জিজ্ঞাসা-১৯২:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আল বুরহান এর বিজ্ঞ শায়েখদের প্রতি আমার জনার বিষয় হলো ফরজ সালাতের পরে সমমিলিত মোনাজাতের কোন দলিল আছে কি না জানালে উপকৃত হবো। ৬/৬/২২ ইংরেজি
মাওলানা নেছার কঙ্গো থেকে-----
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আফওয়ান ইয়া আখি, দুঃখিত আপনার উত্তর দিতে বেশ দেরি হলো। আপনার প্রশ্নকে বুঝার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
এ বিষয়ে সম্মানিত চার ইমামসহ (আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ি, হাম্বলি রহ.) জমহুর উলামা-ফুকাহা এর মত হল, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু মত রয়েছে, তাদের মধ্যে ইবনে তাইমিয়া, তার ছাত্র ইবনে কাইয়্যুম এবং বর্তমানে তাদের অনুসারি আহলে হাদিসগণ এটাকি বিদআত বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রশ্ন: ক। নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা কি বিদআত?
উত্তর: ক। যারা নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করাকে বিদআত বলে, তাদের দলিল হল, রসূল/সাহাবা থেকে উহা প্রমাণিত নয়। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন-
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করল যা মূলত তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা অগ্রাহ্য। সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫০১} সুতরাং তা পরিত্যজ্য।
প্রিয় পাঠক! সবার উদ্দেশ্য যদি হয় হক তালাশ করা, তাহলে তো আর দ্বন্দ্ব থাকে না। আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি যে, নামাজের মুনাজাত, সম্মিলিত/হাত তুলে মুনাজাত করার অস্তিত্ব কুরআন মাজিদ, হাদিস ও আসারে রয়েছে, তাহলে আর দলবাজি কিসের। আসুন দেখা যাক দলিল আছে কিনা?
প্রশ্ন: খ। ফরজ নামাজের পর দুআর বিষয়ে কোন নস আছে কি?
উত্তর: খ। হ্যাঁ, আছে। নিম্নে দেওয়া হলো:
কুরআন থেকে দলিল:
وَ اِلٰی رَبِّکَ فَارۡغَبۡ فَاِذَا فَرَغۡتَ فَانۡصَبۡ ۙ
অরথ: অতএব আপনি যখনই অবসর পান তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হোন। আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও। সূরা-নাশরাহ-৭,৮
এ আয়াতের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ তা’আলার এ সমস্ত নির্দেশ দ্বারা বুঝা গেল যে, ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুসল্লীদের জন্য দু‘আ ও মুনাজাতে মশগুল হওয়া কর্তব্য, চাই তারা সম্মিলিতভাবে করেন বা প্রত্যেকে আলাদাভাবে করেন। তবে একই সময় আলাদাভাবে করলেও তা সম্মিলিত মুনাজাতের রূপ ধারণ করবে, যা অস্বীকার করা যায় না।
সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না?
হাদিস নং-০১
অর্থ; হযরত আবু বকরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (ﷺ) প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আ করতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর, অভাব অনটন এবং দোযখের আযাব থেকে মুক্তি চাই। তাখরিজ: নাসাঈ শরীফ -হাঃ নং ৫৪৬৫
হাদিস নং-০২
ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন-
عَنْ كاتب المغيرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو في دبر صلاته
হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) নামায শেষে দুআ করতেন। আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০
হাদিস নং-০৩
v একটি প্রপাগাণ্ডা/সংশয়/মিথ্যাচার: অনেক ভাই বলে নামাজের পর মুনাজাত রাসূল (ﷺ) করেনি। সুতরাং তা করা যাবে না।
v তার জবাব: রাসূল (ﷺ) যা করেনি তা কি করা যাবে না, কথাটা কি ঠিক? বিষয়টি পরিস্কার হবে হাদিসের সংজ্ঞা দ্বারা। যেমন: আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি হলো হাদিস।
এ উম্মতের আমল করার জন্য রসূল (ﷺ) সব কাজ করা জরুরি নয়। বরং তিনি যদি বলে থাকেন, অনুমতি দিয়েন সেটাও করা যাবে, সেটাও হাদিস। দলিল:
উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবি (ﷺ) সংবাদ দিলেন, ফরজ নামাজের পর দুআ কবুল হয়। তাহলে এ সংবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্য কি মুনাজাত করা, না করা। বিবেকবানদের প্রশ্ন রইল।
অত্রতব উক্ত দ্বারা ইশারাতুন নস দ্বারা ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা প্রমাণিত হলো এবং দুআ কবুলের গ্যারান্টি পাওয়া গেল।
প্রশ্ন: গ। বুঝলাম নামাজের রাসূল (ﷺ) দুআ করেছেন; কিন্তু আপনরা হাত তোলেন কেন? আপনার কোন নস আছে কি হাত তোলার সম্পর্কে?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, নস আছে মুনাজাতে হাত তোলা আদব এবং সর্বত্তম বিনয়। দলিল:
হাদিস নং-০১
হাদিস নং-০২
حدثنا محمد بن یحي الأسلمي قال : رأیت عبد اللہ بن الزبیر ورأي رجلا رافعا یدیہ یدعو قبل أن یفرغ من صلاتہ فلما فرغ منہ۰ قال لہ إن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم لم یکن یرفع یدیہ حتی یفرغ من صلاتہ ۰۰۰ (إعلاء السنن : ۳/۱۶۱)
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, ‘আমি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে হাত তুলে মুনাজাত করতে দেখে তার নামায শেষ হওয়ার পর তাকে ডেকে বললেন, ‘রাসূলে পাক (ﷺ) কেবল নামায শেষ করার পরই হস্তদ্বয় উত্তোলন করে মুনাজাত করতেন; আগে নয়।’ তাখরিজ: ই’লাউস সুনান, ৩/১৬১
হাদিস নং-০৩
হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু‘আর জন্য উভয় হাত উত্তোলন করেন। যদ্দরুন আমি তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখতে পাই। বুখারী শরীফ -৬৩৪১
হাদিস নং-০৪
প্রশ্ন: ঘ। বুঝলাম/মানলাম হাত তোলে মুনাজাত জায়েজ; তবে সম্মিলিত করেন কেন?
উত্তর: ঘ। আমরা ফরজ নামাজের পর সম্মিালিত মুনাজাত এ জন্য করি যে, একা একার চেয়ে সমষ্টিগতভাবে দুআ বেশি কবুল হয়। যা পবিত্র কুরআন, নবিজির কওলি, ফেলি হাদিস ও সাহাবিদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। আর ফরজ নামাজের পর দুআ কবুলের হাদিস রয়েছেই। দলিল:
কুরআনুল কারিম থেকে-
قَالَ قَدْ اُجِیْبَتْ دَّعْوَتُكُمَا
‘তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। সূরা ইউনুস-৮৯
এ আয়াতে ‘তোমাদের দুই জনের দুআ’ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ. এর দুআ বোঝানো হয়েছে। হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা ‘দুইজনের দুআ’ বলেছেন।সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৪৭০; আদ্দুররুল মানছূর ৩/৩১৫
তো এটা তাঁদের দু’জনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরী শুনিয়েছেন যে- ‘তোমাদের দু’জনের দুআ কবুল করা হয়েছে।’
হাদিস নং-০১
عن حبیب ابن مسلمۃ ۔۔۔ قال سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یقول : لا یجتمع ملأفیدعو بعضہم ویؤمن البعض إلا أجابہم اللہ ۔۔۔
رواہ الحاکم فی مستدرکہ : ۳/۳۴۷ الحدیث ۵۴۷۸
অর্থ: হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু‘আ করে যে, তাদের একজন দু‘আ করতে থাকে, আর অপররা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন। তাখরিজ: তালখীসুয যাহাবী, ৩:৩৪৭ পৃঃ, মুস্তাদ্রাকে হাকেম : হাঃ নং ৫৪৭৮
হাদিস নং-০২
عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: ” «لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ» “.
ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا، وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ،
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَقَالَ: الْهَنْبَاطُ بِالرُّومِيَّةِ: صَاحِبُ الْجَيْشِ. وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ.
হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রা:। যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখীন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সা: কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”।
এ হাদীস বলার তিনি [হাবীব বিন মাসলামা রা:] হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা কর। আর আমাদের শহীদের সওয়াব দান কর। তাখরিজ: মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬
নোট: আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, হাদিসটির সনদ হাসান। সূত্র: মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭
হাদিস নং-০৩
وَقَدْ كَانَ الْعَلَاءُ مِنْ سَادَاتِ الصَّحابة الْعُلَمَاءِ العبَّاد مُجَابِي الدَّعوة، اتَّفق لَهُ فِي هَذِهِ الْغَزْوَةِ أنَّه نَزَلَ مَنْزِلًا فَلَمْ يَسْتَقِرَّ النَّاس عَلَى الْأَرْضِ حَتَّى نَفَرَتِ الْإِبِلُ بِمَا عَلَيْهَا مِنْ زَادِ الْجَيْشِ وَخِيَامِهِمْ وشرابهم----------------
؟
যার সারমর্ম হল,আলা বিন হাযরামী রা:। মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাঁবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রা: সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। সূত্র: আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯ আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেছেন
হাদিস নং-০৪
عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
হযরত সালমান রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। তাখরিজ: আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল-৩১৪৫
নোট: আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী।মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১
হাদিস নং-০৫
হাদিস নং-০৬
أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَى رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ مِنْ أَهْلِ البَدْوِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ المَاشِيَةُ، هَلَكَ العِيَالُ هَلَكَ النَّاسُ، «فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، يَدْعُو، وَرَفَعَ النَّاسُ أَيْدِيَهُمْ مَعَهُ يَدْعُونَ»
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল (ﷺ) এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল (ﷺ) তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল (ﷺ) এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। তাখরিজ: বুখারী, হাদীস নং-১০২৯
এ হাদীসে পরিস্কারভাবে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল (ﷺ) নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথিবর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে?
প্রশ্ন: ঙ। ওলামায়ে আহনাফের কিছু আলেমও তো মুনাজাত করে না, এর কারণ কি?
উত্তর: ঙ। এর জবাব হলো, মুনাজাত তো ফরজ নয়; মুস্তাহাব একটি আমল; সুতরাং কেহ যদি না করে অসুবিধা কি? উল্লেখ্য যে, ওলামায়ে আহনাফের সমকালীন দুজন আলেম ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করতে নিষেধ করেছেন/বিদআত বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, হাটহাজারি মাদ্রাসার মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ.। অনুসন্ধান করে জানা গেল, তিনি যে মুনাজাত বিরোধিতা করেছেন, কারণ হলো চট্রগ্রাম এলাকায় বিদআতিদের তাণ্ডব জোরালো ছিল; এখনও বিদ্যামান, তারা এটা নামাজের অংশ মনে করত, সুতরাং এমন পরিস্থিতে (জরুরি মনে করা, আমরাও বিদআত বলি) ফরজ নামাজের পর সম্মিালিত বিদআত বলা যুক্তিযুক্ত।
নোট: ইল্লাত/সবাব –এর কারণে এলাকা ভিত্তিক কোন কোন মাসয়ালা ভিন্ন হতে পারে।
প্রশ্ন: চ। নামাজের পর মুনাজাত কখন বিদআত হবে?
উত্তর: চ। হ্যাঁ, কয়েকটি বিষয়ে আবশ্যক মনে করলে ফরজ নামাজের পর মুনাজাত বিদআত হবে। যেমন:
(১) ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরি মনে করা।
(২) দুআকে নামাযের অংশ মনে করা।
(৩) এ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না আকিদা রাখা।
প্রশ্ন: ছ। ফরজ নামাজের পর মুনাজাতের বিষয়ে সতর্কতা কি?
উত্তর: ছ। হ্যাঁ, অবশ্যই কিছু বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। যেমন: ফরজ নামাজের এমন জোরে জোরে মুনাজাত করা যাতে মাসবুক ব্যক্তির নামাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা মুনাজাত মুস্তাহাব আর আরেক জনের ইবাদতে বাধা হারাম। আর যে নামাজের পর সুন্নাত তখন লম্বা মুনাজাত না করা।
এখান বাঁচার উপায় কি? আমি আমার উস্তাদ-শায়েখকে দেখেছি যে, মুনাজাতের শুরু ও শেষে জোরে বলতে, যাতে বাকি লোকের অসুবিধা না হয়। যাকে বলে, সাপও মারলো; লাঠি ঠিক থাকলো। সুতরাং আমাদের এ ক্ষেত্রে সর্তক থাকতে হবে।
والله اعلم بالصواب