জিজ্ঞাসা-১২৬৯৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ‘আয়িশাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :
“একদল লোক সর্বদা প্রথম কাতার থেকে পিছনের দিকে সরতে থাকবে। ফলে আল্লাহও তাদেরকে জাহান্নামের পিছন দিকে রাখবেন।”
- সুনানে আবু দাউদ, ৬৭৯
এ হাদিসটি কি সহিহ?
তারিখ: ২৮/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনাব মোহাম্মদ মোনু খান মুবিন রংপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ হাদিসটি সঠিক আছে। নিচে আরবি এবারত উল্লেখ করা হলো:
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ عَمَّارٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُونَ عَنِ الصَّفِّ الأَوَّلِ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ اللَّهُ فِي النَّارِ " .
৬৭৯. ইয়াহয়া ইবনে মুইন .... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আমার যে সমস্ত উম্মত প্রথম কাতারে দাঁড়াতে গড়িমসি করে, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে দোজখে সবচেয়ে পেছনে রাখবেন।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৭৯ (আন্তর্জাতিক নং ৬৭৯)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
ব্যাখ্যা: এ ব্যাখ্যা সম্পর্কে মুহাদ্দিস কেরামের মতামত নিচে উল্লেখ করা হলো:
قال التهانوي في إعلاء السنن (3/ 339):
هذا وعيد شديد , ومقتضاة في الظاهر وجوب التقدم إلى الصف الأول , كما زعمه بعض الناس , ولكن لم يقل به أحد من الأئمة , والمذهب استحباب ذلك , كما في الهندية عن القنية ,القيام في الصف الأول أفضل من الثاني , والثاني افضل من الثالث.اهـ (1/ 56).انتهى
অর্থাৎ, প্রখ্যাত ফকীহ ও হাদীস বিশারদ আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী থানভী (রাহি.) ঈলাউস সুনান গ্রন্থে (৩৩৯/৩) বলেন," হাদীসের আবহ কঠোর হুঁশিয়ারির বার্তা বহন করে। হাদিসের বাহ্যিক অর্থের চাহিদা মোতাবেক কতক মানুষ এমন ধারণা করে থাকে যে, জামায়াতের প্রথম সারিতে অগ্রসরমান হয়ে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু কোন ফকীহ এমন মতামত ব্যক্ত করেননি। হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মতামত হলো, প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। আল্লামা ইবনু নুজাইম আল-হানাফী বিরচিত "আল-কুনয়া" এর উদ্বৃতি দিয়ে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বলা হয়েছে, " জামা'তের দ্বিতীয় সারি হতে প্রথম সারি উত্তম। আবার জামা'তের তৃতীয় সারি থেকে দ্বিতীয় সারি উত্তম। ( ৫৬/১)।
আর কোন বিধান উত্তম হওয়ার অর্থই হলো সেটি মুস্তাহাব। ওয়াজিব কিংবা ফরজ নয়। সূত্র: ঈলাউস সুনান_৩৩৯/৩
المراد بالصف الأول:
قال الحافظ في الفتح (2/ 256):
والمراد به ما يلي الإمام مطلقا وقيل أول صف تام يلي الإمام لا ما تخلله شيء كمقصورة وقيل المراد به من سبق إلى الصلاة ولو صلى آخر الصفوف قاله ابن عبد البر واحتج بالاتفاق على أن من جاء أول الوقت ولم يدخل في الصف الأول فهو أفضل ممن جاء في آخره وزاحم إليه ولا حجة له في ذلك كما لا يخفى قال النووي القول الأول هو الصحيح المختار وبه صرح المحققون والقولان الآخران غلط صريح انتهى وكأن صاحب القول الثاني لحظ أن المطلق ينصرف إلى الكامل وما فيه خلل فهو ناقص وصاحب القول الثالث لحظ المعنى في تفضيل الصف الأول دون مراعاة لفظه وإلى الأول أشار البخاري لأنه ترجم بالصف الأول وحديث الباب فيه الصف المقدم وهو الذي لا يتقدمه إلا الإمام. انتهى
অর্থাৎ, "প্রথম কাতার" দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
ইবনে হাজার আসকালানী 'ফাতহুলবারী'তে ( ২/২৫৬) বলেন, " প্রথম কাতার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সাধারণভাবে ইমামের নিকটতম স্থান। কারো কারো মতে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রথম সারির বিরতিহীন সম্পূর্ণ অংশ। কেউ কেউ বলেন, " আলোচ্য হাদীস দ্বারা সেই ব্যক্তিই উদ্দেশ্য, যিনি সর্বাগ্রে সালাতে উপস্থিত হয়েছেন, যদিও তিনি সর্বশেষ কাতারে সালাত আদায় করে থাকেন। আল্লামা ইবনু আবদিল বার এই মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এবং এর স্বপক্ষে এই বলে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন যে, "এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, কোনো ব্যক্তি সর্বাগ্রে সালাতে উপস্থিত হয়েও যদি পিছনের কাতারে সালাত আদায় করেন, তাহলেও তিনি সুনিশ্চিতভাবেই সেই ব্যক্তির চাইতে উত্তম হবেন, যে দেরী করে সালাতে এসে ভীড় ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে সামনে কাতারে গিয়ে স্থান দখল করে নিলো।"
কিন্তু একথা স্পষ্ট যে, তাঁর এই যুক্তির সাথে বক্ষমান মাসআলার কোন সম্পর্ক নেই।
আল্লামা নববী (রাহি.) বলেন, " প্রথম মতামতটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধতম ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য। বিশেষজ্ঞ ফকীহগণ এই মতটিই গ্রহণ করেছেন। আর শেষ দুইটি মতামত পুরোপুরি সঠিক নয়।
সম্ভবত, দ্বিতীয় মতের প্রবক্তাগণ উসূলে ফিকহের এই মূলনীতির দিকে লক্ষ্য করেছেন যে,
المطلق إذا أطلق يراد به الفرد الكامل
অর্থাৎ, কোনোকিছুর বিধান যখন উন্মুক্তভাবে শর্তহীন রেখে উল্লেখ করা হয়, তখন তা দ্বারা পূর্ণাঙ্গতার অর্থই নির্দেশ করে।
সুতরাং হাদীসে "কাতার" বলতে পূর্ণাঙ্গ একটি কাতারই বোঝানো উদ্দেশ্য।
প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে সুস্পষ্টভাবে "কাতার" শব্দের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তৃতীয় মতের প্রবক্তাগণ হাদীসের শব্দের দিকে লক্ষ্য না করে হাদীসের মর্মের দিকে লক্ষ্য করেছেন।
অথচ ইমাম বুখারী(রাহি.) "কাতার" শব্দের দিকে লক্ষ্য করেছেন, মর্মের দিকে নয়। এজন্যই তিনি শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে, " الصف الأول (প্রথম কাতার)"। আর আলোচ্য হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, " সম্মুখ সারি"। আর সম্মুখ সারিতে কেউ দাঁড়ায়না, একমাত্র ইমাম সাহেবই দাঁড়ান। সূত্র: 'ফাতহুলবারী- ২/২৫৬
সারকথা হলো, হাদিসটি সহিহ। প্রথম কাতার পূর্ণ করার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক