًا، مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يُقَالُ لَهُ سَلِيمٌ أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ: إِنَّا نَظَلُّ فِي أَعْمَالِنَا , فَنَأْتِي حِينَ نُمْسِي , فَنُصَلِّي فَيَأْتِي مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ , فَيُنَادَى بِالصَّلَاةِ , فَنَأْتِيهِ فَيُطَوِّلُ عَلَيْنَا. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مُعَاذُ لَا تَكُنْ فَتَّانًا , إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي , وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَنْ قَوْمِكَ»
হযরত মুয়াজ বিন রিফাআ যুরকী রাঃ থেকে বর্ণিত। বনী সালামার এক ব্যক্তি যার নাম ছিল সালীম। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। এসে বললেন, আমরা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যায় ফিরে এসে সালাত আদায় করি। তখন মুয়াজ বিন জাবাল আসে। এসে সালাতের জন্য আহবান করে। তখন আমরা নামায পড়তে আসি। তখন মুয়াজ নামায অনেক দীর্ঘায়িত করে। [ফলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, এ অভিযোগ শুনে] তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মুয়াজ! ফিতনা সৃষ্টিকারী হইয়োনা, তুমি হয়তো আমার সাথে নামায পড়ো, অথবা তোমার কওমের সাথে সংক্ষেপে সালাত পড়। তাখরিজ: তাহাবী শরীফ-২৩৬২, আল-মু’জামুল কাবীর লিততাবরানী-৬৩৯১
এ হাদীসে ঘটনাটির মোটামুটি পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, নবীজী (ﷺ) মুয়াজ রাঃ কে বলছেন, তুমি হয়তো আমার সাথে নামায পড়, অথবা কওমের সাথে গিয়ে সংক্ষেপে নামায পড়াও।
যা পরিস্কার বুঝাচ্ছে, এক সালাতের ইমামতী দুইবার করা যায় না। যদি যেত, তাহলে নবীজী বলতেন, আমার পিছনে সালাত পড়ে গিয়ে, কওমের সাথে সংক্ষেপে নামায পড়ো। কিন্তু নবীজী তা না বলে, জানিয়েছেন, হয়তো, আমার সাথে পড়ো, নতুবা তাদের সাথে পড়।
এ হাদীস পরিস্কার প্রমাণ করে, এক সালাত একবার আদায়ের পর, সেটির ইমামতী আবার করা যায় না।
সুতরাং বুঝা গেল, হযরত মুয়াজ রাঃ এর একটি ব্যক্তিগত আমল, যার উপর নবীজী (ﷺ) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, সেটি উপস্থাপন করে এক সালাতের একাধিক জামাতের ইমামতীর বৈধতার পক্ষে দলীল পেশ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
তথ্য সহযোগিতায় মাসিক আল কাউসার ও আহলে হক মিডিয়া
الله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক