জিজ্ঞাসা-১২৬৮৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মুহতারাম, নিম্নের কথাগুলোর কোনো রেফারেন্স আছে কি?
১। আমি একাকি ঘর, সঙ্গে নিয়ে এসো।
উত্তর: সঙ্গী হলো কোরআন।
২। আমি অন্ধকার ঘর, বাতি নিয়ে এসো।
উত্তর: বাতি হল রাতের নামাজ।
৩। আমি মাটির ঘর, বিছানা নিয়ে এসো।
উত্তর: বিছানা হলো নেক আমল।
৪। আমি সাপ বিচ্ছুর ঘর।
উত্তর: বিষের ওষুধ নিয়ে এসো।
উত্তর: ঔষধ হলো দান সদকা।
৫। আমি প্রশ্নের ঘর, উত্তর নিয়ে এসো।
উত্তর: হলো কালেমা ও জিকির।
তারিখ: ২৩/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নূর আলম, খুলনা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা সরাসরি সবগুলো হাদিস নয়। তবে কিছু কিছু অংশ হাদিস/আসার আর বাকিগুলো কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত।
১-৪ নং পর্যন্ত প্রশ্নের প্রথম অংশ সরাসরি হাদিস শরিফের বাণী, ৫ নং প্রশ্ন হাদিসের মাফহুম অর্থবাহী।
দলিল:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنُ مَدُّويَهْ التِّرْمِذِيُّ، حَدَّثَنَا الْقَاسِمُ بْنُ الْحَكَمِ الْعُرَنِيُّ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ الْوَلِيدِ الْوَصَّافِيُّ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُصَلاَّهُ فَرَأَى نَاسًا كَأَنَّهُمْ يَكْتَشِرُونَ قَالَ " أَمَا إِنَّكُمْ لَوْ أَكْثَرْتُمْ ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ لَشَغَلَكُمْ عَمَّا أَرَى فَأَكْثِرُوا مِنْ ذِكْرِ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ الْمَوْتِ فَإِنَّهُ لَمْ يَأْتِ عَلَى الْقَبْرِ يَوْمٌ إِلاَّ تَكَلَّمَ فِيهِ فَيَقُولُ أَنَا بَيْتُ الْغُرْبَةِ وَأَنَا بَيْتُ الْوَحْدَةِ وَأَنَا بَيْتُ التُّرَابِ وَأَنَا بَيْتُ الدُّودِ .
আবূ সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে (জানাযার) এসে দেখেন যে, কিছু লোক হাসাহাসি করছে। তিনি বললেন, ওহে! তোমরা যদি জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী মনে করতে তাহলে আমি তোমাদের যে অবস্থায় দেখছি অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে। তোমরা জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে খুব বেশী স্মরণ কর। কেননা কবর প্রতিদিন দুনিয়াবাসীকে সম্বোধন করে বলতে থাকে, আমি প্রবাসী মুসাফিরের বাড়ী, আমি নির্জন কুটির, আমি মাটির ঘর, আমি পোকা-মাকড় ও কীট-পতঙ্গের আস্তানা। তারপর কোন ঈমানদারকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, ‘মারহাবা, স্বাগতম’, আমার পিঠের উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে প্রিয়। তাখরিজ: তিরমিজি -২৪৬০
হাদিস নং -০২
عن عائشة أنَّ النَّبي صلى الله عليه وسلم كان يقول : " اللهمَّ إنِّي أعوذ بك من الكسل والهرم والمغرم والمأثم ، اللهمَّ إني أعوذ بك من عذاب النار وفتنة النار ، وفتنة القبر وعذاب القبر وشر فتنة الغنى وشر فتنة الفقر ومن شر فتنة المسيح الدجال ، اللهم اغسل خطاياي بماء الثلج والبرد ونق قلبي من الخطايا كما يُنقى الثوب الأبيض من الدنس وباعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب " .
رواه البخاري ( 6014 ) .
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু ওয়াসাল্লাম কয়েকটা বিষয় আল্লাহ নিকট পানাহ চেয়েছেন, তারমধ্যে একটি হলো কবরের ফেতনা হতে । তাখরিজ: বুখারি -৬০১৪
ব্যাখ্যা: কবরের ফেতনা বলতে কি বুঝায়? এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ বলেন,
قال ابن حجر:
قوله : " ومن فتنة القبر " هي سؤال الملكين .
" فتح الباري " ( 11 / 177 ) .
অর্থাৎ মিন ফিতনাতিল কবরি অর্থ হলো দুজন ফিরিশতার সুওয়াল/ প্রশ্ন। সূত্র: ফাতহুল বারী -১১/১৭৭
হাদিস নং -০৩
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، - وَهَذَا لَفْظُ هَنَّادٍ - عَنِ الأَعْمَشِ، عَنِ الْمِنْهَالِ، عَنْ زَاذَانَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرُ، وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ بِهِ فِي الأَرْضِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ : " اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ " . مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا - زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ هَا هُنَا - وَقَالَ : " وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ حِينَ يُقَالُ لَهُ : يَا هَذَا مَنْ رَبُّكَ وَمَا دِينُكَ وَمَنْ نَبِيُّكَ " . قَالَ هَنَّادٌ قَالَ : " وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : رَبِّيَ اللَّهُ . فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : دِينِي الإِسْلاَمُ . فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ قَالَ فَيَقُولُ : هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَيَقُولاَنِ : وَمَا يُدْرِيكَ فَيَقُولُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ " . زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ : " فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ( يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا ) " . الآيَةَ . ثُمَّ اتَّفَقَا قَالَ : " فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِي فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ " . قَالَ : " فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا " . قَالَ : " وَيُفْتَحُ لَهُ فِيهَا مَدَّ بَصَرِهِ " . وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ " . قَالَ : " فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا " . قَالَ : " وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلاَعُهُ " . زَادَ فِي حَدِيثِ
২৬. কবরের প্রশ্ন ও শাস্তির বর্ণনা অধ্যায়।
উছমান ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) .... বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে একজন আনসার সাহাবীর জানাযার নামাযে শরীক হই, এমন কি তার কবরের কাছে যাই, যা তখনও তৈরী হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে বসেন এবং আমরা ও তাঁর সাথে তাঁর চারদিকে শান্তভাবে বসে পড়ি, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসা। এ সময় নবী (ﷺ)-এর হাতে একখণ্ড কাঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি যমীনের উপর আঘাত করছিলেন। এরপর তিনি মাথা উঁচু করে দুই বা তিনবার বলেনঃ তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে নাজাত চাও।
রাবী জারীরের বর্ণনায় এরূপ অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, দাফনের পর লোকেরা যখন ফিরে যায় এবং সে লোক তাদের শব্দ শুনতে পায়, সে সময় তাকে এরূপ প্রশ্ন করা হয়ঃ হে ব্যক্তি! তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি এবং তোমার নবী কে?
রাবী হান্নাদ (রাহঃ) বলেনঃ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তখন তার কাছে দু’জন ফিরিশতা আসে এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার রব কে? তখন সে বলেঃ আল্লাহ আমার রব। তখন তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার দ্বীন কী? সে বলেঃ আমার দ্বীন ইসলাম। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠান হয়েছিল? তখন সে বলেঃ ইনি হলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। তখন ফিরিশতারা আবার জিজ্ঞাসা করেঃ তুমি এ কিরূপে জানলে? তখন সে বলেঃ আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর উপর ঈমান এনেছি এবং একে সত্য বলে মনে করি। রাবী জারীর বলেন, আল্লাহর বাণীঃ ″আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের ইহজীবন ও পরজীবনে শাশ্বত- বাণীর (কালিমার) উপর দূর রাখেন।″ এর অর্থ ইহাই। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ -৪৭৫৩, ইবনে মাজাহ
নোট: সুতরাং প্রমাণিত হল কবর প্রশ্ন করার স্থান।
দ্বিতীয় কথা হলো, ৫ টি প্রশ্নের উত্তরগুলোই কোরআন হাদিস সমর্থিত। নিচে প্রশ্ন অনুসারে দলিল উল্লেখ করা হলো:
১। আমি একাকি ঘর, সঙ্গী নিয়ে এসো।
উত্তর: সঙ্গী হলো কোরআন।
জবাব: এক সাথী বিপদে পড়লে আরেক সাথী তাকে উদ্ধার করে, সাহায্য করে। এটি হলো সাথীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআন মুমিনকে কবরে সাহায্য করবে, আজাব হতে রক্ষা করবে। সেই অর্থে কুরআন সঙ্গী। দলিল:
يُؤْتَى الرَّجُلُ فِي قَبْرِهِ فَتُؤْتَى رِجْلَاهُ فَتَقُولُ رِجْلَاهُ: لَيْسَ لَكُمْ عَلَى مَا قِبَلِي سَبِيلٌ كَانَ يَقُومُ يَقْرَأُ بِي سُورَةَ الْمُلْكِ، ثُمّ يُؤْتَى مِنْ قِبَلِ صَدْرِهِ أَوْ قَالَ بَطْنِهِ، فَيَقُولُ: لَيْسَ لَكُمْ عَلَى مَا قِبَلِي سَبِيلٌ كَانَ يَقْرَأُ بِي سُورَةَ الْمُلْكِ، ثُمّ يُؤْتَى رَأْسُهُ فَيَقُولُ: لَيْسَ لَكُمْ عَلَى مَا قِبَلِي سَبِيلٌ كَانَ يَقْرَأُ بِي سُورَةَ الْمُلْكِ، قَالَ: فَهِيَ الْمَانِعَةُ تَمْنَعُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ...، وَمَنْ قَرَأَهَا فِي لَيْلَةٍ فَقَدْ أَكْثَرَ وَأَطْنَبَ.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন- (সূরা মুলকের আমলকারী) ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হবে, (আযাবের) ফিরিশতারা তার পায়ের দিক থেকে আসবে; তখন পা বলবে, এদিক দিয়ে তোমরা তার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। সে (আমার উপর ভর করে) নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা মুলক তিলাওয়াত করত। এরপর বুক অথবা পেটের দিক থেকে এলে তা বলবে, এদিক থেকেও তোমরা তাকে কিছু করতে পারবে না; সে তো সূরা মুলক তিলাওয়াত তিলাওয়াত করত (আমার মাঝে সূরা মুলক ধারণ করত)। মাথার দিক থেকে এলে বলবে, আমার দিক থেকেও তোমাদের তার পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়; সে তো সূরা মুলক তিলাওয়াত করত (আমার মাঝে সূরা মুলক সংরক্ষণ করত)।
ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এ সূরা ‘মানিআহ’-বাধা দানকারী; ব্যক্তি থেকে কবরের আযাব রুখে দেয়।... যে ব্যক্তি রাতে এটি তিলাওয়াত করল সে অনেক ভালো ও বড় কাজ করল। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৮৩৯; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস ২২৭৯
২। আমি অন্ধকার ঘর, বাতি নিয়ে এসো।
উত্তর: বাতি হল রাতের নামাজ।
জবাব: রাতের বা অন্ধকারের নামাজ নূর, এ বিষয়ে আসার রয়েছে। দলিল:
হাদিস/ আসার নং -০১
حدثنا أبو بكر بن مالك ، ثنا عبد الله بن أحمد بن حنبل ، حدثني أبي ، حدثنا عبد الله بن محمد ، قال : سمعت شيخا ، يقول : بلغنا أن أبا ذر كان يقول : يا أيها الناس إني لكم ناصح ، إني عليكم شفيق ، صلوا في ظلمة الليل لوحشة القبور ، صوموا في الدنيا لحر يوم النشور ، تصدقوا مخافة يوم عسير ، يا أيها الناس إني لكم ناصح ، إني عليكم شفيق
অর্থাৎ হজরত আবু গিফারি রা নছিহত করেন,
আবূ বকর ইবনে মালিক আমাদেরকে বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বল আমাদেরকে বলেছেন, আমাদেরকে আমার পিতা বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আমাদেরকে বলেছেন, তিনি বলেন: আমি এক শায়খকে বলতে শুনেছি: আমরা শুনেছি যে, আবু যর বলতেন: হে লোক সকল, আমি তোমাদের একজন হিতাকাঙ্খী। আমি তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, কবরের একাকীত্বের জন্য রাতের আঁধারে সালাত আদায় কর, এই কঠিন দিনের উত্তাপের জন্য রোজা রাখ, পৃথিবীর কঠিন দিনের উত্তাপ থেকে মুক্তি দাও। হে লোক সকল, আমি তোমাদের উপদেষ্টা, আমি তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাখরিজ: হিলাতুল আওলিয়া ওয়া তবকাতুল আসফিয়া - ১৬৬ পৃষ্ঠা
নোট: নামাজ হলো নূর, যা বান্দাকে দুনিয়া, কবরে, আখেরাতে নূর দান করা হবে।
হাদিস নং -০২
والصلاة نور، والصدقة برهان
অর্থ: নামাজ হলো নূর, সদকা হলো দলিল। তাখরিজ: মুসলিম -২২৩
ব্যাখ্যা:
وهي نور في الدنيا، نور في القلب، ثم يشرق على الوجه، ونور في القبر، ونور يوم القيامة، ونور في الجنة؛ فلذلك عمم وقال: (والصلاة نور)، وقوله: (والصدقة برهان) أي: دليل وحجة وبرهان على إيمان صاحبها.
অর্থাৎ নামাজে হলো দুনিয়াতে নূর, অন্তরে নূর, অতঃপর তা চেহারায় আলোকিত হয়, কবরে নূর, কিয়ামতের দিন নূর এবং জান্নাতে নূর। এর নূর সর্বত্র। সূত্র: কিতাবু লিমাজা নুসল্লি-৩/১৩, মুহাম্মাদ ইসমাঈল আলমুকাদ্দিম রহ.
৩। আমি মাটির ঘর, বিছানা নিয়ে এসো।
উত্তর: বিছানা হলো নেক আমল।
জবাব: নেক আমল সরাসরি বিছানা না হলেও, আমলকারীকে রক্ষা করবে, আরামে রাখবে। দলিল:
هذا الحديث رواه عبد الرزاق في "المصنف" (3 / 567 - 568)، وابن أبي شيبة في "المصنف" (7 / 232 - 234) عن مُحَمَّد بْن عَمْرِو بْنِ عَلْقَمَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، موقوفا عليه.
وقد ورد هذا المعنى مرفوعا؛ عند ابن حبان "الإحسان" (3113)، والطبراني في "المعجم الأوسط (3 / 105 - 107)، والحاكم في "المستدرك" (1 / 379 - 381) وغيرهم؛ بأسانيدهم عن مُحَمَّد بْن عَمْرِو بْنِ عَلْقَمَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ الْمَيِّتَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ إِنَّهُ يَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ حِينَ يُوَلُّونَ عَنْهُ، فَإِنْ كَانَ مُؤْمِنًا، كَانَتِ الصَّلَاةُ عِنْدَ رَأْسِهِ، وَكَانَ الصِّيَامُ عَنْ يَمِينِهِ، وَكَانَتِ الزَّكَاةُ عَنْ شِمَالِهِ، وَكَانَ فِعْلُ الْخَيْرَاتِ مِنَ الصَّدَقَةِ وَالصِّلَةِ وَالْمَعْرُوفِ وَالْإِحْسَانِ إِلَى النَّاسِ عِنْدَ رِجْلَيْهِ، فَيُؤْتَى مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ، فَتَقُولُ الصَّلَاةُ: مَا قِبَلِي مَدْخَلٌ، ثُمَّ يُؤْتَى عَنْ يَمِينِهِ، فَيَقُولُ الصِّيَامُ: مَا قِبَلِي مَدْخَلٌ، ثُمَّ يُؤْتَى عَنْ يَسَارِهِ، فَتَقُولُ الزَّكَاةُ: مَا قِبَلِي مَدْخَلٌ، ثُمَّ يُؤْتَى مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، فَتَقُولُ فَعَلُ الْخَيْرَاتِ مِنَ الصَّدَقَةِ وَالصِّلَةِ وَالْمَعْرُوفِ وَالْإِحْسَانِ إِلَى النَّاسِ: مَا قِبَلِي مَدْخَلٌ، فَيُقَالُ لَهُ: اجْلِسْ فَيَجْلِسُ... الحديث
অর্থাৎ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন সে তার চপ্পলের আওয়াজ শুনতে পায়, যখন তারা তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যদি সে মুমিন হয়, তাহলে নামাজ তার মাথার দিকে থাকবে, রোজা থাকবে তার ডানদিকে, এবং যাকাত তার বাম দিকে, সৎকর্ম ও সৎকর্মের উপর থাকবে। মানুষের প্রতি দয়া তাঁর পায়ের কাছে ছিল, এবং তা তাঁর মাথা থেকে আনা হয়েছিল। প্রার্থনায় বলা হয়েছে: আমার সামনে একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, তারপর এটি তার ডানদিকে রয়েছে এবং রোজাদার বলে: আমার সামনে একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, তারপর তাকে তার বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। যাকাত: যা আমার সামনে রয়েছে তা প্রবেশ করানো হয়, তারপর তা তার পায়ের দ্বারা আনা হয়, তাই এটি বলে: সৎকাজ করতে, মানুষের সাথে সদকা করা, দান করার মতো একটি অনুগ্রহ, দান করার মতো। , এবং তাকে বলা হয়: বসুন, এবং তিনি বসেন। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -৩/৫৬৭; মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা -৭/২৩৩-২৩৪; হাকেম-১/৩৭৯-৩৮১
৪। আমি সাপ বিচ্ছুর ঘর।
উত্তর: বিষের ওষুধ নিয়ে এসো।
উত্তর: ঔষধ হলো দান সদকা।
জবাব: দান সদকা কবরের আজাব হতে রক্ষা করবে। দলিল:
عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ , عَنْ أَبِي الْخَيْرِ , عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُورِ , وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي ظِلُّ صَدَقَتِهِ»
উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দান-সদকা দানকারীকে কবরের উত্তাপ নিবারণ করবে। তাখরিজ: মাজমাউয যাওয়ায়িদ - ৪৬১৪; ফয়জুল কাদির - ২০৪৯
৫। আমি প্রশ্নের ঘর, উত্তর নিয়ে এসো।
উত্তর: হলো কালেমা ও জিকির।
জবাব: একজন মুমিন যে ঈমান/কালেমা বুকে ধারণ করে, সেটাই কবরে জিজ্ঞাসা করা হবে। দলিল:
4699 - حَدَّثَنَا أَبُو الوَلِيدِ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عَلْقَمَةُ بْنُ مَرْثَدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سَعْدَ بْنَ عُبَيْدَةَ، عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " المُسْلِمُ إِذَا سُئِلَ فِي القَبْرِ: يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ "، فَذَلِكَ قَوْلُهُ: {يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ} [إبراهيم: 27
আবু ওয়ালিদ (রাহঃ) ......... হযরত বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কবরে মুসলমান ব্যক্তিকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দিবে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ” আল্লাহর বাণীতে এর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাণীটি হল এইঃ يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ
فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ
তাখরিজ: বুখারি -৪৬৯৯
হাদীসের ব্যখ্যা:
হাদীছে যে আয়াতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা দ্বারা বোঝা যায়, যারা সুদৃঢ় কথা অর্থাৎ কালেমায়ে তায়্যিবার উপর ঈমান আনবে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দুনিয়ায়ও দীনের উপর মজবুত রাখবেন অর্থাৎ প্রকৃত ঈমানদার কোনও পরিস্থিতিতেই বিভ্রান্তির শিকার হবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কবরের সাওয়াল-জাওয়াব সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. কবরে মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের যাতে সঠিক উত্তর দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য কালেমায়ে তায়্যিবার প্রতি অবিচল ঈমান রাখা এবং এর দাবি অনুযায়ী শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাওফীক দিন।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক বাণীগুলো কিছু সরাসরি নস আছে আর বাকিগুলো কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক