জিজ্ঞাসা-১২৬৭৮:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
উপপত্নী বলতে কি বুঝায়?
তারিখ: ১৬/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মৌলবি আবুল বাশার বরিশাল থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আভিধানিক অর্থ: উপপত্নী শব্দটি বাংলা উপসর্গ "উপ" (সাদৃশ্যার্থে) সহযোগে গঠিত হয়েছে।
ব্যুৎপত্তিগত দিক লক্ষ্য করলে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়, স্ত্রী সদৃশ। অর্থাৎ এমন নারী, যে স্বীয় পত্নী (বধূ) না হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে স্ত্রী সুলভ আচরণ ( যৌনাচার) করা হয়ে থাকে।
বাংলা অভিধানগুলোতে শব্দটির অর্থ লিখেছে- অবৈধ প্রণয়িনী, রক্ষিতা, গোপন অভিসারিণী, ইত্যাদি। ইংরেজীতে শব্দটির প্রতিশব্দ হলো, Concubine। আরবীতে, যার সাথে এই জাতীয় (extramarital affairs) বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক বজায় রাখা হয়, তাকে বলা হয়ে থাকে- خدن (ج) أخدان
আরবি প্রতিশব্দ হলো সুরাইয়া, কুরআনের ভাষায়, মালাকুন ইয়ামিন (ملك يمين) যেমন, পবিত্র কুরআনে শব্দটি মোট ১৫ বার "মা মালাকাত আইমানুকুম" এসেছে। অর্থ হলো দাসী।
পারিভাষিক অর্থ: বিবাহ ছাড়া যাকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করা হয় তাকে উপ-পত্নী বলে।
ইসলামী পরিভাষায়, আকদ ও মোহর ব্যতিত অধীনস্থ দাসীর সাথে স্ত্রী স্বরূপ আচরণ (সহবাস) করাকে উপপত্নী বলে।
উল্লেখ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু'জন উপ-পত্নী ছিল। যেমন,
০১. রায়হান বিনতে জায়েদ (উপপত্নী)
০২। মারিয়া আল-কিবতিয়া (উপপত্নী)
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে -
আয়াত নং -০১
إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না। সূরা মাআরিজ -৩০
আয়াত নং -০২
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ
হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন। সূরা আহযাব -৫০
প্রশ্ন: ক। দাসী হলেই কি তাকে উপ-পত্নী হিসেবে বা তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে?
উত্তর: ক। না, ইসলাম দাসী বা অধীনস্থ দাসী হলেই তার সাথে সহবাস করার অনুমতি দেননি বিভিন্ন শর্ত মোতাবেক অনুমতি দিয়েছে। নিচে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হলো:
০১. দাসীর মালিক হওয়ার আগে সহবাস জায়েজ নেই। যেমন,
দিরার বিন আল আজওয়ার ভুলক্রমে বণ্টনের আগেই একজন বন্দীনীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হোন।
তারপর অনুতপ্ত হয়ে খালিদ (সেসময় প্রধান সেনাপতি) কে বলেন উমার (রাঃ) কে এবিষয়ে চিঠি লিখতে। উমার (রাঃ) ফিরতি চিঠিতে তাকে রজমের মাধ্যমে হত্যা করতে বলেন।
উল্লেখ্য, এই চিঠি পৌঁছানোর আগেই দিরার মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাখরিজ: সুনানে বায়হাকি আল- কুবরা-১৮২২২
০২. বিবাহিত দাসীর সাথে সহবাস জায়েজ নেই। যেমন,
(۲۹۱۵۲) حَدَّثَنَا عِیسَی بْنُ یُونُسَ ، عَنِ ابْنِ أَبِی عَرُوبَۃَ ، عَنْ قَتَادَۃَ ، عَنْ رَجَائٍ ، عَنْ قَبِیصَۃَ بْنِ ذُؤَیْبٍ ؛ أَنَّ رَجُلاً وَقَعَ عَلَی جَارِیَتِہِ وَلَہَا زَوْجٌ ، فَضَرَبَہُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ مِئَۃً نَکَالاً۔
এক লোক তার দাসীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় যে কিনা আরেকজনের সাথে বিবাহিত ছিলো। তখন উমর (রাঃ) সেই লোকটিকে ১০০ বেতের শাস্তি দেন। তাখরিজ: তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা -২৯১৫১
০৩. পিতা যে দাসীকে ব্যবহার করেছে পুত্রের জন্য ঐ দাসী হালাল নয়।
০৪. এই আইন একই সাথে বিবাহের ও মালিকানা লাভের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দুই বোনকে একসাথে স্ত্রী (বিবাহ) হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন না, একইসাথে উপপত্নী (বাঁদী থেকে) হিসাবেও গ্রহণ করতে পারবেন না। সূত্র: ইসলাম ওয়ে ফাতওয়া নং -৬১৯৯৭
০৫. এক নারীর যেমন দুই স্বামী জায়েজ নেই, তেমনি এক দাসী দুই মালিকানাধীন হলে, কারও সাথে সহবাস করা জায়েজ নয়। যেমন,
ইবনে ক্বুদামা আল-মাকদাসি (মৃ ৬২০) লিখেছেন,
কোনো একাধিক মালিকানাধীন দাসীর সাথে সঙ্গম জায়েজ নয়। সূত্র: আল- মুগনি
প্রশ্ন: খ। ইসলামে দাসীর সাথে মনিবের সঙ্গমের অনুমতি কেন?
উত্তর: খ। প্রথম কথা হলো, আল্লাহ আলিম। তিনি শ্রেষ্ঠ বিচারক। তিনি কেন কোনো কাজ করবেন সেটা আমরা জানি না, শুধু ধারণাই করতে পারি।
ফুক্বাহায়ে কেরামের মতে অধিনস্থ দাসীর সাথে সঙ্গমের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাব্য কারণঃ
সীর সতীত্ব রক্ষা, যাতে তারা ব্যভিচারে না জড়ায়।
মনিবেরও বিশুদ্ধতা/সতীত্ব রক্ষা।
মনিবের সন্তানের জন্ম দিয়ে যাতে উম্মে ওয়ালাদ আইনের মাধ্যমে মুক্ত হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি। সূত্র: আল-মাওসু’আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ ১১/২৯৭
তবে চাইলে দাসীর সাথে সঙ্গম থেকে বিরত থেক শুধুমাত্র পরিচারিকা হিসেবেও রাখা যায়।
সারকথা হলো, উপপত্নী বলতে দাসীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে শর্ত মোতাবেক সহবাস অনুমতিত।
উল্লেখ্য যে, দাসপ্রথা ইসলামের উদ্ভাবন নয়, বরং দাসপ্রথা অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। ইসলাম একদিকে সমাজে প্রচলিত অমানবিক দাসপ্রথাকে নিজ আওতার ভেতরে মানবিক করতে সচেষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে নানাবিধভাবে দাসমুক্তকরণের পথ উন্মুক্ত করেছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক