জিজ্ঞাসা-১২৪৪৪:
মোটিভেশন ক্লাস-১০
আসসালামু আলাইকুম।
ইসলামের আলোকে নেতার আনুগত্য করার উপকারিতা ও সুফল সম্পর্কে পাঠ পরিকল্পনা বা নোট থাকলে অনুগ্রহপূর্বক শেয়ার করবেন। তারিখ: ২৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামসুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার এ মোটিভেশন ক্লাসটিকে দুটি স্তরে ভাগ করছি। আনুগত্যের পরিচয় এবং এ সুফল বা উপকারিতা।
ক। প্রথম স্তর:
১। ভূমিকা। মহান আল্লাহ বলেন১
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ-
আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির উপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এ কারণে যে মানুষ আনুগত্যশীল। হজরত আদম (আ.) আল্লাহর নিকটে শিক্ষা গ্রহণ করে তার আনুগত্যের মাধ্যমে ফিরিশতা ও জিন জাতির উপর মর্যাদাবান হয়েছিলেন। আনুগত্য ও ভালবাসা রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় থেকে গভীর হয়। বলা হয়- Love and loyalty runs deeper than blood.
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্থা সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর কোন স্তরে পূর্ণ আনুগত্য না থাকলে সেটা ভালভাবে পরিচালিত হয় না। সেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকে না। ফলে সেখানে কোন কাজ সুচারুরূপে সম্পাদিত হয় না। তাই সর্বস্তরে আনুগত্যের বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪৬ বার আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আনুগত্যতা মানুষকে প্রিয় করে নেয়। যেমন বলা হয়- Blood makes you related loyalty makes you family.
হাদিস শরিফে এসেছে- উবাদা বিন ছামেত (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
بَايَعْنَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِى الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَعَلَى أَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَعَلَى أَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ وَعَلَى أَنْ نَقُولَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا لاَ نَخَافُ فِى اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ.
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতে আনুগত্যের বায়আত নিয়েছিলাম এই মর্মে যে, আমরা নেতার কথা শ্রবণ করব এবং মান্য করব সচ্ছল অবস্থায় হোক অথবা অসচ্ছল অবস্থায় হোক। আনন্দে হোক অথবা অপছন্দে হোক। সন্তুষ্ট অবস্থায় হোক অথবা অসন্তষ্ট অবস্থায় হোক। আমাদের উপরে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে হোক। আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কখনো ঝগড়া করব না।২
২। উদ্দেশ্য্। আনুগত্যের পরিচয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের মাধ্যমে সামরিক জীবনে বাস্তবায়ন করা।
৩। আনুগত্য-এর আভিধানিক অর্থ । আনুগত্য শব্দটি সংস্কৃত, অর্থ হলো বশ্যতা, বাধ্যতা, অনুসরণ, অনুবর্তন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি।৩ ইংরেজিতে প্রতিশব্দ হচ্ছে- Obey, Hear, Listen, Respect, Honour, Administer, Constancy, Adherence, Obedience, Fidelity. আর আরবিতে প্রতিশব্দ হলো-اطاعة الخضوع الانقياد الاتباع الاستسلام ৪
৪। আনুগত্যের পারিভাষিক সংজ্ঞা। আনুগত্য বলতে এমন এক মানসিকতা যার মধ্য দিয়ে কারও কোন কিছুর প্রতি অনুরাগ ও সমর্থন ফুটে ওঠে; যা পরিবার, চাকুরির ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা, ধর্মীয় অথবা বহুত্ববাদী সমাজে যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রদর্শিত হয়। আনুগত্য স্বভাবতই আত্মস্বার্থ বহির্ভূত একটি আসক্তি।
৫। মনীষীদের দৃষ্টিতে আনুগত্য। বিশ্বের জনপ্রিয়, বিখ্যাত মনীষীগণ আনুগত্য সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। নিম্নে কয়েকজনের উক্তি উল্লেখ করা হল।
ক। আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত কবি স্যামুয়েল বার্কলি বেকিট (জন্ম-১৯০৬,মৃত্যু-১৯৮৯) বলেন, Samuel said, “Has the Lord as great delight in burnt offerings and sacrifices, as in obeying the voice of the Lord? Behold, to obey is better than sacrifice, and to listen than the fat of rams.
খ। ফরাসি বিজ্ঞানী জন কে (জন্ম-১৭০৪,মৃত্যু-১৭৭৯) বলেন, “For God so loved the world, that he gave his only Son, that whoever believes in him should not perish but have eternal life. For God did not send his Son into the world to condemn the world, but in order that the world might be saved through him.
৬। বিভিন্ন ধর্মে আনুগত্য। প্রতিটি ধর্মই সৃষ্টিকর্তা, ধর্মগুরু ও বড়দের আনুগত্যের কথা বলেছেন।
ক। খৃস্টান ধর্মে আনুগত্য। যিশু তার ঈশ্বরের অনুগত ছিলেন। যিশু বলেন, পিতামাতা, ভাইবোন ও গুরুজনের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য কর। বাইবেলে বলা হয়েছে- আমার পাশাপাশি কারও আনুগত্য (উপসনা) করো না। আমার আনুগত্য করতে গিয়ে কোন প্রতিমুর্তি তৈরি করো না।৫
খ। হিন্দু ধর্মে আনুগত্য। বেদে বলা হয়েছে- যারা প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের আনুগত্য করে তারা অন্ধকারে প্রবেশ করেছে। আর যারা সৃষ্টি জিনিস এর আনুগত্য করে তারা অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে।৬
গ। বৌদ্ধ ধর্মে আনুগত্য। বৌদ্ধ ধর্মে সংঘ জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিয়ম-বিধি অনুসরণে একাগ্রতা, গুরুর প্রতি আনুগত্য করা।
৭। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আনুগত্য। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নিষেধ মান্য করা এবং তারা যাদেরকে মান্য করতে বলেছেন; তাদেরকে মেনে চলাকে আনুগত্য বা ইতাআত বলে। আনুগত্যের বিপরীতটি নাফরমানি করা, বিশ্বাসঘাতকতা, হুকুম অমান্য করা।
খ। দ্বিতীয় স্তর:
৮। ভূমিকা । ধর্ম পালন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর কোনো স্তরে আনুগত্য না থাকলে সেটা ভালোভাবে চলবে না, সেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকবে না। ফলে সেখানে কোনো কাজ সুচারুরূপে পরিচালিতও হবে না। তাই সর্বস্তরে আনুগত্যের কোনো বিকল্প নেই।
৯। নেতা বা ওলামা-ফোকাহায়ে কেরামের আনুগত্য । নেতার বা ওলামা-ফোকাহায়ে কেরামের আনুগত্য করাও ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ- হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের।৩৯
১০ । ‘উলিল আমর’ –এর পরিচয়। ‘উলিল আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই হজরত ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ ও হাসান বসরি (রহ.) প্রমুখ মুফাসসেরগণ ওলামা ও ফোকাহা সম্প্রদায়কে উলিল আমর সাব্যস্ত করেছেন। তাঁরাই হচ্ছেন মহানবী (ﷺ)-এর নায়েব বা প্রতিনিধি। তাঁদের হাতেই দ্বীনী ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব অর্পিত।
ক। মুফাসসেরীনের অপর এক জামাআত –যাদের মধ্যে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন- বলেছেন যে, উলিল আমর –এর অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত।
খ। এছাড়া তাফসীরে –ইবনে কাসীর এবং মাজহারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ শব্দটির দ্বারা ওলামা ও শাসক (নেতা) উভয় শ্রেণীকেই বুঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাঁদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত।৪০
১১। নেতার আনুগত্যের সীমারেখা। নেতা বা কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর নাফরমানির আদেশ দেয়,তাহলে এ ক্ষেত্রে তার আদেশ মানা যাবে না। যেমন, হাদীস শরীফে এসেছে- ৯ম হিজরির রবিউস সানি মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতে পারলেন যে, হাবশার কিছু নৌ-দস্যু জেদ্দা তীরবর্তী এলাকায় সমবেত হয়ে মক্কা আক্রমণের চক্রান্ত করছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শক্রদের চক্রান্তের কথা ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই হজরত আলকামা (রা.) তিনশত সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দ্বীপে পৌঁছে দেখলেন দস্যুরা তাদের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছে। আলক্বামা পলাতকদের বিরুদ্ধে আব্দুল্লাহ বিন হুযাইফাকে সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। হুযায়ফা রাস্তায় এক স্থানে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি একটি অগ্নিকুন্ড তৈরী করেন এবং তাঁতে সৈন্যদের ঝাঁপ দিতে বলেন। সৈন্যরা ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলে তিনি বললেন,أَمْسِكُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَإِنَّمَا كُنْتُ أَمْزَحُ مَعَكُمْ، থাম! হে সৈন্যগণ! আমি তোমাদের সাথে ঠাট্টা করছিলাম। মদীনায় এসে একথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জানালে তিনি বললেন,لَوْ دَخَلُوْهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ যদি তারা আগুনে প্রবেশ করত তাহলে তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সেখানেই থাকত। এরপর তিনি বলেন, لاطاعة في معصية الله إنما الطاعة في المعروْف আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল ন্যায় কর্মে।৪১
হাদিসে বলা হয়েছে,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ، ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ، ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﺴﻤﻊ ﻭﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻴﻤﺎ ﺃﺣﺐ ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻻ ﻳﺄﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﻼ ﺳﻤﻊ ، ﻭﻻ ﻃﺎﻋﺔ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মুসলমানদের উপর নেতার আদেশ শোনা ও মানা অপরিহার্য কর্তব্য। চাই সে আদেশ তার পছন্দনীয় হোক, আর অপছন্দনীয় হোক। তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহর নাফরমানিমূলক কোন কাজের নির্দেশ হয় তবে সেই নির্দেশ শোনা ও মানার কোন প্রয়োজন নেই।৪২
হাদীস শরীফে এসেছে-
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﺎﻳَﻌْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻌُﺴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻴُﺴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻨْﺸَﻂِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻜْﺮَﻩِ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﺛَﺮَﺓٍ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻧُﻨَﺎﺯِﻉَ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺗﺮﻭﺍ ﻛﻔﺮﺍ ﺑﻮﺍﺣﺎ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻴﻪ ﺑﺮﻫﺎﻥ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻧَﻘُﻮﻝَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺃَﻳْﻨَﻤَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻻَ ﻧَﺨَﺎﻑُ ﻓِﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْﻣَﺔَ ﻻَﺋِﻢٍ
হজরত আবু অলিদ ওবাদা ইবনে ছামেত (রা.) বলেন, আমরা নিম্নোক্ত কাজগুলোর জন্যে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলাম: ১. নেতার আদেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে- তা দুঃসময়ে হোক,আর সুসময়ে হোক। খুশীর মুহূর্তে হোক, আর অখুশীর মুহূর্তে হোক। ২. নিজের তুলনায় অপরের সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ৩. ছাহেবে আমরের সাথে বিতর্কে জড়াবে না, তবে হ্যাঁ, যদি নেতার আদেশ প্রকাশ্য কুফরীর শামিল হয় এবং সে ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যথেষ্ট দলিল প্রমাণ থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। ৪. যেখানে যে অবস্থাতেই থাকি না কেন হক কথা বলতে হবে। আল্লাহর পথে কোন নিন্দুকের ভয় করা চলবে না।৪৩
১২। নেতা বা বিজ্ঞ আলেমদের আনুগত্যের গুরুত্ব।
ক। নেতার আনুগত্য মানেই আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য। যেমন, রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيْرَ فَقَدْ أَطَاعَنِى، وَمَنْ يَعْصِ الأَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِى- যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল, আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল”। ৪৪
খ। দলীল-প্রমাণ না থাকা। আমীরের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলে কিয়ামতের দিন তার কোন দলীল থাকবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ যে ব্যক্তি তার হাতকে আনুগত্য থেকে মুক্ত করে নিল, সে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমন অবস্থায় যে, তার কোন দলীল থাকবে না।৪৫
১৩। আনুগত্যের পূর্বশর্ত। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে এবং নবী (ﷺ) হাদিসে যত জায়গায় এই আয়াত উল্লেখ করেছেন, তার প্রায় সব জায়গাতেই এই আয়াতের আগে سمع শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যার শাব্দিক অর্থ হলো শোনা, শ্রবণ করা। বলা হয়েছে ﺍﺳﻤﻌﻮﺍ ﻭ ﺍﻃﻴﻌﻮا শোন এবং মান ﺳﻤﻌﻨﺎ ﻭ ﺍﻃﻌﻨﺎ শুনলাম এবং মানলাম।
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻟِﻴَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻃَﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ ﺍﻟﻨﻮﺭ : 51) )
ঈমানদার লোকদের কাজতো এই যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ডাকা হবে- যেমন রাসূল তাদের মামলা মুকাদ্দমার ফায়সালা করে দেয় তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।৪৬
মুমিনদের একমাত্র পরিচয় হলো যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে কোন ফরমান শুনার জন্যে ডাকা হয় তখন তাদের মুখ থেকে মাত্র দুটি শব্দই উচ্চারিত হয়। একটা হলো, আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম; দ্বিতীয়ত হলো, মাথা পেতে এই নির্দেশ মেনে নিলাম। এইরূপ দ্বিধাহীন নির্ভেজাল আনুগত্যই সাফল্যের চাবিকাঠি।
১৪। আনুগত্য ও তওবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাবূক যুদ্ধে ৫০ দিন অতিবাহিত করে বিজয়ী বেশে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় ফিরে প্রথমে মসজিদে নববীতে দুরাকআত নফল ছালাত আদায় করে সাধারণ জনগণের সাথে দেখা করার জন্য বসেন। এ সময় ৮০ জন লোক যুদ্ধে গমন না করার জন্য ওযর পেশ করে ক্ষমা নিয়ে চলে যায়। আনছারদের তিন জন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব স্রেফ সাময়িক বিচ্যুতির কারণে যুদ্ধে গমন থেকে পিছিয়ে ছিলেন। (১) কাব বিন মালেক (২) মুরারাহ বিন রবী (৩) হেলাল বিন উমাইয়া। তারা তিন জন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কাছে গিয়ে সত্য কথা বলে ক্ষমা চান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ক্ষমার বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে বয়কট করেন। আপনজন, বন্ধু-বান্ধব, কেউ তাদের দিকে ফিরে তাকায় না। কথাও বলে না, সালাম দিলে জবাব দেয় না। মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। এই দুর্বিসহ জীবনে দুঃখ-বেদনায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম। ৪০ দিনের মাথায় তাদের স্ত্রীগণও তাদের থেকে পৃথক হয়ে পিতার বাড়ী চলে যায়। জীবনের এই সংকটাপন্ন অবস্থায় তারা সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কেঁদে কেঁদে বুক ভাষায়। কাব বলেন, এটাও আমার জন্য একটি পরীক্ষা। তিনি পত্রটা জ্বলন্ত চুলায় নিক্ষেপ করে দুনিয়ার সমস্ত সম্মান আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে ওয়াসওয়াসা দানকারী শয়তানকে পরাজিত করে আমীরের আনুগত্য ও তওবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অতঃপর আল্লাহ তার আনুগত্য ও ধৈর্য দেখে খুশি হয়ে আয়াত নাযিল করেন,
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِيْنَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ-
আর ঐ তিন ব্যক্তির প্রতি, যারা (জিহাদ থেকে) পিছনে ছিল। অবশেষে প্রশস্ত পৃথিবী তাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠল। আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ ব্যতীত তাদের আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি সদয় হলেন যাতে তারা ফিরে আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও অসীম দয়ালু।৪৭
আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত এই তিনজন বিখ্যাত আনছার সাহাবি হলেন, কাব বিন মালেক (রা.), মুরারাহ বিন রবী (রা.) ও হেলাল বিন উমাইয়া (রা.)। দীর্ঘ ৫০ দিন পরে তাদের তওবা কবুল হয়। এই দিনগুলিতে রাসূল (ﷺ) সহ সকল সাহাবি তাদেরকে বয়কট করেন এবং কথাবার্তা ও যাবতীয় লেনদেন বন্ধ রাখেন।
১৫। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সুফল।
ক। নেককার আজাজিল ইবলিস হলো কিভাবে। আমরা জানি শয়তান অভিশাপ্ত হওয়ার পূর্বে নেককার ছিল। কিন্তু যখন হজরত আদম (আ.) আল্লাহর নিকটে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ফেরেশতা ও জিন জাতির উপর মর্যাদাবান হয়েছিলেন। কিন্তু ইবলীস তার প্রভুর হুকুম না মেনে আনুগত্যহীন হয়ে অভিশপ্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيْسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ، قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ، قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيْهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِيْنَ-
অতঃপর ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর। তারা সকলে সিজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। আল্লাহ বললেন, এ স্থান থেকে তুমি নেমে যাও। এখানে তুমি অহংকার করবে, তা হবে না। অতএব তুমি বের হয়ে যাও। তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।২৯
ইবলীসের মধ্যে উপরোক্ত ঘৃণিত দোষগুলি থাকার কারণে আল্লাহ বললেন,اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُوْمًا مَدْحُوْرًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِيْنَ- তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। (জেনে রেখো) তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নামকে পূর্ণ করব।৩০
খ। সফলতা ও কামিয়াবী হাছিল । আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত হবে। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا- আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে ব্যক্তি মহা সাফল্য অর্জন করে।৩১
গ। আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত লাভ। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে হেদায়াত লাভ হয়। আল্লাহ বলেন,قُلْ أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْا- বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তার দায়িত্বের জন্য তিনি দায়ী এবং তোমাদের দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য কর তাহলে তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।৩২
ঘ। জান্নাতে প্রবেশ করা। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে জান্নাত লাভ হয়, যা মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই মুমিন সদা সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো মহা সফলতা।৩৩
ঙ। নবী-রাসূল ও শহীদদের সান্নিধ্য লাভ। যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা পরকালে নবী-রাসূল, শহীদ, ছিদ্দীক ও সৎকর্মশীলদের সাথে থাকবে। আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيْقًا- বস্ত্তত যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সাথী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আর এরাই হলেন সর্বোত্তম সাথী।৩৪
চ। আমল নষ্ট হয়ে যাবে । এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের ইরশাদ হচ্ছে-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺒْﻄِﻠُﻮﺍ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻜُﻢْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের অনুসরণ কর আর নিজেদের আমল বিনষ্ট করো না।৩৫
এই আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র এবং নাযিলের পরিবেশের দৃষ্টিতে এর অর্থ দাঁড়ায়, আনুগত্যহীনতা সমস্ত নেক আমলকে বরবাদ করে দেয়। নবী (ﷺ) এর পেছনে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়েছে তারাই যখন যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ অমান্য করল, তাদের সমস্ত আমল ধূলায় মিশে গেল। আল্লাহ তাদেরকে মুনাফিক নামে ঘোষণা করলেন।
ছ। রাসূল -এর অনুসরণ করা হলো আল্লাহর ভালোবাসা লাভের পূর্বশর্ত। ইরশাদ হচ্ছে- قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘হে রাসূল আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু। হে রাসূল আপনি বলে দিন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ করো।৩৬
জ। সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে? হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كُلُّ أُمَّتي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَن أَبَى، قالوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَن يَأْبَى؟ قالَ: مَن أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَن عَصَانِي فقَدْ أَبَى. আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল; সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হলো- সে অস্বীকার করল।৩৭
বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। নবী করিম (ﷺ)-এর প্রকৃত উম্মতগণ জান্নাতে যাবে, কিন্তু যারা নবী করিম (ﷺ)-কে মানবে না অথবা অস্বীকার করবে তাদের কী হবে? অপরদিকে যারা রাসূল (ﷺ)-কে অনুসরণ করছে তারা কতটা করবে? এ ধরনের কিছু প্রশ্ন আমাদের সামনে আসে। সুতরাং আমরা এ সংক্রান্ত আলোচনা কোরআন-হাদিসের আলোকে উপস্থাপন করছি।
হাদিসের প্রথম অংশ ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে’ এ অংশের সঙ্গে মানুষের অনেক কিছু জড়িত। তবে এ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথমে যে বিষয়টা এসেছে তা হলো, ‘যে আমার আনুগত্য করল।’ এই আনুগত্যের দাবি হলো- নবী করিম (ﷺ) দীর্ঘ ২৩ বছরে কোরআনের যত নির্দেশনা পেয়েছেন এবং নিজের বিবেকবুদ্ধি প্রয়োগ করে যে সব কাজ করেছেন তা সবই নিজের পরিমণ্ডলে বাস্তবায়ন করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলেন, ‘রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’
ঝ। রাসূলের বিচার না মানলে মুমিন হওয়া যাবে না। হজরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্য করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর নির্দেশনা এসেছে কোরআনে কারিমে। নবী করিম (ﷺ)এর কোনো ফয়সালা, নিয়মাবলী ও কার্যাবলীর ব্যাপারে সামান্যতম কোনো ভিন্নতার মনোভাব পোষণ করলে তারা মুমিন হিসেবে গণ্য হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ‘না, হে মুহাম্মদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনও মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্যে যেকোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে।৩৮
২০। উপসংহার। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাজ হলো তার ইবাদত ও আনুগত্য প্রকাশ করা। মহান স্রষ্টা মানুষের মাঝে হাত, পা, চোখ, মুখ, নাক, কান, জিহ্বাসহ অগণিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কারণে আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা। আনুগত্যশীল বান্দার সফলতা হচ্ছে জান্নাত।
নোট: উপরে রেফারেন্স নং ধারাবাহিক মিল নেই। কারণ হলো আমার লেখা এক মোটিভেশন ক্লাস থেকে কপি করেছি। নিচের তথ্যসূত্রের রেফারেন্স নং এর সাথে মিলালেই হবে।
তথ্যসূত্র
১। সূরা নিসা-৫৯
২। মুসলিম-৪০৭৪; মিশকাত-৩৬৬৬
৩। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
৪। আল-মুজামুল ওয়াফি
৫। লুক-২/৫১;ইফি-৬/১
৬। ইয়াজুর বেদ,অধ্যায়-৪০,ধারা-৯
৭। সূরা আনআম-১৬২
৮। সুরা বাকারা : আয়াত ২০৮
৯। তফসীরে রুহুল মাআনি
১০। সূরা ইমরান-১০২
১১। ইবন কাসীর
১২। বুখারি-৭১৪৩; মুসলিম-১৮৪৯
১৩। সূরা আহযাব-৪৮
১৪। সূরা ফুরকান-৫২
১৫। সূরা আলে ইমরান-১০০
১৬। সূরা আনআম-১১৬
১৭। সূরা কলম-৮
১৮। কলম-১০
১৯। সূরা কাহ্ফ-২৮
২০। সূরা আহযাব-৩৬
২১। সূরা আলে ইমরান-১০০
২২। বাকারা-২১৭
২৩। সূরা নিসা-১৪
২৪। সূরা মুহাম্মাদ-৩২
২৫। সূরা নিসা-৫৯
২৬। সূরা লোকমান-১৫
২৭। সূরা আশ-শুআরা-১৫০
২৮। সূরা নিসা-৮০
২৯। সূরা আরাফ ,১১-১৩
৩০। সূরা আরাফ -১৮
৩১। সূরা আহযাব-৭১
৩২। সূরা নূর-৫৪
৩৩। সূরা নিসা-১৩
৩৪। সূরা নিসা-৬৯
৩৫। সূরা মুহাম্মদ-৩৩
৩৬। সূরা ইমরান-৩১
৩৭। সহিহ বুখারি-৭২৮০
৩৮। আন নিসা: ৬৫
৩৯। সূরা নিসা-৫৯
৪০। তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত)- ২৬০ পৃষ্ঠা, মুফতি শফি (রহ.), মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কর্তৃক অনূদিত
৪১। বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম-১৮৪০; যাদুল মাআদ পৃঃ ৪৫০
৪২। বুখারী-৭১৪৪; মুসলিম-১৮৩৯; তিরমিজি-১৭০৭; আবু দাউদ-২৬২৬
৪৩। বুখারী ও মুসলিম
৪৪। বুখারী-২৯৫৭, ৭১৩৭; মুসলিম-১৮৩৫; মিশকাত-৩৬৬১
৪৫। মুসলিম-১৮৫১; মিশকাত-৩৬৭৪
৪৬। আন নূর: ৫১
৪৭। তওবা-১১৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক