আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

মোটিভেশন ক্লাস -১৪: জিজ্ঞাসা -১২৬৯৪: ইসলামের আলোকে সীমান্ত পাহারা।

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৬৯৪: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। " ইসলামিক জীবনে দেশ রক্ষার গুরুত্ব ও সৈনিক জীবন "

উক্ত বিষয়ের লেসন প্ল্যান এর ওয়ার্ড অথবা পিডিএফ ফাইল থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

তারিখ:  ২৬/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা  কামরুল হাসান, সাভার থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো


দেশ রক্ষা/সীমান্ত পাহারা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে’- এ মূলমন্ত্র ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। 


দেশ রক্ষা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:


স্বদেশ প্রেমের চেতনা ও দেশাত্মবোধের প্রতি ইসলাম মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, বরং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন এবং দেশমাতৃকাকে সুরক্ষায় জীবনদানকে শাহাদাতের সম্মানজনক মর্যাদা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের সফল পদচারণ ঘটেছে, নিঃসন্দেহে তাঁরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। দেশ ও জাতির জন্য আত্মনিবেদিত মানুষ সমাজের চোখে যেমন মহাসম্মানিত, তেমনি আল্লাহর কাছেও বিরাট গৌরবময় মর্যাদার অধিকারী। 

যেমনভাবে পবিত্র কোরআনে বদরের যুদ্ধে নিহত শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে,


وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ

অর্থ: আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। সূরা বাকারা-১৫৪


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ: হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। সূরা ইমরান-২০০


মুরাবাতাহ অর্থ হলো, ঘোড়াকে বাধা এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় এ শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ঃ


(এক) ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্তের হেফাযতে সুসজ্জিত হয়ে থাকা অপরিহার্য, যাতে ইসলামী সীমান্তের প্রতি শত্রুরা রক্তচক্ষু তুলে তাকাতেও সাহস না পায়। এটিই রিবাত ও মুরাবাতাহ এর বিখ্যাত অর্থ। 


(দুই) কুরআন ও হাদীসে রিবাত দ্বিতীয় যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তা হচ্ছে, জামাআতের সাথে সালাত আদায়ে খুবই যত্নবান হওয়া এবং এক সালাতের পরই দ্বিতীয় সালাতের জন্য অপেক্ষামান থাকা। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের সংবাদ দিব না, যা করলে তোমাদের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং তোমাদের মর্যাদা বুলন্দ হবে? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, তা হচ্ছে, কষ্টকর স্থান বা সময়ে অযুর পানি সঠিকভাবে পৌছানো, মসজিদের প্রতি বেশী বেশী পদক্ষেপ এবং এক সালাতের পরে অপর সালাতের অপেক্ষায় থাকা। আর এটিই হচ্ছে, রিবাত। [মুসলিম: ২৫১]


বাস্তবে উভয় অর্থের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। প্রথম অর্থটি মানব শয়তানদের বিরুদ্ধে জিহাদের অংশ। আর দ্বিতীয় অর্থটি জিন শয়তানদের বিরুদ্ধে এক অমোঘ অস্ত্র। সুতরাং আয়াতে উভয় অর্থই গ্রহণ করা যেতে পারে।




হাদিস নং-০১

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا العَبْدُ في سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى أَوِ الغَدْوَةُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا متفقٌ عليه

অর্থ: হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, আল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, পৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারও একটি বিগ পরিমাণ জান্নাতের স্থান, দুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। বুখারি-২৮৯২, মুসলিম ৪৯৮২-৪৯৮৩


হাদিস নং-০২

عَنْ سَلمَانَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُرِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الفَتَّانَ رواه مسلم

অর্থ: হজরত সালমান (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, একদিন ও একরাত সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, একমাস ধরে (নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাহলে তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, যা সে পূর্বে করত এবং তার বিশেষ রুযী চালু ক’রে দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিৎনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা হতে মুক্ত রাখা হবে। তাখরিজ: মুসলিম-৫০৪৭


হাদিস নং-০৩

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُعَيْنَانِ لاَ تَمسُّهُمَا النَّارُ : عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبيلِ اللهِرواه الترمذي وقال حديث حسن

অর্থ: হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি যে, দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে। তাখরিজ: তিরমিযী-১৬৩৯





دَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا حَيْوَةُ بْنُ شُرَيْحٍ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي أَبُو هَانِئٍ الْخَوْلَانِيُّ ، أَنَّ عَمْرَو بْنَ مَالِكٍ الْجَنْبِيَّ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ فَضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ : " كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ، إِلَّا الَّذِي مَاتَ مُرَابِطًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَإِنَّهُ يُنْمَى لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَيَأْمَنُ، مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ ". وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " الْمُجَاهِدُ، مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ ". حكم الحديث: صحيح


অর্থাৎ নবি কারিম (ﷺ)বলেছেন, ‘মৃত ব্যক্তির সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তার আমল বৃদ্ধি পেতে পারে না। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি কোনো ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার আমল কেয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর থেকেও সে বেঁচে থাকবে।’ তাখরিজ: তিরমিজি- আবু দাউদ-


এসব বর্ণনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রিবাত বা সীমান্ত রক্ষার কাজটি সদকায়ে জারিয়া অপেক্ষাও উত্তম। কারণ, সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার সদকাকৃত বাড়ী-ঘর, জমিজমা, রচিত গ্রন্থরাজি কিংবা ওয়াকফকৃত জিনিসের দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। যখন উপকারিতা বন্ধ হয়ে যায়, তখন তার সওয়াবও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর পথে সীমান্ত প্রহরার সওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। কারণ, সমস্ত মুসলিম সৎকর্মে নিয়োজিত থাকা তখনই সম্ভব, যখন তারা শক্রর আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকবে। ফলে একজন সীমান্তরক্ষীর এ কাজ সমস্ত মুসলিমদের সৎকাজের কারণ হয়। সে কারণেই কেয়ামত পর্যন্ত তার ‘রিবাত’ কর্মের সওয়াব অব্যাহত থাকবে। তাছাড়াও সে যত নেক কাজ দুনিয়ায় করত, সেগুলোর সওয়াবও আমল করা ছাড়াই সর্বদা জারী থাকবে।




মহানবী (ﷺ )বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের চেয়ে আরো একটি পুণ্যময় রাতের খবর তোমাদের দেব কি?’ সাহাবারা জবাব দেন, ‘বলুন ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ তিনি (ﷺ )বললেল, ‘কোনো সৈনিক রাতে এমন কোনো কঠিন ভীতিপ্রদ চৌকিতে দাঁড়িয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে; যে কোনো মুহূর্তে শত্রু উদ্ধত অস্ত্রের আঘাতে তার বক্ষ বিদীর্ণ হতে পারে এবং জীবনে আর স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ নাও আসতে পারে, সে রজনী লাইলাতুল কদরের চেয়েও বেশি বরকতপূর্ণ।’


আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)বলেছেন, লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সেই ব্যক্তির যে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে সবসময় আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য তৈরী থাকে। যেখানেই সে শুনতে পায় কোন বিপদ বা পেরেশানীর কথা সঙ্গে সঙ্গেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাতাসের বেগে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে। হত্যা ও মৃত্যুকে তার পথে তালাশ করতে থাকে। তাখরিজ: মুসলিম



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক