জিজ্ঞাসা-১২৬৬২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আমার জানার বিষয় হল রাসূলুল্লাহ সাঃ এর স্ত্রী কতজন ছিলেন তাদের নামের তালিকা ও উপপত্নী হিসেবে কেউ ছিলেন কিনা তাদের নামের তালিকা।
তারিখ: ০৫/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আব্দুল আজিজ, খুলনা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে সীরাত গবেষকদের মধ্যে মতবাদ মতভেদ রয়েছে। যেমন,
الاختلاف في عدد أزواج النبي صلى الله عليه وسلم اللاتي دخل بهن على قولين؛ أنهنّ إثنتا عشرة أو إحدى عشرة في ألفيته الشهيرة.، وسبب الاختلاف هو في مارية القبطية، هل هي زوجة له أم ملك يمين
অর্থ: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের সংখ্যার মতভেদ, যার সাথে তিনি বিবাহ সম্পন্ন করেছিলেন, দুটি মত। আব্দুর রহমান ইরাকি রহ. তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলফিয়্যা মধ্যে উল্লেখ করেছেন, তারা বারো বা এগারো। পার্থক্যের কারণ মারিয়া আল-কিবতিয়াহ, তিনি কি তার স্ত্রী নাকি দাসী? সূত্র: আলফিয়াতুল সিরাতুন নাবাবিয়া-১৩১ পৃষ্ঠা, আব্দুর রহমান ইরাকি রহ.
নিম্নে সম্মানিতা স্ত্রী দের নামের তালিকা:
০১। খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ ৫৯৫–৬১৯
০২। সাওদা বিনতে জামআ ৬১৯–৬৩২
০৩। আয়িশা ৬২৩–৬৩২
০৪। হাফসা বিনতে উমর ৬২৫–৬৩২
০৫। জয়নব বিনতে খুযায়মা ৬২৫–৬২৭
০৬। উম্মে সালামা ৬২৫–৬৩২
০৭। জয়নব বিনতে জাহশ ৬২৭–৬৩২
০৮। জুওয়াইরিয়া বিনতে আল-হারিস ৬২৮–৬৩২
০৯। রামালাহ বিনতে আবি সুফিয়ান ৬২৮–৬৩২
১০। সাফিয়া বিনতে হুওয়াই ৬২৯–৬৩২
১১। মায়মুনা বিনতে আল-হারিস ৬২৯–৬৩২
১। রায়হানা বিনতে জায়েদ (উপপত্নী) ৬২৭–৬৩১
২। মারিয়া আল-কিবতিয়া (উপপত্নী)
নোট: কতক সিরাত গবেষকদের মতে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ছিলেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, এছাড়া বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আকদ তথা বিবাহ হয়েছে কিন্তু সহবাস হওয়ার আগেই তালাক দিয়েছেন, এরকম বেশ কয়েকজন নারীর নাম পাওয়া যায়।
যেহেতু তাদের সাথে সহবাস করার আগে তালাক হয়েছে এই জন্য কতক সিরাত গ্রন্থকার তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেননি। যেমন,
هي بنت النعمان بن الجون بن شراحبيل، وقيل: أسماء بنت النعمان بن الأسود بن الحارث بن شراحبيل بن النعمان من كِندة، أجمعوا على أنَّ رسول الله -صلى الله عليه وسلم- تزوجها.2 واختلفوا في قصة فراقه لها، فقال بعضهم: لما دخلت عليه دعاها، فقالت: تعال أنت، فأبت أن تجيء. وقال بعضهم إنها قالت: أعوذ بالله منك. فقال: (قد عذت بمعاذ، وقد أعاذك الله مني
অর্থাৎ, তিনি নু'মান বিন আল-জাওন বিন শারাহবীল এর কন্যা। কারো কারো মতে তিনি নু'মান বিন আসওয়াদ বিন আল-হারেস বিন শারাহবীল বিন নু'মান এর কন্যা আসমা।
হাদীসবিশারদগণ এবিষয়ে একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে নিজ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। তবে তাঁদের বৈবাহিক বিচ্ছেদের কারণ নির্ণয়ে একাধিক মতামত পেশ করেছেন।
কেউ কেউ বলেন, " তিনি যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গৃহে প্রবেশ করলেন, তখন নবীজি তাকে কাছে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি নবীজীর ডাকে সাড়া না দিয়ে বললেন, "বরং আপনি আমার কাছে আসুন"।
কারো কারো মতে, মহানবীর আহবান প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন, আপনার কাছ থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তখন তিনি বলেছিলেন, " তুমি আশ্রয় চেয়েছ। আল্লাহ তোমাকে আমার থেকে উদ্ধার করেছেন"।
- ذكرها الصالحي فيمن عقد عليها، ولم يدخل بها. انظر أزواج النبي -صلى الله عليه وسلم- ص 242, من كتاب\" الشجرة النبوية\" ص 49.
3- ذكرها ابن عبد البر في الاستيعاب (4/1786) وابن الأثير في أسد الغابة (7/17) وابن حجر في الإصابة (7/495).
অর্থাৎ প্রখ্যাত ইসলামী ইতিহাসবিদ সালেহী তাঁর নাম সেই নারীদের তালিকায় স্থান দিয়েছেন, যাদের সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিবাহের আকদ সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু নবীজি তাদের সাথে একান্তে মিলিত হন নাই। এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে "আশ-শাজারাতুন নাবাউয়িয়্যাহ" গ্রন্থ ( পৃষ্ঠা -২৪২) অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
ইবনু আব্দিল বার তার "আল-ইস্তি'আব" গ্রন্থে (৪/১৭৮৬) এবিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া ইবনুল আসীর তার "উসদুল গাবাহ" গ্রন্থে ( ৭/১৭) এবিষয়ে ব্যাপক আলোকপাত করেছেন। এর পাশাপাশি, প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনুল হাজার আল-আসকালানী স্বীয় " আল ইসাবাহ" গ্রন্থে ( ৭/৪৯৫) এবিষয়টির অবতারণা ঘটিয়েছেন।
بنت يزيد بن رواس بن كلاب. بلغ رسول الله -صلى الله عليه وسلم- أن بها بياضاً، فطلّقها -صلى الله عليه وسلم- ولم يدخل بها.راجع :أُسد الغابة (7/205) ومختصر تاريخ دمشق (2/270).
অর্থাৎ, তিনি ইয়াযিদ বিন রাওয়াস বিন কিলাব এর কন্যা।( বিয়ের পর) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে পেরেছেন যে, তাঁর দেহে শ্বেতরোগ/ ধবল আছে। এসংবাদ শুনে তিনি তাঁর সাথে একান্তে মিলিত হবার আগেই তাঁকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন।
এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করা যেতে পারে-
উসদুল গবাহ ( ৭/২০৫), তারীখে দিমাশক ( ২/২৭০)
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ বলেন, দু’জন মহিলার সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সহবাসের পূর্বেই তারা পরিত্যক্ত হন। প্রথমজন আসমা বিনতে নু‘মান আল-কিনদিয়াহ। যিনি ‘জাউনিয়াহ’ (الْجَوْنِيَّةُ) বলেও পরিচিত (ফাৎহুল বারী হা/৫২৫৫-এর ব্যাখ্যা)। তাকে কিছু মাল-সম্পদ দিয়ে বিদায় করা হয়। দ্বিতীয়জন ‘আমরাহ বিনতে ইয়াযীদ আল-কিলাবিয়াহ। সূত্র: বুখারী হা/৫২৫৪-৫৫; ইবনু হিশাম ২/৬৪৭
সারকথা হলো, অধিকাংশ সিরাতবিদদের মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ২ জন স্ত্রী মারা যান এবং তিনি ইন্তেকালের পর ৯ জন স্ত্রী রেখে যান।
শেষ কথা হলো, শরিয়তের কিছু বিধান প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাস ছিল, তার মধ্যে একটি হলো চারের অধিক বিয়ে করা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক