আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭০৫: দত্তক বা অন‍্যের শিশু সন্তান পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭০৫:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

অন‍্যের শিশু সন্তান পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা কি?

তারিখ:  ০৩/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা আশরাফুল ইসলাম যশোর  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে শর্ত হলো প্রকৃত পরিচয় গোপন করে নয়। ফোকাহায়ে কেরাম সন্তান দত্তক নেওয়া বা না নেওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন,


التبني للأطفال على قسمين : ممنوع ، وغير ممنوع .

أما الممنوع : فهو تبني الطفل باعتبار أنه ولد للمتبني له أحكام الولد ، فهذا لا يجوز ، وقد أبطله الله في القرآن في قوله تعالى : ( وما جعل أدعياءكم أبناءكم ) الأحزاب/4 .


وقسم مباح وقد يكون مستحباً ، وهو الإحسان إلى الطفل ، وتربيته التربية الدينية الصالحة ، وتوجيهه التوجيه السليم ، وتعليمه ما ينفعه في دينه ودنياه ، ولكن لا يجوز أن يسلم إلا لمن عرف بالأمانة والديانة وحسن السلوك ، وتحققت مصلحة الطفل عنده ، وأن يكون من أهل البلاد بحيث لا يذهب به إلى بلد قد يكون وجوده فيها سبباً لفساد دينه في المستقبل ، فعليه إذا تمت في حق كل واحد منهما هذه الشروط المذكورة فلا بأس بدفع اللقيط المجهول النسب إليه . والله يحفظكم

অর্থাৎ, কোন শিশুকে পালকপুত্র হিসেবে দত্তক গ্রহণ করার বিধান দুইরকম হতে পারে- ১) নিষিদ্ধ ২) বৈধ।


নিষিদ্ধঃ পালকপুত্রকে যদি নিজ ঔরসজাত সন্তানের মতোই মনে করা হয়ে থাকে, নিজসন্তানের ক্ষেত্রে যেসকল বিধান প্রযোজ্য, ( যেমন - উত্তরাধিকার সম্পত্তির প্রাপ্যতা, মাহরাম সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান প্রভৃতি) সেই বিধানগুলো যদি দত্তকপুত্রের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা সুনিশ্চিতভাবেই অবৈধ হবে। এই জাতীয় প্রথাকে বাতিল ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেন, " তোমাদের পালক পুত্রদেরকে তিনি তোমাদের প্রকৃত পুত্রের মর্যাদা দান করেননি।" (সূরা আহযাব-৪)


বৈধঃ পক্ষান্তরে কোন অসহায় শিশুর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তার প্রতি স্নেহময় আচরণ করা, তাকে দ্বীনি আবহে লালন-পালন করে বড় করে তোলা, যথাযথভাবে শিষ্টাচারের শিক্ষাদান করা, উভয়জগতে তার উপকারে আসবে এমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা, ইত্যাদি শুধু জায়েযই নয়, বরং তা মুস্তাহাব এবং প্রশংসনীয়ও বটে। 

       উল্লেখ্য যে, নাম-পরিচয়হীন কোন শিশুকে কুড়িয়ে পাওয়া গেলে, তার দায়িত্বগ্রহণের জন্য যাচাই-বাছাই না করে যার তার নিকট বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করা যাবেনা। বরং তার দায়িত্বেই ন্যস্ত করতে হবে, যিনি একাধারে দায়িত্বশীলতা, আমানতদারিতা, ধর্মপরায়ণতা ও উত্তম শিষ্টাচার সম্পন্ন হবেন, যার তত্ত্বাবধানে শিশুটি প্রতিপালিত হয়ে বেড়ে উঠলে সে একজন আদর্শ ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়। 

   প্রকাশ থাকে যে, অভিভাবকত্বের দায়িত্বগ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিটি সেই দেশেরই অধিবাসী হতে হবে। কারণ তিনি যদি ভীনদেশী হয়ে থাকেন, তাহলে এমন আশংকা থেকেই যায় যে, শিশুটিকে নিয়ে তিনি এমন দেশে পাড়ি জমাবেন, যেখানকার রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি শিশুর ধর্মপরায়নতাকে ভবিষ্যতে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।


অতএব যার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত শর্তগুলোর প্রতিটি পরিপূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে, তার অভিভাবকত্বেই নাম-পরিচয়হীন কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে অর্পন করা যাবে।


দ্বিতীয় কথা হলো, এতিম-অনাথ ও গরিব শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে ইসলাম উত্সাহিত করে। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। দলিল:

হাদিস নং -০১

سهل بن سعد رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا"، وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا

নবী করিম (ﷺ)  ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব।  তাখরিজ: বুখারি-৬০০৫


হাদিস নং -০২

নবী করিম (ﷺ) বলেন,  ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন। ’  তাখরিজ: তিরমিজি- ১৯১৭


সারকথা হলো, দত্তক বা অন‍্যের শিশু সন্তান পালন ইসলামের একটি স্বীকৃত বিষয় ‌‌।  স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দত্তক বা পালক সন্তান গ্রহণ করেছিলেন । যা সূরা আহযাবের ৪-৫ আয়াতে উল্লেখ আছে। শেষের প্রশ্নের জবাবে তা উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক