জিজ্ঞাসা -১২৪০৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। প্রশ্ন এক লোক নিয়ত করেছিল "আমার যদি ছেলে হয় তাহলে আমি তাকে হাফেজী পড়াবো" কিন্তু ছেলেটির স্মৃতিশক্তি কম থাকার কারণে ইয়াদ রাখতে পারে না এখন তাকে যদি ওই পিতা স্কুল বা আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ায় তারা তখন কি তার গুনাহ হবে?
মাওলানা শরিফুল ইসলাম বগুড়া থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
نجده و نصلي على رسوله الكريم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
প্রথমে বুঝতে হবে নিয়ত ও নজর বা মান্নত এক জিনিস নয়। প্রত্যেকের হুকুম ভিন্ন ভিন্ন।
প্রশ্ন: ক। নিয়ত কাকে বলে?
উত্তর: ক।
معنى النيّة في اللغة على القصد، والإرادة، والعزم، والتحوّل والجهة، أما اصطلاحًا فيرى الأحناف أن النيّة أن يقصد المسلم طاعة الله والتقرب منه في إيجاد الفعل.
অর্থাৎ নিয়ত" বলা হয় অন্তরের সংকল্পকে। কোন কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন, মনে মনে "ইরাদাহ" করলেন, এটা কে আরবিতে বলা হয় نيّة "নিয়্যাহ" (নিয়ত)। পরিভাষায়: নেক কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার ইচ্ছা পোষণ করাকে নিয়ত বলা হয়। সূত্র: কিতাবুল ওয়াজিযি ফি ইজাহি কাওয়ায়িদুল ফিকহি-১২৫ পৃ.
প্রশ্ন: খ। মান্নত কাকে বলে?
উত্তর: খ।
النذر بمعنى أوجب وألزم، وأمّا في الاصصلاح الشرعيّ فهو إلزام المكلّف نفسه شيئاً لم يوجبه ويلزمه الله -تعالى- به.
"মান্নত" আরবিতে বলা نذر "নযর"। যার অর্থ হলো "আবশ্যক করা", "ওয়াজিব করা"। পরিভাষায়: আল্লাহ তায়ালা যেই আমল আবশ্যক করেননি, এমন কোন নেক আমল নিজের উপর আবশ্যক করে নেওয়া। সূত্র: ফাতহুল কাদীর, লিইবনে হুমাম-১২ পৃ.
প্রশ্ন: গ। নিয়তের হুকুম কি?
উত্তর: গ। মনে মনে কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা/ নিয়ত করলে সেটি নিজের উপর আবশ্যক হয় না। সেটি শুধু নিয়তের পর্যায়ে থাকে। সেখানে ভালো নিয়ত করার কারণে সওয়াব হয়।
প্রশ্ন: ঘ। মান্নতের হুকুম কি?
উত্তর: ঘ। যখন কোন উদ্দেশ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট করে এমনভাবে মুখে উচ্চারণ করে যে, " যদি আমার ছেলে সন্তান হয়, তাহলে তাকে হাফেজ/আলেম বানাবো।" এখন ছেলে সন্তান হলে, এ কথা বলার কারণে ঐ ছেলেকে হাফেজ বানানো আবশ্যক হয়ে যায় । এটাকে বলা হয় মান্নত।
প্রশ্ন: ঙ। ইয়াদ রাখতে পারে না, এখন তাকে যদি ওই পিতা স্কুল বা আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ায় তারা তখন কি তার গুনাহ হবে?
উত্তর: ঙ। উক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যদি আপনি শুধু মনে মনে তাকে হাফেজ বানানোর নিয়ত করেন, তাহলে তাকে স্কুল অথবা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করলে গুনাহগার হবেন না।
আর যদি মান্নত করেও থাকেন, তাহলে তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল বা অন্য কোন কারণে হাফেজ বানাতে অপরাগ হলে, আপনার দায়ভার থাকবে না। দলিল:
আয়াত নং-০১
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। সূরা বাকারা-২৮৬
আয়াত নং-০২
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। সূরা তাগাবুন-১৬
প্রশ্ন: চ। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতা দায়িত্ব কি?
উত্তর: চ। আপনার সন্তানকে হাফেজ বানাতে না পারলেও। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার মৌলিক দায়িত্ব একটি হল, পবিত্র কুরআন সহিহ শুদ্ধভাবে শিক্ষা দেওয়া, দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা, দেওয়া পূর্ণ দ্বীনদারি করে গড়ে তোলা, সমস্ত পাপাচার পথ থেকে বাঁচানো, জাহান্নামের কিট হতে রক্ষা করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
Surah At-Tahrim, Verse 6:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। সূরা তাহরিম-০৬
শেষ কথা হলো, সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার পরীক্ষার বস্তু, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। সুতরাং এ আমানতের সঠিকভাবে হেফাজত করা, তাকে দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তোলা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব।
و الله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক