আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -২৫৮: যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত আছে, তখন কি লম্বা তাসবিহ পাঠ করা যাবে?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-২৫৮: 

السلام عليكم ورحمه الله بركاته

মুহতারাম, যে ফরয নামাযের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সে ফরয সালাতের পর বেশীক্ষন বসে না থেকে সুন্নাত সালাত আদায় করতে হবে, সঠিক মতামত জানতে চাই। মাওলানা সাইফুল ইসলাম ত্রিশাল,ময়মনসিংহ -----


জবাব:

وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم. نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد

তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, ইদানিং অনেক মসজিদে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু ভাই ফরজ নামাজের পরে দীর্ঘক্ষণ তাসবিহ- তাহলিল পড়ার পর সুন্নত পড়েন।


উল্লেখ্য যে, তাসবিহ তাহলিল শুধু ফরজ নামাজের পরে নয়, বরং সুন্নত বা নফল নামাজে পড়ো পাঠ করার কথা হাদিস শরীফে এসেছে। যেমন, ইমাম বায রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন,


يقول ثوبان t: «كان النبي ﷺ إذا انصرف من صلاته استغفر الله ثلاثًا وقال: اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام رواه مسلم وغيره، ولم يقل: المكتوبة؛ فدل على أنه من كل صلاة يستغفر في النافلة والفرض.

অর্থাৎ একথা প্রমান হয় না যে শুধু ফরজ নামাজের পরেই ইস্তেগফার করেছেন বরং ফরজ নফল সব নামাজের পরই। সূত্র: ইমাম ইবনে বায রহ. ফতোয়া থেকে


তাই হোক, এ বিষয়ে আলবানি রহ এবং তার অনুসারী আহলে হাদিস ভাইয়েরা ফরজ নামাজের পরপরই তাসবীহ-তাহলিল পড়া উত্তম মনে করেন। সূত্র: সিলসিলাতুল সহিহা-১০২ পৃষ্ঠা


পক্ষান্তরে ফোকাহায়ে আহনাফ ফরজ নামাজের পর বেশিক্ষণ দোয়া -মোনাজাত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা মাকরুহ তানজিহ বলেছেন। ওলামায়ে আহনাফের দলিল নিম্নরূপ:


হাদিস থেকে দলিল: 

عَنْ عَاءِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا سَلّمَ لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَام تَبَارَكْتَ يَاذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ -

تخريج الحديث وتحقيقه:

صحيح: أخرجه مسلم (592)، وأبو داود (1512)، والترمذي (298، 299)، والنسائي في ((المجتبى)) (3/ 69)، وفي ((الكبرى)) (1261، 7717، 9924، 9925)، وفي ((عمل اليوم والليلة)) (94-97و367)، وأبو يعلى (4721)، والبغوي (714) في ((شرح السنة))، وفي ((الشمائل)) (554)، وابن منده في ((التوحيد)) (208، 264، 358)، والطوسي في ((مختصر الأحكام)) (2/ 173، 174) رقم (282)، والدارمي (1347)، وابن ماجه (924

অর্থঃ মা আয়েশা (রাঃ)বলেন নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরাইবার পর এই দোয়া পড়া পরিমান সময়ের অধিক বসতেন না। “আল্লাহ্হুমা আনতাম সালামু ওয়া মিনকাছ সালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম (হে আল্লাহ তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হইতেই যাবতীয় শান্তি আসে তুমি বরকতময় হে প্রতাপ সম্মানের অধিকারী)”। তাখরিজ: মুসলিম-৫৯২,আবু দাউদ-১৫১২ তিরমিজি-২৯৮ ইবনে মাজাহ-৯২৪


উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মানাবী (রঃ) বলেন-

لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ – الخ اَيْ بَيْنَ الْفَرضِ وَالسُّنَّةِ

অর্থঃ এই পরিমাণ দোয়া পড়া পর্যন্ত বসতেন অর্থাৎ এই দোয়া পড়তেন ফরজের পর এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদার পূর্বে। সূত্র: এলাউস্ সুন্নান, আজীজী


কিয়াস দ্বারা দলিল:

যে সকল ফরজের পর সুন্নত নামাজ থাকে (যথা জোহর, জুম্মা, মাগরিব, এশা) এসব হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং ফরজ নামাজের পরে ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগে এ উভয়ের মাঝে মুনাজাত হলো মুস্তাহাব; এই মুস্তাহাব মুনাজাত লম্বা করার কারণে দেরীতে সুন্নত আদায় করা মাকরুহ হবে। সুন্নাতে মুয়াক্কাদার উপর মুস্তাহাব কাজকে প্রাধান্য দেওয়া বেদাত ও মাকরুহ । সূত্র: মাজাহেরে হক পৃষ্ঠা- ৩০৮; প্রশ্নোত্তরে দোয়ার আহ্‌কাম (লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, এম, এম)


হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রাঃ)বলেছেন, একটি মাকরুহ তানজিহ হতে (ছোট মাকরুহ কাজ হতে) আত্মরক্ষা করাও বছরের পর বছর ধরে নফল নামাজ, যিকির এবাদত, দোয়া, মোনাজাত হতে শত শত গুণে শ্রেষ্ঠ ফজিলতপূর্ণ । তাই ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ থাকলে দেরীতে সুন্নাত আদায় করা এমন মাকরুহ্ কাজ হতে বিরত থাকা উল্লেখিত ফজিলতের অধিকারী এবং বড়ই সৌভাগ্যের শামীল ।


ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত:

০১ নং

সমস্ত ফরজ নামাজের পরই দোয়া করা নবী (সাঃ) এর তরীকা ও সুন্নত। কিন্তু ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ থাকলে সেই স্থলে যথা- জোহর, মাগরিব, এশা ও জুমা নামাজের পর মুনাজাত সংক্ষিপ্ত করা উচিত। সূত্র: জখিরাতুজ জাফর ৫০ পৃষ্ঠা


০২ নং

উক্ত নামাজ সমূহের পরে লম্বা মুনাজাত করা মাকরুহ তানজিহী। সূত্র: মুনিয়া এবং গায়াতুল আওতার


০৩ নং

আর যে সকল ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত নামাজ নাই যথাঃ ফজর, এবং আছরের নামাজ- এ স্থলে যতটুকু ইচ্ছা মুনাজাত লম্বা করা যাবে।

وَفِي الْحُجّةِ الْاِمَامُ اِذَا فَرِغَ مِنَ الظُهْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ يَشْرَعُ فِيْ الْسُنَّةِ وَلَايَشْغِلُ بِاَدْعِيَةٍ طَوِيْلَةٍ – (كذافي التاتارخانيه – عالمغيري جلداول)

অর্থঃ কিতাবুল হুজ্জাতে উল্লেখ আছে, ইমাম সাহেব যখন জোহর, মাগরিব এবং এশার নামাজ শেষ করবেন, তখন সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত নামাজ শুরু করবেন। মুনাজাত দীর্ঘ/লম্বা করবেন না। সূত্র: অনুরূপ তাতার খানিয়া, ফতওয়ারে আলগিরী ১ম জিঃ পৃঃ ৭৭


০৪ নং

جن فراءض كى بعد سنتين هين انكي بعد دعاء مختصر كرنا هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدرالمختار- شامي- تاتارخانيه –منيةالمصلي )

অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ রয়েছে (যেমন- জোহর, মাগরিব, এশা)- যেগুলোর পর সংক্ষিপ্ত দোয়া করতে হয়। দীর্ঘ সময় কাটানো মাকরুহ্।

সূত্র: দুররুল মুখতার, মুখতার, শামী, তাতার খানিয়া, মুনিয়াতুল মুসল্লীতে;বেহেস্তী জেওর উর্দ্দু কেতাব পৃষ্টা- ২৩


০৫ নং

جن فراءض كي بعد سنتين هين ان كي بعد دعاء مختصر هونا منا سب اور افضل هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدر المختار – شامي – تاتارخانيه – منية المصلي –احسن الفتاوي)

অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে (জোহর, মাগরিব, এশা) তাদের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা উচিত এবং উত্তম। (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে) বেশী বিলম্ব করা মাকরুহ ।


সূত্র: অনুরূপ দুররুল মুখতার, শামী তাতার খানিয়াহ, মুনিয়া, আলমগিরী কিতাবে আছে; আহসানুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৬


০৬ নং

কোন কিতাবে দেখা যায় প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার (যেমন হাদিস শরীফে এসেছে,

ثوبان رضي الله عنه قَالَ : ( كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ : اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ ، وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ ) رواه مسلم (591)


وكذلك حديث كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رضي الله عنه عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( مُعَقِّبَاتٌ لَا يَخِيبُ قَائِلُهُنَّ - أَوْ فَاعِلُهُنَّ - دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ : ثَلَاثٌ وَثَلَاثُونَ تَسْبِيحَةً ، وَثَلَاثٌ وَثَلَاثُونَ تَحْمِيدَةً ، وَأَرْبَعٌ وَثَلَاثُونَ تَكْبِيرَةً )رواه مسلم (

 আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহে, আয়াতুলকুর্ছি, এখলাছ, ফালাক, নাছ এক একবার এবং ৩৩ বারসুব্হানাল্লাহ ৩৪ বার আলহামদুল্লিলাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া মোস্তাহাব। তবে যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে এগুলো সুন্নাতের পরে পড়াই মোস্তাহাব এবং উত্তম । সূত্র:মারাকি, বেহেস্তিজিওর-পৃঃ ১৫৩


যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সেক্ষেত্রে আমল, অজীফা, তাছবীহ, তাহ্লীল সমূহ সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর পড়তে হবে। এটাই উত্তম।

সূত্র: মারাকী, বেহেস্তি জেওয়র ২য় খন্ড পৃঃ ১৫৩


جن فراءض كي بعد سنتين هين انكي بعد امام اور مقتد يان مختصر دعاء كر سنتين ادا كري (فتاوي دار العلوم ديو بند جلد سوم )

অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ আছে সে সকল নামাজের পরে ইমাম এবং মুক্তাদীগণ সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত আদায় করবে। সূত্র: ফতওয়ায়ে দারুল উলুমদেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ১৯৭



০৭ নং

عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَيُّ الدُّعَاءِ اَسْمَعٌ قَالَ جَوْفُ الَّيْلِ الْاٰخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ ترمذي شريف-مشكوة شريف-

আবু উমাম (রঃ) বলেন একদিন নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ কোন্ দোয়া দ্রুত কবুল হয়? নবীজি বলেন শেষ রাতের এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া এ হাদীসের ব্যাখ্যা মা আয়শার হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, ফরজের পর সংক্ষেপ মুনাজাত করে সুন্নাতের পর মুনাজাত লম্বা করার কথা। তবে যে ফরজ নামাজের পর সূন্নাত নেই সেক্ষেত্রে দীর্ঘ মুনাজাত করতে দোষ নেই। আবি উমামারহাদীস মতে। ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হওয়ার অর্থ ফরজ - সূন্নাত নামাজের পর। অর্থাৎ ফরজের পর সুন্নতে মোয়াকদাহ নামাজ থাকলে সেক্ষেত্রে সংক্ষেপ মুনাজত করে সুন্নাত নামাজ আদায়ের পর যত ইচ্ছা মুনাজাত করা যাবে। বেহেস্তি জিওর


 


মূল কথা হলো, ফোকাহায়ে আহনাফ ফরজ নামাজের পরে মাসনুন দোয়া পড়াকে নিষেধ করেন না; বরং লম্বা দোয়া-মোনাজাত ও তাসবিহ তাহলিল নিষেধ করেন। কারণ ফরজ নামাজের পরে সুন্নতে মুয়াক্কাদা থাকে, সেই সুন্নত ওই ফরজের অধীন। দলিল হলো, কোন কারণে যদি সময়ের মধ্যে ফরজ নামাজকে দোহরায়তে (পুনরায় পড়তে হয়) হয়, তখন সুন্নতসহ পড়তে হয়।


সুতরাং যে ফরজ নামাজের পরে সুন্নত রয়েছে, সেই নামাজের পরই তাসবিহ তাহলিল সংক্ষেপ করে সুন্নত আদায় করে বাকি আমল করা উচিত।



উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক

আমল ও দুআ-১১: শিশুদের হেফাজতের দু‘আ।

No Comments

 











শিশুদের হেফাজতের দু‘আ


أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ: আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁ ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্‌।


অর্থ: আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহর পরিপূর্ণ কথাসমূহের, সকল শয়তান থেকে, সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও প্রাণী থেকে এবং সকল ক্ষতিকারক দৃষ্টি থেকে।

বুখারী হাদীস নং-৩৩৭১ সুনানুত তিরমিযী হাঃ ২০৬০



বিস্তারিত:

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ الْمِنْهَالِ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ وَيَقُوْلُ إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-এর জন্য দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন। আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাক্যগুলি দ্বারা হাসান ও হুসাইনকে (রাঃ) হেফাজত করাতেন। তিনি বলতেন, ইবরাহীম (আ.) এই বাক্যদ্বারা তার দুই সন্তান ইসমাঈল ও ইসহাককে (আ) হেফাজত করাতেন।[1]সকল মুমিন পিতা ও মাতার উচিত সকাল ও সন্ধ্যায় এই বাক্যগুলি পাঠ করে সন্তানদের ফুঁক দেওয়া ও দু‘আ করা।

জিজ্ঞাসা -১৫৫: কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের পর ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' বলা যাবে কিনা?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৫৫:  কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের পর ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' বলা যাবে কিনা দলীল সহ জানানোর অনুরোধ করছি

 

মাওলানা মোআখতার হোসেন যশোর থেকে----

 

জবাব:    প্রথম কথা হলো, পবিত্র কুরআন মাজীদ শুরু করতে তাউস ও তাসমিয়া (আয়ুজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহপড়তে হবে এ কুরআন-হাদিস নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তেলাওয়াত শেষে কি পড়বে তা সুস্পষ্ট বলা হয়নি।

সুতরাং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের পর ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' বলা জরুরিসুন্নাত/মুস্তাহাব মনে করা বিদআত। যেহেতু তা নস দ্বারা প্রমাণিত নয়। দলীল:

নবী () বলেন:
((
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ )). رواه البخاري و مسلم و قال صلى الله عليه وسلم ((مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ )). رواه مسلم.
অর্থযে আমাদের দীনে নতুন কিছু সৃষ্টি করলযা তার অন্তর্ভুক্ত নয়তা পরিত্যক্ত।  ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন: যে ব্যক্তি এমন আমল করলযার উপর আমাদের দীন নেইতা পরিত্যক্ত।  সূত্রবুখারি-মুসলিমলাজনায়ে দায়েমা: খ.৪পৃ.১১৮

 

প্রশ্ন:  কেউ যদি  ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' জরুরি  মনে না পড়েতাহলে কি বিদআত? 

উত্তর:       নাকেউ যদি  ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' জরুরি বা সুন্নাহ কিংবা মুস্তাহাব  মনে না পড়েতাহলে জায়েজ এবং  বিদআত হবে না।  আমাদের বড়দের থেকে   ''সাদাকাল্লাহুল আজীম'' বলা অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেমন,


  হাফেয ইবনুল জাযারি রহ. আন-নাশর কিতাবে বলেন: আমার কতক শায়েখকে দেখেছিতারা কুরআন খতম করে বলতেন ( তখন-''সাদাকাল্লাহুল আজীম'' বলতেন):
 رب
وقال القرطبي في تفسيره: قال الترمذي الحكيم أبو عبد الله في نوادر الأصول: ومن حرمته إذا انتهت قراءته أن يصدق ربه، ويشهد بالبلاغ لرسوله صلى الله عليه وسلم، ويشهد على ذلك أنه حق، فيقول: صدقت رب وبلغت رسلك، ونحن على ذلك من الشاهدين، اللهم اجعلنا من شهداء الحق، القائمين بالقسط، ثم يدعو بدعوات.

ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ তার তাফসীরে বলেন: হাকিম তিরমিযি আবু আব্দুল্লাহ নাওয়াদিরুল উসুল কিতাবে বলেন: কুরআনুল কারিমকে সম্মান প্রদর্শনের একটি দিক হচ্ছেতিলাওয়াত শেষে আল্লাহকে সত্যারোপ করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমাদের নিকট দীন পৌঁছিয়েছেন তার সাক্ষ্য প্রদান করাকুরআন হক এ কথারও সাক্ষ্য প্রদান করাযেমন বলা:
صدقت رب وبلغت رسلك، ونحن على ذلك من الشاهدين، اللهم اجعلنا من شهداء الحق، القائمين بالقسط، ثم يدعو بدعوات.


থেকে আমাদের ধারণা চতুর্থ হিজরিতে এ বাক্যটির প্রচলন ঘটেছেকারণ তিরমিযি আলহাকিম চতুর্থ শতাব্দির আলেম ছিলেনতবে তার পূর্বেও এর প্রচলন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ ভালো জানেন।

 সূত্র: তাফসির কুরতুবি-১/৪২; নাওয়াদিরুল উসুল’- ইমাম হাকিম তিরমিযি রহ.; হাফেয ইবনুল জাযারি রহএর  আন-নাশর

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক 


আমল ও দুআ-১০: দৃষ্টি,শ্রবণের সুস্থতা, দারিদ্র্যমুক্তি ও নিরাপত্তার দোয়া।

No Comments

 



দৃষ্টি,শ্রবণের সুস্থতা,দারিদ্র্যমুক্তি ও নিরাপত্তার দোয়া 


اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ .

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।


অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি কুফুরী ও দারিদ্র্য থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই কবরের আজাব থেকে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তাখরিজ: আবু দাউদ-৫০৯০; মুসনাদে আহমাদ


এই দোয়া পড়লে ধন সম্পদ এতো বাড়বে রাখারা জায়গা পাবেন না, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পাবে, বুদ্ধি বৃদ্ধি পাবে, যারা কানে কম শুনে তাদের শিফা হবে, মনের আশা পূর্ণ হবে, কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবেন। ইংশা-আল্লাহ।

জিজ্ঞাসা -১২৭০৫: দত্তক বা অন‍্যের শিশু সন্তান পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭০৫:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

অন‍্যের শিশু সন্তান পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা কি?

তারিখ:  ০৩/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা আশরাফুল ইসলাম যশোর  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে শর্ত হলো প্রকৃত পরিচয় গোপন করে নয়। ফোকাহায়ে কেরাম সন্তান দত্তক নেওয়া বা না নেওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন,


التبني للأطفال على قسمين : ممنوع ، وغير ممنوع .

أما الممنوع : فهو تبني الطفل باعتبار أنه ولد للمتبني له أحكام الولد ، فهذا لا يجوز ، وقد أبطله الله في القرآن في قوله تعالى : ( وما جعل أدعياءكم أبناءكم ) الأحزاب/4 .


وقسم مباح وقد يكون مستحباً ، وهو الإحسان إلى الطفل ، وتربيته التربية الدينية الصالحة ، وتوجيهه التوجيه السليم ، وتعليمه ما ينفعه في دينه ودنياه ، ولكن لا يجوز أن يسلم إلا لمن عرف بالأمانة والديانة وحسن السلوك ، وتحققت مصلحة الطفل عنده ، وأن يكون من أهل البلاد بحيث لا يذهب به إلى بلد قد يكون وجوده فيها سبباً لفساد دينه في المستقبل ، فعليه إذا تمت في حق كل واحد منهما هذه الشروط المذكورة فلا بأس بدفع اللقيط المجهول النسب إليه . والله يحفظكم

অর্থাৎ, কোন শিশুকে পালকপুত্র হিসেবে দত্তক গ্রহণ করার বিধান দুইরকম হতে পারে- ১) নিষিদ্ধ ২) বৈধ।


নিষিদ্ধঃ পালকপুত্রকে যদি নিজ ঔরসজাত সন্তানের মতোই মনে করা হয়ে থাকে, নিজসন্তানের ক্ষেত্রে যেসকল বিধান প্রযোজ্য, ( যেমন - উত্তরাধিকার সম্পত্তির প্রাপ্যতা, মাহরাম সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান প্রভৃতি) সেই বিধানগুলো যদি দত্তকপুত্রের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা সুনিশ্চিতভাবেই অবৈধ হবে। এই জাতীয় প্রথাকে বাতিল ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেন, " তোমাদের পালক পুত্রদেরকে তিনি তোমাদের প্রকৃত পুত্রের মর্যাদা দান করেননি।" (সূরা আহযাব-৪)


বৈধঃ পক্ষান্তরে কোন অসহায় শিশুর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তার প্রতি স্নেহময় আচরণ করা, তাকে দ্বীনি আবহে লালন-পালন করে বড় করে তোলা, যথাযথভাবে শিষ্টাচারের শিক্ষাদান করা, উভয়জগতে তার উপকারে আসবে এমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা, ইত্যাদি শুধু জায়েযই নয়, বরং তা মুস্তাহাব এবং প্রশংসনীয়ও বটে। 

       উল্লেখ্য যে, নাম-পরিচয়হীন কোন শিশুকে কুড়িয়ে পাওয়া গেলে, তার দায়িত্বগ্রহণের জন্য যাচাই-বাছাই না করে যার তার নিকট বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করা যাবেনা। বরং তার দায়িত্বেই ন্যস্ত করতে হবে, যিনি একাধারে দায়িত্বশীলতা, আমানতদারিতা, ধর্মপরায়ণতা ও উত্তম শিষ্টাচার সম্পন্ন হবেন, যার তত্ত্বাবধানে শিশুটি প্রতিপালিত হয়ে বেড়ে উঠলে সে একজন আদর্শ ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়। 

   প্রকাশ থাকে যে, অভিভাবকত্বের দায়িত্বগ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিটি সেই দেশেরই অধিবাসী হতে হবে। কারণ তিনি যদি ভীনদেশী হয়ে থাকেন, তাহলে এমন আশংকা থেকেই যায় যে, শিশুটিকে নিয়ে তিনি এমন দেশে পাড়ি জমাবেন, যেখানকার রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি শিশুর ধর্মপরায়নতাকে ভবিষ্যতে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।


অতএব যার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত শর্তগুলোর প্রতিটি পরিপূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে, তার অভিভাবকত্বেই নাম-পরিচয়হীন কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে অর্পন করা যাবে।


দ্বিতীয় কথা হলো, এতিম-অনাথ ও গরিব শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে ইসলাম উত্সাহিত করে। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। দলিল:

হাদিস নং -০১

سهل بن سعد رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا"، وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا

নবী করিম (ﷺ)  ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব।  তাখরিজ: বুখারি-৬০০৫


হাদিস নং -০২

নবী করিম (ﷺ) বলেন,  ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন। ’  তাখরিজ: তিরমিজি- ১৯১৭


সারকথা হলো, দত্তক বা অন‍্যের শিশু সন্তান পালন ইসলামের একটি স্বীকৃত বিষয় ‌‌।  স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দত্তক বা পালক সন্তান গ্রহণ করেছিলেন । যা সূরা আহযাবের ৪-৫ আয়াতে উল্লেখ আছে। শেষের প্রশ্নের জবাবে তা উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা -১২৭০৪: অর্থের বিনিময়ে নিজের গর্ভজাত সন্তানকে স্থায়ীভাবে অন‍্যকে দিয়ে দেওয়া জায়েজ কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭০৪: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

 অর্থের বিনিময়ে নিজের গর্ভজাত সন্তানকে স্থায়ীভাবে অন‍্যকে দিয়ে দেওয়া জায়েজ কি?   

তারিখ:  ০১/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, কুমিল্লা  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

  টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান দত্তক দেন। এটাকে এক ধরনের সন্তান বেচাকেনাও বলা যেতে পারে। এটি কেবল অমানবিকই নয়, ঘৃণ্যও বটে।

ইসলামে এ ধরনের স্বাধীন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম। দলিল:


2227 - حَدَّثَنِي بِشْرُ بْنُ مَرْحُومٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ [ص:83]، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أُمَيَّةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " قَالَ اللَّهُ: ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ: رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ "

 বিশর ইবনে মারহুম (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার থেকে পুরা কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না। তাখরিজ: বুখারি -২২২৭


সারকথা হলো, অর্থের বিনিময়ে নিজের গর্ভজাত সন্তানকে স্থায়ীভাবে অন‍্যকে দিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা -১২৭০৩: যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত এক সালামে না দুই সালামে উত্তম? দলিল সহ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭০৩:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

মুহতারাম মুফতি সাহেব। আমার জানার বিষয় হলো,

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত এক সালামে না দুই সালামে ( অর্থাৎ দুই দুই চার রাকাত, না একসাথে চার রাকাত আদায় করা উত্তম)।

দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান।

তারিখ:  ৩১/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা   আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, এক সালামে চার রাকাত আবার দুই সালামে চার রাকাত উভয় পদ্ধতি জায়েজ। তবে এক সালামে সুন্নাত ও উত্তম।


দ্বিতীয় কথা হলো, অধিকাংশ সাহাবা, তাবেয়ি এবং ইমামে আজমের মতে, এ সালামে চার রাকাত সুন্নাত।


আর অপর পক্ষে ইমাম মালেক, ইমাম শাফি, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং বর্তমানে আহলে হাদিস দাবিদার এর মতে দুই সালামে উত্তম।



প্রশ্ন: ক। ফিকহি হানাফির দলিল কী?


উত্তর: ক। ফিকহি হানাফির দলিল নিম্নরূপ:


হাদিস নং -০১


حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ سَمِعْتُ عُبَيْدَةَ، يُحَدِّثُ عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ ابْنِ مِنْجَابٍ، عَنْ قَرْثَعٍ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَرْبَعٌ قَبْلَ الظُّهْرِ لَيْسَ فِيهِنَّ تَسْلِيمٌ تُفْتَحُ لَهُنَّ أَبْوَابُ السَّمَاءِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ بَلَغَنِي عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الْقَطَّانِ قَالَ لَوْ حَدَّثْتُ عَنْ عُبَيْدَةَ بِشَىْءٍ لَحَدَّثْتُ عَنْهُ بِهَذَا الْحَدِيثِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ عُبَيْدَةُ ضَعِيفٌ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ ابْنُ مِنْجَابٍ هُوَ سَهْم 


 ইবনুল মুসান্না (রাহঃ) ..... আবু আইয়ুব (রাযিঃ) নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, যোহরের ফরয নামাযের পূর্বে এক সালামের সাথে যে ব্যক্তি চার রাকআত নামায পড়বে এর বদৌলতে তাঁর জন্য আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হবে। তাখরিজ: আবু দাউদ -১২৭০


নোট: হাদিসটির সনদ হাসান সহিহ।



হাদীসের ব্যখ্যা: যে

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যোহরের পূর্বের চার রাকাত ছুন্নাত এক সালামে পড়তে হয়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। শামী: ২/১২)


হাদিস নং -০২ .


1812 - أَخْبَرَنِي ‌يَزِيدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الصَّمَدِ ، قَالَ: حَدَّثَنَا ‌هِشَامٌ الْعَطَّارُ ، قَالَ: حَدَّثَنِي ‌إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَمَاعَةَ ، عَنْ ‌مُوسَى بْنِ أَعْيَنَ ، عَنْ ‌أَبِي عَمْرٍو الْأَوْزَاعِيِّ ، عَنْ ‌حَسَّانَ بْنِ عَطِيَّةَ قَالَ: لَمَّا نُزِلَ ‌بِعَنْبَسَةَ جَعَلَ يَتَضَوَّرُ، فَقِيلَ لَهُ: فَقَالَ: أَمَا إِنِّي سَمِعْتُ ‌أُمَّ حَبِيبَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ


 ইয়াযীদ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... নবী (ﷺ) এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে জোহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকআত এবং ফরযের পর চার রাকআত নামায আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার গোশত (শরীর) জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন। নবী (ﷺ)-এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাযিঃ) বলেন, এ সম্বন্ধে শুনার পর থেকে আমি সে চার রাকআত নামায ছাড়িনি। তাখরিজ: নাসায়ি -১৮১২



প্রশ্ন: খ। তিন ইমামের দলিল কী?


উত্তর: খ। তিন ইমামের দলিল নিম্নরূপ: 


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ يَعْلَى بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ عَلِيٍّ الأَزْدِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " صَلاَةُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مَثْنَى مَثْنَى " . قَالَ أَبُو عِيسَى اخْتَلَفَ أَصْحَابُ شُعْبَةَ فِي حَدِيثِ ابْنِ عُمَرَ فَرَفَعَهُ بَعْضُهُمْ وَأَوْقَفَهُ بَعْضُهُمْ . وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ الْعُمَرِيِّ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوُ هَذَا . وَالصَّحِيحُ مَا رُوِيَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى " . وَرَوَى الثِّقَاتُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يَذْكُرُوا فِيهِ صَلاَةَ النَّهَارِ . وَقَدْ رُوِيَ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي بِاللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَبِالنَّهَارِ أَرْبَعًا . وَقَدِ اخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي ذَلِكَ فَرَأَى بَعْضُهُمْ أَنَّ صَلاَةَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مَثْنَى مَثْنَى . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَرَأَوْا صَلاَةَ التَّطَوُّعِ بِالنَّهَارِ أَرْبَعًا مِثْلَ الأَرْبَعِ قَبْلَ الظُّهْرِ وَغَيْرِهَا مِنْ صَلاَةِ التَّطَوُّعِ . وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَإِسْحَاقَ .  

 মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ...... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) বলেনঃ রাত ও দিনের (নফল) নামায হল দুই দুই রাকআত করে। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ ১৩২২; তিরমিজি -৫৯৭



প্রশ্ন: গ। ফিকহি হানাফির পক্ষে জবাব কী?


উত্তর: গ। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম দুই রাকাত করে যে আদায় করেছেন তা ছিল নফল, আর ফিকহি হানাফীর মতেও নফল নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করা উত্তম। তাছাড়া দুই রাকাত করে নামাজ পড়া এটা অভ্যাস ছিল রাতে আর দিনের নফল নামাজ চার রাকাত করে আদায় করতে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমরের (রাঃ) আযাদকৃত গোলাম হযরত নাফে রহ. হতে তা বর্ণিত আছে। দলিল:


. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي بِاللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَبِالنَّهَارِ أَرْبَعًا .

 উবাইদুল্লাহ নাফি (রাহঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, ইবনে উমর (রাযিঃ) রাতে দুই রাকআত করে আর দিনে চার রাকআত করে (নফল) নামায আদায় করতেন। তাখরিজ: তিরমিজি -৫৯৭



দ্বিতীয় জবাব হলো, যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত এক সালামে অধিকাংশ সাহাবীদের আমল ছিল, আর সেটাই হানিফ মাযহাব গ্রহণ করেছেন। দলিল:


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَائِشَةَ وَأُمِّ حَبِيبَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَلِيٍّ حَدِيثٌ حَسَنٌ . قَالَ أَبُو بَكْرٍ الْعَطَّارُ قَالَ عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ سُفْيَانَ قَالَ كُنَّا نَعْرِفُ فَضْلَ حَدِيثِ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ عَلَى حَدِيثِ الْحَارِثِ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ بَعْدَهُمْ يَخْتَارُونَ أَنْ يُصَلِّيَ الرَّجُلُ قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ . وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَإِسْحَاقَ وَأَهْلِ الْكُوفَةِ . وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ صَلاَةُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مَثْنَى مَثْنَى يَرَوْنَ الْفَصْلَ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ . وَبِهِ يَقُولُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ .

মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ..... আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসূল (ﷺ) যোহরের পূর্বে চার রাকআত এবং এরপর দু’রাকআত সুন্নত নামায আদায় করতেন।


ব্যাখ্যা: 

 ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেন,

 অধিকাংশ সাহাবী এবং পরবর্তী আলিম এই হাদীস অনুসারে আমল গ্রহণ করেছেন। যোহরের পূর্বে চার রাকআত আদায় করা পছন্দীয় বলে তার মনে করেন। সুফিয়ান সাওরী, ইবনে মুরাবক ও ইসহাক (রাহঃ)-এর অভিমতও এ-ই। তাখরিজ: তিরমিজি:৪২৪


সারকথা হলো, যেহেতু যোহরের পূর্বে চার রাকাত এক সালামে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে এবং অধিকাংশ সাহাবা এর উপর আমল করেছেন। তাছাড়া আম হাদিসের উপর আমল করা নীতি বিরোধী।  


সুতরাং প্রমাণিত হলো যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত এক সালামে সুন্নাত ও উত্তম।



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

Stylo

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। পোষ্ট গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে করে যোগাযোগ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর