জিজ্ঞাসা-১২৬৭৬:
আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া........। মুহতারাম আমার জানার বিষয় হচ্ছে আমি বর্তমানে ১৭ ইসিবিতে কর্মরত আছি।যা থিংকুপাড়া বান্দরবানে অবস্থিত।আমার বাসা ঝিলংজা আর্মি ক্যাম্পে যা এখান থেকে ১০৫ কিলোমিটার দূরে তা ছাড়া আমাদের অনেক ক্যাম্প রয়েছে যার দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটারের বেশি এমতাবস্থায় আমি কি যখন যে ক্যাম্পে যাই যেখানে যদি ১৫ দিনের কম সময় অবস্থান করি সে ক্ষেত্রে আমার ইমামতি করার বিধান কি?
তারিখ: ১৫/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মনিরুল হক, ঝালকাঠি থেকে থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা আলোকে, উক্ত ক্যাম্পে যখন ১৫ দিনের কম সময়ে থাকার নিয়তে অবস্থান করবেন, তখন কসর আদায় করবেন।
ইমামতির ক্ষেত্রেও তাই যোহর, আসর ও ঈশার নামাজে দুরাকাত আদায় করে সালাম ফিরাবেন। দলিল:
وإن لم يكن وطنا أصليا له، فإنه يقصر الصلاة ما لم ينوى الإقامة بها خمسة عشر يوما (قاضى خان على الهندية-1\165، جديد-1\104)
অর্থাৎ আর যদি তা তার আদি জন্মভূমি না হয়, তবে সে নামায সংক্ষিপ্ত করবে যদি না সে সেখানে পনের দিন থাকার ইচ্ছা করে। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া -১/১৩৯; ফাতওয়ায়ে জাদিদ-১/১৯৯
আর দ্বিতীয় কথা, পরিবার-পরিজন যেখানে বসবাস করে, সেখানে মানুষ মাকামে একামত বা মুকিম। তাই থিংকুপাড়ায় যেখানে আপনার বাসা সেখানে পূর্ণ সালাত আদায় করতে হবে। দলিল:
فِي مُسْنَدِ ابْنِ أَبِي شَيْبَةَ: حَدَّثَنَا الْمُعَلَّى بْنُ مَنْصُورٍ عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ إبْرَاهِيمَ الْأَزْدِيِّ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ أَبِي ذِئَابٍ، أَنَّ عُثْمَانَ ﵁ صَلَّى بِمِنًى أَرْبَعًا ثُمَّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ «مَنْ تَأَهَّلَ فِي بَلْدَةٍ فَهُوَ مِنْ أَهْلِهَا يُصَلِّي صَلَاةَ الْمُقِيمِ» وَإِنِّي تَأَهَّلْت مُنْذُ قَدِمْت مَكَّةَ، وَرَوَاهُ أَبُو يَعْلَى كَذَلِكَ وَلَفْظُهُ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ «إذَا تَزَوَّجَ الرَّجُلُ بِبَلَدٍ فَهُوَ مِنْ أَهْلِهِ» وَإِنَّمَا أَتْمَمْت لِأَنِّي تَزَوَّجْت بِهَا مُنْذُ قَدِمْتهَا.
অর্থাৎ, ইবনু আবী শায়বা সূত্রপরম্পরায় - মুয়াল্লা বিন মানসূর, ইকরিমা বিন ইব্রাহীম আল আযদী, আবদুর রহমান বিন হারেস হতে বর্ণনা করেন যে, উসমান (রাযি.) মিনা (মক্কা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত একটি অঞ্চল) অবস্থানকালে (তিন ও চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো কসর না করে) পূর্ণাঙ্গ আকারে আদায় করলেন। এবং তার স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে বললেন, " রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, " কোন ব্যক্তি যদি নতুন কোন এলাকায় নতুন করে বসতি স্থাপন করে, তাহলে সে ঐ এলাকার অধিবাসী হিসেবেই বিবেচিত হবে। তাই সে "মুকিম" তথা সেখানকার স্থানীয় নাগরিকদের মতো পরিপূর্ণ সালাত আদায় করবে।" আর আমিও মক্কায় আগমনের পর এখানেই নতুন করে সংসার স্থাপন করেছি। তাই আমি সালাত আদায়কালে কসর না করে পরিপূর্ণভাবেই নামাজ পড়ে থাকি।
মুসনাদে আবূ ইয়ালা' হতেও এজাতীয় রিওয়াতের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেই গ্রন্থের ভাষ্য হলো নিম্নরূপ -
হজরত উসমান ( রাযি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, " একজন ব্যক্তি যখন কোন এলাকায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, তখন সে ঐ এলাকারই বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হবে।"
উসমান (রাযি.) আরো বলেন, " আমার ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। কারণ আমি মক্কা আগমনের পর এখানেই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি। আর এজন্যই এখানে আসলে আমি মুকীম (স্থানীয় বাসিন্দা) হিসেবে পূর্ণাঙ্গ সালাত আদায় করি।
সূত্র: কিফায়াহ বিহামেশ ফাতহুল ক্বাদীর- ২/১৭
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক