জিজ্ঞাসা-১২৬৭৩:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতি সাহেব,
একজন ব্যক্তি প্রথমে তার স্ত্রীকে কয়েক বছর আগে দুই তালাক দিয়েছিল,
আজকে আবার দুই তালাক দিয়েছে।
এখন স্ত্রীটি গর্ভবতী। তাহলে কয় তালাক পতিত হবে?
তারিখ: ১৩/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, লালমনিরহাট থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর স্ত্রীর সাথে প্রথম সহবাস করার পর যে কয় তালাক দিবে সব কার্যকর হবে।
অর্থাৎ তিন তালাক পতিত হওয়ার জন্য এক সাথে বা তিন তুহুরে তালাক দেওয়া শর্ত নয়।
সুতরাং আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক উক্ত মহিলার উপর তিন তালাক মুগাল্লাযা হয়েছে। দলিল:
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। তাখরিজ: বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩
প্রশ্ন: ক। গর্ভবতী নারীর ইদ্দত কত দিন?
উত্তর: ক। আপনার প্রশ্নের আলোকে গর্ভবতী নারীর মেয়াদ হলো, বাচ্চা প্রসব করা পর্যন্ত। দলিল:
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত।
প্রশ্ন: খ। উক্ত স্ত্রীর বা তিন তালাক প্রাপ্ত নারীর স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ আছে কি?
উত্তর: খ। তিন তালাক হয়ে গেলে অন্য স্বামী এবং তার স্বাদ গ্রহণ ব্যতিত তথা হিল্লা বিয়ে ছাড়া পূর্বের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দলিল:
Surah Al-Baqara, Verse 230:
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। সূরা বাকারা-২৩০
সারকথা হলো, উক্ত মহিলার উপর তিন তালাকে মুগাল্লাযা কার্যকর হয়েছে, এখন স্বামী-স্ত্রী পৃথক থাকা জরুরি আর পুনরায় ফিরে আসতে হিল্লা বিয়ে একমাত্র পন্থা। এর পরেও একত্রে বসবাস করলে যিনা বা ব্যভিচারের গুনাহ হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক