জিজ্ঞাসা-১২৬৬১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মসজিদের ভিতরে কুকুর প্রবেশ করলে শরিয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতার্থ হবো।
মাওলানা মো.আব্দুস সালাম সিদ্দিকী সিলেট।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, وذهب الحنفية في الأصح عندهم إلى نجاسة سؤره وطهارة بدنه، وذهب المالكية إلى طهارة سؤره وبدنه
ফিকহি হানাফির মতে, কুকুরের শরীর পাক কিন্তু লালা নাপাক এবং ফিকহি মালিকির মতে, কুকুরের শরীর ও লালা উভয় পাক। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, হুকমুল কালবি মিন হায়সুল নাজাসা ওয়া আদামিহা -৪৯৯৩ ( ফতোয়া নং)
ফিকহি হানাফির দলিল:
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، حَدَّثَنِي حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ ابْنُ عُمَرَ كُنْتُ أَبِيتُ فِي الْمَسْجِدِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكُنْتُ فَتًى شَابًّا عَزَبًا وَكَانَتِ الْكِلاَبُ تَبُولُ وَتُقْبِلُ وَتُدْبِرُ فِي الْمَسْجِدِ فَلَمْ يَكُونُوا يَرُشُّونَ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ .
আহমাদ ইবনে সালেহ্ .... হামযা ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সময় মসজিদে ঘুমাতাম। ঐ সময় আমি অবিবাহিত যুবক ছিলাম তখন কুকুর প্রায়ই মসজিদের অঙ্গণে যাতায়াত করত এবং পেশাব করে দিত। সাহাবায়ে কিরামগগ এই পেশাবের উপর পানি ঢালতেন না।* তাখরিজ: আবু দাউদ -৩৮২; ইবনে খুযাইমা -৩০০; সহীহ ইবনে হিব্বান -১৬৫৬
ব্যাখ্যা: এ হাদিস থেকে বুঝা যায় কুকুরের শরীর পাক এবং প্রসাব তো নাপাক, মসজিদ ধৌত না করার কারণ হলো মাটি শুকে গেলে পাক হয়ে যায়।
প্রশ্ন: ক। কুকুর মসজিদে প্রবেশ করলে মসজিদ কি নাপাক হয়ে যাবে?
উত্তর: ক। যেহেতু কুকুরের শরীর পাক, তাই মসজিদ ধৌত করা জরুরি নয়। কিন্তু যদি তার লালা মসজিদে পতিত হয়, তাহলে মসজিদ ধৌত করা জরুরি।
প্রশ্ন: খ। কতবার ধৌত করা জরুরি?
উত্তর: খ। কুকুর যদি কোন পাত্রে মুখ দেয় অথবা কোন জায়গায় তার লালা পতিত হয়, তাহলে ৩ বার ধৌত করা জরুরি, ৭ বার উত্তম এবং প্রথম বার মাটি বা ডিটারজেন্ট পাউডার ( সাবান, হুইল) দিয়ে ধৌত করতে হবে। দলিল:
হাদিস নং -০১
إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي الإِنَاءِ فَاهْرِقْهُ ثُمَّ اغْسِلْهُ ثَلاثَ مَرَّاتٍ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কুকুর পাত্রে মুখ দেয় তখন পাত্রের বস্তুটি ফেলে দাও, তারপর পাত্রটি তিনবার ধুয়ে নাও। তাখরিজ: দারাকুতনী ১৬৫
হাদিস নং -০২
شَرِبَ الْكَلْبُ فِيْ اِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْتَسِلْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ
আবু হুরায়রা রযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর পানি পান করে, তখন সে যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয়। (বুখারী ১৭২, মুসলিম ২৭৯)
হাদিস নং -০৩
وَحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " طُهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أُولاَهُنَّ بِالتُّرَابِ " .
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর মুখ লাগিয়ে পান করবে তখন সে পাত্র পবিত্র করার পদ্ধতি হল সাতবার তা ধূয়ে ফেলা। প্রথম বার মাটি দিয়ে (ঘষা)।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৪ (আন্তর্জাতিক নং ২৭৯-৪)
সারকথা হলো, কুকুরের লালা নাপাক কিন্তু কুকুরের শরীর নাপাক নয়। সুতরাং কুকুর যদি কারো শরীর, কাপড় ছুঁয়ে দেয় অথবা কোন মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে তা নাপাক হবে না, যদিও কুকুরের শরীর ভেজা থাকে। আর কুকুরের গায়ে যদি নাপাকী লেগে থাকে সেটা ভিন্ন কথা।
শেষ কথা হলো, কুকুরের শরীর শরিয়তের দৃষ্টিতে নাপাক না হলেও, মসজিদটি ধৌত করা উত্তম। কেননা অনেক সময় কুকুরের শরীরে জীবাণু বহন করে।
জার্মান চিকিৎসাবিদ নুললর বলেছেন, কুকুরের জীবাণুর দরুন মানবদেহে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তার সংখ্যা শতকরা ১-এর কম নয় কিছুতেই। আর কোনো কোনো দেশে শতকরা ১২ পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৯ এপ্রিল,২০১৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক