আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৮২: মুহাররাম বা হারাম চার মাসে বিবাহ করা কি নিষেধ?

No Comments

 



















জিজ্ঞাসা-১২৬৭১

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহাররাম বা হারাম চার মাসে বিয়ে নিষেধ বা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এরকম কোন হাদিস বা দলিল আছে কি? তারিখ:  ১৯/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

জনৈক মাওলানা বরিশাল  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলোমুহাররাম বা হারাম চার মাসে বিবাহ নিষেধ বা অনুত্তম, এরকম কোন হাদিস বা দলিলের কোন ভিত্তি নেই। বরং  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কলিজার টুকরো ফাতিমা রা মুহাররাম মাসে বিবাহ হয়েছিল। দলিল:


نقل البيهقي عن كتاب "المعرفة" لأبي عبد الله بن منده ، أن عليا تزوج فاطمة بعد سنة من الهجرة ، وابتنى بها بعد ذلك لسنة أخرى ، فعلى هذا يكون دخوله بها في أوائل السنة الثالثة من الهجرة " انتهى من " البداية والنهاية " (3/419) ، وثمة أقوال أخرى في المسألة ، ولكن الشاهد أن أحدا من العلماء لم يستنكر الزواج في محرم ، بل ومن دخل فيه فله أسوة حسنة في أمير المؤمنين علي وزوجته السيدة فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم .

والله أعلم .

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মান্দাহ'র কিতাব "আল-মারিফা" এর উদ্বৃতি দিয়ে ইমাম বায়হাকী বলেন, " হযরত আলী (রাযি.) হিজরতের এক বছর পরে হযরত ফাতিমা (রাযি.) কে বিবাহ করেন। তারও একবকছর পরে তাকে নিয়ে সংসার শুরু করেন/ ঘরে তুলে আনেন। সেই হিসেবে বলা যায়, তাদের প্রথম মিলন / বাসরযাপন হয়  তৃতীয় হিজরি সনের প্রারম্ভিক সময়ে (মুহাররাম মাসে)।" ( আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৩/৪১৯)

আলোচ্য বিষয়ে আরো কিছু মতামত পাওয়া যায়। তবে বাস্তবতা থেকে পরিলক্ষিত হয় যে, কোন আলেমই মুহাররম মাসে বিবাহ বৈধ হবার বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেননি। বরং যে এই মাসে বাসর যাপন/ মিলনের সূত্রপাত ঘটাবে, সে তো প্রকারান্তরে আমীরুল মুমিনীন হযরতবআলী ( রাযি.) ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তনয়া হযরত ফাতিমা (রাযি.) এর যাপিত আদর্শকেই গ্রহণ করলো।আল্লাহ তায়ালাই সর্বজ্ঞ।


ফোকাহায়ে উম্মতের মতামত:

(০১)

فالقول بأن عقد النكاح والدخول في الأشهر الحرم أو في أوقات معينة لا يجوز قول باطل، ولا أصل له في الشرع، وإنما هو من عادات الجاهلية، ولذا كان العرب يتشاءمون من الزواج في شهر شوال، فقالت عائشة رضي الله عنها: شهركم هذا الذي تشاءمون منه ما دخل علي النبي صلى الله عليه وسلم إلا في شوال.

وكانوا يتشاءمون من شهر صفر، ويتشاءمون من بعض الأيام كيوم الأربعاء، فأبطل الإسلام كل ذلك وجعله من الشرك، وقد حذر النبي صلى الله عليه وسلم من الطِيرة والتشاؤم، فقال صلى الله عليه وسلم كما في حديث أبي هريرة رضي الله عنه: لا طِيرة ولا هامة ولا صَفَر.

فعقد النكاح جائز في كل وقت عدا المُحرم وقت إحرامه حتى يتحلل.

অর্থাৎ,  অতএব বুঝা গেলো যে, হারাম মাসগুলোতে কিংবা সুনির্দিষ্ট কোন সময়ে বিয়ের আকদ করা কিংবা বাসর যাপন করা বৈধ নয়- এই দাবীটি সঠিক নয়। ইসলামী শরীয়াহতে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি হলো জাহেলী যুগের প্রচলিত একটি কুসংস্কার।

বিবাহ কেন্দ্রিক তাদের এই বদ্ধ ধারণা যে শুধুমাত্র এই চারমাসের মাসেই সীমাবদ্ধ ছিলো, বিষয়টি এমন নয়। শাওয়াল মাসেও তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে তারা অলুক্ষণে মনে করে তা থেকে বিরত থাকতো। তখন আয়েশা (রাযি.) তাদের এই ভ্রান্ত ধারণাকে অপনোদন করে বলেছিলেন, "তোমরা শাওয়াল মাসকে বিয়ে-শাদীর জন্য অলুক্ষনে ভেবে মাসটিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকছো?! অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দাম্পত্য জীবনের সূচনা ঘটানোর জন্য এই শাওয়াল মাসকেই বেছে নিয়েছিলেন। "


 জাহেলী যুগের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষরদের অজ্ঞতার পরিধি এখানেই শেষ নয়, তারা সফর মাসকেও অলুক্ষণে মনে করতো। এছাড়া বুধবারকে তারা অপয়াদিবস বলে আখ্যা দিতো। ইসলাম তাদের এজাতীয় সর্বপ্রকার অমূলক ধ্যান-ধারণার মূলোৎপাটন করে সেগুলোকে সুস্পষ্ট শিরক বলে অভিহিত করেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৎকালীন জাহেলী সমাজে প্রচলিত সকল প্রকার কুলক্ষণ গ্রহণ করার রীতিকে নিস্ফল ঘোষণা করে বলেন, " কুলক্ষন/ অপয়া বলে কিছু নেই, পেঁচার মাঝে কোন অশুভ লক্ষণ নেই, সফর মাসে কোন প্রকার অকল্যাণ নেই।"


সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, সকল সময় বিবাহের আকদ সম্পন্ন করা সম্পূর্ণরূপে বৈধ।ইসলামের দৃষ্টিতে তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।  তবে হজ্জ/ উমরা পালনরত মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত তা করবেনা। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত,মাহজুরাতুল ইহরাম -২৫৬৮০ (ফতোয়া নং)


(০১) আরব আরব বিশ্বের অন্যতম আলেম শায়েখ ইউসুফ আল কারযাবি রহ. কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,


هذا الاعتقاد لا أساس له من الدين، والذي في دين الإسلام أن شهر المحرم من الأِشهر الأربعة الحرم التي عظمها الله، وحرم فيها القتال، وجعل الإثم والعدوان فيها أشد نكرا منها في غيرها، وسماه النبي شهر الله تشريفا له، وقال للرجل الذي سأله عن صيام التطوع "إن كنت صائما بعد رمضان فصم المحرم فإنه شهر الله، فيه يوم تاب الله على قوم، ويتوب فيه على قوم آخرين"؛ وشهر هذا شأنه ينبغي أن يستبشر الناس به، ولا يحجموا عن الزواج فيه، وأن يتخلصوا من هذه الأوهام التي خلفها في مصر الغلو الفاطمي الذي جعل من المحرم شهر حزن ونواح، وتجنبوا فيه كل دواعي الفرح والسرور، ومنها الزواج.

অর্থাৎ,  ইসলাম  শরীয়াহতে এজাতীয় ধ্যান-ধারণার কোনই ভিত্তি নেই। এক্ষেত্রে ইসলামের মূল চেতনা যেটি রয়েছে, সেটি হলো, মুহাররম মাস হলো যেই বিশেষ চারমাসের অন্যতম একটি মাস, যেই মাসগুলোকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ সম্মান ও অনন্য মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। এবং তাতে সর্বপ্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহকে নিষিদ্ধ করেছেন। এবং সেই মাসগুলোতে যেকোন প্রকার অন্যায়-অনাচার ও সহিংস কার্যকলাপকে অন্যান্য মাসের পাপাচারের চাইতেও গুরুতর বলে আখ্যা দিয়েছেন। মুহাররম মাসের মর্যাদা প্রকাশ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মাসকে "আল্লাহর মাস" বলে অভিহিত করেছেন। জনৈক সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!  নফল রোজা পালনের জন্য কোন মাসটি অধিক উপযোগী?  তখন তিনি বললেন, "রমাদান ছাড়া অন্য মাসে রোযা রাখতে চাইলে মুহাররম মাসকেই বেছে নাও। কারণ সেটি হলো, আল্লাহর মাস। অতীতে এই মাসেই আল্লাহ তায়ালা একদল জাতিগোষ্ঠীর তাওবা কবুল করে নিয়েছিলেন, ভবিষ্যতের কালপরম্পরায় এই মাসেই তিনি অগণিত সম্প্রদায়কেও তাঁর ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নিবেন। "

যেহেতু এই মাসের এত বেশী মান-মর্যাদা, সম্মান ও কদর, তাই এই মাসটিকে মহাসমারোহে আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমেই উদযাপন করা চাই। এই মাসে বিবাহের মতো আনন্দ-উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজনের থেকে কোনক্রমেই পিছিয়ে থাকা উচিত নয়। এবং এই মুহাররম মাসকে নিয়ে সেই ভ্রান্ত ও অমূলক ধারণা ত্যাগ করা করা উচিত, যেই কুসংস্কারের উদ্ভব ঘটিয়েছে মিশরের কট্টরপন্থী ফাতেমীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা। ক তাদের ধারণা হলো, মুহাররম মাস হলো বিলাপ-আহাজারিতে স্তম্ভিত  শোকাবহ একটি মাস, যাতে বিয়ে-শাদীসহ সকল প্রকার আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ তৈরি করা, সর্বপ্রকার চিত্তবিনোদন ও উল্লাস-উচ্ছাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন। সূত্র: শায়েখ ইউসুফ আল কারযাবি রহ এর ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত


সারকথা হলো, মুহাররাম বা হারাম চার মাসে বিয়ে নিষেধ বা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এরকম কোনো হাদিস বা দলিলের শরিয়াতে ভিত্তি নেই। 

আর হযরত আলী রা. এবং ফাতেমা রা. মহররম মাসে বিবাহ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।


তবে হজ-ওমরায় মুহরিম বা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বিবাহ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে হাদিস রয়েছে। আবার পক্ষেও হাদিস রয়েছে। সেটাকেই হয়তো বা কেউ মুহাররাম মাস ভেবেছে। হাদিসটি হলো এই:

وَحَدَّثَنِي أَبُو غَسَّانَ الْمِسْمَعِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، ح وَحَدَّثَنِي أَبُو الْخَطَّابِ، زِيَادُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَوَاءٍ، قَالاَ جَمِيعًا حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ مَطَرٍ، وَيَعْلَى بْنِ حَكِيمٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ نُبَيْهِ بْنِ وَهْبٍ، عَنْ أَبَانِ بْنِ عُثْمَانَ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ يَنْكِحُ الْمُحْرِمُ وَلاَ يُنْكَحُ وَلاَ يَخْطُبُ " .

আবু গাসসান মিসমাঈ ও আবুল খাত্তাব যিয়াদ ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... উসমান ইবনে আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি না বিবাহ করবে, না বিবাহ করাবে, আর না বিবাহের প্রস্তাবও দিবে। তাখরিজ: মুসলিম -১৪০৯

নোট: মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করা যাবে, এ মর্মে সহীহ হাদীস রয়েছে, তবে সহবাস করা যাবে না।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক