জিজ্ঞাসা-১২৪৫২:
মোটিভেশন ক্লাস: ১২
আসসালামুয়ালাইকুম। "ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে নীতিমালা" এবিষয়ে মোটিভেশন ক্লাস প্রয়োজন। জাঝাকাল্লাহ। তারিখ: ৩১/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আসাদ চট্রগ্রাম থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে দুটি স্তরে ভাগ করছি: ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে নীতিমালা"
প্রথম স্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ।
০১. ভূমিকা:
বিবাহের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি বাড়ে। কর্মমুখর দিন শেষে ক্লান্তশ্রান্ত দেহে স্বস্তি আসে স্ত্রীর মাধ্যমে। জাগতিক জীবনের শত কোলাহল, কষ্ট মানুষ সহ্য করে প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখপানে চেয়ে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
Surah Al-Araf, Verse 189:
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَت دَّعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ
‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি থেকে। তা থেকেই তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। ’ সূরা আরাফ- ১৮৯
০২. বিবাহের শাব্দিক সংজ্ঞা:
নিকাহ তথা বিবাহের শাব্দিক অর্থ যৌন সঙ্গম, দু’টি জিনিস একত্রিত করা। কখনও কখনও নিকাহ বন্ধন বা চুক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়, (نكح فلانة) যখন কেউ বিয়ে করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আবার বলা হয়, (نكح امرأته) সে তার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করল।
০৩. শরী‘আতের পরিভাষায় বিবাহ:
عقد يعتبر فيه لفظ إنكاح أو تزويج في الجملة والمعقود عليه منفعة الاستمتاع أو الازدواج أو المشاركة.
বিবাহ বাংলা শব্দ, আরবী ভাষায় বলে (নিকাহ্)। বিবাহ হচ্ছে, ইসলামী নীতি অনুযায়ী যাদের সাথে বিবাহ বৈধ এমন একজন পুরুষ ও মহিলার মধ্যে নির্ধারিত শব্দের আদান-প্রদানের মাধ্যমে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার ফলে দু’জনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়, যৌন সম্পর্ক বৈধ হয়, একজন আরেকজনের উপর সুনির্দিষ্ট অধিকার লাভ করে এবং একজনের জন্য অপর জনের উপর কিছু দায়-দায়িত্ব বর্তায়।
০৪. বিবাহের রুকনসমূহ:
বিয়ের রুকন দু’টি। তা হলো:
১- প্রস্তাব (الإيجاب): অলী তথা অভিভাবক অথবা যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তার পক্ষ থেকে বিয়ে করার বা বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া। যিনি আরবী ভালো পারেন তার (إنكاح أو تزويج) শব্দ দ্বারা প্রস্তাব দেওয়া উত্তম। কেননা এ শব্দদ্বয় কুরআনে এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ﴾ [النساء : ٣]
“তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
২- কবুল (القبول): স্বামী বা তার
২- কবুল (القبول): স্বামী বা তার স্থলাভিষিক্ত থেকে বিয়ে কবুল করার শব্দ। যেমন বলা, (قبلت) আমি বিয়ে কবুল করলাম বা (رضيت هذا النكاح) এ বিয়ে আমি রাজি আছি বা শুধু কবুল করেছি বলা। ইজাব তথা প্রস্তাব কবুলের আগে হতে হবে, তবে কোনো আলামত থাকলে আগে কবুল বললেও হবে।
০৫. "দেন মোহর সম্পর্কে সঠিক নিয়ম":
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামে মোহরের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। যেমন,
আয়াত নং-০১
Surah An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। সূরা নিসা -০৪
আয়াত নং-০২
أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থ: উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, যে স্বীয় সম্পদ দ্বারা প্রয়াসী হবে তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে নয়। অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা নিসা- ২৪
মোহর আদায় করা স্বামীর উপর ফরয এবং বিয়ের অপরিহার্য শর্ত। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। সূত্র: আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উছমানী পৃ. ১০৫
প্রশ্ন: ক। মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কত?
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮
তবে সর্বনিম্ন হাদিস-আসারে রয়েছে। ফিকহে হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম।
দলিল:
হাদিস নং-০১
عن علي -رضي الله عنه- قال: «لا تُقطع اليدُ إلا في عَشرة دَراهِم, ولا يكون المهرُ أقلَّ مِن عشرة دَراهِمسنن الدارقطني, ت: شعيب الارنؤوط وجماعة, مؤسسة الرسالة، بيروت - الطبعة الأولى، 1424هـ.
হাদিস নং-০২
لا مَهْرَ أَقَلُّ مِنْ عَشْرَةِ دَرَاهِمَ
“দশ দিরহামের কম মহর নেই। ” তাখরিজ: দারা কুতনী-৩৯২
দশ দিরহামের পরিমাপ : প্রতি দিরহামে ৩ মাশা ০.৮.রতি হয়। ৮ রতিতে ১ মাশা, ১২ মাশায় ১ তোলা হয়। এ হিসেবে দশ দিরহামের পরিমাণ হলো ৩১ মাশা রূপা বা ২ তোলা ৭ মাশা (প্রায় আড়াই ভরি রূপা) অথবা তার সমমূল্য টাকা। এটাই বিবাহের মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ।
আজকের বাজারে প্রতি ভরি রুপার দাম, ১৫১৬ টাকা (১৩ সেপ্টেম্ব বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত) হয়, তাহলে দশ দিরহাম বা আড়াই ভরি রূপার মূল্য হবে (১৫১৬×২.৭)=৪০৯৩ টাকা।
সূত্র: শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৩৯৮ আযীযুল ফাতাওয়া, ৪৫১/ ফাতাওয়া দারুল উলূম ৮ : ২৬৪/ আহসানুল ফাতাওয়া ৪ : ৩৮২; ৫/৩১২, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৬/২৪৩
প্রশ্ন: খ। কি দ্বারা মহর আদায় হবে?
উত্তর: খ। মোহর এমন কিছু হতে হবে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য। টাকা-পয়সা হওয়া জরুরি নয়। দলিল:
لما تزوج عليٌّ رضيَ اللهُ عنهُ فاطمةَ رضيَ اللهُ عنها ، قال له رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم : أعطِهَا شيئًا ، قال : ما عندي . قال : فأين درعُك الحطميَّةُ
الراوي : عبدالله بن عباس : صحيح النسائي
الصفحة أو الرقم: 3376 |
خلاصة حكم المحدث : صحيح
অর্থ: রাসূলে আকরাম (ﷺ) হযরত আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিছু দেয়ার আগে বিবির কাছে যেয়ো না। হযরত আলী (রা.) ওজরখাহি করলেন, আমার কাছে তো কিছুই নেই। রাসূলে কারিম (ﷺ) বললেন, তোমার কাছে যে লোহার বর্মটি ছিল সেটি কোথায়? ওটাই ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দাও। সাহাবী হযরত আলী (রা.) নির্জনবাসে যাওয়ার পূর্বেই বর্মটি ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দেন।’ তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৩৩৭৬; আবু দাউদ-২১২৬
প্রশ্ন: গ। মহরে ফাতেমির পরিমাণ কত বর্তমান বাজারে?
উত্তর: গ। মোহরে ফাতেমির পরিমাণ পাঁচ শ দিরহাম তথা ১৩১.২৫ ভরি (এক কেজি ৫৩০.৯০০ গ্রাম) খাঁটি রুপা অথবা এর বাজারমূল্য। সতর্কতামূলক ১৫০ তোলা খাঁটি রুপার কথা বলা হয়ে থাকে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২৭৪২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১৫; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : ৮/২৩১)
১৫০ ভরি রৌপ্য
আজকের বাজারে মহরে ফাতিমির সমমূল্য হলো,১৫০*১৫১৬=২২৭৪০০ টাকা
প্রশ্ন: ঘ। মহর কত প্রকার?
উত্তর: ঘ। আমাদের মধ্যে দুই ধরনের মোহরের প্রচলন রয়েছে। এক. مهر معجل (মোহরে মু‘আজ্জাল) বা নগদ মোহর। দুই.مهر مؤجل (মোহরে মুয়াজ্জাল) বা বাকি মোহর। এ শব্দগুলো যেহেতু বিয়ের মজলিস ছাড়া সচরাচর শোনা যায় না তাই অনেকে এ শব্দ দুটির অর্থ বুঝে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে মোহরে মু‘আজ্জাল হল সেই মোহর, যা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ামাত্র নগদ আদায় করা অপরিহার্য হয়ে যায়। হয়তো সে বিয়ের সময়ই তা পরিশোধ করে দিবে অথবা বিয়ের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর তা দাবি করার অধিকার আছে। যেহেতু আমাদের সমাজে নারীরা সাধারণত মোহর দাবি করে না তাই এরূপ মনে করা উচিত হবে না যে, সেটা পরিশোধ করা আমাদের জন্য জরুরি নয়; বরং কর্তব্য হল স্ত্রীর চাওয়ার অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব এই ফরয দায়িত্ব হতে মুক্ত হওয়া।
প্রশ্ন: ঙ। স্ত্রী যদি স্বামীকে মহর মাফ করে, তাহলে জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ঙ। স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে (প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চাপ ব্যতিত) নিজ মহরানা ছেড়ে দেয়, তাহলে সেটা স্বামীর জন্য বৈধ। দলিল:
Surah An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। সূরা নিসা -০৪
০৬. বিবাহের প্রকারভেদ ও তার হুকুম:
ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম তারতম্য আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় এক.শারীরিক শক্তি দুই. আর্থিক (শক্তি) স্বাবলম্বী। বিবাহ মোট ৬ প্রকার
১.ফরজ ২.ওয়াজিব৩.সুন্নাত ৪. মুবাহ ৫.মাকরুহ ৬.হারাম। সূত্র : দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, বিবাহ অধ্যয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন। নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. ফরজ: বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার নিশ্চিত বা প্রবল আশংকা। বিবাহ একমাত্র রাস্তা তাকে যিনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন-
(১) Surah An-Noor, Verse 32:
وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِن يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। সূরা নূর -৩২
(২)
Surah Al-Anaam, Verse 120:
وَذَرُوا ظَاهِرَ الْإِثْمِ وَبَاطِنَهُ إِنَّ الَّذِينَ يَكْسِبُونَ الْإِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوا يَقْتَرِفُونَ
তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে। সূরা আনআম-১২০
(৩) Surah Al-Isra, Verse 32:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা -৩২
তবে কারো যদি শারীরিক শক্তি থাকে কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা নাই তার উপর বিবাহ ফরজ নয় সে রোজা রাখবে আর ছবর করবে । যেমন হাদিসে শরীফে আছে-
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ وَالأَسْوَدِ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهُ صلى الله عليه وسلم " يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ".
আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
২. ওয়াজিব: বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার আশংকা। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ওয়াজিব। যেমন,
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ وَالأَسْوَدِ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهُ صلى الله عليه وسلم " يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ".
হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
আর আর্থিক শক্তি না থাকলে রোজা রাখবে।
৩. সুন্নাত: উপযুক্ত বয়স হলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবাহ করা সুন্নাত। কেননা অধিকাংশ নবি বিবাহ করেছেন।
Surah Ar-Rad, Verse 38:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَن يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ
আপনার পূর্বে আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছি এবং তাঁদেরকে পত্নী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি। কোন রসূলের এমন সাধ্য ছিল না যে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করে। প্রত্যেকটি ওয়াদা লিখিত আছে। সূরা রদ-৩৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ وَمَنْ كَانَ ذَا طَوْلٍ فَلْيَنْكِحْ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَعَلَيْهِ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ " .
অর্থ: আমি নারীকে বিবাহ করি। ( তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। বুখারি-৫০৫৬; মুসলিম-৩৪৬৯
৪. মুবাহ: যার বিবাহ না করলে পাপকার্যে লিপ্ত হবার আশংকা নাই। বরং আল্লাহ প্রেমে বিভোর-বিহ্বল , দ্বীনি কাজে ব্যস্ত যে, স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার বিবাহ না করা জায়েজ, বরং না করাই উত্তম। যেমন- ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. বিবাহ করেন নি। হজরত ইয়াহইয়া আ. সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে। সূরা ইমরান-৩৯ সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-২৩৭ পৃষ্ঠা, বয়ানুল কুরআন, মাআরিফুল কুরআন
Surah Aal-e-Imran, Verse 39:
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ
যখন তিনি কামরার ভেতরে নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন। সূরা ইমরান -৩৯
৫. মাকরুহ: যে ব্যক্তি বিবাহ করলে বিবির হক আদায়ে সন্দিহান তার বিবাহ করা মাকরুহ।
৬. হারাম: যার শারীরিক শক্তি নেই, একেবারে অক্ষম, নপুংশক (পুরুষত্বহীন) তার বিবাহ করা হারাম। স্ত্রীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হলো জৈবিক চাহিদা পূরণ করা। যেমন, পবিত্র হাদিসে এসেছে-
إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا، ولِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، ولِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فأعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ. فأتَى النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، فَذَكَرَ ذلكَ له، فَقَالَ النَّبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: صَدَقَ سَلْمَانُ.
الراوي : وهب بن عبدالله السوائي أبو جحيفة | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري
الصفحة أو الرقم: 1968 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অর্থাৎ নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার রবের, তোমার দেহের এবং তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও। বুখারি-১৯৬৮
من حقّ الزّوجة على زوجها أن يقوم بإعفافها ، وذلك بأن يطأها ، وقد ذهب جمهور الفقهاء – الحن
স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের মাধ্যমে তার পবিত্র জীবন যাপনের প্রতি যত্নশীল হবে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহর মতে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।’ সূত্র: আল মাউসুয়া’তুল ফিকহিয়্যা-৩০/১২৭
০৭. বিবাহের উপকারিতা বা সুফল:
ইসলাম ও দুনিয়ার দৃষ্টিতে বিয়ে-শাদীর ফযিলত, উপকারিতা অসামান্য। নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরে হলো-
Ø শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। সূরা রুম-২১
Ø অর্থনীতি সাবলম্বী হয়। সূরা নূর-৩৩
Ø মানব জাতির বৈধ বংশ বিস্তারের মাধ্যম।
Ø তাকওয়ার পথ সুগম হয় । যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- কোন বান্দা যখন বিয়ে করে তখন তো সে দীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। অতঃপর সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে। মিশকাত২/২৬৭
Ø যিনা-ব্যভিচার থেকে সমাজ রক্ষা পায়।
Ø মানসিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
Ø চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাযত হয়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
০৮. বিবাহ না করার অপকারিতা বা কুফল:
বিবাহ না করার নানাবিদ অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা করা হলো:-
Ø স্বাস্থ্য নষ্ট হয় ।
Ø অর্থের অপচয় হয়।
Ø যিনা-ব্যভিচারের প্রসার ঘটে, যা আল্লাহর গযবের কারণ।
Ø অবৈধ সন্তান বৃদ্ধি পায়।
Ø বংশ বা গোত্রের মর্যাদা ক্ষুণ হয়।
সূত্র: মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস-৯৮ পৃ.
লেখক : মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব)
ধর্মীয় শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
মোবাইল : ০১৭৩৫-৭৯১৩৮২,০১৮৮৭৭০১৬৫৬
খ। দ্বিতীয় স্তর: তালাক সম্পর্কে নীতিমালা"
০১. ভূমিকা: পারিবারিক জীবনে সম্পর্ক ঠিকে রাখা যখন সম্ভব নয়। তখন শরিয়ত একটি পদ্ধতি রেখেছে তার নাম তালাক। হাদিস শরিফে এসেছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ابغض الحلال الى الله الطلاق.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। “মহান আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছেন তালাক। আবু দাউদ শরীফ
০২. তালাক কাকে বলে:
تعريف و معنى طلاق في معجم المعاني الجامع - معجم عربي عربي
طِلاق: (اسم)
طِلاق : جمع طِّلْق
طَلاَق: (اسم)
الطَّلاقُ : التَّطْلِيقُ
الطلاقُ : الطُّلَقَةُ
الطَّلاقُ (في الشرع) : رَفْعُ قيد النكاح المنعقد بين الزوجين بألفاظ مخصوصة
অর্থাৎ তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া, বন্ধন মুক্ত হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় তালাক অর্থ ‘ নির্দিষ্ট শব্দসমূহ দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহের বাঁধন খুলে দেওয়া’ বা বিবাহের শক্ত বন্ধন খুলে দেওয়া। সূত্র: মুজামু ওয়াফি
০৩. তালাকের প্রকারভেদ:
ফক্বীহ বা ফিক্বাহ শাস্ত্রবিদ গণের মান হুকুমের দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকার:
১। তালাকে রাজঈ- এমন তালাক যা প্রদান করে স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার থেকে। স্বামী ইচ্ছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যতীত নিজের বন্ধনে স্ত্রীকে আনতে পারে। একই স্ত্রীর সাথে নিরিবিলি অবস্থান নেওয়ার দিকে নিরিবিলি আকর্ষন তৎপরতা লিপ্তাক্ত, অথবা খাহেশা সাথে তুর্ক বা বুছা দেওয়া আমি মানসিকতার অবস্থান নির্ধারন রাজাকে মনে মনে মনে করে। উল্লেখ্য যে, সরীহ বা সুস্পষ্ট তালাক (তালাক শব্দ উচ্চারণ) এর মাধ্যমে যে, “তুমি তালাক” বলা হয়েছে “আমি বাধ্যতামূলক তালাক বাধ্যতামূলক। এ সকল শব্দ দ্বারা তালাক প্রকাশ তালাকে রাজঈ পতিত হয়।
২। তালাকে বায়িন: এমন তালাক যা প্রদান করে তার স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার থাকে না। বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া যায়। তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ঐক্যের জন্য (হিলা ব্যতী) নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
উল্লেখ্য যে তালাকের সাথে যদি কোন প্রকার, তাহলে তালাকে বায়িন হয়। যেমন- কেউ বলে, প্রতি তালাকে বায়িন আপনার মনের অকাট্য তালাক৷ তবে তিন তালাকের নিয়ত তিন তালাকই পতিত হবে। অন্যথায় এক তালাকে বায়িন হবে।
৩। তালাকে মুগাল্লাযা: এমন তালাক যার কারণে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে। এ স্ত্রী স্বামী স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ অবস্থান, অঃপর ঐ তার সাথে নিরিবিলি করার পর তালা দলের স্বামী অথবা স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
আমি এর দিক দিয়ে তালাক দুই প্রকার:
১. সুন্নী তালাক। ২. বিদআতি তালাক।
সুন্নী তালাক আবার দুই প্রকার: (ক) আহসান (আহসান তালাক) (খ) হাসান (হাসান তালাক)
(ক) আহসান তালাক- এমন তালাককে বলা হয়, যে নিজের স্ত্রীকে এমন তালে এক রাজঈ তালাক, যে তহুরে তার সাথে অতী করে। তারপর তাকে এই অবস্থার উপর ছেড়ে দেওয়া যাবে এবং তার ইদ্দত শেষ বলবে তিন সাধারণ মাজুরতা শেষ হয়ে যাবে। আর হামেলা হলে সন্তান জন্মগ্রহন করবে। ইদ্দত অতিবাহিত হলে সে আপনাই বায়িন হবে।
(খ) হাসান তালাক- স্ত্রীকে এমন তহুরে তালাক তুমি তোমার সাথে অতী করে। প্রথম তহূরে তাকে এক তালাক। তারপর দ্বিতীয় তালাক তাহূরে। আর তিন তাহুরে তিন তালাক নিতে। (মুহিত ছুরুখসী, আলমগীরী)
(২) একই তহুরে তালাক অথবা তিন তালাক যে তাহূরে অতীব করা হয়েছে সেই তহরে এক তালাক দেওয়া মন্তব্য। যার অতী করা হয়েছে তাকে সাধারণ মাতারজুর সময় এক তালাকবিদকে তালাকে বলা হয়। এরূপ তালাক কার্যকর হবে তবে তালাকদাতা কঠিন গুনাহগার হবে।
০৪. শব্দগত দিক দিয়ে তালাকের প্রকারভেদ:
তালাক তালাক উভয় প্রকার শব্দ ব্যবহার করা হয়
১. তালাকে ছরিহ: পরিষ্কার অর্থ প্রকাশক এবং একার্থবোধক, যাকে তালাকে সরীহ বলা হয়। যেমন- কেউ আহলিয়াকে বলে, “আমি কোন ব্যক্তি তালাক তার বিশ্বাসকে” “আমি আমার আহলিয়াক দাবি।”
২. তালাকে কিয়ানাহ : যার অর্থ পরিষ্কার নয়। তথ্য অর্থের খোলা থাকে। তালাকের অর্থ ও হতে পারে। আবার অন্য অর্থও হতে পারে। যেমন- আহলিয়াকে বলে, কেউ তাকে দুর করে। এই কথার অর্থ তালাক হতে পারে, আবার এই অর্থ হতে পারে, তালাক দেইনি। বর্তমানে আমার আহলিয়াকে আমার কাছে আসতে নিষেধ করেছি। এরূপ শব্দকে কিনায়া বলে। আপনিয়ার আরো অনেক শব্দ আছে। যেমন- কেউ তার আহলিয়াকে বলে, তুমি তোমার বাবার বাড়িতে থাকতে, আমি তোমার খবর নিতে পারবো না, আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার বাড়ি থেকে যাও, দূর যাও ইত্যাদি। এই সব শব্দের দুই অর্থ হতে পারে। তালাকের অর্থ হতে পারে। আবার অন্য অর্থও হতে পারে।
্উত্তর: ক। প্রথম কথা হলো স্ত্রীকে আমভাবে স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার নেই। বরং স্ত্রী বিনাকারণে তালাক চায়লে কঠিক ধমক এসেছে-যেমন,
عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الجَنَّةِ
হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন কষ্ট না হবার পরও স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণও হারাম। তাখরিজ: জামে তিরমিজী-১১৮৭
প্রশ্ন: খ। স্বামীকে তালাক দেওয়ার কোন পদ্ধতি/উপায় আছে কি?
উত্তর: খ। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে, নারীর স্বামীকে তালাক দেওয়া ক্ষমতা নেই, তবে স্ত্রী যদি স্বামী থেকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। ইসলামি পরিভাষায় থাকে খোলা তালাক বলে। যাইহোক কয়েকটি পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো,
প্রথম পদ্ধতি:
খোলা তালাক: খোলা শব্দটি আরবি বাংলা অর্থ হলো, বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিচ্ছিন্ন করা, সম্পর্ক ছেদ করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় খোলা তালাক বলা হয়, কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক। দলিল
:কুরআনের বাণী-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩
অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী (ﷺ) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও। বুখারী-৫২৭৩
ফুকাহয়ে কেরামের মতামত:
وأما ركنه فهو كما فى البدائع: إذا كان بعوض الإيجاب والقبول، لأنه عقد على الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض بدون القبول (رد المحتار-3/441، دار الفكر)
وقد اعتبر الحنفية ركن الخلع هو الإيجاب والقبول، لأنه عقد الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض بدون القبول (الفقه الاسلامى وادلته-9/7015، دار الفكر)
الخلع جائز عند السلطان وغيره، لأنه عقد يعتمد التراضى كسائر العقود، وهو بمنزلة الطلاق بعوض، وللزوج ولاية إيقاع الطلاق، ولها ولاية التزام العوض، فلا معنى لاشتراط حضرة السلطان فى هذا العقد (المبسوط للسرخسى-6/173، دار المعرفة
সারকথা হলো, এ ক্ষেত্রেও স্বামীর অনুমতি লাগবে। সূত্র: রদদুল মুখতার-৩/৪৪১ পৃষ্ঠা, আল-মাসবুত লিল সারাখসি-৬/১৭৩ পৃষ্ঠা
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
প্রচলিত বাংলাদেশ প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার।
এখানে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করে থাকে, তা জেনেশুনে স্বামী উক্ত কাবিন নামার নিচে সাইন করে থাকে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকারপ্রাপ্তা হয়। তখন উপরোক্ত ধারা অনুপাতে স্বামী লিখিত তালাকের শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পাবে।
যদি শর্ত না পাওয়া যায়, কিংবা স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পায় না।
তৃতীয় পদ্ধতি:
উপরে দুটি পদ্ধতি না হলে, পারিবারিকভাবে গ্রাম্য সালিশ বা গ্রহণযোগ্য উলামা সমন্বিত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উক্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
অর্থ: দি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত। সূরা নিসা-৩৫
চতুর্থ পদ্ধতি:
উপরে সব পদ্ধতি যদি ফেল হয় আর স্বামী যদি জালেম/অযোগ্য হয়, তার সাথে সংসার করা সম্ভব না হয়, তাহলে স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা। আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করানো।
সারকথা হলো, তালাক সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে সার্চ অপশনে জিজ্ঞাসা-১৩৬, ২৩৩,২৯১, ২৪০, ১২৩১১, ১২৩৫২ ও ১২৩৭৯ নং দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক