আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ।মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো,আমরা জানি, মসজিদের কাতার ডানদিকে লম্বা হবে এবং মুসল্লি বেশি থাকবে।কিন্তু যদি মসজিদের বামদিকের কাতার লম্বা হয় এবং মুসল্লি বেশি থাকে তাহলে কাতার এবং নামাজের মাসয়ালা সেক্ষেত্রে কি হবে। কুরআন সুন্নাহের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।(উল্লেখ্য মসজিদের কাতার বামদিকে স্হায়ীভাবে বড় করা হয়েছে।) জাজাকাল্লাহ খাইরান।
তারিখ: ১৬/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, কাপ্তাই, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
বরং ইমাম কাতারের মাঝে থাকবে। দুই পাশে মুসল্লি সমান থাকবে। এটাই কাতারের বিধান। দলিল:
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَوَسَّطُوا الْإِمَامَ وَسُدُّوا الْخَلَلَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইমামকে মধ্যখানে রাখো, কাতারের মাঝে খালি স্থান বন্ধ করে দিও। তাখরিজ: আবু দাউদ -৬৮১
এই হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেন, কাতারের যেকোনো পাশে বেশি থাকা মাকরুহ। তাই আপনার বর্ণিত ছুরুতে বাম দিকে বেশি থাকায় নামাজ মাকরুহ হচ্ছে।
দ্বিতীয় কথা হলো,জামাতে দাঁড়ানোর নিয়ম ফিকহি হানাফির মতে,
১. মুক্তাদি যদি একজন হয়, তবে সে মুক্তাদি ইমামের একটু পিছনে ডান পাশে দাঁড়াবে। দলিল:
ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَنَا بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ قَالَ وَجَعَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَرْمُقُنِي وَأَنَا لَا أَشْعُرُ ثُمَّ فَطِنْتُ بِهِ فَأَشَارَ إِلَىَّ أَنْ أَتَّزِرَ بِهَا
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (ﷺ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তাখরিজ: মুসলিম-৩০১০; আবূ দাঊদ-৬৩৪; মিশকাত- ১১০৭
২. দুইজন মুসল্লি হলে ইমামের ইমাম বরাবর একজন এবং ডানে একজন।
৩. তিনজন হলে ইমাম বরাবর একজন আর ডান পাশে একজন এবং বাম পাশে একজন।
৪. এর পর নতুন মুসল্লি আসলে, প্রথমে ডানে তার পর বামে এভাবে কাতার পূর্ণ করবে। দলিল:
لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
রাসূল (ﷺ) বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পেছনে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী তারা। যেতাখরিজ: মুসলিম-৪৩২
নোট: এ হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন, ইমামের কাছে হলো তার বরাবর, তারপর কাছে হলো ডানে, তার পর কাছে হলো বামে। তারপর কাছে হলো ডানে তার পর কাছে হলো বামে। এভাবে প্রথম কাতার পূর্ণ করবে দ্বিতীয় কাতারও তাই ইমাম বরাবর থেকে কাতার শুরু হবে।
তৃতীয় কথা হলো, ইমামের ডান পাশে সওয়াব বেশি এবং প্রথম কাতারে সওয়াব বেশি। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইমামের ডান পাশে বেশি মুসল্লি দাঁড়াবে, বাম পাশে কম দাঁড়াবে। বরং ইমামে দুই পাশে সমান সমান দাঁড়াবে। তবে দুই পাশে সমান থাকলে ডান পাশে দাঁড়াবে। আর একজন হলে ইমামের ডানে দাঁড়াবে। দলিল:
আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
بِتُّ عِنْدَ خَالَتِي، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ، فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ ، فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ ، فَأَخَذَ بِرَأْسِي فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ.৫৪
অর্থ- একদা আমি আমার খালার (উম্মুল মু’মিনীন মাইমূনাহ f এর) নিকট রাত্রি যাপন করি। রাছূলুল্লাহ 1 উঠে রাতের সালাত পড়তে লাগলেন, আমিও উঠে গেলাম তাঁর সাথে নামায পড়তে এবং গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় ধরে (আমাকে তাঁর পিছন দিকে ঘুরিয়ে) ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন। তাখরিজ: বুখারি -৬৯৮
শেষ কথা হলো, বাম পাশে মুসল্লি বেশি থাকায় জামাত মাকরুহ এর সাথে আদায় হচ্ছে।
এখন বাঁচার উপায় হলো, যদি মেহরাব নতুন করে করার সুযোগ না থাকে, তাহলে ইমাম মসজিদের প্রথম কাতারে ঠিক মাঝখানে দাঁড়াবে, আর মুসল্লিরা দ্বিতীয় কাতার থেকে কাতার বন্দী হবে।
- والله اعلم بالصواب
আল-বুরহান: ইসলামি জীবন জিজ্ঞাসা-সমাধান ও দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দালিলিক বিশ্লেষণ সম্পর্কিত ব্লগ