জিজ্ঞাসা-১২৫৯৫:
السلام عليكم و رحمة الله و بركاته
এক বাবা তার ছেলে মেয়েদের নগদ টাকা যদি বন্টন করতে চান তাহলে সম্পত্তির মতো ফারায়েজ হিসাবে বন্টন করা আবশ্যক কিনা? তারিখ: ১৮/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জমির উদ্দিন, কুষ্টিয়া থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জীবিত থাকা অবস্থায় মীরাছের শরয়ী বিধান জারী হয় না। তাই হিবা বা দান করার ব্যাপারে ফোকাহায়ে উম্মতের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যেমন,
واختلف العلماء رحمة الله عليهم هل يسوى بينهم ويكون الذكر كالأنثى، أم يفضل الذكر على الأنثى كالميراث؟ على قولين لأهل العلم، والأرجح أن العطية كالميراث وأن التسوية تكون بجعل الذكر كالأنثيين، فإن هذا هو الذي جعله الله لهم في الميراث وهو سبحانه الحكم العدل، فيكون المؤمن في عطيته لأولاده كذلك، كما لو خلفه لهم بعد موته للذكر مثل حظ الأنثيين، هذا هو العدل بالنسبة إليهم، وبالنسبة إلى أمهم وأبيهم، وهذا هو الواجب على الأب والأم أن يعطوا الأولاد للذكر مثل حظ الأنثيين؛ وبذلك يحصل العدل والتسوية، كما جعل الله ذلك في الميراث وهو عدل من أبيهم وأمهم[2].
أخرجه البخاري في كتاب الهبة
অর্থাৎ পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে আলেমগণ মতভেদ করেছেন: তাদের মধ্যে কি সমান, এবং পুরুষ নারীর মত, নাকি পুরুষকে নারীর উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, উত্তরাধিকারের মত? জ্ঞানী লোকদের দুটি উক্তি অনুসারে।
প্রথম মত: মিরাছ/ উত্তরাধিকার এর ছেলে মেয়ের দ্বিগুণ পাবে। দলিল:
وصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ [٤:١١]
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। কিন্তু কেবল কন্যা যদি দুয়ের অধিক হয়, তাহলে তাদের জন্য পরিত্যাক্ত সম্পত্তির দুই তৃতিয়াংশ, আর মাত্র এক কন্যা থাকলে তার জন্য অর্ধাংশ নির্ধারিত। {সূরা নিসা-১১}
দ্বিতীয় মত: ছেলে মেয়ে সমান সমান অংশ পাবে। কমবেশি করা যাবে না। দলিল:
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ يَقُولُ: أَعْطَانِي أَبِي عَطِيَّةً، فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لاَ أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي أَعْطَيْتُ ابْنِي مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً، فَأَمَرَتْنِي أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هَذَا؟»، قَالَ: لاَ، قَالَ: «فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ»، قَالَ: فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ
আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত সম্মত নই। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। [নু‘মান (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-১/৩৫২, হাদীস নং-২৫৮৭, ই’লাউস সুনান-১৬/১১৬, হাদীস নং-৫২৭৭
সারকথা হলো, জীবিত অবস্থায় বন্টন করলে ছেলে মেয়ে সকল সন্তানকে সমান দেয়াই উত্তম। তবে যৌক্তিক কারণে কমবেশি করা জায়েজ আছে।
যেমন ইমাম আজম বলেন,
وفى الردالمحتار- لو وهب رجل شيأ لأولاده فى الصحة واراد بفضيل البعض على البعضز………….عن ابى حنيفة لابأس به اذا كان التفضيل لزيادة فضل له فى الدين وان كان سواء يكره (ردالمحتار ١٢/٦٠٨
অর্থাৎ কিন্তু দ্বীনদার ও বদকার হিসেবে কাউকে কমবেশি করে দিলে কোন প্রকার গোনাহ হবে না। সর্ববস্থায় বন্টনটি কার্যকর হয়ে যাবে। সূত্র: রদ্দুল মুহতার -১২/৬০৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক