আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৭৯: সফরে নারীদের নামাজের ব্যাপারে করণীয়?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৬৭৯:

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। হযরত, সফর অবস্থায় আমরা যানবাহনে বা যেকোনোভাবে নামাজ আদায় করে নিতে পারি। এক্ষেত্র আমাদের সাথে পরিবারের মহিলারা থাকে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের ওয়াক্তমত নামাজ আদায় করা সম্ভবপর হয় না। এক বা একাধিক নামাজের ওয়াক্ত চলে যায়। এমতাবস্থায় মহিলা সফর সঙ্গীদের করণীয় কি??

তারিখ:  ১৮/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  জাফর তৈয়্যব (ময়মনসিংহ)

রুমা বান্দরবান থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইসলামি মূলনীতি হলো, নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার পাশাপাশি পরিবার -পরিজনকে জাহান্নাম তথা আল্লাহর নাফরমানির কাজ থেকে বাঁচানো অন্যতম ফরজ। যেমন ইরশাদ হচ্ছে -

Surah At-Tahrim, Verse 6:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا


মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর। সূরা তাহরিম -০৬



দ্বিতীয় কথা হলো, স্বাভাবিক অবস্থায় নারীদের নামাজ মাফ হয় না, সুতরাং তাদেরকে সফর অবস্থায় যথাযথভাবে সালাত আদায় করতে হবে। তাই যথার্থভাবে সালাত আদায়ের লক্ষ্যে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলো:


০১. একান্তর প্রয়োজন না হলে, নারীদের নিয়ে সফর না করা।

০২. এমনভাবে সফর করা, যাতে কম নামাজ সফর অবস্থায় পড়ে।

০৩. বাসা থেকে অজু করে যাওয়া, যে কয় ওয়াক্ত পড়া যায়।

০৪. আমার জানামতে, প্রতিটি জেলা সদরে মহিলাদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায় করার আলাদা ব্যবস্থা আছে, সেখানে নামাজ আদায় করার সুযোগ আছে।


০৫. মসজিদে আলাদা ব্যবস্থা না থাকলে, জামাতের আগে বা পরে মুসল্লি কমে গেলে, সেখানে আদায় করা যেতে পারে।

০৬. দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা ফরজ তাই যাত্রা বিরতির সময় আদায় করা।


০৭.  আর যদি সময় স্বল্পতার কারণে জমিনে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে গাড়িতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবে সম্ভব না হলে বসে নামাজ আদায় করতে হবে।


০৭. গাড়িতে নামায পড়াকালীন কেবলা যদি ঠিক রাখা সম্ভব হয়, তাহলে পরবর্তীতে নামাজ আর কাজা করতে হবে না। আর যদি কেবলা ঠিক রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে এই নামাজ কাজা আদায় করে নিতে হবে। দলিল:

قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ

নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। সূরা বাকারা-১৪৪

 الفتاوى الهندية- ولو ترك تحويل وجهة الى القبلة وهو قادر عليه لا يجزيه (الفتاوى الهندية –كتاب الصلاة ،الباب الخمس العشر فى صلاة المسافر-1/144)

অর্থাৎ যদি কিবলার দিক হয়ে নামাজ পড়া সম্ভবপর হওয়া সত্ত্বেও কিবলার দিক না হয়, তাহলে নামাজ হবেনা। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি- ১খণ্ড; ১৪৪ পৃ.


 উল্লেখ্য যে,   গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যদি  নামাজ আদায় করার ব্যাপারে ওয়াক্ত চলে চ যাওয়ার আশঙ্কা হয় তখনই কেবল গাড়িতে বসে নামাজ পড়া  জায়েজ।


০৮. বিরতির সময় অথবা গাড়ি কর্তৃপক্ষকে বলে অজু করে নিতে হবে, যদি ওযু করা সম্ভব না হয়, তাহলে গাড়িতেই তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতে হবে।

০৯. উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা করলাম মাত্র। মূল কথা হলো, আল্লাহ তাআলার ওয়াদা করেছেন, যে তাকে ভয় করবে, তার পথ খুলে দিবেন। দলিল:

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا

 আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। সূরা তালাক -০২


প্রশ্ন: ক। হিজাব বা বোরকা পরা অবস্থায় নারীদের নামাজ হবে কি?

উত্তর: ক। নামাজের সময় নারীদের হাত মুখ খোলা রাখা জরুরী নয়, বোরকা বা হিজাব পড়া অবস্থায় নামাজ সহিহ হবে, কোন অসুবিধা নেই। দলিল:


হাদিস নং -০১

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ  عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ   صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ من بيتها اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ وَإِنَّهَا لَا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মেয়ে মানুষ (সবটাই) লজ্জাস্থান, আবরণীয় (গোপনীয়)। আর সে যখন নিজ বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে তোলে। সে নিজ বাড়ির অন্দর মহলে অবস্থান ক’রে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী  থাকে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ২৮৯০, সহীহ তারগীব ৩৪৪নং)


হাদিস নং -০২

‌وَجُمَّاعُ ‌مَا ‌يُفَارِقُ الْمَرْأَةَ فِيهِ الرَّجُلُ مِنْ أَحْكَامِ الصَّلَاةِ رَاجِعٌ إِلَى السِّتْرِ، وَهُوَ أَنَّهَا مَأْمُورَةٌ بِكُلِّ مَا كَانَ أَسْتَرَ لَهَا (السنن الكبرى للبيهقى-2/314، رقم-3196)

অর্থাৎ নারী-পুরুষের নামাজের পদ্ধতিগত পার্থক্যের যে কয়টি কারণ রয়েছে, তার মধ্যে  মৌলিক কারণটি হলো, পর্দাবরণ বজায় রাখা। এজন্যই নারীদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন পন্থা অবলম্বন করে চলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেভাবে তাদের পর্দার বিধানটা সর্বোচ্চ পরিমাণে রক্ষা করাটা সম্ভবপর হয়। ( ইমাম বায়হাকীর আস সুনানুল কুবরা- পৃষ্ঠা ঃ ২/৩১৪, নং ঃ  ৩১৯৬)


সারকথা হলো, অধিকাংশ মানুষ সফরে নামাজের ব্যাপারে উদাসীন, বিশেষ করে নারীদের নামাজের ব্যাপারে আরও বেশি। তাই প্রশ্নকারীকে জাযাকাল্লাহু খয়রান এই জন্য যাতে কিছুটা হলেও আমাদের বিবেক - ঈমান জাগ্রত হয়।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক