আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৩৪৫: আমাদের দেশে প্রচলিত বিতর নামাজের দলিল আছে কি?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৩৪৫

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,

সম্মানিত মুফতি মহোদয়ের নিকট নিম্নের মাসয়ালাটির জবাব দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি

 

 বাংলাদেশে প্রচলিত বিতির নামাজ এবং জানাযার নামাজ এবং ছয় তাকবিরে ঈদের নামাজের সহিহ হাদিসের দলীল দিয়ে উত্তর প্রদান করলে উপকৃত হব। তারিখ৯/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

মাওলানা মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নোয়াখালি  থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, জানাযা নামাজ এবং ঈদের নামাজের তাকবির সম্পর্কে জবাব দেওয়া হয়েছে। তবুও শেষাংশে লিংকটি আবার শেয়ার করা হবে ইনশাল্লাহ।

দ্বিতীয় কথা হলোবিতর নামাজ নিয়ে মতভেদ নতুন কিছু নয়। আয়িম্মায়ে মুজতাহিদগণের মধ্যে এখতেলাফ রয়েছে। বিধায় বর্তমান সময়ে তাদের অনুসারিগণের মধ্যে মতভেদ দেখা দিচ্ছে। সুতরাং যে যার অনুসারি সেভাবে আমল করবেবড়াবাড়ি করা যাবে না।  নিম্নে বিতর নামাজের হুকুমপদ্ধতিরাকাত সংখ্যার নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রাখি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين

 

প্রশ্ন  ক। বিতর নামাজের হুকুম কি অর্থাৎ সুন্নাত না ওয়াজি ও  পদ্ধতি কি?

উত্তরক।  ফুকাহায়ে আহনাফের মতে বিতর নামাজ ওয়াজিব। বাকি ইমামদের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন,

 

صلاة الوتر عند المذهب الحنفي واجبة، والواجب في المذهب الحنفي يأتي بأقل من الفرض، وعدد ركعات صلاة الوتر ثلاث ركعات بتسليمة واحدة، ويقرأ في كل ركعة بسورة الفاتحة وسورة أخرى من القرآن الكريم، فإذا انتهى المصلي من القراءة في الركعة الثالثة عليه أن يرفع يديه، ويكبر كما يكبر في تكبيرة الإحرام، ثم يقرأ بدعاء الاستفتاح

অর্থাৎ হানাফি মাজহাবের মতে বিতরের নামায ওয়াজিবএবং হানাফি মাজহাবে যা ওয়াজিব তা ফরযের চেয়ে হালকা/কম এবং বিতর নামাযের রাকাত সংখ্যা এক সালামের সাথে তিন রাকাতএবং প্রতি রাকাতে।  তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা আল ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করেন। যদি নামাজি তৃতীয় রাকাতে পাঠ শেষ করে তবে তাকে অবশ্যই তার হাত উঠাতে হবে এবং সে তাকবীর বলে শুরু করার তাকবীর বলে তারপর সে তেলাওয়াত করে---  সূত্রআলফিকহু আলালা মাজাহিবিল আরবাআ-৩০৫ পৃ.

 

এর হুকুম সম্পর্কে হাম্বলি মাজহাবের ইমাম হজরত ইবনু কুদামা রহ. বলেন,

قال أبو حنيفة : هو واجب . ثم قال :  قال أحمد : من ترك الوتر عمدا فهو رجل سوء ، ولا ينبغي أن تقبل له شهادة ، وأراد المبالغة في تأكيده لما قد ورد فيه من الأحاديث في الأمر به ، والحث عليه

আবু হানিফা বলেছেনএটি ওয়াজিব। এরপর তিনি বলেনআহমাদ বলেছেনযে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বিতিরের নামায পড়ে না সে একজন খারাপ লোক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। এ বিষয়ের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদানকারী অনেক হাদিস বর্ণিত হওয়ার কারণে তিনি জেনে-বুঝে এর উপর জোর তাগিদ দিয়েছেন। সূত্রআল-মুগনি ১ খণ্ড৮২৭ পৃ.

 

হানাফি মাজহাবের দলিল:

হাদিস নং-০১

يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ ، أَوْتِرُوا ، فَإِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ

হজরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ  বলেছেন,ওহে আহলে কুরআনতোমরা বিতর (বেজোড়) নামায আদায় কর। কারণ নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন- বেজোড়। তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন। তাখরিজআবু দাউদ-১৪১৬ নাসায়ি- ১৮৭৮; ইবনে মাজাহ-১১৬৯


হাদিস নং-০২

الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا

অর্থহজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ   বলেছেনবিতর নামাজ অপরিহার্য। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর নামাজ অপরিহার্য। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর নামাজ অপরিহার্য। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাখরিজআবু দাউদ-১৪২১


হাদিস নং-০৩

مَنْ نَامَ عَنْ وِتْرِهِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّهِ إِذَا ذَكَرَهُ

অর্থআবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ   বলেছেনযে ব্যক্তি নিদ্রা বা ভুলের কারণে বিতরের নামায আদায় করে নাইসে যেন তা স্মরণ হওয়ার পরপরই আদায় করে নেয়। তাখরিজআবু দাউদ-১৪৩১

 

উপরোক্ত  হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বিতর নামাজকে ওয়াজিব বলেছেন।  কেননা, প্রথম হাদিসে আমর আদেশসূচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আর আমর হলো ওয়াজিবের জন্য। দ্বিতীয় হাদিসে সরাসরি আবশ্যক বলেছেন এবং ধমক এসেছে। তৃতীয় হাদিসে, সুন্নাত-নফল নামাজের কাজা হয় না বা আদায় করা জরুরি নয়। কিন্তু বিতর ওয়াজিব বিধায় কেউ যদি সময় মত না পড়ে তাহলে কাজা করতে হয়।

 

বিতর নামাজের দুআ কুনুতের দলিল:


سألتُ أنس بن مالك رضي الله عنه عن القنوت في الصَّلَاةِ، فَقَالَ: نَعَمْ، فَقُلْتُ: كَانَ قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قُلْتُ: فَإِنَّ فُلَانًا أَخْبَرَنِي عَنْك أَنَّكَ قُلْتَ بَعْدَهُ؟ قَالَ: كَذَبَ إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا أَنَّهُ كَانَ بَعَثَ نَاسًا يُقَالُ لَهُمْ الْقُرَّاءُ – وَهُمْ سَبْعُونَ رَجُلًا – إِلَى نَاسٍ مِنْ الْمُشْرِكِينَ – وَبَيْنَهُمْ وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَهْدٌ – قِبَلَهُمْ، فَظَهَرَ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَانَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَهْدٌ، فَقَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا يَدْعُو عَلَيْهِمْ تعليق-١٢

অর্থ:  আসিম আহ্ওয়াল বলেন: আমি হযরত আনাস রা. কে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনহ্যাঁ কুনূত আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম রুকুর আগে না পরেতিনি বললেন: রুকুর আগে। বললাম একজন আমাকে বলল: আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেনতিনি বললেন: সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী () শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন। (যা ছিল মূলত কুনূতে নাযেলা)। তাখরিজ: সহীহ বুখারি-.৪০৯৬

 

এ ব্যাপারে লা-মাযহাবীদের আস্থাভাজন আলেম স্বয়ং নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব বলেন:
وذلك أنه قد صح عنه صلى الله عليه وآله وسلم أنه كان يقنت في الوتر قبل الركوع كما يأتي بعد حديثٍ، ويشهدُ له أثار كثيرة عن كِبار الصحابة كما سنُحققه في الحديث الآتي بإذن الله تعالى. والخلاصة أن الصحيح الثابت عن الصحابة هو القنوت قبل الركوع في الوتر وهو الموافق للحديث الآتي، انتهى من إرواء الغليل للألباني (۲/۱٦٦)

অর্থ:… সহীহ সূত্রে প্রমাণিত আছে নবীজী ()বিত্র নামাযে রুকুর পূর্বে কুনুত পড়েছেন। যার আলোচনা একটি হাদীস পরেই আসবে। উপরন্তু বিশিষ্ট্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত অনেক আছার এর বিশুদ্ধতার জন্য দলিল। … সারকথা হলসাহাবীদের থেকে সহীহ সূত্রে এটিই প্রমাণিত যেবিত্রের কুনূত রুকুর পূর্বে। সূত্র: ইরওয়াউল গালীল ২/১৬৬

 

প্রশ্ন:   খ। বিতর নামাজ রাকাত সংখ্যা কত?

উত্তরখ। ফিকহি হানাফির মতে বিতর নামাজের রাকাতের সংখ্যা তিন। দলিল:

 

হাদিস/আসার নং-০১

 سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَأَلَ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا، قَالَتْ عَائِشَةُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ‏.‏ فَقَالَ ‏ "‏ يَا عَائِشَةُ، إِنَّ عَيْنَىَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ

অর্থ: বু সালামাহ্‌ ইবনে আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনরমযান মাসে আল্লাহ্‌র রাসূল ()-এর সালাত কেমন ছিলতিনি বললেনআল্লাহ্‌র রাসূল () রমযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাকআতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করতেনএর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাকআত (বিত্‌র) সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলামহে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি কি বিত্‌রের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেনতিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দুটি ঘুমায়কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। তাখরিজ: বুখারি-১১৪৭সহীহ মুসলিম-৭৩৮সুনানে নাসায়ি-১৬৯৭সুনানে আবু দাউদ-১৩৩৫মুসনাদে আহমদ- ২৪০৭৩

 

হাদিস/আসার নং-০২

قلت لعائشة بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالتكان يوتر بأربع وثلاثوست وثلاثوثمان وثلاثوعشر وثلاثولم يكن يوتر بأنقص من سبعولا بأكثر من ثلاث عشرة.

আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস (রহ.)  বলেনআমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যেনবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন উত্তরে তিনি বলেনচার এবং তিনছয় এবং তিনআট এবং তিনদশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। তাখরিজসুনানে আবু দাউদ-১৩৫৭তহাবী শরীফ ১/১৩৯মুসনাদে আহমদ-২৫১৫৯

 

নোট: আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ. باب كيف صلاة الليل, كتاب التهجد)- এ লেখেন- هذا أصح ما وقفت عليه من ذلك, وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة في ذلك. والله أعلم আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব। সূত্র: ফাতহুল বারি- ৩/২৬

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল রাসূল () কখনো তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত পড়তেনকখনো ছয় রাকাত পড়তেন। কখনো আট রাকাত পড়তেন। কখনো দশ রাকাত পড়তেন। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন।

 

হাদিস/আসার নং-

عن عائشة رضي الله تعالى عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاثٍ، لا يسلم إلا في آخرهن

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ () তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেনআমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। তাখরিজ: মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন-১১৮১


হাদিস/আসার নং-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُوتِرُ بِثَلاَثٍ يَقْرَأُ فِي الأُولَى بِـ ‏(‏سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى)‏ وَفِي الثَّانِيَةِ بِـ ‏(‏قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)‏ وَفِي الثَّالِثَةِ بِـ ‏(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)‏ أَوْقَفَهُ زُهَيْرٌ ‏.‏

হুসায়ন ইবনু ঈসা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসুলুল্লাহ () তিন রাকআত বিতেরের সালাত আদায় করতেন। প্রথম রাকআত –“সাব্বিহিস্‌মা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে কুলহুয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-১৭০৫;  ইবন মাজাহ-১১৭২

 

হাদিস/আসার নং-

عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْوَتْرِ بِـ ‏(‏سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى)‏ وَفِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ بِـ ‏(‏قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)‏ وَفِي الثَّالِثَةِ بِـ ‏(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)‏ وَلاَ يُسَلِّمُ إِلاَّ فِي آخِرِهِنَّ وَيَقُولُ يَعْنِي بَعْدَ التَّسْلِيمِ ‏"‏ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ ‏"‏ ‏.‏ ثَلاَثًا ‏.‏

অর্থ: ইয়াহইয়া ইবনু মুসা (রহঃ) ... উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসুলুল্লাহ () বিতরের সালাতে সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং শেষ রাকআতে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। আর শুধুমাত্র শেষ রাকআতেই সালাম ফিরাতেন অর্থাৎ সালামের পর তিনবারسُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ বলতেন। তাখরিজ:  সুনানে নাসায়ি-১৭০২, ইবন মাজাহ-১১৭২; তিরমিজি-৪৬২

 

হাদিস/আসার নং-

قال: قال أنس: يا أبا محمد خذ عني فإني أخذت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم, وأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الله, ولن تأخذ عن أحد أوثق مني, قال: ثم صلى بي العشاء, ثم صلى سب ركعات يسلم بين الركعتين, ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن (الروياني وابن عساكر, ورجاله ثقات, كما في كنز العم

অর্থাৎ প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী রাহ.বলেনআমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেনহে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ ()থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েনতা এভাবে যেপ্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। তাখরিজ:  কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭হাদীস ২১৯০২ আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাতকিসমুল আফআল

 

নোট:  মুসনাদে রুয়ানীতারীখে ইবনে আসাকিরইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেনএই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য

 

হাদিস/আসার নং-

كان أبي بن كعب يوتر بثلاث لا يسلم إلا في الثالثة مثل المغرب. تعليق-٥

অর্থ:  হাসান বছরী র. বলেন: হযরত উবাই ইবনে কাব রা. তিন রাকাতে বিত পড়তেন এবং তাতে মাগরিবের মতই তৃতীয় রাকাতের আগে সালাম ফিরাতেন না। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৫৯-৪৬৬০

নোট:  এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য

 

বিরুদ্ধবাদীদের জবাব:

 

যারা বিতর নামাজ এক রাকাত পড়ে তাদের অন্যতম দলিল হলো এই হাদিস

 যেমন-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ لاَ تُوْتِرُوْا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ وَلاَ تُشَبِّهُوْا بِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ () বলেছেনতোমরা (মাগরিবের ছালাতের ন্যায়) তিন রাকআত বিতর পড় নাপাঁচসাত রাকআত পড়। আর মাগরিবের ছালাতের ন্যায় আদায় কর না। তাখরিজ: দারাকুৎনী ২/২৪ পৃঃ   ত্বাহাবী হা/১৭৩৯ 


প্রথম কথা হলো, সরাসরি এ হাদিসের বিপরীত হাদিস/আসার রয়েছে। যেমন,

হাদিস/আসার নং-০১
الوتر كصلاة المغرب.تعليق-٦

অর্থ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন:: বিত নামায মাগরিবেরই অনুরূপ। মুয়াত্তা মুহাম্মদ পৃ.১৫০ কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/১৩৬


হাদিস/আসার নং-০২

عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : صلاة المغرب وتر النهار فأوتروا صلاة الليل تعليق-٢

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন:
রাসূলুল্লাহ (
) বলেন: দিনের বিত্র হল মাগরিবের নামায। তোমরা রাতের নামাযকেও অনুরূপ বিত করে পড়। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ হা.৪৮৪৭ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য: শুয়াইব আরনাউত। ইবনে আবী শাইবা ৪/৪ হা.৬৭৭৩৬৭৭৮ 

 

হাদিস/আসার নং-০৩

سألت عبد الله بن عمر رضي الله عنهما عن الوتر؟ فقال : أَتَعْرِفُ وِتْرَ النَّهَارِ؟ قُلْتُ : نَعَمْ ، صَلَاةُ الْمَغْرِبِ قَالَ : صَدَقْتَ أَوْ أَحْسَنْتَ . تعليق-٤

অর্থ: উক্বা ইবনে মুসলিম বলেন:
আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে জিজ্ঞেস করলাম: বিত নামায পদ্ধতি সম্পর্কে। তিনি বললেন: তুমি দিনের বিত চেন নাবললাম হাঁমাগরিবের নামায। বললেনঠিক বলেছ। (রাতের বিতও ঠিক এরকমই)। [তহাবী ২/১৯৭]


দ্বিতীয় কথা হলো, মাগরিবের মত বিতর পড় না অর্থাৎ মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে- لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب, ولكن أوتروا بخمس, أو بسبع, أو بتسع, أو بإحدى عشرة ركعة, أو أكثر من ذلك. তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো নাএতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবেবরং পাঁচসাতনয়এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। তাখরিজ: মুস্তাদরাকে হাকেম -১১৭৮সুনানে কুবরা বাইহাকি ৩/৩১৩২


প্রশ্ন: গ। প্রতি দুই রাকাতে তাশাহুদ পড়তে হয়, এর কোন দলিল আছে?

উত্তর: গ। হ্যাঁ, দলিল আছে। যেমন,

হাদিস/আসার নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ، - يَعْنِي الأَحْمَرَ - عَنْ حُسَيْنٍ الْمُعَلِّمِ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - قَالَ أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ الْمُعَلِّمُ، عَنْ بُدَيْلِ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.....وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসুলুল্লাহ () প্রতি দু-রাকআত পর পর আত-তাহিয়্যাতু পড়তেন এবং বাম পা বিছিয়ে রাখতেন আর ডান পা খাড়া করে রাখতেন। তাখরিজ: মুসলিম- ৯৯৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন,মিশকাত- ৭৯১


হাদিস/আসার নং-০২

أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ بْنُ الْحُبَابِ الْجُمَحِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ وَمُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ قَالَا: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو إِسْحَاقَ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّهُ قَالَ: كُنَّا لَا نَدْرِي مَا نَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ نُسَبِّحَ وَنُكَبِّرَ وَنُحَمِّدَ رَبَّنَا وَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُلِّمَ فَوَاتِحَ الْخَيْرِ وَخَوَاتِمَهُ أَوْ قَالَ جَوَامِعَهُ فَقَالَ: " إِذَا قَعَدْتُمْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، فَقُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ "

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘‘আমরা জানতাম না প্রতি দু’ রাকাতে কী বলা হবে। তবে আমরা আমাদের রবের তাসবীহতাকবীর ও হামদ করতাম। (আল্লাহর নবী হযরত) মুহাম্মাদ () আমাদেরকে দান করেছেন সকল কল্যাণের শিক্ষা। তিনি বললেন, ‘যখন তোমরা দুই রাকাতে বসবে তখন বলবে-আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ ... তাখরিজ: ইবনে হিব্বান-১৯৫১,মুসনাদে আহমদ-৪১৬০

 

হাদিস/আসার নং-০৩

أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ بْنُ الْحُبَابِ الْجُمَحِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ وَمُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ قَالَا: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو إِسْحَاقَ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّهُ قَالَ: كُنَّا لَا نَدْرِي مَا نَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ نُسَبِّحَ وَنُكَبِّرَ وَنُحَمِّدَ رَبَّنَا وَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُلِّمَ فَوَاتِحَ الْخَيْرِ وَخَوَاتِمَهُ أَوْ قَالَ جَوَامِعَهُ فَقَالَ: " إِذَا قَعَدْتُمْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، فَقُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ "

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘‘আমরা জানতাম না প্রতি দু’ রাকাতে কী বলা হবে। তবে আমরা আমাদের রবের তাসবীহতাকবীর ও হামদ করতাম। (আল্লাহর নবী হযরত) মুহাম্মাদ আমাদেরকে দান করেছেন সকল কল্যাণের শিক্ষা। তিনি বললেন, ‘যখন তোমরা দুই রাকাতে বসবে তখন বলবে-আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ ...’’ তাখরিজ: ইবনে হিব্বান-১৯৫১মুসনাদে আহমদ-৪১৬০


সারকথা হলো, বিতর নামাজ ওয়াজিব, দুই বৈঠকে, এক সালামে এবং রাকাত সংখ্যা হলো তিন। স্বয়ং ইমাম ইবনে  তাইমিয়া রহ. বলেন:
فإنه قد ثبت أن أبي بن كعب كان يقوم بالناس عشرين ركعة في رمضان ويوتر بثلاث، فرأى كثير من العلماء أنَّ ذلك هو السنة، لأنه أقامه بين المهاجرين والأنصار ولم ينكره منكر، كذا فى الفتاوى الكبرى (২/২৪৫)

অর্থ: বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিতহযরত উবাই ইবনে কাব রা. তাঁর ইমামতিতে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবীহঅতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তাই অনেক উলামা মনে করেন তারাবীহর এটিই প্রকৃত সুন্নত। কারণ তিনি অনেক মুহাজির-আনছারের সামনে এ নামায পড়েছেন। তাঁদের কেউই এর বিরোধিতা করেননি বা একে ভুল আখ্যা দেননি। সূত্র: আল-ফাতাওয়াল কুবরা:২খণ্ড; ২৪৫পৃ.

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক