জিজ্ঞাসা-২৪৩: কোনো ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান না থাকে, তাহলে তার জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পদ কন্যা সন্তানকে লিখে দিতে পারবে কিনা? অথবা কী পরিমাণ সম্পদ লিখে দিতে পারবে? দলিলসহ জানতে চাই। তারিখ-১১/০৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশিদ রামু থেকে----
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য দুভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কোনো ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান না থাকে, তাহলে তার জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পদ কন্যা সন্তানকে লিখে দিতে পারবে কিনা?
উত্তর: ক। আমরা জানি যদি কোন ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থাকে, তাহলে তার মৃত্যুর ভাই/ভাতিজা বা অন্যারা তার সম্পদের অংশ পাবে। যা ইসলামি শরিয়াহ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং অন্যান্য ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সব সম্পদ কন্যাকে দেওয়া জায়েজ নেই। দলিল:
মহান আল্লাহ তাআলা মিরাছ বণ্টনের পর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন-
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ
অর্থ: এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা নিসা-১৩,১৪
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
অর্থ- হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ওয়ারিসকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মিরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৬/২১৫; ইবনে মাজাহ- ২৭০৩; সুনানে সাঈদ বিন মানসূর-২৮৫
প্রশ্ন: খ। কী পরিমাণ সম্পদ লিখে দিতে পারবে?
উত্তর: খ। জীবদ্দশায় সুস্থ থাকা অবস্থায় নিজের সম্পদ বৈধ কাজে ব্যয় করা, ধর্মীয় কাজে দান-সদাকাহ করা, নিজের উত্তরাধিকার অথবা আত্মীয়-স্বজনকে "হেবা" করা সবই জায়েয।
নিজের একমাত্র কন্যাকে সম্পত্তি হেবা করা নিষেধ নয়। তবে ভাই-ভাতিজাদেরকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে নিজের একমাত্র কন্যাকে সমুদয় সম্পত্তি হেবা করা অন্যায়; যা পূর্বে উল্লেখ করেছি।
উত্তম হল একমাত্র কন্যাকে একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রায় সম্পত্তি দিয়ে স্বনির্ভর করে দেয়া অবশিষ্ট সম্পত্তি নিজের ব্যক্তি মালিকানা রেখে দেবে মৃত্যুর পর শরঈ ওয়ারিশদের মাঝে সে সম্পদ কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে বন্টন হবে। সে বন্টনে কন্যাও অর্ধেক সম্পদ পেয়ে যাবে।
তবে মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা জায়েয নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,
«أُوصِي بِمَالِي كُلِّهِ؟ قَالَ: «لاَ» ، قُلْتُ: فَالشَّطْرُ، قَالَ: «لاَ» ، قُلْتُ: الثُّلُثُ، قَالَ: «فَالثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ».
অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমি কি আমার সমুদয় মালের অসিয়ত করে যাব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আর এক তৃতীয়াংশও অনেক।” তাখরিজ-বুখারী- ২৫৯১; সহীহ মুসলিম-১৬২৮; তিরমিজি- ২১১৬; আবু দাউদ-২৮৬৪
দ্বিতীয় কথা হলো, ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত জায়েজ নেই এবং তা কার্যকর হবে না। দলিল:
ولذلك قال صلى الله عليه وسلم : ( إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ ، فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ ) رواه أبو داود (2870) والترمذي (2120) والنسائي (3671) وابن ماجه (2713) ي في صحيح أبي داود
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেকের অধিকার যথাযথভাবে বর্ণনা করেছেন, সুতরাং ওয়ারিশদের জন্য কোনো অসিয়ত নেই। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৮৭০ তিরমিজি-২১২০; ইবনে মাজাহ-২৭১৩
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “কোন একজন নারী বা পুরুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ষাট বছর আমল করল। অতঃপর যখন মৃত্যু উপস্থিত হলো তখন তারা ওসিয়্যাতের ক্ষেত্রে অন্যের অনিষ্ট করলো। তাহলে উভয়ের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাখরিজ: তিরমিজি-২১১৭
অর্থাৎ অসিয়তকারীর মৃত্যুর সময় সে তার ওয়ারিশ হতে পারবে না। অবশ্য এ শর্তটি তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন অসিয়তকারীর অন্য কোনো ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকে। অন্য কোনো ওয়ারিশ না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওয়ারিশ হলেও তার জন্য অসিয়ত করা যাবে।
সারকথা কথা হলো, শুধু কন্যাকেই সুমদয় সম্পত্তি লিখে দেওয়া জায়েজ নেই, হারাম। তবে পিতা সুস্থ থাকা অবস্থায় একমাত্র কন্যাকে আত্মনির্ভর পরিমাণ সম্পদ মালিক বানাতে পারবে, মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক সম্পদ পাবে। আরেকটি ছুরুত আছে তাহলো, মেয়েকে এক তৃতীয়াংশ সম্পদ অসিয়ত করা যাবে বাকি ওয়ারিশদের সন্তুষ্টিচিত্তে অনুমোদন থাকলে।
তথ্যসহযোগিতায় মুসলিম বাংলা অ্যাপস-প্রশ্ন নং-২২৬২১
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দু রাজ্জাক