আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

নির্বাচিত প্রবন্ধ- ইমাম হাসান রা. এর খিলাফত ও শাহাদত

No Comments

 



 








প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা

 

বিষয়: ইমাম হাসান (রা.)-এর খিলাফাত ও শাহাদত

 

রচনায়: মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক                                                                      (এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস ফিলআদব)                                        

পদবি: ধর্মীয় শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,

শেখ হাসিনা সেনানিবাস, লেবুখালী, বরিশাল।

মোবাইল: ০১৮৮৭-৭০১৬৫৬, ০১৭৩৫-৭৯১৩৮২

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

. উপস্থাপনা:  সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহর জন্যঅসংখ্য দরুদ-সালাম প্রিয় নবি মুহাম্মাদ  ()  এর প্রতি এবং আহলে বাইআত সকল সাহাবা আজমাইনের প্রতি

  ইমাম হাসান (রা.) আহলে বাইআতের অন্যতম ছিলেন রসূলুল্লাহ () এর আদরের ধন  তিনি তাকে অত্যধিক ভালবাসতেন নিম্নের হাদিস শরিফ থেকে ফুটে ওঠে:

حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي يَزِيدَ، عَنْ نَافِعِ بْنِ جُبَيْرِ، بْنِ مُطْعِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ خَرَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي طَائِفَةٍ مِنَ النَّهَارِ لاَ يُكَلِّمُنِي وَلاَ أُكَلِّمُهُ حَتَّى جَاءَ سُوقَ بَنِي قَيْنُقَاعَ ثُمَّ انْصَرَفَ حَتَّى أَتَى خِبَاءَ فَاطِمَةَ فَقَالَ " أَثَمَّ لُكَعُ أَثَمَّ لُكَعُ " . يَعْنِي حَسَنًا فَظَنَنَّا أَنَّهُ إِنَّمَا تَحْبِسُهُ أُمُّهُ لأَنْ تُغَسِّلَهُ وَتُلْبِسَهُ سِخَابًا فَلَمْ يَلْبَثْ أَنْ جَاءَ يَسْعَى حَتَّى اعْتَنَقَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ وَأَحْبِبْ مَنْ يُحِبُّهُ " .

আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, দিনের এক প্রহরে আমি রাসূলুল্লাহ () এর সাথে বের হলাম। তিনি আমার সাথে কথা বলছিলেন না, আমিও তাঁর সাথে কথা বলছিলাম না। অবশেষে বনু কায়নুকা এর বাজারে পৌঁছলেন, এরপর চললেন এবং ফাতিমা (রা.) এর ঘরে গেলেন। বললেন, এখানে দুষ্টটা (খোকা) আছে, দুষ্টটা (খোকা) আছে, অর্থাৎ হাসান। আমরা ধারণা করলাম যে, তাঁর মা তাকে আটকিয়ে রেখেছেন গোছল করানো এবং সুবাসিত মালা পরানোর জন্য। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসান দৌড়ে চলে এলেন এবং তাঁরা একে অপরকে গলায় জড়িয়ে ধরলেন। তখন রাসূলুল্লাহ () বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি তাকে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাসো, আর ভালবাসো ঐ লোককে, যে তাকে ভালবাসে।[1] তাখরিজ: মুসলিম-৬০৩৯; তিরমিজি-৩৭৬৯

  ইসলামে ইতিহাসে ইমাম হাসান (রা.)-এর খিলাফাত ও শাহাদত একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আলোচ্য প্রবন্ধে সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনার প্রয়াস রাখি, আল্লাহ তাআলাই একমাত্র তাওফিক দাতা

 

ইমাম হাসান (রা.) এর পরিচয়:

 

اسمه و نسبه : الحسن بن علي بن أبي طالب ، و هو أول من سمي بهذا الاسم .

أشهر ألقابه : المجتبى ، الزكي ، الناصح ، الولي ، السبط الأكبر ، سيد شباب أهل الجنة ، السيد .

كنيته : أبو محمد .

أبوه : الإمام أمير المؤمنين

أمه : فاطمة الزهراء.

ولادته : ليلة الثلاثاء ( 15 ) شهر رمضان المبارك سنة ( 2 ) أو ( 3 ) من الهجرة المباركة .

محل ولادته : المدينة المنورة .

নাম : হাসান ইবনে আলি। তিনিই সেই ব্যক্তি যার নাম ইসলামে প্রথম নামকরণ করা হয়। 
পিতার নাম : আমিরুল মুমিনিন হযরত আলি ( রা. )

মাতার নাম : হযরত ফাতিমাতুয যহরা ( রা. )

উপাধী সমূহ : মুজতাবা, যাকি, নাছিহ, সিবতুল আকবার, সাইয়্যেদ,  সাইয়্যেদু শাবাবি আহলিল জান্নাত উল্লেখযোগ্য ।
কুনিয়াহ্ : আবু মুহাম্মাদ
মহানবি ()  এছাড়া আবুল আয়িম্মাহ্ আবাল মাসাকিন । আবাশ্ শুহাদা ইত্যাদি ।

জন্ম : ১৫ রমজান ৩ হিজরি/ ৪ঠা মার্চ ৬২৫

জন্ম স্থান : মদিনা, সৌদি আরব ।
মৃত্যু : ৯ বা ৩০ মার্চ ৬৭০ / ৭ সফর বা ২৮ সফর ৫০ হিজরি
[2]

 

وقد ورث من النبي صلى الله عليه وسلم كثيرا من المكارم؛ حتى قيل: إنه كان أشبه الناس برسول الله صلى الله عليه وسلم خِلقة وخُلقا، واختار له النبي صلى الله عليه وسلم اسم الحسن من بين سائر الأسماء ليكون دالا على حسنه

তিনি নবির কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন অনেক সম্মান। এমনকি বলা হয়েছিল তিনি  ছিলেন আল্লাহর রাসূলের সাথে  মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ, চরিত্র ও চরিত্রে আল্লাহর সালাত ও শান্তি তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং রাসূলুল্লাহ () তাঁর জন্য এই নামটি বেছে নিয়েছিলেন। আল -হাসানের মধ্যে থেকে সব নাম তার নেকীর পরিচায়ক। [3]

 নবি পরিবারের সম্মান ও মহব্বত : ذَلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى  অর্থ: এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কেবল আত্মীয়তাজনিত সৌহার্য চাই[4]     

قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا، بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ: " أَمَّا بَعْدُ، أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ، وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ: أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ، وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ " فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: "وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي" فَقَالَ لَهُ حُصَيْنٌ: وَمَنْ أَهْلُ بَيْتِهِ؟ يَا زَيْدُ أَلَيْسَ نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ؟ قَالَ: نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ، وَلَكِنْ أَهْلُ بَيْتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعْدَهُ، قَالَ: وَمَنْ هُمْ؟ قَالَ: هُمْ آلُ عَلِيٍّ وَآلُ عَقِيلٍ، وَآلُ جَعْفَرٍ، وَآلُ عَبَّاسٍ قَالَ: كُلُّ هَؤُلَاءِ حُرِمَ الصَّدَقَةَ؟ قَالَ: نَعَم.  অর্থ: একদিন রসূলুল্লাহ () মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি খুম নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়াজ-নসিহত করলেন। অতঃপর বললেন : শোনো হে লোক সকল! আমি তো কেবল একজন মানুষ, অতি সত্ত্বরই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত (মৃত্যুর ফেরেশতা) আসবেন, আর আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবো। আমি তোমাদের নিকট ২টি ভারি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন)। এতে পথনির্দেশ এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো। তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন, আর [অন্যটি হলো] আমার আহলে বাইত [আলি, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (রা.)]আর আমি আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি [5]

  ইমাম বুখারি (রহ.)---আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছেন : তোমরা মুহাম্মাদ  ()-এর মত তাঁর আহলে বাইতকে সম্মান,  শ্রদ্ধা সমীহ কর

   ছহিহ হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে, আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আলি (রা.)-কে বলেন, আমি আমার আত্মীয়দের চেয়ে রসূলুল্লাহ ()-এর আত্মীয়দেরকে অধিক ভালবাসি

  ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আব্বাস(রা.)-কে বলেছেন, তোমার ইসলাম গ্রহণ করা আমার নিকট আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ করার চেয়েও প্রিয়কেননা রসূলুল্লাহ ()-এর নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ করার চেয়ে তোমার ইসলাম গ্রহণ করা অধিক প্রিয় ছিল

  অতএব প্রত্যেকের উচিত হজরত আবু বকর (রা.) ওমর (রা.)-এর মত রসূলুল্লাহ ()-এর আত্মীয়-স্বজনকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা শ্রদ্ধা করাযেমন তাঁরা করতেন এই জন্যই তাঁরা নবি রসূলগণের পরে সকল সাহাবা মুমিনগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম শ্রেষ্ঠ[6]

 নবি বংশ-পরিবারের বিশেষত্ব : নবি বংশ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য জাকাত-ফেতরা-সদকার মাল খাওয়া জায়েজ নয় এমনকি তাঁদের আজাদকৃত দাসের জন্যও সদকা খাওয়া জায়েজ নয় যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে- قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَخَذَ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ الصَّدَقَةِ، فَجَعَلَهَا فِي فِيهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كِخْ كِخْ» لِيَطْرَحَهَا، ثُمَّ قَالَ: «أَمَا شَعَرْتَ أَنَّا لاَ نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ»  অর্থ: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, হাসান ইবনে আলি (রা.) সদকার একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। নবি () তা ফেলে দেওয়ার জন্য ওয়াক ওয়াক (বমির পূর্বের আওয়াজের মত) বললেন। অতঃপর বললেন, তুমি কি জান না যে, আমরা সদকা ভক্ষণ করি না।[7]

 সাহাবিগণও নবি-পরিবার বলতে বুঝতেন, যাদের জন্য সদকা হারাম। আর তারা হলেন, বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। এর পরিবর্তে তারা গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ পেতেন। যেমন-আল্লাহ তাআলা বলেন, আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোনো বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনিমত হিসেবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এতিম-অসহায় ও মুসাফিরের জন্য।[8]

  জুবায়ের ইবনে মুতইম রা. বলেন, একবার আমি ও ওসমান ইবনে আফফান নবিজির কাছে গিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল, আপনি বনু মুত্তালিবকে দান করেছেন, আমাদের দিচ্ছেন না। অথচ তারা ও আমরা আপনার বংশে এক স্তরের। তিনি বললেন, না, বরং বনু মুত্তালিব ও বনু হাশিম এক[9] 

 হজরত আলি (রা.) এর শাহাদত: বিষয়ে সবাই একমত যে, ৪০ হিজরি সনের ১৭ রমজান জুমাআবার হজরত আলি (রা.) কে আঘাত করা হয়তবে তার ওফাত দিবস সম্পর্কে কেউ বলেছেন, ওই দিনই তার ওফাত হয়েছেকেউ বলেছেন, ১৯ রমজান রবিবারে তার ওফাত হয়েছেনতখন তার বয়স ৫৮ কিংবা ৫৯ বছরকেউ বলেছেন, তখন তার বয়স ছিল ৬৩ বছরএটিই প্রসিদ্ধ মতমুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া আবু জাফর বাকির, আবু ইসহাক সুবাঈ এবং আবু বকর আইয়াশ রহ. শেষ অভিমতটি সমর্থন করেছেন[10]

 

 

ইসলামের পঞ্চম খলিফা কে হজরত হাসান রা. না হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ.? 

হাদিস শরিফ দ্বারা প্রমাণিত যে হজরত হাসান রা. খুলাফা রাশেদার অন্তর্ভুক্ত হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. কিংবা হজরত মুআবিয়া রা. নয়

 

 

فالخليفة الراشد الخامس هو الحسن بن علي رضي الله تعالى عنه، ولا شك أن معاوية رضي الله عنه وعمر بن عبد العزيز كانا عادلين راشدين

অর্থ: পঞ্চম  খলিফা রাশেদ হলেন আল-হাসান বিন আলি রা. এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে মুয়াবিয়া রা. এবং ওমর বিন আবদুল আজিজ ন্যায়পরায়ণ, সঠিকভাবে পরিচালিত ছিলেন।

 

أما خلافة الحسن فقد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: الخلافة في أمتي ثلاثون سنة، ثم يكون بعد ذلك الملك... رواه أحمد والترمذي.

 

 অর্থাৎ আর হজরত ইমাম হাসান রা. এর খিলাফত নাবি () হতে প্রমাণিত। যেমন,

 

حَدَّثَنَا سَوَّارُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُمْهَانَ، عَنْ سَفِينَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خِلاَفَةُ النُّبُوَّةِ ثَلاَثُونَ سَنَةً ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْمُلْكَ - أَوْ مُلْكَهُ - مَنْ يَشَاءُ " . قَالَ سَعِيدٌ قَالَ لِي سَفِينَةُ أَمْسِكْ عَلَيْكَ أَبَا بَكْرٍ سَنَتَيْنِ وَعُمَرَ عَشْرًا وَعُثْمَانَ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ وَعَلِيٌّ كَذَا . قَالَ سَعِيدٌ قُلْتُ لِسَفِينَةَ إِنَّ هَؤُلاَءِ يَزْعُمُونَ أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلاَمُ لَمْ يَكُنْ بِخَلِيفَةٍ . قَالَ كَذَبَتْ أَسْتَاهُ بَنِي الزَّرْقَاءِ يَعْنِي بَنِي مَرْوَانَ .

সওয়ার ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ.).... সাফিনা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ () বলেছেন, নবুওয়াতের খিলাফত এর সময়কাল হলো ত্রিশ বছর। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা বাদশাহী দান করবেন।

 

রাবি সাঈদ (রহ.)বলেন, সাফিনা (রা.) আমাকে বলেন  তুমি হিসেব কর। আবু বকর (রা.)-এর শাসনকাল হবে দু বছর, উমর (রা.)-এর দশ বছর, উছমান (রা.)-এর বার বছর এবং আলি (রা.)-এর অর্থাৎ ছয়বছর।

 

রাবি সাঈদ বলেন, তখন আমি সাফিনা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করি যে, বনু-মারওয়ান এরূপ ধারণা করে যে, আলি (রা.) খলীফাদের অন্তর্ভুক্ত নন। তিনি বলেন, বনু-মারওয়ানরা মিথ্যা বলেছে।[11]

 

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)

 

 

ব্যাখ্যা: এ হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার রহ. বলেন,

 

قال الحافظ في الفتح: والمراد به خلافة النبوة. اهـ، وقال القاضي: المراد بها الخلافة التي لا يشوبها ملك بعده. وقال بن أبي العز في شرح الطحاوية: كانت خلافة أبي بكر سنتين وثلاثة أشهر، وخلافة عمر عشر سنين ونصفاً، وخلافة عثمان اثنتي عشر سنة، وخلافة علي أربع سنين وتسعة أشهر، وخلافة الحسن ستة أشهر، وأول ملوك المسلمين معاوية رضي الله عنه، وهو خير ملوك المسلمين. انتهى

 

অর্থাৎ এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খিলাফাতে নবুওয়া। এবং কাজি ইয়াজ রহ. বলেন, এ খিলাফত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সেটা পরবর্তী  বাদশাহীর  সাথে কোন  সামঞ্জস্য নেই। ইবনে আবি আজ রহ. শারহে তাহাবিতে বলেন,

হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. খিলাফত ২ বছর ৩ মাস

হজরত ওমর রা ১০ বছর ৬ মাস

হজরত ওসমান রা. খিলাফত ১২ বছর

হজরত আলি রা ৪ বছর ৯ মাস

আর হজরত হাসান রা. ৬ মাস।

…………………………………………………..

মোট সময় = ৩০ বছর[12]

 

 

قال سَعيدُ بنُ جُمْهانَ: قال لي سَفينةُ: "أَمْسِكْ عليكَ"، أي: احْسُبْ مَعي، "أبو بَكْرٍ"، أي: كانت مُدَّةُ خلافتِه، "سنَتينِ، وعُمَرُ عشرًا، وعثمانُ اثْنَتِي عَشْرةَ، وعليٌّ كَذا"، أي: هذه سَنواتُ خِلافةِ هؤلاء المَذْكورينَ، وقد اسْتَغْرقَتْ مُدَدُهم ثَلاثينَ سَنَةً، وعلى هذا تكونُ مُدَّةُ خِلافةِ عليِّ بنِ أبي طالبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه: سِتَّ سنواتٍ، وقد أَحْصى البعضُ مُدَّةَ خِلافةِ الحَسَنِ بنِ عليٍّ سِتَّةَ أَشْهُرٍ، وبها تَمَّت ثلاثون سَنَةً.

সাঈদ বিন জুমহান বলেন, সাফিনাহ আমাকে বললেন: আমি তোমাকে আঁকড়ে ধরেছি অর্থ: আমার সাথে গণনা কর, আবু বকর অর্থাৎ: তাঁর খিলাফতের সময়কাল ছিল দুই বছর, উমর দশ, উসমান বারো এবং আলি রা. এই, "অর্থ: এইগুলি হল মতবিরোধের বছর, এইগুলি পূর্বোক্তগুলি, এবং তাদের মেয়াদ ত্রিশ বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং সেই অনুসারে আলি ইবনে আবি তালিবের খিলাফত হবে এবং ইমাম হাসান (রা.) এর দ্বারা ত্রিশ বছর খিলাফত পূর্ণ হয়েছে।[13]

 

وأما عمر بن عبد العزيز رحمه الله فقد تولى الحكم سنة 99 هـ. وقد كان عادلاً عالماً ورعاً زاهداً، وقد سماه كثير من العلماء الخليفة الخامس لأنه جاء في زمن ابتعد الولاة فيه عن الهدي النبوي في الحكم وعن سيرة الخلفاء الراشدين فجدد مسيرتهم، أو لعله لقلة فترة خلافة الحسن رضي الله عنه، ولاضطراب أمر المسلمين في هذه الفترة.

ওমর বিন আবদুল আজিজ রহ. তিনি নিরানব্বই হিজরিতে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, পণ্ডিত, ধার্মিক ও তপস্বী এবং অনেক পণ্ডিত তাকে পঞ্চম খলিফা বলেছেন কারণ তিনি এমন এক সময়ে এসেছিলেন যখন শাসকরা শাসনে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দিকনির্দেশনা থেকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক খলিফাদের জীবনী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, তাই তিনি তাদের পথকে নবায়ন করেছিলেন।[14]

 

 

হজরত হাসান ইবনে আলি (রা.) এর খিলাফাত: হজরত আলি (রা.) আহত অবস্থায় লোকজন তাকে বলেছিল হে আমিরুল মুমিনিন! আপনার পরে খলিফা কে হবে তা নির্ধারণ করে দিনতিনি উত্তরে বলেছিলেন না, তা আমি করব না, বরং রসূলুল্লাহ () তোমাদেরকে যেমন খলিফা নির্ধারণ না করে রেখে গিয়েছিলেন আমিও তেমনি রেখে যাবমহান আল্লাহ যদি তোমাদের কল্যাণ চান, তাহলে তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠতম, তার খলিফা নির্ধারণে তিনি তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দিবেন, যেমন রসূলুল্লাহ ()-এর পরে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির খলিফা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছিলেন

 

  তিনি ইন্তেকাল করলেন হজরত ইমাম হাসান (রা.) তার জানাযার নামাজে ইমামতি করলেন তিনি ছিলেন হজরত আলি (রা.) এর বড় পুত্র রাজধানীতে তাকে দাফন করা হল , এটিই বিশুদ্ধ মত[15]  

  হজরত আলি (রা.) এর দাফন-কাফন বিষয়াদি সমাপ্ত করার পর সর্বপ্রথম কায়স ইবনে সাদ ইবনে ওবাদা (রা.) হজরত হাসান (রা.)-এর সম্মুখে এলেন এবং বললেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন  আল্লাহর কিতাব ও  রসূলুল্লাহ ()- এর সুন্নাত বাস্তবায়নের মর্মে আমি আপনার হাতে বায়আত করব হজরত হাসান (রা.) কিছুই বললেন না তারপর কায়স ইবনে সাদ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার হাতে বায়আত করেন এরপর অন্যান্য লোকজন তার হাতে বায়আত করে এটি ঠিক সেদিনেই অনুষ্ঠিত হয় যে দিন হজরত আলি (রা.)-এর ওফাত হয়

 

 মূলত যেদিন হজরত আলি (রা.) আক্রান্ত ও আহত হয়েছিলেন, সেদিনই তার ওফাত হয়েছিল দিনটি ছিল ৪০ হিজরি ১৭ রমজান জুমাআবার  কারও মতে তার ওফাত হয় রমজানের শেষ দশ দিনের কোন একদিন বস্তুত সেদিন হতে হজরত হাসান (রা.) খলিফা হিসেবে কাজ শুরু করেন কায়স ইবনে সাদ ছিলেন আজারবাইজানের গভর্নর তার অধীনের ছিল চল্লিশ হাজার লড়াকু যোদ্ধা তারা সকলে আমৃত্যু হজরত আলি (রা.) এর প্রতি আনুগত্যের শপথ করেছিল

  হজরত আলি (রা.)-এর ইন্তিকালের পর গভর্নর কায়স ইবনে সাদ নব নিযুক্ত খলিফা হজরত হাসান (রা.)-কে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে চাপ দিতে লাগলেন   এক পর্যায়ে হজরত হাসান (রা.) গভর্নর কায়সকে বরখাস্ত করে তার স্থলে উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে আজারবাইজানের গভর্নর নিযুক্ত করেন কারও বিরদ্ধে যুদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু অন্যদের অভিমতই জয়ী হল তিনি সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় রাজি হলেন জনসাধারণ বিশাল যুদ্ধ সমাবেশ একত্রিত হল ইতোপূর্বে এত বড় যোদ্ধা দল দেখা যায়নি, শোনাও যায়নি

 

 

তখন মাদাইনের গভর্নর ছিল তারাই নিযুক্ত সাদ ইবনে মাসউদ সাকাফি তিনি ছিলেন সেনাপতি আবু উবায়দার ভাই এ সময় দুর্ভাগা মুখতার ইবনে আবু উবায়দ তার চাচা মাদাইনের গভর্নর সাদ ইবনে মাসউদকে বলল, চাচা! আপনি কি ধন-সম্পদের অধিকারী হতে চান সাদ বললেন, তা কিভাবে? মুখতার বলল তা এভাবে যে, আপনি খলিফা হাসান (রা.)কে বন্দী করে মুয়াবিয়া (রা.)-এর নিকট পাঠিয়ে দিবেন উত্তরে তার চাচা বললেন, ওহে দুর্ভাগা আল্লাহ তোকে এবং তোর পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিন, আমি কি রসূলুল্লাহ ()- এর দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব?

  হজরত হাসান (রা.) যখন তার নিজের সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙখলা ও তার প্রতি অসন্তুষ্টি লক্ষ করলেন, তখন মীমাংসায় রাজি করানোর জন্যে হজরত মুআবিয়া (রা.) এর নিকট চিঠি লিখলেন হজরত মুআবিয়া (রা.) তখন সিরিয়াবাসীদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা করে একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন হজরত মুআবিয়া (রা.) তার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে আব্দুল্লাহ ইবনে আমির ও আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাকে প্রেরণ করলেন  তারা কুফা এসে হজরত হাসান (রা.) এর সাথে সাক্ষাত করেন বিভিন্ন শর্তে মীমাংসা ও আপোষরফা করলেন এবং মুআবিয়া (রা.) একক খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন

 

   হজরত হাসান (রা.)-এর ভাই হজরত হুসাইন (রা.) এই সিদ্ধান্তে তার ভ্রাতা হজরত হাসানের সমালোচনা করে এবং তিনি এই মীমাংসা মেনে নেননি অবশ্য সার্বিক বিবেচনায় হজরত হাসান (রা.) এর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এ বিষয়ে প্রমাণাদি আমরা অবিলম্বে উল্লেখ করব

 

হজরত হাসান (রা.) তার নিযুক্ত অগ্রবর্তী দলের সেনাপতি কায়স ইবনে সাদ এর প্রতি লোক পাঠালেন  এই মর্মে যে, সে যেন মীমাংসা মেনে নেয় কিন্তু সেনাপতি কায়স এ মীমাংসা অস্বীকার করলেন ফলে সে হজরত হাসান এবং মুআবিয়া (রা.) উভয়ের   বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তার অনুগত সৈন্য নিয়ে পৃথক সেনা দল গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পৃথক হয়ে যায় অবশ্য অল্প কিছুদিন পরে সে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং মুআবিয়া (রা.)- এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তার হাতে বায়আত করে

  প্রসিদ্ধ অভিমত এই যে, খলিফা হিসেবে হজরত মুআবিয়া (রা.) এর প্রতি হজরত হাসান (রা.) আনুগত্যের এ ঘটনা ঘটে ৪০ হিজরি সনে এজন্য এই বছরটি ঐক্যের বছর নামে প্রসিদ্ধ     যেহেতু এই বছর খলিফারূপে হজরত মুআবিয়া (রা.) এর পক্ষে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয় অবশ্য ইবনে জারীর ও অন্যান্য কতক ইতিহাস বিশারদের মতে এই ঘটনা ঘটেছিল ৪১ হিজরি সনের শুরুতে এই বছর আমরি-ই হজ হয়ে জনসাধারন নিয়ে হজ সম্পদন করেন হজরত মুগিরা বিন শুবা (রা.)[16]

 

 

হজরত হাসানের নিয়মানুবর্তিতা ও ইবনে মুলজিমকে হত্যা:

হজরত আলি রা. এর হত্যাকারী আব্দুর রহমান বিন মুলজিমকে সামনে আনা হলো সে হজরত লা. কে বলল, হাসান আপনি কি একটি প্রস্তাবের ওপর চিন্তাভাবনা করতে রাজি আছেন? আল্লাহর কসম, আমি যখনই আল্লাহর সাথে কোনো অঙ্গীকার করেছি, তা পূর্ণ করেই ছেড়েছি আর আমি কাবার হাতিমে বসে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছিলাম, হয় আমি আলি ও মুআবিয়া উভয়কে হত্যা করব, না হয় আমি নিহত হবো এখন যদি আপনি ভালা মনে করেন, তা হলে আমাকে সুযোগ দিন, আমি মুআবিয়কে নিঃশেষ করে দিই তারপর যদি আমি বেঁচে যাই, তা হলে ফিরে এসে নিজেকে আপনার হাতে ন্যস্ত করবো কিনতু হজরত হাসান রা. তার প্রস্তাব অস্বীকার করে তার জন্য মৃত্যুদণ্ডর আদেশ জারি করেনকিন্তু তাকে হত্যা করা হয়[17]

 

 

হজরত হাসান (রা.) কি ভীত হয়ে সন্ধি করেছিরেন?

 

হজরত মুআবিয়া (রা.)  হজরত আলি (রা.) এর শাহাদতের পর ইলহা (বায়তুল মাকদিসে) শামবাসী থেকে তার খেলাফতের বায়আত গ্রহণ করেছিলেন তখন তাকে আমিরুল মুমিনিন বলা শুরু হয়েছিল

মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি ছিল এক নতুন পরিবর্তন কেননা হজরত আলি রা. এর জীবদ্দশায় হজরত মুআবিয়া রা. খেলাফতের দাবি করেননি তখন থাকে শুধু আমি বলা হতো

খেলাফতের দুজন দাবিদারের উপস্থিতিতে ঐকমত্যপৃষ্ট খিলাফত প্রতিষ্ঠার তিনটি উপায় ছিল যথা:

(০১) শামের লোকদের হজরত হাসান রা. এর হাতে বায়আত হয়ে যাওয়া

(০২) শামদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে একটিখিলাফতের অধীনে আনার চেষ্টা করা

(০৩) খিলাফতের পদ ছেড়ে দিয়ে হজরত মুআবিয়া লা. কে খলিফা হিসেবে মেনে নেওয়া

 

  শামরা যদি অন্য কারো হাতে বায়আত হতে রাজি থাকত, তা হলে তো হজররত আলির হাতেই হতো তাই প্রথম উপায় বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভবনা ছিল না এখন হজরত হাসানের সম্মুখে একটি বিরাট পরীক্ষা এসে দাঁড়াল  তিনি এই কঠিক পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন?

 তখন হজরত হাসান (রা.) সিদ্ধান্ত নিলেন, উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য নিজের ক্ষমতা বিসর্জন দিতে তিনি কুন্ঠাবোধ করবেব না

হজরত হাসানের  এ সিদ্ধান্তে কোনো দুর্বলতা বা কাপুরুষতা ছিল না সহিহ বর্ণনার ভাষ্য অনুযায়ী হজরত হাসান রা. পূর্ণ ক্ষমতা ও মুক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন

 

 ইরাকিদের যে গোষ্ঠি শামিদের সাথে সন্ধির পক্ষে ছিল না, তারা বায়আতের এ কথাগুলো শুনে ছটফট করতে লাগল এবং বলতে লাগল, হজরত হাসান আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লোক নন, তিনি তো লড়াই করতেই চান না[18] 

 

ইরাকিদের উদ্দেশে হজরত হাসান রা. এর ভাষণ এবং দাঙ্গাবাজদের ধৃষ্ঠতা:

হজরত হাসান রা. ইরাকের লোকদের হজরত মুআবিয়া রা. এর পক্ষে একমত করার জন্য সাবাত  নামক স্থানে সমবেত করেন তার উন্মুক্ত সমাবেশে তিনি বাসন দেন তিনি অত্যন্ত আবেগ  ও দরদের সাথে বলেন, আমি নিজের জন্য যেমন কল্যাণ কামনা করি, আপনাদের জন্যও তেমনই কামনা করি আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনারা আমার প্রস্তাব ফেলে দেবেন না নিঃসন্দেহে উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বহুগুণ উত্তম 

হজরত হাসান কেবল এটুকুই বলেছেন, এর মদ্যেই আশপাশের খারেজি ও সাবায়ি চিন্তা-চেতনার বহু মানুষ  একযোগে হইচই শুরু করল তারা বলতে লাগলো, হাসানও তার পিতার মতো কাফের হয়ে গেছে কেই তো হাসানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল[19]

 

হজরত হাসানের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ:

হজরত হাসান (রা.) কায়স ইবনে সাদ (রা.)-কে বার হাজার সৈন্য সমন্বয়ে গঠিত সম্মুখ শাখার দায়িত্ব দিলেন আর তিনি নিজে তার পিছনে পেছনে অবশিষ্ট সৈন্যের নেতৃত্ব দিয়ে মুআবিয়া (রা.) ও সিরিয়াবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন মাদাইন অতিক্রম করে তার যাত্রা বিরতি ও শিবির স্থাপন করলেন সম্মুখ শাখার সৈন্যদেরকে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে বললেন হজরত হাসান (রা.) সৈন্য পরিবেষ্টিত অবস্থায় মাদাইনের উপকণ্ঠে অবস্থান করছিলেন এমন সময়ে জনৈক চিৎকারকারী লোক, সজোরে চিৎকার দিয়ে বলল, সম্মুখ সেনাদলের সেনাপতি কায়স ইবনে সাদ (রা.) নিহত হয়েছেন এ ঘোষণা শোনে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙখলা সৃষ্টি হয় একে অন্যের মালপত্র লুপপাট করে নিতে লাগল এমনকি তারা হজরত হাসান (রা.)-এর তাঁবুর সরঞ্জমাদিও খুলে নিতে লাগল তিনি যখন সওয়ারীতে আরোহণ করছিলেন কে একজন এসে তাকে বর্শার আঘাত করে এমন পরিস্থিতি দেখে হজরত হাসান (রা.) ভীষণভাবে বিরক্ত হয়ে পড়েন তিনি সওয়ারীতে চড়ে মদীনার সুরক্ষিত প্রাসাদ কাসর আল-আবয়াদ বা শ্বেত প্রাসাদে আশ্রয় নিলেন আহত অবস্থায় তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন[20]

 

সহিহ বুখারিতে সন্ধির ঘটনা:

 

بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ، وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ» وَقَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ: {فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا} [الحجرات: 9] "

 

2704 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: سَمِعْتُ الحَسَنَ، يَقُولُ: اسْتَقْبَلَ وَاللَّهِ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ مُعَاوِيَةَ بِكَتَائِبَ أَمْثَالِ الجِبَالِ، فَقَالَ عَمْرُو بْنُ العَاصِ: إِنِّي لَأَرَى كَتَائِبَ لاَ تُوَلِّي حَتَّى تَقْتُلَ أَقْرَانَهَا، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ وَكَانَ وَاللَّهِ خَيْرَ الرَّجُلَيْنِ: أَيْ عَمْرُو إِنْ قَتَلَ هَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ، وَهَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ مَنْ لِي بِأُمُورِ النَّاسِ مَنْ لِي بِنِسَائِهِمْ مَنْ لِي بِضَيْعَتِهِمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِ رَجُلَيْنِ مِنْ قُرَيْشٍ مِنْ بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ: عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ، فَقَالَ: اذْهَبَا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ، فَاعْرِضَا عَلَيْهِ، وَقُولاَ لَهُ: وَاطْلُبَا إِلَيْهِ، فَأَتَيَاهُ، فَدَخَلاَ عَلَيْهِ فَتَكَلَّمَا، وَقَالاَ لَهُ: فَطَلَبَا إِلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ: إِنَّا بَنُو عَبْدِ المُطَّلِبِ، قَدْ أَصَبْنَا مِنْ هَذَا المَالِ، وَإِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ قَدْ عَاثَتْ فِي دِمَائِهَا، قَالاَ: فَإِنَّهُ يَعْرِضُ عَلَيْكَ كَذَا وَكَذَا، وَيَطْلُبُ إِلَيْكَ وَيَسْأَلُكَ قَالَ: فَمَنْ لِي بِهَذَا، قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَمَا سَأَلَهُمَا شَيْئًا إِلَّا قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَصَالَحَهُ، فَقَالَ الحَسَنُ: وَلَقَدْ سَمِعْتُ أَبَا بَكْرَةَ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى المِنْبَرِ وَالحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ إِلَى جَنْبِهِ، وَهُوَ يُقْبِلُ عَلَى النَّاسِ مَرَّةً، وَعَلَيْهِ أُخْرَى وَيَقُولُ: «إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ» ، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: " قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ: إِنَّمَا ثَبَتَ لَنَا سَمَاعُ الحَسَنِ مِنْ أَبِي بَكْرَةَ، بِهَذَا الحَدِيثِ "

 

অধ্যয়:  হাসান ইবনে আলি (রা.) সম্পর্কে নবি () এর উক্তিঃ আমার এ সন্তনটি নেতৃস্থানীয় সম্ভবত আল্লাহ এর মাধ্যমে দুটি বড় দলের মাঝে সন্ধি স্থাপন করাবেন। আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমরা তাদের উভয় দলের মাঝে মীমাংসা করে দাও। (৪৯ঃ ৯)

 

আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রহ.).... হাসান (বসরি) (রহ.) বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবনে আলি (রা.) পর্বত সদৃশ সেনাদল নিয়ে মুআবিয়া (রা.) এর মুখোমুখি হলেন। আমর ইবনে আ'স (রা.) বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফিরে যাবে না। মুআবিয়া (রা.) তখন বললেন, আল্লাহর কসম! আর (মুআবিয়া ও আমর ইবনে আস) উভয়ের মধ্যে মুআবিয়া (রা.) ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। হে আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্বাবধান করবে? তাদের দূর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তারপর তিনি কুরাইশের বনু আব্দে শামস শাখার দুজন আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) কে হাসান (রা.) এর কাছে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা উভয়ে এই লোকটির কাছে যাও এবং তার কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তার বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর।

তারা হাসান (রা.) এর কাছে গেলেন এবং তার সঙ্গে কখা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তার বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনে আলি (রা.) তাদের বললেন, আমরা আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল মালের) আমরা পেয়েছি। আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে। তারা উভয়ে বললেন, (মুআবিয়া (রা.) আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, ‘এ দায়িত্ব কে নেবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি। এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা (তার জওয়াবে) বললেন, আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি। তারপর তিনি তার সাথে সন্ধি করলেন।

হাসান (বসরি) (রহ.)বলেন, আমি আবু বাকরা (রা.) কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ () কে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান (রা.) তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আর একবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলমানের দুটি বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন। আবু আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, আলি ইবনে আব্দুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরা (রা.) থেকে হাসানের শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।[21]

 

সন্ধি চুক্তর ঘোষণায় হজরত ইবনে ওমর রা. -এর অংশ গ্রহণ:

কুফার অদূর শামগামী পতের পাশে অবস্থিত নুখাইলা নামক এলাকায় একটি সমাবেশ করে নিময়তান্ত্রিকভাবে সন্ধির ঘোষণা করা হয়  তারপর একটি উন্মুক্ত সমাবেশের আয়োজনকরা হয় দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করে

 

  হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. প্রথম মনের ক্ষোভে এ সমাবেশে অংশ গ্রহণ করেননি কিন্তু পরে তিনিও মদিনা থেকে  অংশগ্রহণ করেছিলেন

 

  তিনি তার বোন হজরত হাফসা রা. কে বলেছিলেন, আপনি কি দেখেছেন, মানুষ কী করছে? তারা এক্ষেত্রে আমাকে কোনো মূল্য দেয়নি

 হজরত হাফসা রা. সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, এ সন্ধি থেকে দূরে থাকা আপনার মর্যাদায় শোভা পায় না এ সন্ধির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ  ()- এর উম্মতে ঐক্য ফিরিয়ে দিয়েছেন আপনি আল্লাহর নবির শ্যালক এবং হজরত ওমর রা.-এর পুত্র সুতরাং আপনি তাদের কাছে যান তারা আপনার অপেক্ষা করছেন আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আপনার না যাওয়ার কারণে আবার কোথাও কোনা মতভেদ দেখা না দেয় 

 

  এভাবে হজরত সাফিয়া রা. তাগিদ দিয়ে তাকে  রওনা করিয়ে দেন এবং হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ওই সমাবেশে অংশ গ্রহণ করেন 

 

  যখন উম্মাহর সকল বিশিষ্ট ব্যক্তি সমবেত হন এবং সন্ধির সমস্ত ধারা-উপধারা চূড়ান্ত  হয়, তখন হজরত মুআবিয়া রা. হজরত হাসান রা. কে বলেন, উঠুক, ঘোষণা করে দিন যে, আপনি খেলাফতের দায়িত্ব আমার হাতে সঁপে দিয়েছেন

 

   হজরত হাসান মিম্বারে আরোহণ করে বলেন, সবচেয়ে বড় বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা আর সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে আল্লাহর নাফরমানি করা খেলাফতের বিষয়ে আমার ও মুআবিয়ার মধ্যে মতভেদ ছিল এক্ষেত্রে আমি যদি সত্যের উপর থেকে থাকি, তাহলে উম্মাহর শান্তি ও নিরাপত্তা এবং রক্ত সংরক্ষিত রাখার জন্য আমি আমার অধিকার ছেড়ে দিলাম আর যদি অন্য কেউ বেশি অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তা হলে তার অধিকার আমি তাকেই দিয়ে দিলাম

 

 তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন,

وَإِنْ أَدْرِي لَعَلَّهُ فِتْنَةٌ لَّكُمْ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ

আমি জানি না সম্ভবতঃ বিলম্বের মধ্যে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা এবং এক সময় পর্যন্ত ভোগ করার সুযোগ।[22]

  এভাবে ক্ষমতার পালাবাদলের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর হজরত মুআবিয়া রা. বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মুখে ভাষণ প্রদান করেন তারপর তিনি কুফায় গমন করেন এবং লোকদের থেকে বায়আত গ্রহণ করেন[23]

 

সন্ধির শর্তাবলী: হজরত ইমাম হাসান রা. এবং হজরত মুআবিয়া রা. মাঝে নিম্নোক্ত শর্তাবলী ভিত্তিতে সন্ধি স্থাপিত হয়

 

والآن وقبل أن ندرس كلاً من بنود معاهدة الصلح على حدة، يمكننا حصر نصها في خمسة بنود كما في الصورة التالية:

 

البند الأوّل: تسليم الأمر ـ الخلافة ـ إلى معاوية على أن يعمل بكتاب اللّه وسنّة رسوله.

 

البند الثاني: أن تكون للحسن الخلافة من بعده، فإن حدث به حدث فلأخيه الحسين، وليس لمعاوية أن يعهد بها إلى أحد.

 

البند الثالث: أن يترك سب أمير المؤمنين والقنوت عليه في الصلاة، وأن لا يذكر علياً إلاّ بخير.

 

البند الرابع: استثناء ما في بيت المال وهو خمسة ملايين درهم وتكون بحوزة الإمام الحسن، وأن يفضّل بني هاشم في العطاء والصلات على بني أُمية، وأن يفرّق

 

في أولاد من قتل مع أمير المؤمنين يوم الجمل وصفين مليون درهم، و أن يجعل ذلك من خراج دار أبجرد(2).

 

البند الخامس: الناس آمنون حيث كانوا من أرض اللّه في شامهم وعراقهم وحجازهم ويمنهم، وأن يؤمن الأسود والأحمر، وأن يحتمل معاوية ما صدر من هفواتهم، وأن لا يتبع أحداً بما مضى، وأن لا يأخذ أهل العراق بأحنة وحقد، وعلى أمان أصحاب علي حيث كانوا، وأن لا ينال أحداً من شيعة علي بمكروه، وانّ أصحاب علي وشيعته آمنون على أنفسهم وأموالهم ونسائهم وأولادهم، وأن لا يتعقّب عليهم شيئاً ولا يتعرض لأحد منهم بسوء، ويوصل إلى كلّ ذي حق حقّه، وعلى أن لا يبغي للحسن بن علي ولا لأخيه الحسين ولا لأحد من أهل بيت الرسول غائلة سراً ولا جهراً، ولا يخيف أحداً منهم في أُفق من الآفاق.

 

فكتب معاوية جميع ذلك بخطه وختمه بخاتمه، وبذل عليه العهود المؤكدة والأيمان المغلّظة، وأشهد على ذلك جميع رؤساء أهل الشام(3).

 

وهكذا تتحقّق نبوءة نبي الإسلام التي أطلقها عندما شاهد الحسن بن علي وهو لم يزل طفلاً من على منبره وقال: «هذا ابني سيد، ولعلّ اللّه يصلح به بين فئتين عظيمتين من المسلمين(4)،(5).

 

ابن اثیر، الکامل فى التاریخ، بیروت، دار صادر، ج 3، ص405؛ ابن عبد البر، الاستیعاب في معرفة الاصحاب، (في حاشية الاصابة)، ط 1، بیروت، دار احیاء التراث العربي، 1328 ه.ق، ج‏1، ص371؛ محمد بن جریر الطبري، نفس المصدر، ج 6، ص93.

 

 

অর্থাৎ আল-ইসতিআবু ফি মারিফাতিল আসহাব আমরা পুনর্মিলন চুক্তির প্রতিটি প্রবন্ধ আলাদাভাবে অধ্যয়ন করার আগে, আমরা এর পাঠ্যকে পাঁচটি ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে পারি, যেমনটি নিচের পদ্ধতিতে মতো:

 

প্রথম ধারা : খিলাফাতের গুরুদায়িত্ব মুয়াবিয়ার উপর ন্যস্ত করা হবে। তবে শর্ত হলো, তিনি আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের কর্মপন্থা অনুসরণ করে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

 

দ্বিতীয় ধারা: মুয়াবিয়ার পরবর্তীতে হাসান খিলাফাতের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। কিন্তু এরই মাঝে কোন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যায় ( যেমন হাসান এর ইন্তিকাল) তাহলে হুসাইন খিলাফাতের উত্তরাধিকার লাভ করবেন।

 

তৃতীয় ধারা: আমীরুল মূমিনীন আলী (রা.) কে গালমন্দ করা চলবেনা। এবং তাঁকে বদদোয়া করে তাঁর বিরুদ্ধে সালাতে কুনুতে নাজেলাও পড়া চলবেনা। আলী (রা.) এর শুধুমাত্র ভালো দিকগুলোর কথাই বর্ণনা করতে হবে।

 

চতুর্থ ধারা: কোষাগারে যা আছে তা বাদ দিয়ে আরো পাঁচ মিলিয়ন দিরহাম  ইমাম হাসানের তত্বাবধানে দিয়ে দিতে হবে। দান-দক্ষিণা ও সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে  বনি হাশেমকে বনি উমাইয়্যার উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং উভয়ের মাঝে মর্যাগত বৈষম্য করতে হবে।

 

জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা আলী (রা.) সাথে থেকে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে এক মিলিয়ন দিরহাম অনুদান দিতে হবে। এবং সেটি 'দারে আবজারদ' (২)  এর ভূমিকর থেকে ধার্য করতে হবে।

 

 

পঞ্চম ধারা: সিরিয়া, ইরাক,হিজায, ইয়ামান নির্বিশেষে আল্লাহর যমীনের প্রতিটি ভূখন্ডে মানুষ নিরাপদে নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারবে। কৃষ্ণবর্ণ ও গৌড়ীয়বর্ণের মানুষদের নিরাপত্তা বিধান করা হবে। তাদের ভুলের খেসারত নিজেই মাথা পেতে নিবে।  অতীতের বিচ্যুতির কারণে কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে পারবেনা।ইরাকবাসীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা চলবেনা। আলী(রা.) এর সহযোদ্ধাগণের সর্বাবস্থায় পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আলী (রা.) এর শিয়া ( দলভুক্ত) কাউক্র  কোনপ্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করা চলবেনা। আলী (রা.) এর অনুসারী ও সহযোদ্ধাগণকে তাদের জীবন, সম্পদ, স্ত্রী,সন্তানদের ব্যাপারে শতভাগ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাদের ছিদ্রান্বেষনে মত্ত হওয়া যাবেনা। বরং তাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ হক বুঝিয়ে দিতে হবে। হাসান বিন আলী কিংবা তার ভাই হুসাইন বিন আলীর প্রতি অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারভুক্ত আহলে বাইতের কারো প্রতিই প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করা যাবেনা।  কোনখানেই তাদেরকে ভীতিপ্রদর্শন করা চলবেনা।

 

মুয়াবিয়া উপরের প্রতিটি ধারা নিজ হাতে লিখে নেন। তারপর তাতে সীলমোহর মেরে দেন। এবং প্রতিটি শর্ত মান্য করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়বো অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এবং সেখানে উপস্থিত সিরিয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে সাক্ষী রাখেন।(৩)

 

 

 

এভাবেই ইসলামের নবীর সেই সময়কার ভবিষদ্বানী বাস্তবিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল, যখন তিনি হাসান বিন আলী ছিলেন শিশু। তিনি মিম্বর থেকে তাকে দেখে বলেছিলেন, " এ আমার পুত্র, যে নেতা হবে। তার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা বিবাদমান দুটি।মুসলিম বাহিনীর মাঝে মীমাংসা করিয়ে দিবেন।

 

 

 

 ইবনে আসির,  আল-কামিল ফিত তারিখ, বৈরুত, দারু সদর, ৩য়খণ্ড , ৪০৫পৃ.; ইবনে আবদ আল-বার, আল-ইসতিআবু ফি মারিফাতিল আসহাব, (হাশিয়াত আল-ইসাবাহে), ১ম সংস্করণ, বৈরুত, দার ইহিয়া আল-তুরাথ আল-আরাবি, ১৩২৮ হি, অংশ 1, পৃ. ৩৭১; মুহাম্মাদ বিন জারির আল-তাবারী, একই সূত্র, ৬ষ্ঠ খন্ড , ৯৩পৃষ্ঠা

 

ইমাম হাসান (রা.) মুসলমানদের মাঝে রক্তপাত বন্ধ করার নিমিত্তে নিজ ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন

  হজরত মুআবিয়া (রা.)-এর সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করার পর হজরত হাসান (রা.) যখন কুফায় ফিরে এলেন, তখন আমির সাঈদ ইবনে নাতল নামে আমাদের এক লোক তাঁকে সম্বোধন করে বলল, السلام عليك يا مذل المؤمنين হে মুমিনদেরকে লাঞ্ছিতকারী! আপনাকে সালাম হজরত হাসান(রা.) বললেন, হে আবু আমির! এমন কথা বলো না আমি মুমিনদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করিনি বরং রাজত্বের লোভে মুমিনদেরকে হত্যা করাকে ঘৃণা করেছি

  উক্ত ঘটনায় তিনি ছিলেন পুন্যবান, সত্যানুসারী এবং প্রশংসিত কাজের জন্য তিনি মানসিকভাবে সামান্যও দুঃখিত কিংবা মর্মাহত হননি বরং তাতে তিনি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দিত।  তাঁর পরিবাবের সমর্থকদের মধ্যে বহু লোক তাঁর সমালোনা করেছে বটে দীর্ঘ সময় পর যুগেও অনেক লোক ওই সমালোচনার পথে চলেছে বস্তুত এই ঘটনার সত্য বিষয় এই যে, ইমাম হাসান (রা.) রসূলে কারিম ()-এর হাদিসের অনুসরণ করেছেন এবং উম্মতের রক্তপাত বন্ধ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।  হজরত হাসান (রা.)-এর এই আপোষ-রফাকে বহু আগেই করেন, রসূলুল্লাহ () প্রশংসা করে গিয়েছেন যেমন হাদিস শরিফে এসেছে-

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ الحَسَنَ، فَصَعِدَ بِهِ عَلَى المِنْبَرِ، فَقَالَ: «ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ، وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ»

অর্থ: হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন নবি কারিম () হাসান (রা.) কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকে সহ মিম্বারে আরোহণ করলেন অতঃপর বললেন, আমার ছেলেটি সরদার নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে বিবাদমান দুদল মুসলমানের মাঝে সমঝোতা-মীমাংসা করিয়ে দিবেন[24]

  হজরত হাসান বসরি (রহ.)বলেন,আল্লাহর কসম! হজরত হাসান (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর শিঙ্গা লাগানোর শিঙ্গা পরিমাণ রক্তপাতও ঘটেনি

   এভাবে হজরত হাসান (রা.) ধ্বংসশীল এই দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করেছেন এবং এই উম্মতের রক্তপাত বন্ধের পথ অবলম্বন করেছেন। তিনি খেলাফতের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং রাজত্ব সোপর্দ করেছেন মুআবিয়া (রা.)-এর হাতে। ফলে সকলে এক শাসকের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।[25]

 

  ইমাম হাসান (রা.) এর মানাকিব বা গুণাবলী, বিশেষত্ব:

কুতুবে সিত্তাসহ প্রায় সকল হাদিসের কিতাবে ইমাম হাসান রা. মানাকেব বা গুণাবলী স্থান পেয়েছে নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:

হাদিস নং-০১

باب مَنَاقِبُ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رضى الله عنهما قَالَ نَافِعُ بْنُ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَانَقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَنَ

3747 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا المُعْتَمِرُ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عُثْمَانَ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ كَانَ يَأْخُذُهُ وَالحَسَنَ وَيَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا» أَوْ كَمَا قَالَ

উসামা ইবনে যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি () তাঁকে এবং হাসান (রা.) কে এক সাথে কোলে তুলে নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ্! আমি এদের দুজনকে মহব্বত করি, আপনিও এদেরকে মহব্বত করুন। অথবা এরূপ কিছু বলেছেন।[26]

হাদিস নং-০২

3750 - حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَبِي حُسَيْنٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الحَارِثِ، قَالَ: رَأَيْتُ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَحَمَلَ الحَسَنَ وَهُوَ يَقُولُ: «بِأَبِي شَبِيهٌ بِالنَّبِيِّ، لَيْسَ شَبِيهٌ بِعَلِيٍّ» وَعَلِيٌّ يَضْحَكُ

 উকবা ইবনে হারিস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর (রা.) কে দেখলাম, তিনি হাসান (রা.) কে কোলে তুলে নিলেন এবং বলতে লাগলেন, এ-ত নবি () এর সদৃশ, আলির সদৃশ নয়। তখন আলি (রা.) (নিকটেই দাঁড়িয়ে) হাঁসছিলেন।[27]

হাদিস নং-০৩

حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسٍ، وَقَالَ: عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ لزُّهْرِيِّ، أَخْبَرَنِي َنَسٌ، قَالَ: «لَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَشْبَهَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ»

ইবরাহীম ইবনে মুসা (রহ.)......... আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি () এর পরিবারে হাসান ইবনে আলি (রা.) এর চেয়ে নবি () এর অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিলেন না।[28]

হাদিস নং-০৪

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ، عَنْ ابْنِ أَبِي نُعْمٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ» حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ قَالَ: حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، وَمُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ يَزِيدَ، نَحْوَهُ. هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَابْنُ أَبِي نُعْمٍ هُوَ: عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي نُعْمٍ الْبَجَلِيُّ الْكُوفِيُّ ويكنى أبا الحكم

আবু সাঈদ খুদরি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ () বলেছেন, হাসান ও হুসায়ন হল জান্নাতী যুবকদের সর্দার।[29]

নোট: সুফইয়ান ইবনে ওয়াকি (রহ.)... ইয়াযিদ (রহ.) সূত্রে অনুরূপ বর্নিত আছে। এ হাদিসটি হাসান-সহিহ

হাদিস নং-০৫

حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ يَعْقُوبَ الزَّمْعِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ زَيْدِ بْنِ المُهَاجِرِ قَالَ: أَخْبَرَنِي مُسْلِمُ بْنُ أَبِي سَهْلٍ النَّبَّالُ قَالَ: أَخْبَرَنِي الحَسَنُ بْنُ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: طَرَقْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي بَعْضِ الحَاجَةِ فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُشْتَمِلٌ عَلَى شَيْءٍ لَا أَدْرِي مَا هُوَ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْ حَاجَتِي. قُلْتُ: مَا هَذَا الَّذِي أَنْتَ مُشْتَمِلٌ عَلَيْهِ؟ فَكَشَفَهُ فَإِذَا حَسَنٌ وَحُسَيْنٌ عَلَى وَرِكَيْهِ، فَقَالَ: «هَذَانِ ابْنَايَ وَابْنَا ابْنَتِيَ، اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا». «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ»

সুফইয়ান ইব্‌ন ওয়াকি' ও আব্দ ইব্‌ন হুমায়দ (রহ.)... উসামা ইবন যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ () -এর কাছে কোন এক প্রয়োজনে গেলাম। নবি () কোন একটি বস্তু পেঁচিয়ে ঘর থেকে বের হলেন। আমি বুঝতে পারলাম না বস্তুটি কি? আমার কাজ শেষ হওয়ার পর আমি তাঁকে বললামঃ আপনি এটা কি পেঁচিয়ে নিয়ে এসেছেন? তিনি তাঁর চাদর উন্মোচন করলেন। তখন তাঁর দুই উরূতে হাসান আর হুসায়ন (রা.) ছিলেন। তিনি বললেনঃ এরা দু'জন হলো আমার সন্তান ও আমার কন্যার সন্তান। হে আল্লাহ্! আমি এদের দুজনকে ভালবাসি তুমি তাদের উভয়কে ভালবাস এবং যারা এ দু'জনকে ভালবাসে, তাদেরও তুমি ভালবাস।[30]

নোট: এ হাদিসটি হাসান-গারীব

হাদিস নং-০৬

حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ الْبَصْرِيُّ الْعَمِّيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي نُعْمٍ، أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ العِرَاقِ سَأَلَ ابْنَ عُمَرَ عَنْ دَمِ البَعُوضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ: انْظُرُوا إِلَى هَذَا يَسْأَلُ عَنْ دَمِ البَعُوضِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ هُمَا رَيْحَانَتَايَ مِنَ الدُّنْيَا»: «هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ» وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ، وَمَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ

উকবা ইব্‌ন মুকরাম বসরী আম্মী (রহ.)... আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবু নু'ম (রহ.) থেকে বর্ণিত যে, ইরাকবাসী এক ব্যক্তি ইবন উমার (রা.)-কে কাপড়ে মশার রক্ত লাগা সম্পর্কে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করেছিল।

ইবন উমার (রা.) বললেনঃ এ লোকটিকে তোমরা লক্ষ্য কর, মশার রক্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করছে অথচ এরা রাসূলুল্লাহ () -এর সন্তান (হুসায়ন)-কে হত্যা করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ () -কে বলতে শুনেছি যে, হাসান-হুসায়ন হলেন দুনিয়ায় আমার দুইটি পুষ্প।[31]

নোট: এ হাদিসটি সহিহ শুবা এবং মাহদি ইব্‌ন মায়মূন (রহ.)এ হাদিসটি মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ ইয়াকূব (রহ.)থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রা.) নবি () থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নং-০৭

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرُ قَالَ: حَدَّثَنَا رَزِينٌ، قَالَ: حَدَّثَتْنِي سَلْمَى، قَالَتْ: دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي، فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَعْنِي فِي المَنَامِ، وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «شَهِدْتُ قَتْلَ الحُسَيْنِ آنِفًا» هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

 আবু সাঈদ আশাজ্জ (রহ.)... সালমা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার উন্মু সালামা (রা.)-এর কাছে গেলাম তিনি কাঁদছিলেন। আমি বললামঃ কাঁদছেন কেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ () কে স্বপ্নে দেখলাম। তাঁর মাথা ও দাড়ি ধূলি মলিন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেনঃ এইমাত্র দেখে এলাম হুসায়নকে হত্যা করা হয়েছে।[32]

নোট: এ হাদিসটি গারীব।

হাদিস নং-০৮

روى الإمام أحمد (7876) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ( مَنْ أَحَبَّهُمَا فَقَدْ أَحَبَّنِي ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمَا فَقَدْ أَبْغَضَنِي ) يَعْنِي حَسَنًا وَحُسَيْنًا .

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: আল্লাহর রসূল () বলেছেন: যে তাদের ভালোবাসে সে আমাকে ভালোবাসে, আর যে তাদের ঘৃণা করে সে আমাকে ঘৃণা করে।[33] মুসনাদে আহমদ -৭৮

 

ইমাম হাসান রা. এর  ধৈর্য:  ইমাম হাসান রা. এর ধৈর্য সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মদ বাকির আল-মাজলিসি রহ. স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-

روي أنّ شاميا رأى الإمام راكباً فجعل يلعنه والحسن لا يردّ، فلمّا فرغ أقبل الحسن فسلّم عليه وضحك فقال: « أيّها الشّيخ أظنّك غريباً ولعلّك شبّهت، فلو استعتبتنا أعتبناك، ولو سألتنا أعطيناك، ولو استرشدتنا أرشدناك، ولو استحملتنا أحملناك، وإن كنت جائعاً أشبعناك، وإن كنت عرياناً كسوناك، وإن كنت محتاجاً أغنيناك، وإن كنت طريداً آويناك، وإن كان لك حاجة قضيناها لك، فلو حرّكت رحلك إلينا وكنت ضيفنا إلى وقت ارتحالك كان أعود عليك، لانّ لنا موضعاً رحباً وجاهاً عريضاً ومالاً كثيراً ». فلمّا سمع الرّجل كلامه بكى، ثمّ قال: « أشهد أنّك خليفة الله في أرضه، الله أعلم حيث يجعل رسالته ».

لمّا مات الحسن، بكى مروان بن الحكم في جنازته، فقال له الحسين، أتبكيه وقد كنت تُجرَّعه ما تُجرّعه؟ فقال: إنّي كنت أفعل ذلك إلى أحلم من هذا، وأشار بيده إلى الجبل

অর্থাৎ বর্ণিত হয়েছে যে,  শামিয়া অর্থাৎ শামবাসিরা ইমামকে অশ্বারোহণ করতে দেখেছিলেন, তাই তিনি তাকে অভিশাপ দিতে শুরু করেছিলেন, এবং আল-হাসান সাড়া দেননি, তাই যখন তিনি শেষ করলেন, আল-হাসান এসে তাকে সালাম করলেন এবং হেসে বললেন: "হে শেখ, আমি মনে করি আপনি একজন অপরিচিত, এবং সম্ভবত আপনি সন্দেহজনক হয়ে উঠেছেন এবং যদি আপনি উলঙ্গ হতেন তবে আমরা আপনাকে পোশাক পরিয়ে দিতাম এবং যদি আপনার প্রয়োজন হয় তবে আমরা আপনার জন্য যথেষ্ট, এবং যদি আপনাকে বহিষ্কার করা হয় তবে আমরা আপনাকে গ্রহণ করেছি এবং যদি আপনার প্রয়োজন হয় তবে আমরা আপনার জন্য এটি পূরণ. লোকটি তার কথা শুনে কেঁদে ফেলল, তারপর বলল: "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি তাঁর জমিনে আল্লাহর উপাধিকারী৷ তিনি তাঁর বাণী কোথায় রেখেছেন তা আল্লাহই ভাল জানেন।"

আল-হাসান মারা গেলে, মারওয়ান বিন আল-হাকাম তার জানাজায় কেঁদেছিলেন, এবং আল-হুসাইন তাকে বললেন: আপনি কি তার জন্য কাঁদছেন যখন আপনি তাকে একই ডোজ দিতেন? তিনি বললেনঃ আমি এমনটি করতাম যতক্ষণ না আমি এটি স্বপ্নে দেখি এবং তিনি হাত দিয়ে পাহাড়ের দিকে ইশারা করলেন[34]

ইমাম হাসান রা. এর প্রজ্ঞা: ইমাম হাসান রা. এর  হিকমাহ পূর্ণ বাণীসমূহ সম্পর্কে আল্লামা আল-মাজলিসি রহ. স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-

 

هلاك المرء في ثلاث، الكبر والحرص والحسد، فالكبر هلاك الدين، وبه لعن إبليس، والحرص عدو النفس، به أخرج آدم من الجنة، والحسد رائد السوء، ومنه قتل قابيل هابيل.

 

لا أدب لمن لا عقل له، ولا مروءة لمن لا همة له، ولا حياء لمن لا دين له، ورأس العقل معاشرة الناس بالجميل، وبالعقل تدرك الداران جميعاً، ومن حرم العقل حرمهما جميعا.

 

فوت الحاجة خير من طلبها إلى غير أهلها.

 

مكارم الأخلاق عشر: صدق اللسان، وصدق البأس، وإعطاء السائل، وحسن الخلق، والمكافأة بالصنائع، وصلة الرحم، والترحم على الجار، ومعرفة الحق للصاحب، وقرى الضيف، ورأسهن الحياء.

 

ما رأيت ظالماً أشبه بمظلوم من الحاسد.

 

অর্থ: একজন ব্যক্তির ধ্বংস তিনটি: অহংকার, লোভ এবং হিংসা। অহংকার হল ধর্মের ধ্বংস, এবং এর সাথে শয়তানের অভিশাপ এবং লোভ হল আত্মার শত্রু, যার দ্বারা আদমকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং হিংসা। মন্দের পথপ্র দর্শক, এবং তা থেকে কেউ হাবিলকে হত্যা করেছিল।

 

যার মন নেই তার কোন শিষ্টাচার নেই, যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই তার বীরত্ব নেই এবং যার ধর্ম নেই তার লজ্জা নেই।

 

অ-মানুষের কাছে অনুরোধের চেয়ে ফুট ভালো দরকার।

 

মহৎ নৈতিকতা হল দশটি: সত্য কথা বলা, সাহসের আন্তরিকতা, ভিক্ষুককে দান করা, সদাচরণ, পুরস্কৃত অনুগ্রহ, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, প্রতিবেশীর প্রতি দয়া করা, বন্ধুর সত্যতা জানা, অতিথিকে সালাম করা এবং লজ্জাকে প্রাধান্য দেওয়া তারা বিনয় হয়  হিংসুকের চেয়ে নিপীড়িতের মতো অত্যাচারী আর দেখিনি।[35]

 

 

ইমাম হাসান (রা.) এর প্রতি অভিযোগ এবং তার খণ্ডন:

ذكر غير واحد من أهل العلم أن الحسن بن علي رضي الله عنهما كان كثير التزوج ، كثير التطليق .

قال ابن كثير رحمه الله :

" قالوا : وكان كثير التزوج ، وكان لا يفارقه أربع حرائر ، وكان مطلاقا ، مصداقا ، يقال إنه أحصن سبعين امرأة " انتهى من "البداية والنهاية" (8/42)

وذكرا نحوا من هذا الذهبي رحمه الله في "سير أعلام النبلاء" (3 /253) ، وينظر أيضا : "تاريخ دمشق" لابن عساكر (13 /251) ، "تاريخ الإسلام" للذهبي (4 /37) ، "محاضرات الأدباء" ، للراغب الأصفهاني (1 /408) .

একাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি উল্লেখ করেছেন যে আল-হাসান বিন আলি, আল্লাহ তাদের উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট হন, প্রচুর বিবাহ করেছিলেন এবং প্রচুর তালাক দিয়েছিলেন।

ইবনে কাসির রহ. বলেছেন: তারা বলেছেন: তিনি প্রচুর বিয়ে করেছেন, এবং তিনি চারটি স্বাধীন মহিলা থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন ছিলেন না, এবং তিনি তালাকপ্রাপ্ত, যৌতুক ছিলেন এবং বলা হয় যে তিনি সত্তর জন মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন।[36] 

আল্লামা যাহাবি রহ. "সিয়ার আ'লাম আল-নুবালা' (/২৫৩) তে অনুরূপ সংস্করণ উল্লেখ করেছেন,  এছাড়াও দেখুন: ইবনে আসাকারের "তারিখ দিমাশক" (১৩/২৫১) ,  "তারিখ আল-ইসলাম" (৪/৩৭), "লেকচারস অফ রাইটার্স", রাগেব আল-ইসফাহানি (১/৪০৮)

 

 আনীত অভিযোগ খণ্ডন:

প্রথম জবাব: আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবে যে হাদিস খানা এনেছেন যে, তিনি বেশি বেশি বিবাহ করতেন এবং তালাক দিতেন উসূলে হাদিসের মানদণ্ডে তা বিশুদ্ধ নয় দলিল:

ولكن لا بد لنا أن نعلم أن كثيرا من مرويات التاريخ لا تصح ، ولذلك يجب علينا أن نكون منها على حذر ، وخاصة إذا كانت تخص أحدا من أعلام الإسلام وسادات المسلمين .

قال الحافظ العراقي رحمه الله في "ألفية السيرة" (ص 1) :

وليعلمِ الطالبُ أنَّ السّيَرَا تَجمَعُ ما صحَّ وما قدْ أُنْكرَا

وقال الشيخ عبد الرحمن المعلمي رحمه الله :

" على أن حاجة التاريخ إلى معرفة أحوال ناقلي الوقائع التاريخية ، أشد من حاجة الحديث إلى ذلك ؛ فإن الكذب والتساهل في التاريخ أكثر " انتهى .

"علم الرجال وأهميته" (ص 24

وما ورد من كون الحسن بن علي رضي الله عنهما كان قد تزوج بأكثر من سبعين امرأة ، أو تسعين ، ونحو ذلك من الروايات ، لم نقف على إسناد تقوم به الحجة لشيء منها ، فينبغي التوقف في قبولها ، والتريث في التعويل عليها .

يقول الدكتور علي محمد الصلابي في كتابه عن الحسن بن علي رضي الله عنه ( ص 27 ) :

" وقد ذكر المؤرخون أن من زوجاته ، خولة الفزازية ، وجعدة بنت الأشعث ، وعائشة الخثعمية ، وأم إسحاق بنت طلحة بنت عبيد الله التميمي ، وأم بشير بنت أبي مسعود الأنصاري ، وهند بنت عبد الرحمن بن أبي بكر ، وأم عبد الله وهي بنت الشليل بن عبد الله أخو جرير البجلي وامرأة من بني ثقيف وامرأة من بني عمرو بن أهيم المنقري ، وامرأة من بني شيبان من آل همام بن مرة . وربما تجاوز هذا العدد بقليل ، وهو كما ترى لا يمتّ إلى الكثرة المزعومة بصلة ، بعرف ذلك العصر .

وأما ما رواه رواة الأثر ، في كونه تزوج سبعين ، وفي بعض الروايات تسعين ، والبعض الآخر مائتين وخمسين ، والبعض الآخر ثلاثمائة ، وروي غير هذا ؛ إلا أنه من الشذوذ بمكان ، وهذه الكثرة المزعومة موضوعة . وأما الروايات فهي كالتالي : ... "

ثم شرع في تخريج هذه المرويات وبيان ضعفها ووهائها ، فانظره في المصدر السابق ( ص 28 – 31 )

ثم قال حفظه الله (ص 31) :

" إن الروايات التاريخية التي تشير إلى الأعداد الخيالية في زواج الحسن بن علي رضي الله عنه لا تثبت من حيث الإسناد ، وبالتالي لا تصلح للاعتماد عليها نظراً للشبه والطعون التي حامت حولها "

إلى أن قال :

" ومن هنا تتضح أهمية علم الجرح والتعديل والحكم على الروايات والدور العظيم الذي قام به علماء الحديث في بيان زيف مثل هذه الأخبار .

ولذلك ننصح الباحثين في تاريخ صدر الإسلام بالاهتمام بنقد مثل هذه الروايات ، حتى يميزوا صحيحها من سقيمها ، فيقدموا للأمة خدمة جليلة ولا يتورطوا مثل ما تورط فيه بعض السادة الذين لا نشك في نواياهم، بسبب اعتمادهم في بحوثهم على الروايات الضعيفة والموضوعة " انتهى .

 

ولعل الحافظ ابن كثير رحمه الله أشار إلى أن ما ورد في ذلك لم يصح بقوله : " يقال إنه أحصن سبعين امرأة " فتصديره الكلام بصيغة التمريض مشعر بعدم الثبوت ، أو على الأقل بعدم الوقوف على إسناد تقوم به الحجة في ذلك .

কিন্তু আমাদের অবশ্যই জানা উচিত যে অনেক ঐতিহাসিক বর্ণনাই সঠিক নয়, এবং তাই আমাদের অবশ্যই সেগুলি থেকে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি সেগুলি ইসলামের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং মুসলমানদের নেতাদের সাথে সম্পর্কিত হয়।

আল-হাফিজ আল-ইরাকী, আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন, আলফিয়্যাহ আল-সিরাহ (পৃষ্ঠা. ১) বলেছেন: ছাত্রকে জানতে দিন যে জীবনীতে কোনটি প্রামাণিক এবং কোনটি অস্বীকার করা হয়েছে।

এবং শায়েখ আব্দুর রহমান আল-মুল্লামি রহ. বলেছেন:

তবে, ঐতিহাসিক তথ্যের  শর্তগুলি জানার জন্য ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা তা করার জন্য হাদীসের প্রয়োজনীয়তার চেয়ে বেশি, কারণ মিথ্যা এবং নম্রতা ইতিহাসে বৃহত্তর।" [37]

এবং আল-হাসান ইবনে আলি রা. সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তিনি সত্তর বা নব্বই জনেরও বেশি মহিলার সাথে বিবাহ করেছিলেন এবং অন্যান্য অনুরূপ বর্ণনা। এর সনদ শক্তিশালী নয়

 

ডক্টর আলি মুহাম্মদ আল-সাল্লাবি আল-হাসান ইবনে আলির লিখিত উপর তার বইতে (পৃ. ২৭) বলেছেন,

 ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন খাওলা আল-ফাজাজিয়া, জাদাহ। বিনতে আল-আশআত, আয়েশা আল-খাথামিয়া, উম্মে ইসহাক বিনতে তালহা বিনতে উবায়দ আল্লাহ আল-তামিমি, এবং উম্মে বশির বিনতে আবি মাসউদ আল-আনসারী, হিন্দ বিনতে আবদ আল-রহমান বিন আবি বকর, উম্মে আবদুল্লাহ, যিনি কন্যা। আল-শালিল বিন আবদুল্লাহ, জারির আল-বাজালির ভাই, বনু সাকিফের একজন মহিলা, বনু আমর বিন আহিম আল-মানকারির একজন মহিলা এবং হাম্মাম বিন মুরার পরিবারের বনু শায়বানের একজন মহিলা। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, এটি সেই যুগের রীতি অনুসারে কথিত প্রাচুর্যের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

আতহারের বর্ণনাকারীদের দ্বারা যা বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সত্তরটি বিবাহ করেছিলেন, এবং কিছু বর্ণনায় নব্বইটি, এবং অন্যেরা আড়াইশত এবং অন্যদের মধ্যে তিনশতটি বিবাহ করেছিলেন এবং এটি এটি ব্যতীত অন্য বর্ণিত হয়েছে; যাইহোক, এটি জায়গায় অসঙ্গতি, এবং এই কথিত প্রাচুর্য বানোয়াট। বর্ণনাগুলির জন্য, সেগুলি নিম্নরূপ: ... "

তারপর তিনি এই বর্ণনাগুলি বের করে তাদের দুর্বলতা এবং তুচ্ছতা ব্যাখ্যা করতে এগিয়ে গেলেন, তাই এটি পূর্ববর্তী সূত্রে দেখুন ২৬-২৮ পৃষ্ঠা

. যতক্ষণ না তিনি বলেন: তাই, বর্ণনার উপর আঘাত, পরিবর্তন এবং বিচারের বিজ্ঞানের গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে যায়, এবং এ ধরনের সংবাদের মিথ্যাচার উন্মোচনে হাদিস বিশারদদের বিরাট ভূমিকা।

তাই আমরা ইসলামের সূচনার ইতিহাসের গবেষকদের এই ধরনের বর্ণনার সমালোচনা করার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে তারা দুর্বল থেকে শ্রুতিমধুর পার্থক্য করতে পারে, যাতে তারা জাতিকে একটি মহান সেবা প্রদান করে এবং কিছু লোকের মতো জড়িত না হয়। ভদ্রলোক যাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা সন্দেহ করি না, কারণ তারা দুর্বল এবং বানোয়াট বর্ণনার উপর তাদের গবেষণার উপর নির্ভরশীল।

 

সম্ভবত আল-হাফিজ ইবনে কাসির রহ. ইঙ্গিত করেছেন যে এই বিষয়ে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না, যখন তিনি বলেছিলেন: "কথিত আছে যে তিনি সত্তর জন মহিলাকে বিয়ে করেছেন।" তাই তার শব্দগুলি আকারে রপ্তানি করা হয়েছে। সনদে প্রমাণিত নয়, বা অন্তত বর্ণনাকারীর একটি সিকাহ নেই যা এর জন্য একটি যুক্তি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।[38]

দ্বিতীয় জবাব:

আমরা জানি তালাক হলো, একটি নিকৃষ্ট হালাল। যেমন,

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا مُعَرِّفٌ، عَنْ مُحَارِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا أَحَلَّ اللَّهُ شَيْئًا أَبْغَضَ إِلَيْهِ مِنَ الطَّلاَقِ "

আহমদ ইবনে ইউনুস ..... মুহারিব (রহ.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ () ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তাআলার নিকট হালাল বিষয়সমূহের মধ্যে তালাকের চাইতে অধিক নিকৃষ্ট বস্তু আর কিছুই নেই।[39]

বিনা  অপরাধে তালাক দেওয়া এটা মুমিনের শান নয়। আমরা এ প্রবন্ধে লক্ষ্য করেছি যে,মুসলমানদের মধ্য রক্তপাত ঘটবে এই জন্য ইমাম হাসান রা. তাঁর রাজত্ব/ খেলাফত ছেড়ে দিলেন। সেই লোক কোন মুমিনবান্দীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তালাক দিতে পারে না। কেননা তালাক নারীর জীবনে একটি কলঙ্ক অধ্যায়, নানান খারাপি এর মধ্যে লুকায়িত রয়েছে।

তাই কিছুতেই একজন উচ্চতর সাহাবীর জীবনে এরকম ঘটনা কখনো ঘটতে পারে না। সুতরাং তার নামে এ অপবাদ নীতি বিরোধী।

 

শাহাদতের ঘটনা: হযরত হাসান রা. হযরত মুয়াবিয়া রা. এর সাথে সন্ধি চুক্তি সম্পাদন করে মদীনায় স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।

ঘটনাটি ইবনে কাসির রহ. তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলবিদায়া ওয়াননিহায়াগ্রন্থের ৮ নং খন্ডের ৪২ নং পৃষ্ঠায় নিম্ন শব্দে এনেছেন,

وَقَالَ الْأَصْمَعِيُّ عَنْ سَلَّامِ بْنِ مِسْكِينٍ عَنْ عِمْرَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ.

قَالَ: رَأَى الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ فِي مَنَامِهِ أَنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ، * (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) * فَفَرَحِ بِذَلِكَ فَبَلَغَ ذَلِكَ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ فَقَالَ: إِنْ كَانَ رَأَى هَذِهِ الرُّؤْيَا فَقَلَّ مَا بَقِيَ مِنْ أَجْلِهِ.

قَالَ: فَلَمْ يَلْبَثِ الحسن بن علي بَعْدَ ذَلِكَ إِلَّا أَيَّامًا حتَّى مَاتَ.

হযরত হাসান রা. একটি স্বপ্ন দেখেন। যাতে তিনি তার কপালে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ লেখা দেখতে পান।

এ স্বপ্ন দেখে তিনি খুব খুশি হন। এটিকে সুসংবাদ মনে করেন। তখন উক্ত বিষয়টি সে সময়কার এক প্রসিদ্ধ বুযুর্গ সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রহ. শুনতে পেলে বলেন, যদি এ স্বপ্ন হযরত হাসান রা. দেখে থাকেন, তাহলে এর তাবীর হল, হযরতের হায়াত খুব কম বাকি আছে। অচিরেই তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবেন। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত হাসান রা. এর কিছুদিন পরেই ইন্তেকাল করেন।

এ ছাড়া স্বপ্নের এ ঘটনাটি এসেছে, মুখতাছার তারীকে ইবনে আসাকীর-৭/৩৮।

 

সহোদর ভাই ইমাম হুসায়ন রা. দেখতে গেলে, নিম্নোক্ত নছিহত পেশ করেন,


فقال: يا أخي إنما هذه الدنيا ليال فانية، دعه حتى ألتقي أنا وهو عند الله، وأبى أن يسميه

তিনি বললেন: হে আমার ভাই, এই পৃথিবী কেবল নশ্বর রাতের জন্য, তাকে ছেড়ে দাও যতক্ষণ না সে এবং আমি আল্লাহর সাথে দেখা করি, এবং সে তার নাম বলতে অস্বীকার করে।.

হযরত হাসান রা. এর অসুস্থ্যতা ও ইন্তিকাল বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন।

এর মাঝে প্রসিদ্ধ হল, হযরতের একজন স্ত্রীর নাম ছিল মুসাম্মাত যাদাহ বিনতে আশআছ বিন কায়েশ কুন্দী। এ মহিলা হযরত হাসান রা. কে বিষ পান করায়। যার কারণে হযরত প্রচন্ড অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বারবার টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হতো। এ করূণ অসুস্থ্যতা প্রায় চল্লিশ দিন স্থায়ী ছিল।

ইমাম যাহাবী রহ. সীয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থে   শব্দে ঘটনাটি উদ্ধৃত করেছেনঃ

أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ مُغِيْرَةَ، عَنْ أُمِّ مُوْسَى, أنَّ جَعْدَةَ بِنْتَ الأَشْعَثِ بنِ قَيْسٍ سَقَتِ الحَسَنَ السمَّ، فَاشْتَكَى، فَكَانَ تُوضَعُ تَحْتَهُ طِشْتٌ، وَتُرفَعُ أُخْرَى نَحْواً مِنْ أَرْبَعِيْنَ يَوْماً.

আবু আওয়ানা, মুগিরার বরাতে, উম্মে মুসার সূত্রে যে, জাদাহ বিনতে আল-আশআত বিন কায়স আল হাসানকে বিষ দিয়েছিলেন এবং তিনি অভিযোগ করেছিলেন, এবং তাকে তার অধীনে রাখা হয়েছিল। প্রায় চল্লিশ দিনের জন্য উত্থাপিত হয়[40]

 

قال سفيان بن عيينة: عن رقبة بن مصقلة، قال لما احتضر الحسن بن علي قال:

أخرجوني إلى الصحن أنظر في ملكوت السموات.

فأخرجوا فراشه، فرفع رأسه فنظر، فقال: اللهم إني أحتسب نفسي عندك، فإنها أعز الأنفس عليّ.

قال: فكان مما صنع الله له أنه احتسب نفسه عنده.

وقال عبد الرحمن بن مهدي: لما اشتد بسفيان الثوري المرض جزع جزعا شديدا، فدخل عليه مرحوم بن عبد العزيز فقال: ما هذا الجزع يا أبا عبد الله؟ تقدم على رب عبدته ستين سنة، صمت له، صليت له، حججت له، قال: فسري عن الثوري.

وقال أبو نعيم: لما اشتد بالحسن بن علي الوجع جزع فدخل عليه رجل فقال له:

يا أبا محمد، ما هذا الجزع؟ ما هو إلا أن تفارق روحك جسدك، فتقدم على أبويك علي وفاطمة، وعلى جديك النبي ﷺ وخديجة، وعلى أعمامك حمزة وجعفر، وعلى أخوالك القاسم الطيب ومطهر وإبراهيم، وعلى خالاتك رقية وأم كلثوم وزينب، قال: فسرى عنه.

وفي رواية: أن القائل له ذلك الحسين، وأن الحسن قال له: يا أخي إني أدخل في أمر من أمر الله لم أدخل في مثله، وأرى خلقا من خلق الله لم أر مثله قط.

قال: فبكى الحسين رضي الله عنهما.

رواه عباس الدوري، عن ابن معين، ورواه بعضهم عن جعفر بن محمد، عن أبيه فذكر نحوهما.

সুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ বলেন: রাকাবা ইবনে মুসকালার সূত্রে, তিনি বলেন: যখন আল হাসান ইবনে আলী মারা যান, তিনি বলেছিলেন:

আমাকে প্লেটের কাছে নিয়ে যাও স্বর্গরাজ্য দেখতে।

তাই তারা তার বিছানা বের করল, এবং সে তার মাথা তুলে তাকাল এবং বলল: হে আল্লাহ, আমি নিজেকে আপনার সাথে বিবেচনা করি, কারণ এটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আত্মা।

তিনি বললেনঃ তাই আল্লাহ তার জন্য যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকেই তিনি নিজেকে তার সাথে গণনা করলেন।

আবদ আল-রহমান বিন মাহদী বলেছেন: যখন সুফিয়ান আল-সাওরির অসুস্থতা গুরুতর হয়ে উঠল, তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন, তখন মরহুম ইবনে আবদ আল-আযীজ তার কাছে প্রবেশ করলেন এবং বললেন: হে আবু আবদুল্লাহ, এই উদ্বেগ কিসের? সে তার প্রভুর সামনে ষাট বছর অগ্রসর হয়েছিল, তার উপাসনা করেছিল, তার জন্য নীরব ছিল, তার জন্য প্রার্থনা করেছিল, তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছিল।তিনি বলেছিলেন: বিপ্লবী সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন।

আবু নাইম বলেন: যখন আল হাসান বিন আলীর ব্যথা তীব্র হয়ে উঠল, তখন তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন, এবং একজন লোক তার কাছে প্রবেশ করল এবং তাকে বলল:

হে আবু মুহাম্মাদ, এ দুশ্চিন্তা কিসের? এটা ছাড়া আর কিছুই নয় যে, তোমার আত্মা তোমার দেহ ছেড়ে চলে যায়, তাই তুমি তোমার পিতা-মাতা, আলী ও ফাতিমা, এবং তোমার দাদা-দাদি, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খাদিজার কাছে এবং তোমার চাচা হামযাহ ও জাফরের কাছে এবং তোমার মামার কাছে যাও। চাচা আল-কাসিম আল-তৈয়্যিব, মুতাহার এবং ইব্রাহিম এবং আপনার খালা রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম এবং জয়নাবের কাছে।

এবং একটি বর্ণনায় আছে: যে এটি বলেছে সে আল-হুসাইন, এবং আল-হাসান তাকে বলেছেন: হে আমার ভাই, আমি আল্লাহর নির্দেশে প্রবেশ করি যা আমি কখনও প্রবেশ করিনি এবং আমি একটি সৃষ্টি দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ সৃষ্টি যা আমি কখনো দেখিনি।

তিনি বললেন: আল-হুসাইন, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন, কাঁদলেন।

ইবনে মাঈনের সূত্রে আব্বাস আল-দৌরি বর্ণনা করেছেন এবং তাদের কেউ কেউ জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তাই তিনি তাদের প্রতি উল্লেখ করেছেন।

 

মুখতাছার তারীখে ইবনে আসাকীর লিইবনে মানজূর-৭/৩৯; আরেকটি বর্ণনা

এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যদ্বারা এ ঘটনার সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় পরিস্কার হয়।

সেই সময়কার এক ব্যক্তি ছিল। যার নাম ছিল আমর বিন ইসহাক। তিনি বলেন, আমি হযরত হাসান রা. অসুস্থ্য থাকাকালে তাকে দেখতে গেলাম। আমরা তার অবস্থা জিজ্ঞাসা করাকালীন সময়ে তিনি বারবার টয়লেটে যেতেছিলেন। হযরত হাসান রা. তখন তার শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর কসম! আমাকে কয়েকবার বিষ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার যতটা কঠিন বিষ দেয়া হয়েছে, আগে কখনো এতটা মারাত্মক বিষ দেয়া হয়নি। মনে হচ্ছে আমার কলিজা আলাদা হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।

আমর বললেন, আমি দ্বিতীয় দিন আবার হযরতের খিদমাতে উপস্থিত হলাম। দেখি হযরতের অবস্থা খুবই খারাপ।

সেই সময় হযরত হুসাইন রা. উপস্থিত হলেন। তিনি হযরত হাসান রা. কে বললেনঃ ভাই! তুমি আমাকে বল কে তোমাকে বিষ খাইয়েছে?

হযরত হাসান বললেনঃ তুমি কেন জিজ্ঞাসা করছেন? তুমি কি তাকে হত্যা করবেন?

হযরত হুসাইন রা. বললেনঃ হ্যাঁ

তখন হযরত হাসান রা. বললেনঃ আমি তোমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলবো না। যদি যার ব্যাপারে আমার ধারণা, সেই যদি হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলাই কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। আর যদি আমার ধারণা ভুল হয়, তাহলে আমি এটা  চাই না যে, আমার কারণে কোন নিরাপরাধ মানুষ নিহত হোক।

এরপর হযরত হাসান রা. এ ইন্তেকাল হয়ে গেল। সেদিন ছিল ৫ই রবিউল আওয়াল ৪৯ বা ৫০ হিজরিইংরেজী মাসের ফেব্রুয়ারী ৬৬৯ ঈসাব্দ।

 

উক্ত বিষয়টি সিয়ারু আলামিন নুবালায় নিম্ন শব্দে উদ্ধৃত হয়েছেঃ

ابْنُ عُلَيَّةَ: عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ عُمَيْرِ بنِ إِسْحَاقَ، قَالَ:

دَخَلْنَا عَلَى الحَسَنِ بنِ عَلِيٍّ نَعُوْدُهُ، فَقَالَ لِصَاحِبِي: يَا فُلاَنُ! سَلْنِي.

ثُمَّ قَامَ مِنْ عِنْدِنَا، فَدَخَلَ كَنِيْفاً، ثُمَّ خَرَجَ، فَقَالَ: إِنِّيْ -وَاللهِ قَدْ لَفظْتُ طَائِفَةً مِنْ كَبِدِي قَلَبْتُهَا بِعُوْدٍ، وَإِنِّي قَدْ سُقِيْتُ السُّمَّ مِرَاراً، فَلَمْ أُسْقَ مِثْلَ هَذَا.

فَلَمَّا كَانَ الغَدُ، أَتيتُهُ وَهُوَ يَسُوْقُ، فَجَاءَ الحُسَيْنُ، فَقَالَ: أَيْ أَخِي! أَنْبِئنِي مَنْ سَقَاكَ؟

قَالَ: لِمَ! لِتَقْتُلَهُ؟

قَالَ: نَعَمْ.

قَالَ: مَا أَنَا مُحدِّثُكَ شَيْئاً، إِنْ يَكُنْ صَاحِبِي الَّذِي أَظُنُّ، فَاللهُ أَشَدُّ نِقْمَةً، وَإِلاَّ فَوَاللهِ لاَ يُقتلُ بِي بَرِيْءٌ

অর্থাৎ ইবনে আলিয়া: ইবনে আউনের সূত্রে, উমাইর ইবনে ইসহাকের সূত্রে, তিনি বলেন:

আমরা আল-হাসান বিন আলীর সাথে দেখা করতে গেলাম, এবং তিনি আমার বন্ধুকে বললেন: ওহ অমুক! আমাকে জিজ্ঞাসা কর.

অতঃপর তিনি আমাদের কাছ থেকে উঠে গিয়ে কাফনের কাপড়ে প্রবেশ করলেন, তারপর বেরিয়ে এসে বললেন: আল্লাহর কসম, আমি আমার কলিজা থেকে একটি অংশ বের করে দিয়েছি এবং একটি ডাল দিয়ে উল্টে দিয়েছি। আমাকে বহুবার বিষ পান করানো হয়েছে, কিন্তু আমি পাইনি। এমন বিষ দেওয়া হয়েছে।

পরের দিন যখন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন তখন আমি তার কাছে এলাম, তখন আল-হুসাইন এসে বললেন: কোন ভাই! বলুন আপনাকে পান কে করিয়েছে?

তিনি বললেন, কেন! তাকে হত্যা করতে?

সে হ্যাঁ বলেছে.

তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে কিছু বলবো না, সে যদি আমার বন্ধু হয় যাকে আমি মনে করি, তাহলে আল্লাহ প্রতিশোধের ক্ষেত্রে আরও কঠোর, অন্যথায় - আল্লাহর কসম - আমার কারণে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি নিহত হবে না। সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/২৭৩, ভিন্ন মাকতাবা-৪/৩৪৩, ভিন্ন মাকতাবা-৩/১৮৩, হিলয়াতুল আওলিয়া-২/৩৮, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/৪২।

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেলঃ

. হযরত হাসান রা. এর মৃত্যুর বাহ্যিক কারণ ছিল বিষ পান।

. কে বিষ পান করিয়েছিল হযরত তার নাম বলেননি। গোপন রেখেছেন।

. মুমুর্ষ অবস্থায়ও ধৈর্য্য ও সবরের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।

. জীবনভর অন্যের ক্ষতি সাধন থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন।

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হাকীকী অবস্থা হযরত হাসান রা. এর এ প্রশংসনীয় আখলাক দ্বারা পরিস্ফুটিত হয়ে উঠে।

অনেক ঐতিহাসিক বিষ পান করানোর বিষয়টি উল্লেখ করেননি। অনেকেই উল্লেখ করেছেন। যারা উল্লেখ করেছেন, তাদের অনেকেই বিষ পান করিয়েছিল তার নাম উল্লেখ করেননি। অনেকেই হযরতের স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন।

প্রশ্ন হল, উক্ত স্ত্রী কেন স্বামীকে বিষ পানে হত্যা করল?

মহিলারা স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড আক্রোশপ্রবণ হয়। আর স্বামীর বিষয়ে থাকে অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক। এ বিষয়ে ছাড় দিতে মোটেও রাজি হয় না। মাথায় বুদ্ধিও অনেক মহিলার কম থাকে। ইল্লামাশাআল্লাহ।

এ হিসেবে স্ত্রীদের মাঝে কোন প্রকার আক্রোশ জমে থাকতে পারে। আক্রোশবশতঃ কোন স্ত্রীলোক একাজ করে বসতে পারে বলে মনে হয়। বাকি নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।

এ বিষয়টি যদিও পরিস্কার নয়। তবে একটি ইংগিত পাওয়া যায়। আল্লাহ মাফ করুন। হযরতের শানের খিলাফ শব্দে বিষয়টি উল্লেখ করা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাযত করুন।

 

ذكرت الروايات أن الحسن بن علي استشهد متأثراً بالسم، و جعدة بنت الأشعث هي التي دست السم بأمر من يزيد حسب بعض الروايات، ورواية أخرى تقول أن معاوية هو الذي أمر جعدة ان تسقيه سماً.[41][42] و يعتقد الشيعة أنّ معاوية حاول مرات لتسمية الحسن و ذلك ليجعل ابنه يزيد خليفة له بخلاف ما نص عليه الصلح.[43] و مساعيه فشلت في ثلاث مرات و في مرة الرابعة تآمر مع جعدة بنت الاشعث ، زوجة الحسن ، فأَرسل لها مائة ألف درهم ووعدها بالزواج من ابنه يزيد شرط أن تدسّ السمّ للحسن ، فاستجابت و قبلت أن تسمه فوضعت السم في شربة من لبن ، و كان الحسن صائمًا فسقته اللبن المسموم في وقت الافطار فشربه فتقطّع كبده، وطلب طشتاً وتقيأ كبده فيه وأدى ذلك إلى شهادته بعد مرض استمر أربعين يومًا. فوفى معاوية لجعدة بالمال، ولكنّه لم يزوجها من ابنه فقال:" من لم تفِ مع الحسن فلا وفاء لها مع يزيد."[44][45] إلا أن أهل السنة والجماعة لا يقرّون بهذا الأمر ولا يحددّون بالضبط من قتل الحسن ويعتبرون ذلك أمرًا مجهولاً غير معروفٍ، إلا أنهم يرجحون أن لأهل العراق يدًا في الأمر لبغضهم للحسن بعد أن تنازل لمعاوية حيث كانوا يدعونه بـمذّل المؤمنين وقد قال لهم الحسن يومًا: يا أهل العراق مما زهَّدني فيكم ثلاث، قتلكم أبي، وانتهابكم متاعي، وطعنكم لي.[46]

فاستشهد الحسن بن علي في 7 صفر سنة 50 هـ عن عمر يناهز الثمانية و أربعين عاماً و استمرت إمامته لأهل الشيعة عشر سنوات]

অর্থ: বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে আল-হাসান বিন আলি বিষের কারণে শহীদ হয়েছিলেন[41] , এবং জাদাহ বিনতে আল-আশআত ছিলেন যিনি ইয়াজিদের নির্দেশে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন, কিছু বর্ণনা অনুসারে এবং অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে যে মুয়াবিয়াই জাদাকে বিষ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[42] এবং শিয়ারা বিশ্বাস করে যে মুয়াবিয়া তার পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী করার জন্য আল-হাসানের নাম রাখার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন, শান্তি চুক্তিতে যা নির্ধারিত ছিল তার বিপরীতে। এবং তার প্রচেষ্টা তিনবার ব্যর্থ হয়, এবং চতুর্থবার তিনি আল হাসানের স্ত্রী জাদা বিনতে আল-আশআতের সাথে ষড়যন্ত্র করেন, তাই তিনি তাকে এক লাখ দিরহাম পাঠান এবং তাকে তার পুত্র ইয়াজিদের সাথে বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দেন। যে অবস্থায় সে আল-হাসানকে বিষ প্রয়োগ করে।একজন রোজাদারকে, আমি তাকে ইফতারের সময় বিষ মেশানো দুধ দিয়েছিলাম, ফলে তিনি তা পান করেন এবং তার লিভার কেটে যায় এবং তিনি একটি বাটি চেয়েছিলেন এবং তার যকৃতে বমি করেন। এটি, এবং এটি চল্লিশ দিন স্থায়ী অসুস্থতার পরে তার শাহাদাতের দিকে পরিচালিত করে। তাই মুয়াবিয়া জাদাকে টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে তার ছেলের সাথে বিয়ে দেননি, তাই তিনি বলেছিলেন: "যদি সে আল হাসানের সাথে তার বিশ্বস্ততা পূর্ণ না করে, তাহলে সে ইয়াজিদের সাথে তার বিশ্বস্ততা পূরণ করতে পারবে না।"

যাইহোক, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এই বিষয়টিকে স্বীকার করে না এবং আল হাসানকে কে হত্যা করেছে তা নির্দিষ্ট করে না এবং এটিকে একটি অজানা অজানা বিষয় বলে মনে করে, তবে তারা মনে করে যে ইরাকের জনগণকে হত্যা করেছিল। মুয়াবিয়াকে ত্যাগ করার পর আল-হাসানের প্রতি তাদের ঘৃণার কারণে বিষয়টিতে হাত দিন, যেখানে তারা তাকে মুমিনদের অপমানকারী বলে অভিহিত করেছিল, এবং তিনি বলেছিলেন যে তাদের একদিন ভাল হবে: হে ইরাকের লোকেরা, আমি তোমাদের তিনজনের জন্য লজ্জিত হয়েছি। , আমার বাবা তোমাকে মেরেছে, তুমি আমার জিনিসপত্র লুট করেছ, আর তুমি আমাকে ছুরিকাঘাত করেছিলে।[43]

আল-হাসান বিন আলি ৫০ হিজরি সফার সাতচল্লিশ বছর বয়সে শহীদ হন এবং দশ বছর ধরে শিয়াদের ইমামতি অব্যাহত রাখেন।[44]

 

হজরতে মুআবিয়া (রা.) ইমাম হাসান (রা.)-এর শাহাদতের জন্য দায়ী: আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন,

وقد سمعت بعض من يقول: كان معاوية قد تلطف لبعض خدمه أن يسقيه سما.

قال محمد بن سعد: وأنا يحيى بن حمال أنا أبو عوانة، عن المغيرة، عن أم موسى أن جعدة بنت الأشعث بن قيس سقت الحسن السم، فاشتكى منه شكاة، قال: فكان يوضع تحته طشت ويرفع آخر نحوا من أربعين يوما.

وروى بعضهم: أن يزيد بن معاوية بعث إلى جعدة بنت الأشعث: أن سمي الحسن، وأنا أتزوجك بعده.

ففعلت، فلما مات الحسن، بعثت إليه فقال: إنا والله لم نرضك للحسن افنرضاك لأنفسنا؟

وعندي أن هذا ليس بصحيح، وعدم صحته عن أبي معاوية بطريق الأولى والأحرى، وقد قال كثير نمرة في ذلك:

 

আর আমি কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি: মুয়াবিয়া রা. তার কিছু ভৃত্যকে বিষ খাওয়ানোর জন্য সদয় ছিলেন।

মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন: আর আমি ইয়াহিয়া বিন হামাল, আমি আবু আওয়ানা, আল-মুগীরার বরাতে, উম্মে মুসার বরাতে যে জাদা বিনতে আল-আশআত বিন কায়স আল-হাসানকে বিষ দিয়েছিলেন। , তাই তিনি এটি সম্পর্কে অভিযোগ করলেন, তিনি বললেন: একটি বেসিন এর নীচে রাখা হয়েছিল এবং অন্যটি প্রায় চল্লিশ দিন ধরে উঠানো হয়েছিল।

এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন: ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া জা'দা বিনতে আল-আশ'আতের কাছে পাঠিয়েছিলেন: আমার নাম আল হাসান এবং আমি তার পরে তোমাকে বিয়ে করব।

তাই আমি করলাম, এবং যখন আল হাসান মারা গেল, আমি তাকে একটি বার্তা পাঠালাম এবং তিনি বললেন: আল্লাহর কসম, আমরা আপনাকে আল হাসানের জন্য খুশি করিনি, তাই আমরা কি আপনাকে নিজেদের জন্য খুশি করব?

আমার মতে, এটি সঠিক নয়, এবং এটি আবু মুয়াবিয়ার কর্তৃত্বে প্রথম এবং সবচেয়ে সঠিক উপায়ে সত্য নয় এবং কাসির নামিরা রহ. এ সম্পর্কে বলেছেন:.

 

يا جعد بكِّيه ولا تسأمي * بكاء حقٍ ليس بالباطل

لن تستري البيت على مثله * في الناس من حاف ولا ناعل

أعني الذي أسلمه أهله * للزمن المستخرج الماحل

كان إذا شبت له ناره * يرفعها بالنسب الماثل

كما يراها بائس مرمل * أو فرد قوم ليس بالآهل

تغلي بنيَّ اللحم حتى إذا * أنضج لم تغل على آكل

অর্থাৎ ওরে যাদ, তাকে নিয়ে কাঁদো, বশীভূত হয়ো না*

 কান্না সত্য, মিথ্যা নয়; লোকেদের মধ্যে আপনি ঘরটি এমনভাবে ঢেকে দেবেন না,

 তা সে চাদর হোক বা স্লিপার মানে যাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল *

তোলা সময়, দ্রাবক যদি তার আগুন তার জন্য প্রজ্জ্বলিত হয় *

তিনি অনুরূপ অনুপাতে তা বাড়াতেন একজন হতভাগ্য, বিধবা * বা একজন ব্যক্তি যিনি পরিবার নয় দেখেছেন বাদামী মাংস সেদ্ধ করুন যতক্ষণ না এটি * রান্না করা হয়, এটি ভক্ষণকারী দ্বারা অতিরিক্ত রান্না করা হয় না[45]

 

দাফন-কাফন:

تولى الحسين بن علي مهمة تغسيل جسد أخيه الحسن فغسّله و كفّنه وحمله على سريره وانطلق به إلى قبر جدّه ليجدّد به عهداً.ولمّا وصلوا المسجد اعترض مروان طريق الجنازة للحيلولة دون الدخول بها إلى المسجد. و يعتقد الشيعة أنّ عائشة جائت على بغلة شهباء و منعت دفنه جوار النبي و قالت لا تدخلوا بيتي من لا أحب.[49][50][51][52] وأقدم بنو أمية على رشق جنازة الحسن بالسهام، ولكن الحسين لم يأذن لأحد من الهاشميين بالردّ عليهم، عملاً بوصية أخيه الحسن فقطع النزاع وقضى على الفتنة. ثم حُمل جسدُه إلى البقيع ودُفن إلى جوار جدّته فاطمة بنت أسد.[45] أما نظرة أهل السنة لدفن الحسن فإنهم يرون أن الحسن لم يأمر بدفنه بجوار النبي محمد بل أن ذلك لم يكن بالحسبان وأنه لا سَند لتلك القصة بل أن بني أمية صلوا على الحسن بأنفسهم ويستشهد السنة بذلك أن سعيد بن العاص هو من صلى عليه.[53]

আল-হুসাইন বিন আলি তার ভাই আল-হাসানের মৃতদেহ ধোয়ার কাজটি গ্রহণ করেছিলেন, তাই তিনি এটিকে ধুয়েছিলেন, কাফন দিয়েছিলেন, এটিকে তার বিছানায় বহন করেছিলেন এবং তার সাথে তার চুক্তি নবায়ন করার জন্য এটি তার দাদার কবরে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং শিয়ারা বিশ্বাস করে যে আয়েশা একটি ধূসর খচ্চরের উপর এসেছিলেন এবং নবির পাশে তাঁর দাফনকে বাধা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: আমি যাকে ভালবাসি না আমার ঘরে প্রবেশ করবেন না। [46]

বনু উমাইয়া আল-হাসানের জানাজায় তীর নিক্ষেপ করেছিল, কিন্তু আল-হুসাইন তার ভাই আল-হাসানের ইচ্ছা অনুসারে হাশেমদের কাউকে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেয়নি। , তাই তিনি দ্বন্দ্ব কেটে দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অবসান ঘটালেন। তারপর তার লাশ আল-বাকীতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার দাদী ফাতিমা বিনতে আসাদের পাশে দাফন করা হয়। [৪৫] আল-হাসানের দাফন সম্পর্কে সুন্নিদের দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে, তারা দেখে যে আল-হাসান নবি মুহাম্মদের পাশে তার দাফনের আদেশ দেননি , বরং এটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি এবং এর পক্ষে কোন সমর্থন নেই। সেই গল্প, কিন্তু উমাইয়ারা নিজেরাই আল-হাসানের জন্য প্রার্থনা করেছিল এবং সে শহীদ হয়েছিল সুন্নাত হলো, সাঈদ ইবনুল আস রা. তার জানাযা নামাজ পড়ান[47]

 

 

হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রা. এর নিযুক্ত গভর্ণর সাঈদ বিন আস রা. জানাযা পড়ালেন। অতঃপর তাকে স্বীয় দাদী হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদের কবরের পাশে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৪৭ বছর।

ইবনে হাজার মক্কী রহ. লিখেছেনঃ হযরত হাসান রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ছিলেন সাত বছর। তারপর স্বীয় পিতা হযরত আলি রা. এর সাথে ছিলেন ৩০ বছর। তারপর ছয় মাস খলীফাতুল মুসলিমীন ছিলেন। তারপর সাড়ে নয় বছর মদীনায় বসবাস করে ইন্তেকাল করেন।[48]  

وصلى عليه سعيد بن العاص، لأنه كان واليا على المدينة من قبل معاوية، ودفن عند جدته بنت اسد بقبة المشهورة، وعمره سبع واربعون سنة، كان منها مع رسول الله صلى الله عليه وسلم سبع سنين ثم مع ابيه ثلاثون سنة، ثم خليفة ستة اشهر ثم تسع سنين ونصف سنة بالمدينة (الصواعق المحرمة لابن حجر المكى-141)

 সাঈদ বিন আল-আস তার জন্য দোয়া করেছিলেন, কারণ তিনি মুয়াবিয়ার আগে মদিনার গভর্নর ছিলেন এবং তাকে বিখ্যাত কুব্বাতে তার দাদী বিনতে আসাদের সাথে দাফন করা হয়েছিল এবং তার বয়স ছিল সাতচল্লিশ বছর, যার মধ্যে তিনি তার সাথে ছিলেন। আল্লাহর রসূল, আল্লাহর সালাত ও সালাম, সাত বছর, তারপর তাঁর পিতার সাথে ত্রিশ বছর, তারপর ছয় মাস খলিফা, তারপর সাড়ে নয় বছর মদিনায়[49]

 

 প্রশ্ন: এটা কি সত্য যে, হজরত আয়েশা রা. হাসান বিন আলিকে দাফন করতে অস্বীকার করেছিলেন, তার মৃত্যুর পর, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে?

উত্তর: এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেছেন,

فإن هذا غير صحيح، فقد ذكر ابن عبد البر في الاستيعاب وابن هبة الله في تاريخ دمشق وغيرهما أن الحسن طلب من عائشة الإذن بالدفن في بيتها فوافقت ثم قال لأخيه الحسين بن علي رضي الله عنهم قد كنت طلبت إلى عائشة إذا مت أن تأذن لي فأدفن في بيتها مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت نعم، وإني لا أدري لعلها كان ذلك منها حياء، فإذا أنا مت فاطلب ذلك إليها، فإن طابت نفسها فادفني في بيتها، فلما مات الحسن رضي الله عنه أتى الحسين رضي الله عنه عائشة رضي الله عنها فطلب ذلك إليها فقالت نعم وكرامة ، وبهذا يعلم أن عائشة رضي الله عنها وافقت على الأمر، ولكن منع من دفنه في البيت اعتراض مروان على ذلك، وكان الحسن رضي الله عنه أوصى إذا منع القوم دفنه في البيت أن لا يراجعوا في الأمر، وأن يدفن في البقيع، وسعى أبوهريرة وابن عمر رضي الله عنهم في إقناع الحسين بذلك تفاديا لوقوع الفتنة بين المسلمين، هذا وليعلم أن أهم ما يتعين على المسلم الاعتناء به هو السعي في اتباع الصحابة في أعمالهم والاقتداء بهم والاستفادة من سيرهم وعدم تتبع خلافاتهم، وراجع الفتوى رقم: 70135    والفتوى رقم:64160  .

এটি সত্য নয়। ইবনে আবদ আল বার আল-ইসতিয়াব এবং ইবনে হিবাতুল্লাহ দামেস্কের ইতিহাসে এবং অন্যদের উল্লেখ করেছেন যে আল হাসান আয়েশাকে তার বাড়িতে দাফনের অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তিনি রাজি হন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, এবং আমি জানি না, সম্ভবত এটি তার পক্ষ থেকে লজ্জাজনক ছিল, তাই যদি আমি মারা যায় তবে তাকে তা করতে বলুন। এবং তিনি হ্যাঁ এবং সম্মান বললেন, এবং এর দ্বারা তিনি জানেন যে আয়েশা রা. বিষয়টিতে রাজি ছিলেন, কিন্তু তাকে তাকে ঘরে দাফন করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল, মারওয়ান এতে আপত্তি করেছিলেন, এবং আল-হাসান রা. সুপারিশ করেছিলেন যে লোকেরা যদি তাকে ঘরে দাফন করতে বাধা দেয়, তারা বিষয়টি পর্যালোচনা না করে এবং তাকে আল-বাকী আবু হুরায়রা ও ইবনে ওমর-এ দাফন করা হয়, চাওয়া হয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে বিদ্রোহ এড়াতে আল-হুসাইনকে এই বিষয়ে বোঝানো। তাদের কাজ, তাদের অনুকরণ করা, তাদের অগ্রগতি থেকে উপকৃত হওয়া এবং তাদের পার্থক্য খুঁজে না পাওয়া[50]

 

ইমাম হাসান রা. শাহাদতের পর পরিস্থিতি:

 

وقال الواقدي: ثنا إبراهيم بن الفضل، عن أبي عتيق قال: سمعت جابر بن عبد الله يقول:

شهدنا حسن بن علي يوم مات وكادت الفتنة تقع بين الحسين بن علي ومروان بن الحكم، وكان الحسن قد عهد إلى أخيه أن يدفن مع رسول الله، فإن خاف أن يكون في ذلك قتال أو شر فليدفن بالبقيع.

فأبى مروان أن يدعه - ومروان يومئذ معزول يريد أن يرضي معاوية - ولم يزل مروان عدوا لبني هاشم حتى مات.

قال جابر: فكلمت يومئذ حسين بن علي فقلت: يا أبا عبد الله اتق الله ولا تثر فتنة، فإن أخاك كان لا يحب ما ترى، فادفنه بالبقيع مع أمه ففعل.

ثم روى الواقدي: حدثني عبد الله بن نافع، عن أبيه، عن عمر قال:

حضرت موت الحسن بن علي فقلت للحسين بن علي: اتق الله، ولا تثر فتنة ولا تسفك الدماء، وادفن أخاك إلى جانب أمه، فإن أخاك قد عهد بذلك إليك، قال: ففعل الحسين.

وقد روى الواقدي: عن أبي هريرة نحوا من هذا.

وفي رواية: أن الحسن بعث يستأذن عائشة في ذلك، فأذنت له.

 

فلما مات لبس الحسين السلاح، وتسلح بنو أمية، وقالوا: لا ندعه يدفن مع رسول الله ﷺ، أيدفن عثمان بالبقيع، ويدفن الحسن بن علي في الحجرة؟

 

فلما خاف الناس وقوع الفتنة أشار سعد بن أبي وقاص، وأبو هريرة، وجابر، وابن عمر، على الحسين أن لا يقاتل، فامتثل ودفن أخاه قريبا من قبر أمه بالبقيع، رضي الله عنه.

 

وقال سفيان الثوري: عن سالم بن أبي حفصة، عن أبي حازم قال: رأيت الحسين بن علي قدّم يومئذ سعيد بن العاص فصلى على الحسن وقال: لولا أنها سنة ما قدمته.

 

وقال محمد بن إسحاق: حدثني مساور مولى بني سعد بن بكر قال: رأيت أبا هريرة قائما على مسجد رسول الله يوم مات الحسن بن علي، وهو ينادى بأعلا صوته:

يا أيها الناس مات اليوم حب رسول الله فابكوا.

وقد اجتمع الناس لجنازته حتى ما كان البقيع يسع أحدا من الزحام.

وقد بكاه الرجال والنساء سبعا، واستمر نساء بني هاشم ينحن عليه شهرا، وحدّت نساء بني هاشم عليه سنة.

قال يعقوب بن سفيان: حدثنا محمد بن يحيى، ثنا سفيان، عن جعفر بن محمد، عن أبيه قال:

قتل علي وهو ابن ثمان وخمسين سنة، ومات لها حسن، وقتل لها الحسين رضي الله عنهم.

وقال شعبة: عن أبي بكر بن حفص قال: توفي سعد، والحسن بن علي في أيام بعد ما مضى من إمارة معاوية عشر سنين.

 

وقال علية: عن جعفر بن محمد، عن أبيه قال: توفي الحسن وهو ابن سبع وأربعين، وكذا قال غير واحد، وهو أصح.

والمشهور أنه مات سنة تسع وأربعين كما ذكرنا.

وقال آخرون: مات سنة خمسين.

 

আল-ওয়াকিদি বলেন: ইব্রাহিম বিন আল-ফাদল আমাদের কাছে আবূ আতীকের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি জাবির ইবনে আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি:

আমরা হাসান বিন আলিকে প্রত্যক্ষ করেছি যেদিন তিনি মারা যান, এবং আল-হুসাইন বিন আলি এবং মারওয়ান বিন আল-হাকামের মধ্যে প্রায় বিদ্রোহ ঘটেছিল এবং আল-হাসান তার ভাইকে আল্লাহর রাসূলের কাছে দাফন করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

মারওয়ান তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিল - এবং মারওয়ান তখন বিচ্ছিন্ন ছিল, মুয়াবিয়াকে খুশি করতে চেয়েছিল - এবং মারওয়ান মারা যাওয়া পর্যন্ত বনি হাশেমের শত্রু ছিল।

জাবের বলেন, আমি তখন হুসাইন ইবনে আলির সাথে কথা বলেছিলাম, এবং আমি বলেছিলাম: হে আবু আবদুল্লাহ, আল্লাহকে ভয় করো এবং বিবাদ সৃষ্টি করো না, কারণ তোমার ভাই তুমি যা দেখছ তা পছন্দ করেনি, তাই তাকে তার মায়ের সাথে আল-বাকীতে দাফন করো। , এবং তিনি তাই করেছেন.

 

তারপর আল-ওয়াকিদি বর্ণনা করেছেন: আবদুল্লাহ ইবনে নাফি আমাকে বলেছেন, তার পিতার সূত্রে, উমর (রা.)-এর সূত্রে তিনি বলেছেন:

আমি আল-হাসান বিন আলির মৃত্যুতে উপস্থিত হয়েছিলাম, তাই আমি আল-হুসাইন বিন আলিকে বলেছিলাম: আল্লাহকে ভয় করো, বিবাদ সৃষ্টি করো না, রক্তপাত করো না এবং তোমার ভাইকে তার মায়ের পাশে দাফন করো, কেননা তোমার ভাই তার দায়িত্ব দিয়েছে। আপনি, তাই তিনি বললেন: আল-হুসাইন তাই করেছেন।

আল-ওয়াকিদী বর্ণনা করেছেন: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে এরকম কিছু।

এবং একটি বর্ণনায়: আল-হাসানকে এটির জন্য আয়েশার অনুমতি চাইতে পাঠানো হয়েছিল এবং তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।

যখন আল-হুসাইন মারা যান, তখন আল-হুসাইন তার অস্ত্র পরিধান করেন, এবং বনু উমাইয়ারা নিজেদেরকে সশস্ত্র করে, এবং বলে: আমরা তাকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে দাফন করতে দেব না, উসমানকে কবর দেওয়া উচিত? আল-বাকী'তে, এবং আল-হাসান বিন আলিকে কবরে দাফন করা হবে?

লোকেরা যখন বিদ্রোহের আশঙ্কা করেছিল, তখন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, আবু হুরায়রা, জাবের এবং ইবনে ওমর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে আল-হুসাইনকে যুদ্ধ করা উচিত নয়, তাই তিনি মেনে নিলেন এবং আল-বাকী'তে তাঁর মায়ের কবরের কাছে তাঁর ভাইকে দাফন করলেন। তার সাথে সন্তুষ্ট হন।

সুফিয়ান আল-সাওরী বলেন: সালেম বিন আবি হাফসার সূত্রে, আবি হাযিমের সূত্রে, তিনি বলেন: আমি সেদিন আল-হুসাইন বিন আলিকে সাঈদ বিন আল-আসকে পেশ করতে দেখেছি, তাই তিনি আল হাসানের জন্য দোয়া করলেন এবং বলেছেন: যদি এটা সুন্নত না হতো, তাহলে আমি তা পেশ করতাম না।

মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বলেন, বনি সাদ বিন বকরের মাওলা মাসউইর আমাকে বলেছেন: আমি আবু হুরায়রাকে দেখেছি যেদিন আল হাসান বিন আলির মৃত্যু হয় সেদিন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তিনি চূড়ায় ডাকছিলেন। তার কণ্ঠ:

হে মানুষ, রসূলের প্রেম আজ মরে গেল তাই কাঁদো।

তার জানাযার জন্য লোকেরা জড়ো হয়েছিল যতক্ষণ না বাকী' জনতার মধ্য থেকে কাউকে বসাতে পারেনি।

 

পুরুষ ও মহিলারা তাঁর জন্য সাতবার কাঁদলেন এবং বনী হাশিমের মহিলারা তাঁর জন্য এক মাস শোক  পালন করতে থাকলেন এবং বনী হাশিমের মহিলারা তাঁর জন্য এক বছর শোক পালন করেছিলেন।

ইয়াকুব বিন সুফিয়ান বলেন, মুহাম্মদ বিন ইয়াহিয়া আমাদেরকে বলেছেন, সুফিয়ান আমাদেরকে বলেছেন, জাফর বিন মুহাম্মদের সূত্রে, তার পিতার সূত্রে যিনি বলেছেন:

আলি যখন ৫৮ বছর বয়সে নিহত হন, হাসান তার জন্য মারা যান এবং হুসাইন, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন, তার জন্য নিহত হন।

শুবাহ বলেন: আবু বকর ইবনে হাফসের কর্তৃত্বে তিনি বলেন: মুয়াবিয়ার নেতৃত্বের দশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সাদ ও আল-হাসান ইবনে আলি মারা যান।

আলিয়া বলেন: জাফর বিন মুহাম্মদের সূত্রে, তার পিতার সূত্রে, তিনি বলেছেন: আল-হাসান মারা গেছেন যখন তার বয়স সাতচল্লিশ বছর, এবং একাধিক ব্যক্তি এটি বলেছেন এবং এটি আরও সঠিক। এটা সর্বজনবিদিত যে তিনি উনচল্লিশ সালে মারা যান, যেমন আমরা উল্লেখ করেছি। অন্যরা বলেছেন: তিনি পঞ্চাশ বছরে ইন্তেকাল করেছেন।[51]

উপসংহার: ইমাম হাসান (রা.) এর খিলাফাত ও শাহাদতের ঘটনা থেকে মূল শিক্ষা হলো মুসলিম ঐক্য-সংহতি এবং সেই ঐক্যের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করা  হায়! মুসলিম বিশ্ব! বিশেষ করে শাসক গোষ্ঠি যদি এই সবক অনুসরণ করত, মুসলিম দেশে দেশে অশান্তি-যুদ্ধ অধিকাংশে লোপ পেত  

আর রসূলুল্লাহ () -এর সম্মান ও মহব্বত সবকিছুর চাইতে বেশি হওয়া আমাদের ঈমানের অঙ্গ ও ভিত্তি অতঃপর রসূলুল্লাহ ()এর সাথে যার যত নিকট সম্পর্ক আছে, তাঁর সম্মান ও মহব্বত এবং সে অনুপাতে জরুরী হওয়া অপরিহার্যঔরসজাত সন্তান সর্বাধিক নিকটবর্তী আত্মীয়তাই তাঁদের মহব্বত নিশ্চিতরূপে ঈমানের অঙ্গ

অনেকেই ব্যাপারে শৈথিল্যের পরিচয় দিতে শুরু করলে হজরত ইমাম শাফেয়ি (রহ.) কয়েক লাইন কবিতায় তাদের তীব্র নিন্দা করেছেনএতে প্রকৃতপক্ষে তিনি অধিকাংশ আলেমদের মতাদর্শই তুলে ধরেছেনতাঁর কবিতা নিম্নে উদ্ধৃত হল-

হে অশ্বারোহী! তুমি মুহাস্সাব উপত্যকার অদূরে দাম                                                                                     প্রত্যুষে যখন হাজিদের স্রোত সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের ন্যায় মিনার দিকে রওয়ানা হবে,                           তখন সেখানকার প্রত্যেক বাসিন্দা পথচারীকে ডেকে তুমি ঘোষণা কর,                                                  যদি কেবল মুহাম্মাদ ()-এর বংশধরের প্রতি মহব্বত রাখলেই মানুষ রাফেজি হয়ে যায়,                                    তবে বিশ্বজগতের সমস্ত জিন ও মানব সাক্ষী থাকুক, আমিও রাফেজি[52]  

 

 

প্রবন্ধ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়

 

তাখরিজ তথা হাদিস শরিফের নাম্বার নির্ণয় করতে মাকতাবায়ে শামেলা সফটওয়্যারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

 

বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রে মাওলানা শেখ মুহিউদ্দীনের  রচিত বাংলাভাষা ও বানানরীতি কিতাবের অনুসরণ করা হয়েছে।    

 



[1] তাখরিজ: মুসলিম-৬০৩৯; তিরমিজি-৩৭৬৯

[2] হায়াতু ইমাম হাসান ইবনে আলি রা.-১১ পৃষ্ঠা; বাকির শরিফ আলকুরশি রহ. দারুল বালাগা প্রকাশনী, ইমাম হাসান ইবনে আলি,২৩ পৃষ্ঠা; সাইয়্যেদ মাহদি রহ.  

[3] আলমাশবুহুনা বিরসূলি আলা মাররাল আসর, আহমদ আব্দুন নবি হাফিজাহুল্লাহ প্রকাশকাল-১০ অক্টোবর,২০১২

[4] সূরা শুরা-২৩

[5] তাখরিজ :  মুসলিম-২৪০৮; আহমদ-১৯২৬৫; দারেমি-৩৩৫৯

[6] তাফসিরে ইবনে কাসির-১০ খণ্ড;৪৬পৃষ্ঠা; অধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারূক (রহ.) অনূদিত,ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় সংস্করণ-মার্চ ২০১৪

[7] তাখরিজ : বুখারি-১৪৯১; মিশকাত-১৮২২

[8] সূরা আনফাল-৪১

[9] বুখারি-৩১৪০

[10] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম খণ্ড; ৩৭ পৃষ্ঠা; হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.); ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রথম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর ২০০৭

[11] সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং  ৪৬৪৬

[12] আরশিফু মুলতাকি আহলিল হাদিস -১৫৩/২৫৮, মাকতাবাতুশ শামেলা

[13] মুজিবাতুল ইনজিমামি, লিলদাওলাতিল ইসলামিয়াতি ফিল ইরাক ওয়াশ শাম- শায়েখ আবুল হাসান আল- আজদি হাফিজাহুল্লাহ, প্রকাশকাল -১৪৩৪ হিজরি,২০১৩ ইংরেজি

[14] কিতাবু শারহি সহিহ মুসলিম-১৭/১২; হাসান আবুল আশবালি, আয-যহিরি, মাকতাবাতুশ শামেলা

[15] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম খণ্ড;  ৪১ পৃষ্ঠা, হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.); ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ,  প্রথম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর ২০০৭

 

[16] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম খণ্ড;  ৪১ পৃষ্ঠা, হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রথম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর ২০০৭

[17] তারিখুত তারাবি, /১৪৮,১৪৯;   মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড, ১৮০ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি

[18] সূত্র: তারিখুত তারাবি-/১৬২;  মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি

[19] মুজামুল কাবির লিত কাবারানি-/৯৩; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি

[20] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম খণ্ড;  ৪০ পৃষ্ঠা; হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.); ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রথম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর ২০০৭

[21] তাখরিজ: সহীহ বুখারী ২৭০৪

[22] সূরা আম্বিয়া -১১১

[23] কিতাবুল মাগাযি , অধ্যায়, খন্দকের যুদ্ধ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস-৯৭৭৯, তারিখুত তারাবি-/১৬২; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি

[24] বুখারি-৩৬২৯; আবুদাউদ-৪৬৬২;তিরমিজি-৩৭৭৩;নাসায়ি-১৪১০;আহমদ-২০৩৯

[25] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম খণ্ড; ৩৯-৫০ পৃষ্ঠা, হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রথম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর ২০০৭

[26] তাখরিজ: বুখারি- ৩৭৪৭ , হাসান ও হুসাইন (রা.) এর মর্যাদা। নাফি ইবনে জুবাইর (রহ.) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবি করীম () হাসান (রা.) এর সাথে আলিঙ্গণ করেছেন অধ্যায়

[27] তাখরিজ: বুখারি -৩৭৫৯

[28] তাখরিজ: সহীহ বুখারি - ৩৭৫২

[29] জামে' তিরমিযী,  ৩৭৬৮

[30] জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৬৯  পরিচ্ছেদ : হাসান এবং হুসায়ন (রা.)-এর গুণাবলী

[31] তাখরিজ: জামে তিরমিজি-৩৭৭০

[32] তাখরিজ: জামে তিরমিজি-৩৭৭১

[33] মুসনাদে আহমদ -৭৮

[34] বিহারুল আনওয়ার-৪৩তম খণ্ড; ৩৪৪ পৃ. আল্লামা আল-মাজলিসি রহ.

[35] বিহারুল আনওয়ার-৭৫তম খণ্ড; ১১১ পৃ. আল্লামা আল-মাজলিসি রহ.

[36] আল-বিদায়াহ ওয়াল-নিহায়াহ - ৮/৪২; মাকতাবুল মাআরিফ; বৈরুত, প্রকাশকাল-ফেব্রুয়ারি ২০১৬

[37]সূত্র:  ইলমুর রিজাল ও আহমিয়াতু-২৪ পৃষ্ঠা

[38] সূত্র: কিতাবুন মাওকুউন, আল-ইসলাম সুওয়াল  ওয়া জাওয়াব; লেখক,শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ হাফিজাহুল্লাহু ফাতাওয়া নং-১৫৮৬২; ১৫ নভেম্বর, ২০০৯

[39] তাখরিজ: আবু দাউদ -২১৭৭

[40] সীয়ারু আলামিন নুবালা লিজযাহাবী-৩/১৮৪, ভিন্ন মাকতাবা-৩/২৭৫, ভিন্ন মাকতাবা-৪/৩৪৪

[41] সিয়ারু আলামিন নুবালায়-৩ খণ্ড; ২৭৫ পৃষ্ঠা, ইমাম যাহাবি রহ.

[42] মাকালিবুত তালেবিন-৮১-৮২ পৃ. আবুল ফারজ আল-ইস্পহানি রহ.,দারুল মারুফ বৈরুত

[43] হকবাতু মিনাত তারিখ-শায়েখ উসমান আলখমিস

[44] মাকালিবুত তালেবিন-২০ পৃ. আবুল ফারজ আল-ইস্পহানি রহ, দারুল মারুফ বৈরুত

[45] আল-বিদায়াহ ওয়াল-নিহায়াহ ৮ম খণ্ড;৪৬ পৃ. মাকতাবুল মাআরিফ; বৈরুত, প্রকাশকাল-ফেব্রুয়ারি ২০১৬

[46] ইরশাদু ফি মারফাতি হুজাজিল্লাহি আলাল ইবাদ-২য় খণ্ড; ১৮ পৃ. শায়েখ মুফিদ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ   

[47] হকবাতু মিনাত তারিখ- ১ম খণ্ড; ১৩২ পৃ. শায়েখ উসমান আলখমিস

[48] আসসাওয়ায়েকুল মুহাররামাহ-১৪১

[49] আসসাওয়াইকিল মুহাররামা,ইবনে হাজার মক্কি-১৪১পৃষ্ঠা  

[50] জামেউল ফাতাওয়া-  ফতোয়া নং ৭০১৩৫, ৬৪১৬  , জামাদিউস সানি-১৪২৭ হিজরি সৌদি আরব

[51] সূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খণ্ড, ৯১পৃষ্ঠা; মাকতাবুল মাআরিফ; বৈরুত, প্রকাশকাল-ফেব্রুয়ারি ২০১৬

[52] তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-১২১৫পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.); খাদেতুল হারামাইন-ফাহাদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প-১৪১৩ হিজরি