জিজ্ঞাসা-১২৩৯২:
দোকান বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে যে advance নেওয়া হয়, এরপর আবার মাসে মাসে ভাড়াও নেওয়া হয় এর বৈধতা কতটুকু? অগ্রিম যেটা নেওয়া হয়েছে তাকি দোকান বা বাড়ির মালিক ভোগ করতে পারবে? সবিনয়ে জানতে চাই।
তারিখ: ২৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
রফিকুল ইসলাম বগুড়া থেকে। আল্লাহ তাকে নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন করেছেন। আপনি শুধু অ্যাডভান্স সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কিন্তু সিকিউরিটি মানি এর সাথে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাডভান্স ও সিকিউরিটি মানি বহুল আলোচিত দুটি মাসয়ালা । আপনা এ সংক্রান্ত সহজে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করেছি-
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। অ্যাডভান্স কাকে বলে?
উত্তর: ক। এককালীন গ্রহণ করা টাকা প্রতি মাসেই কিছু কিছু করে ভাড়া হিসাবে কাটা হয়, যাকে অ্যাডভান্স বলে।
প্রশ্ন: খ। সিকিউরিটি মানি কাকে বলে?
উত্তর: খ। ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহিতা থেকে যে টাকাটা গ্রহণ করে থাকে, ভাড়ার চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহিতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়, যাকে সিকিউরিটি মানি বলে।
প্রশ্ন: গ। দোকান বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে যে advance/সিকিউরিটি মানি নেওয়া হয় জায়েজ কি?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, দোকান বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে যে advance/সিকিউরিটি মানি দেওয়াকে ইসলামি আইনের পরিভাষায় বন্ধক বলা হয়। আর কোনো কিছু বন্ধক রাখা শরিয়তে জায়েয আছে। দলিল:
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ عَلٰی سَفَرٍ وَّ لَمۡ تَجِدُوۡا کَاتِبًا فَرِهٰنٌ مَّقۡبُوۡضَۃٌ ؕ فَاِنۡ اَمِنَ بَعۡضُکُمۡ بَعۡضًا فَلۡیُؤَدِّ الَّذِی اؤۡتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَ لۡیَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ ؕ وَ لَا تَکۡتُمُوا الشَّهَادَۃَ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡتُمۡهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلۡبُهٗ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ
অর্থ: আর যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। --- - সূরা বাকারা-২৮৩
عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ وَلَقَدْ رَهَنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ،
নবী করীম (ﷺ) ও তাঁর লোহার বর্মটি একজন ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। বুখারী-২২০০,মুসলিম
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.), ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.), শাবী (রহ.) প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ি থেকে বর্ণিত আছে, তারা বলেন, আগাম বিক্রিতে বিক্রেতা থেকে বন্ধক নিলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ১৪০৮৬, ১৪০৮৭, ১৪০৯০
প্রশ্ন: ঘ। অগ্রিম যেটা নেওয়া হয়েছে তাকি দোকান বা বাড়ির মালিক ভোগ করতে পারবে?
উত্তর: ঘ। না, অগ্রিম যেটা নেওয়া হয়েছে তাকি দোকান বা বাড়ির মালিক ভোগ-ব্যবহার করতে পারবে না। তা হারাম এবং সুদ হিসেবে পরিগিণিত হবে। কারণ বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়।
দলিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. " الرَّهْنُ يُرْكَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ مَرْهُونًا، وَلَبَنُ الدَّرِّ يُشْرَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ مَرْهُونًا، وَعَلَى الَّذِي يَرْكَبُ وَيَشْرَبُ النَّفَقَةُ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বাহনর পশু বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে তাতে আরোহণ করা যাবে। তদ্রুপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে দুধ পান করা যাবে (এর অতিরিক্ত যাবে না)। (মোট কথা) আরোহণকারী এবং দুধ পানকারীকেই খরচ বহন করতে হবে। বুখারি-২৩৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ইবনে সিরিন (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার কাছে এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি এতে আরোহণ করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, তুমি এর পিঠ থেকে (আরোহণ করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ১৫০৭১
প্রশ্ন: ঙ। অ্যাডভান্স ও সিকিউরিটি মানি মালিকের ব্যবহার করার বৈধ কোনো বিকল্প পদ্ধতি আছে কি?
উত্তর: ঙ। হ্যাঁ, অ্যাডভান্স ও সিকিউরিটি মানি মালিকের ব্যবহার করার বৈধ কোনো বিকল্প পদ্ধতি আছে। যেমন,
সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহিতা থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তখন এ সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কমানো যাবে না। কেননা ঋণ নিয়ে কোনো সুবিধা দিলে তা সুদ হিসেবে গণ্য হয়। সূত্র: মুসনাদে আহমদ : ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী : ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসুত, সারাখসি : ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল : ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ মাদ্দাহ : ৪৬৮
প্রশ্ন: চ। অ্যাডভান্স ও সিকিউরিটি মানি জমা থাকার কারণে প্রতিমাসে টাকা কম কাটা/ নেওয়া জায়েজ আছে কি?
উত্তর: চ। সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম রাখা জায়েজ নয়। অর্থাৎ সিকিউরিটি মানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ভাড়া কমে যাওয়ার যে প্রচলন আমাদের সমাজে রয়েছে, তা জায়েজ নয়। কেননা সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার কাছে ঋণ হিসেবে থাকে। তাই এ টাকার কারণে ভাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহিতা থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত, যা সুদ ও হারাম। দলিল:
ফাযালা বিন উবাইদ (রা.) বলেন, ‘যে ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে, তা রিবার অন্তর্ভুক্ত। সুনানে বাইহাকি : ৫/৩৫০
তবে সিকিউরিটি মানি না হয়ে যদি অ্যাডভান্স তথা অগ্রীম ভাড়া প্রদান করার কারণে ভাড়া কিছুটা কমানো হয়, তবে তাতে সমস্যা নেই। কেননা অ্যাডভান্সের টাকাটা ভাড়াদাতার কাছে ঋণ হিসেবে থাকে না। ফলে ভাড়া কমানো হলেও তা ঋণের পরিবর্তে কমানো হয়েছে বলে গণ্য হয় না। সূত্র: আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৫/৫৭৩; আলমাবসুত, সারাখসি : ১৪/৩৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ৪৬৮; আলমাআয়িরুশ শরইয়্যাহ : ১৪৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক