আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৭০: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বহু বিবাহের হিকমাহ কি?

No Comments


 জিজ্ঞাসা-১২৬৭০: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মুহতারাম,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চার অধিক বিবাহের কারণ/ হিকমাহগুলো কি? 


জানালে নবি ও ইসলাম বিদ্বেষীদের জবাব দেওয়া যেত। জাযাকাল্লাহু খয়রান।

তারিখ:  ১১/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  আনোয়ারুল আম্বিয়া, যশোর থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, নবিরা নবুওয়াত লাভের পর থেকে ওহি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তার তাদের কাজ -কর্ম ওহি ভিত্তিক। যেমন,


تعدُّد زوجات الرسول هو وحيٌ، وأمرٌ من الله، دلّت عليه الكثير من الآيات، منها قوله -تعالى-: (لَّا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِن بَعْدُ وَلَا أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ وَكَانَ اللَّـهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا)،[٥٨][٥٩] وبدراسة سيرة النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم-، وكيفيّة زواجه بنسائه، يتبيّن أنّ السبب في تعدُّد زوجاته مُتعلِّقٌ بعدّة حِكَم يمكن إجمالها بما يأتي:[٦٠]

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহুপত্নী গ্রহণের বিষয়টি ওয়াহী নির্ভর এবং আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন মাত্র। আল কুরআনের অসংখ্য আয়াতই একথারই প্রমাণ বহন করে। যার মাঝে অন্যতম একটি আয়াত হলো-

এরপর আপনার জন্য আর কোন নারী বৈধ হবেনা এবং কোন স্ত্রী পরিবর্তন করাও আপনার জন্য সমীচীন হবেনা, তাদের সৌন্দর্য আপনাকে যতোই বিমোহিত করুক না কেন।তবে অধিকারভুক্ত দাসী গ্রহণে কোন বাধা নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ( সূরা আহযাব- ৫৮,৫৯)



সীরাহ গ্রন্থগুলোতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের   বিবাহসমূহের প্রেক্ষাপট অধ্যয়ন করলে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর বহুবিবাহের পিছনে রয়েছে অসংখ্য দূরদর্শী কারণ। সংক্ষিপ্ত পরিসরে যার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো-


০১. তালিম বা শিক্ষাদানের জন্য:

الحكمة التعليميّة: تُعَدّ النساء نصف المجتمع، وهنّ بحاجة إلى من يجيب عن أسئلتهنّ المُتعلِّقة بهنّ كنساء؛ من حَيض، ونَفاس، وأمورٍ زوجيّة، وغيرها، وليست كلّ النساء تتغلّب على حيائها لتسأل رسول الله في شيء، وما كان لرسول الله الإجابة عن كلّ سؤال بتفاصيله الدقيقة عن المرأة؛ فقد كان رسول الله حَيِيّاً؛ لذا فإنّه بزواجه أعدّ داعيات عالمات بأمور دينهنّ، يُجِبن عن تساؤلات النساء الدقيقة.

প্রশিক্ষণগত কারণঃ একথা স্পষ্ট যে, গোটা সমাজের অর্ধেকাংশ জুড়েই নারীদের বসবাস।তারা প্রতিনিয়ত  হায়েজ, নেফাস সহ নানাবিধ  দাম্পত্যবিষয়ক মেয়েলী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তখন তারা এমন একজন মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকেন, যিনি তাদেরকে এসকল মাসআলার সমাধান দিতে পারবেন। আর অত্যাধিক লাজুকপ্রবণতার কারণে নারীরা এবিষয়গুলো সরাসরি নবীজিকে জিজ্ঞেস করতে পারতোনা। আর নবীজিও নারীদের একান্ত গোপনীয় বিষয়গুলো সবিশদভাবে বর্ণনা করতেন না।কারণ তিনিও ছিলেন বেশ লাজুক। এজন্যই তিনি বিয়ের মাধ্যমে দ্বীনের বিষয়ে এমন একদল প্রাজ্ঞ আলেমা তৈরী করেছেন, যারা নারীদের সকল প্রকার একান্ত গোপনীয় মাসআলার প্রায়োগিক সমাধান দিতে গিয়েছেন।


০২. শরয়ী বিধানগত হিকমাহঃ  

. الحكمة التشريعيّة: كانت عادة التّبني من العادات المعروفة بين العرب عند مجيء الإسلام، وكان النبي -عليه السلام- قد تبنّى زيد بن حارثة، وشاءت إرادة الله -تعالى- إبطال عادة التّبني وإبطال آثاره، ولأجل أن يكون هذا الحكم واضحاً في أذهان المسلمين؛ فقد أمر المولى سبحانه النبيَّ بالزواج من زينب بنت جحش، وهي يومئذ طليقة ابنه بالتبني؛ فشكّل هذا الزواج أمراً إلهياً وتشريعاً جديداً بحرمة التبني وإبطال أثره

শরয়ী বিধানগত হিকমাহঃ  ইসলামের প্রারম্ভিক সময়ে আরবদের মাঝে সন্তান দত্তক নেয়ার প্রথার প্রচলন ছিলো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যায়েদ বিন হারেসা (রাযি.)কে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একান্ত ইচ্ছা হলো, এই দত্তকপ্রথা সম্পূর্ণরূপে উঠিয়ে দিতে। আর এই বিষয়টি মুসলমানদের হৃদয়ে সম্পূর্ণরুপে গেঁথে দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে যায়েদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী  যায়নাব (রাযি.)কে বিয়ে করতে নির্দেশ দিলেন। এভাবেই এই বিয়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে পালকপুত্র গ্রহণের বিধান চিরতরে বিলুপ্ত করে ছাড়লেন। 


০৩.সামাজিক কারণঃ 

 الحكمة الاجتماعية: إنّ ما يحدث بالزواج من مصاهرة، ونَسب، كفيل بأن يجمع القلوب برباطٍ وثيق، كزواجه -صلّى الله عليه وسلّم- من أمهات المؤمنين: عائشة، وحفصة -رضي الله عنهما-؛ حُبّاً بأبويهما. 

 সামাজিক কারণঃ বিবাহের মাধ্যমে কুটুম্ব ও বংশগতির সম্পর্কের যে সূচনা ঘটে, তা সকল আত্মীয়দেরকে একই আত্মার সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে। যেমন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মুমিনীন আয়েশা ও হাফসা (রাযি.) দেরকে তাদের পিতার প্রতি ভালোবাসার দর্পণ স্বরূপ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন।


০৪. রাজনৈতিক কারণ:

الحكمة السياسية: لا تؤلّف المصاهرة بين القلوب على مستوى الأشخاص فحَسب، بل على مستوى العشائر، والقبائل، وبطبيعة الحال فإنّ المُتعارَف عليه هو نُصرة النسيب، والصِّهر، وحمايته، والالتفاف حوله، وقد كان ذلك مَدعاةً لزواجه -صلّى الله عليه وسلّم- من أمّهات المؤمنين: جويريّة، وصفيّة، وأم حبيبة -رضي الله عنهنّ-. للمزيد من التفاصيل عن مقالات ذات علاقة الاطّلاع على المقالات الآتية: ((تعامل الرسول مع أهل بيته)). ((بحث عن حياة الرسول منذ مولده حتى وفاته)).

রাজনৈতিক কারণঃ একটি বৈবাহিক সম্পর্ক শুধু মাত্র দুজনব্যক্তি ( স্বামী-স্ত্রী) কে একত্র করেনা, বরং তা দুটো পরিবারের মাঝে মেল বন্ধন ঘটায়, দুটো সমাজের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করে। এই কারণে মানুষ স্বভাবগতভাবে কুটুম্ব ও বংশীয় আত্মীয় স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাদের বিপদে নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিতে সদা প্রস্তুত থাকে। উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া, সাফিয়্যা, উম্মে হাবীবা (রাযি.) গণকে বিবাহে আগে নবীজির কাছে এরূপ দাবীই পেশ করা হয়েছিল। 

এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য নিন্মোক্ত প্রবন্ধ দুটি অধ্যয়ন করা যেতে পারে।

নিজ পরিবারভুক্ত ব্যক্তিদের সাথে মহানবীর আচরণ।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নবীজির জীবনাচরণ।


প্রশ্ন: ক। সাধারণ মুমিনীনের জন্য একসাথে চারটির বেশি বিবাহ জায়েজ নয়, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য জায়েজ কিভাবে?


উত্তর: ক। এর জবাব হলো, যে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য চারটি বিবাহ সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন, সেই আল্লাহ তাআলাই যদি তার নবির জন্য চারের অধিক বিয়ের অনুমতি প্রদান করেন, তাহলে সমস্যা কোথায়। এটা নবির জন্য বিশেষ বিধান ছিল, সাধারণ মুমিনদের জন্য নয়। দলিল:

وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ 

কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। সূরা আহযাব-৫০

 

সারকথা হলো, ইসলামি শরিয়াতে কিছু খুসুসি বা নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে, যা শুধু তার নবির জন্যই নির্ধারিত, চার এর অধিক বিবাহ তার মধ্যে অন্যতম।


টীকা:

الهامش * فِكاك: ما يدفعه الأسير من مالٍ، أو غيره؛ في سبيل خلاصه من الأسر.[٦١] * حقن الدماء: هو عدم سَفك الدماء، و منع ذلك من الحصول.[٦٢] * الصَّداق: هو ما يُعطيه الزوج لزوجته من مهر؛ فرضاً من الله.[٦٣] * سَرف: هو مكانٌ قريب من مكّة المًكرّمة.[٤٦] 

ফিকাকঃ বন্দীদশা থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে বন্দী যে মুক্তিপণ দিয়ে থাকে।

হাকনুদ দিমাঃ রক্তপ্রবাহকে নিবারণ করা।

আস-সদাকঃ মোহর স্বরূপ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত অর্থ/ সম্পত্তি। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফর‍য (ধার্য) করা হয়েছে।


সারফ ঃ মক্কা মুকাররমার অদূরেই অবস্থিত একটি সুপ্রসিদ্ধ ভূখণ্ড।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক 

সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম