জিজ্ঞাসা-১২৪৪৩:
আসসালামু আলাইকুম।
আকিকার হুকুম কি? সন্তান যদি জন্মের চতুর্থ দিন অথবা সপ্তম দিনের আগে মারা যায় তার আকিকা দেওয়া কি জরুরী এবং ওই সন্তানের জন্য ক্রয়কৃত পশুটি কি ছদকা করা ওয়াজিব?
তারিখ: ২৬/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম নাটোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
আকিকার পরিচয়:
আকিকা আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে আঘাত করা, ফেলা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়-
والعقيقة اصطلاحاً:
ما يذكى عن المولود عند حَلْق شعره شكر لله تعالى.
অর্থাৎ সন্তান জন্মের পর সপ্তম বিশ্ব তার কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহর শোকরিয়া স্বরুপ কোন হালাল গৃহপালিত জবাই করাকে আকিকা বলে।
প্রশ্ন: ক। আকিকার হুকুম কি?
উত্তর: ক। اختلف العلماء في حكم العقيقة على ثلاثة أقوال : فمنهم من ذهب إلى وجوبها ، ومنهم من قال إنها مستحبة ، وآخرون قالوا : إنها سنة مؤكدة ،
القول الثاني: سنة مؤكدة .
هذا مذهب ال من المالكية، والشافعية والحنابلة، وغيرهم من السّلف والخلف.
القول الثالث: مسحبة،هذا مذهب ابو حنيفة رحم الله تعالي
অর্থাৎ আকিকার হুকুম বিষয়ে ওলামাদের মধ্য মতভেদ রয়েছে। তিনটি মতামত রয়েছে ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও মুস্তাহাব।
ইমাম মালেক, শাফি ও হাম্বল রহ. এর মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর ইমামে আজম আবু হানিফা রহ এর মতে মুস্তাহাব। সূত্র: আকিকাতু ওয়া আহকামিল মাওলুদি-২০০১৮ (ফতোয়া নং)
ফিকহি হানাফির দলিল:
«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْ وَلَدِهِ فَلْيَنْسُكْ عَنْهُ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافَأَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
নবী (ﷺ) বলেন, ‘যে তার সন্তানের জন্য কোনো কুরবানী দিতে চায়, তবে যেন পুত্র হলে দুটি সমবয়সী ছাগল এবং কন্যা হলে একটি ছাগল গিয়ে ইবাদত (তথা আকীকা) করে।’ [নাসায়ী : ৪২২৯; শরহু মা‘আনিল আছার : ১০১৫।]
প্রশ্ন: খ। সন্তান যদি জন্মের চতুর্থ দিন অথবা সপ্তম দিনের আগে মারা যায় তার আকিকা দেওয়া কি জরুরী এবং ওই সন্তানের জন্য ক্রয়কৃত পশুটি কি ছদকা করা ওয়াজিব?
উত্তর: খ। আমরা পূর্বেই উল্লেখ করছি যে চার ইমামের কারো মতে আকিকা করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। সন্তানের আকীকার দ্বারা মূল মাকসাদ হল, সন্তান থেকে বিপদ আপদ দূর করা। সুতরাং যে সন্তান মারা গেছে তার ক্ষেত্রে যেহেতু এ বিষয়টি বাকি থাকে না। তাই মৃত সন্তানের জন্য আকীকা করার কোন প্রয়োজন নেই। তবু যদি করে, তাহলে আকীকা হবে। কিন্তু মূল মাকসাদ বাকি থাকে না।
দলিল:
سَلْمَانُ بْنُ عَامِرٍ الضَّبِّيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَعَ الغُلاَمِ عَقِيقَةٌ، فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا، وَأَمِيطُوا عَنْهُ الأَذَى»
সালমান ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছেনঃ শিশুর পক্ষ থেকে আকীকা করতে হবে অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো (পশু যবেহ করো) এবং তার থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করো। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৭১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬৪]
তবে মৃত্যু সন্তানের জন্যও আকিকা করাই উত্তম। কেননা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন। তিনি বলেন, এটি সন্তানের শাফা‘আতের বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, যদি সন্তানের আক্বীক্বা না করা হয়। অতঃপর সে শিশু অবস্থায় মারা যায়, তাহ’লে সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফা‘আত করবে না । সূত্র: ফাতহুল বারী ৯/৫৯৪
প্রশ্ন: গ। শিশু সন্তান মারা গেলে ফায়দা কি?
উত্তর: গ। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَا مِنَ النَّاسِ مِنْ مُسْلِمٍ يُتَوَفَّى لَهُ ثَلاَثٌ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ، إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ ”.
“ কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালক হওয়ার আগে মারা গেলে তাদের প্রতি রহমত অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে দাখিল করবেন।” [ সহীহ বুখারী – ১১৭৬ ]
অন্যেরা, انكانَمَنَمَ:
أَيَاتٍ مَا امْرأَةَ مِن الْوَلَدِ كَانُوا
حِجَابًا জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে। তখন এক মহিলা প্রশ্ন, দু' সন্তান মারা মারা? তিনি বললেন, দু' সন্তান মারাও। [ সহীহ বুখারী – ১১৭৭ ]
সুতরাং সন্তান মারা গেলে সবর করে, আল্লাহর প্রতিদানের আশা করা উচিত।
শেষ কথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে, আকিকা হলো মুস্তাহাব একটি আমল। আর আকিকা মৃত্যু সন্তানের জন্য জরুরি নয়। তবে আকিকা করাই উত্তম। আর ক্রয়কৃত পশুটি সদকা করাও জরুরি নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক