আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৬৮৩: আকিকার জন্য গরু নিয়ত করলে, মান্নত হিসেবে গণ্য হবে কি?

No Comments

 




















জিজ্ঞাসা-১২৬৮৩:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

 আসসালামু আলাইকুম

মুহতারাম একজন ব্যক্তির তার সন্তানের আকীকা দেয়ার মতো সামর্থ্য না থাকার কারনে সে এভাবে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করে ছিল- হে আল্লাহ আমার যে গরু আছে তার যদি বাচ্চা হয় তাহলে আমি সেটা দিয়ে আমার বাচ্চাদের আকীকা করবো। আল্লাহর রহমতে তার গরুর পেটে এখন বাচ্চা এসেছে তবে সেটা ডেলিভারি হতে আরো ৭ মাস সময় লাগবে। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি আকীকা দেয়ার মতো সামর্থবান হয়েছেন। এখন সে অন্য গরু দিয়ে আকীকা দিতে চাচ্ছে কেননা তার গরুর বাচ্ছা হওয়ার পরও ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। 

প্রশ্ন হলো এটাকি মানত হয়েছে? অন্য গরু দিয়ে আকীকা দিলে তার মানত আদায় হবে কি না? 

তারিখ:  ১৯/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা   ইব্রাহীম, সাতক্ষীরা থেকে


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, প্রশ্নে বর্ণিত লোকের উক্তি, "হে আল্লাহ আমার যে গরু আছে, তার যদি বাচ্চা হয়, তাহলে আমি সেটা দিয়ে বাচ্চাদের আকিকা করবো।" 


উপরোক্ত শব্দ/বাক্য দ্বারা মান্নাত সাব্যস্ত হয়নি।


মান্নত হলো, আল্লাহর জন্য সদকা করা, বিলিয়ে দেওয়া।


এরূপ বললে ( এই গরুর বাচ্চা প্রসব করলে বাচ্চাটি আল্লাহর ওয়াস্তে বিলিয়ে দিতাম) মান্নত হিসেবে গণ্য হতো। দলিল:

(وَلَوْ قَالَ إنْ بَرِئْت مِنْ مَرَضِي هَذَا ذَبَحْت شَاةً أَوْ عَلَيَّ شَاةٌ أَذْبَحُهَا فَبَرِئَ لَا يَلْزَمُهُ شَيْءٌ) لِأَنَّ الذَّبْحَ لَيْسَ مِنْ جِنْسِهِ فَرْضٌ بَلْ وَاجِبٌ كَالْأُضْحِيَّةِ (فَلَا يَصِحُّ) (إلَّا إذَا زَادَ وَأَتَصَدَّقُ بِلَحْمِهَا فَيَلْزَمُهُ) لِأَنَّ الصَّدَقَةَ مِنْ جِنْسِهَا فَرْضٌ وَهِيَ الزَّكَاةُ (الدر المختار مع الشامى، كتاب الأيمان-5/523، زكريا)

অর্থাৎ,  কেউ যদি এই মর্মে মানত করে যে, "আমার এই রোগ থেকে আমি সুস্থ হয়ে উঠলে,  একটি বকরী জবেহ দিবো," অথবা বললো, "আমার উপর একটি বকরী জবাই দেয়া আবশ্যক হবে," অতঃপর সে সুস্থ হয়ে উঠলে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবেনা। (কারণ জবেহ হলো এমন একটি ইবাদত, যা কখনোই ফরয হিসেবে পালন করা হয়না। বরং সর্বোচ্চ  কখনোকখনো তা ওয়াজিব হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। যেমনঃ কুরবানীর দিন ওয়াজিব আদায়ের উদ্দেশ্যে  পশু জবেহ করা হয়ে থাকে।) যেহেতু জবেহের সমশ্রেণিভুক্ত কোন ফর‍য ইবাদাত নেই,সুতরাং তার এই মানতটির পালনেরও আর অপরিহার্যতা রইলোনা। তবে সে যদি মানত করার সময় আগ বাড়িয়ে অতিরিক্ত এই কথাও সংযোজন করে যে, "আমি বকরী জবেহ করবো এবং তার গোশত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাদাকাহ করে দেবো, তাহলে কিন্তু সুস্থতা লাভের পর তার এই মানতটি অবধারিতভাবে পূরণ করতেই হবে। কারণ ইসলামী শারীয়ায় সাদাকা' র সমশ্রেণীভুক্ত ফরয ইবাদাত বিদ্যমান রয়েছে। আর সেটি হলো, যাকাত। যেহেতু সাদাকাহ অনেক সময় ফরজ হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে (যেমন যাকাত), তাই তার এই সাদাকাহ সংক্রান্ত মানতটি সুনিশ্চিতভাবে অবশ্যই পূরণ করতেই হবে।

 ( ফাতাওয়ায়ে শামীর সংযোজিত ব্যাখ্যাসহ আদ-দুররুল মুখতার, শপথ অধ্যায়- ৫/৫২৩, মাকতাবায়ে যাকারিয়্যার  মুদ্রণ)


দ্বিতীয় কথা হলো, এখন উক্ত ব্যক্তি যে কোন গরু বা ছাগলের দ্বারা আকিকা দিতে পারবে, অসুবিধা নেই। এবং সবার খেতে পারবে। দলিল:

وَمَا يَأْكُلُ مِنَ البُدْنِ وَمَا يَتَصَدَّقُ وَقَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ: أَخْبَرَنِي نَافِعٌ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: " لاَ يُؤْكَلُ مِنْ جَزَاءِ الصَّيْدِ، وَالنَّذْرِ، وَيُؤْكَلُ مِمَّا سِوَى ذَلِكَ وَقَالَ عَطَاءٌ: «يَأْكُلُ وَيُطْعِمُ مِنَ المُتْع

উবাইদুল্লাহ (রাহঃ) ‘নাফি (রাহঃ) সূত্রে ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, শিকারের বদল স্বরূপ এবং মানতের জন্য যে জানোয়ার যবেহ করা হয়, তা খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া অন্যান্য সব কুরবানীর গোশত খাওয়া যাবে। তাখরিজ: বুখারি -১৭১৯


সারকথা হলো,  আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক, মান্নত হিসেবে গণ্য হয়নি, তাই এখন যে কোনো একটি গরু/ছাগল দ্বারা আকিকা করতে অসুবিধা নেই।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক