জিজ্ঞাসা-১২৬৬৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শিশুদের মসজিদে গমণের বিধান কি?
তারিখ: ০৮/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, শিশুদেরকে ইসলামি ইবাদত, শিষ্টাচার, আদব -কায়দা, সংস্কৃতি ও শিয়ারে ইসলামের সাথে সংস্থাপন দেওয়া, বিশেষ করে ঈমানের পর ফরজ ইবাদত নামাজের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া, সালাতের আদেশ দেওয়া পিতা-মাতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নিচের আয়াতে কারিমা ও হাদিস শরিফ দ্বারা সুস্পষ্ট হয়।
আয়াত নং -০১
Surah Taha, Verse 132:
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ
আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। সূরা তহা -১৩২
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَعْلَى، عَنْ نَاصِحٍ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لأَنْ يُؤَدِّبَ الرَّجُلُ وَلَدَهُ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ . وَنَاصِحٌ هُوَ ابْنُ الْعَلاَءِ كُوفِيٌّ لَيْسَ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ بِالْقَوِيِّ وَلاَ يُعْرَفُ هَذَا الْحَدِيثُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَنَاصِحٌ شَيْخٌ آخَرُ بَصْرِيٌّ يَرْوِي عَنْ عَمَّارِ بْنِ أَبِي عَمَّارٍ وَغَيْرِهِ هُوَ أَثْبَتُ مِنْ هَذَا .
কুতায়বা (রাহঃ) ......... জারির ইবনে সামুরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সন্তানকে আদব শিক্ষা দেওয়া এক সা‘ পরিমাণ বস্তু সাদ্কা করা অপেক্ষা ভাল। তাখরিজ: তিরমিজি - ১৯৫১
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا عَامِرُ بْنُ أَبِي عَامِرٍ الْخَزَّازُ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ بْنُ مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدًا مِنْ نَحْلٍ أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ عَامِرِ بْنِ أَبِي عَامِرٍ الْخَزَّازِ وَهُوَ عَامِرُ بْنُ صَالِحِ بْنِ رُسْتُمَ الْخَزَّازُ وَأَيُّوبُ بْنُ مُوسَى هُوَ ابْنُ عَمْرِو بْنِ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِي . وَهَذَا عِنْدِي حَدِيثٌ مُرْسَلٌ .
নসর ইবনে আলী (রাহঃ) ......... আইয়ুব ইবনে মুসা তার পিতা তার পিতামহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পিতা তার সন্তানকে ভাল আদব শিক্ষা দেওয়া অপেক্ষা মর্যাদাবান আর কোন জিনিস দান করতে পারেন না। তাখরিজ: তিরমিজি -১৯৫২
প্রশ্ন: ক। বাচ্চাদের মসজিদে গমণের দলিল আছে কি?
উত্তর: ক। বাচ্চাদের মসজিদে গমণের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا أَبُو الوَلِيدِ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ المَقْبُرِيُّ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ سُلَيْمٍ، حَدَّثَنَا أَبُو قَتَادَةَ، قَالَ: «خَرَجَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأُمَامَةُ بِنْتُ أَبِي العَاصِ عَلَى عَاتِقِهِ، فَصَلَّى، فَإِذَا رَكَعَ وَضَعَ، وَإِذَا رَفَعَ رَفَعَهَا»
আবুল ওয়ালীদ (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নবী (ﷺ) আমাদের সামনে এলেন। তখন উমামা বিনতে আবুল আস তার কাঁধের উপর ছিলেন। এমতাবস্থায় নবী (ﷺ) নামাযে দাঁড়ালেনা যখন তিনি রুকুতে যেতেন, তাকে নামিয়ে রাখতেন, আবার যখন উঠে দাঁড়াতেন, তখন তাকেও উঠিয়ে নিতেন। তাখরিজ: ৫৯৯৬
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا الحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُسَيْنِ بْنِ وَاقِدٍ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي بُرَيْدَةَ، يَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُنَا إِذْ جَاءَ الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ عَلَيْهِمَا قَمِيصَانِ أَحْمَرَانِ يَمْشِيَانِ وَيَعْثُرَانِ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ المِنْبَرِ فَحَمَلَهُمَا وَوَضَعَهُمَا بَيْنَ يَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: " صَدَقَ اللَّهُ {إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ} [التغابن: 15] نَظَرْتُ إِلَى هَذَيْنِ الصَّبِيَّيْنِ يَمْشِيَانِ وَيَعْثُرَانِ فَلَمْ أَصْبِرْ حَتَّى قَطَعْتُ حَدِيثِي وَرَفَعْتُهُمَا «.» هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ الحُسَيْنِ بْنِ وَاقِد ق।
হুসায়ন ইবন হুরায়ছ
(রাহঃ)... আব্দুল্লাহ ইবন বুরায়দা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতা বুরায়দা (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) র খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় হাসান ও হুসায়ন আসলেন। তাঁদের গায়ে ছিল লাল দুটো জামা। তারা হ্যাঁটছিলেন আবার পড়ে যাচ্ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বর থেকে নেমে এলেন এবং তাদের দু'জনকে উঠিয়ে নিয়ে সামনে বসালেন। পরে বললেন : আল্লাহ্ তা'আলা সত্যই বলেছেন যে, তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ (সূরা তাগাবুন ৬৪ : ১৫)। এই দুইটি শিশু হেঁটে আসছিল আর পড়ে যাচ্ছিল দেখে আর স্থির থাকতে পারলাম না। এমনকি কথা বন্ধ করেও এদেরকে তুলে নিলাম। তাখরিজ: ৩৭৭৪
প্রশ্ন: খ। বাচ্চাদের মসজিদে গমণের নিষেধাজ্ঞার কোন দলিল আছে কি?
উত্তর: খ। বাচ্চাদের মসজিদে গমণের নিষেধাজ্ঞার দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ السُّلَمِيُّ، حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ نَبْهَانَ، حَدَّثَنَا عُتْبَةُ بْنُ يَقْظَانَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الأَسْقَعِ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " جَنِّبُوا مَسَاجِدَكُمْ صِبْيَانَكُمْ وَمَجَانِينَكُمْ وَشِرَارَكُمْ وَبَيْعَكُمْ وَخُصُومَاتِكُمْ وَرَفْعَ أَصْوَاتِكُمْ وَإِقَامَةَ حُدُودِكُمْ وَسَلَّ سُيُوفِكُمْ وَاتَّخِذُوا عَلَى أَبْوَابِهَا الْمَطَاهِرَ وَجَمِّرُوهَا فِي الْجُمَعِ " .
ওয়াসিলা ইবন আসকা' (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবোধ শিশু, পাগল, দুষ্কৃতকারী, বেচাকেনা, ঝগড়া-বিবাদ, হৈ-চৈ, হদ কায়েম এবং অস্ত্রশস্ত্রের উত্তোলন থেকে হিফাযতে রাখবে। তোমরা ঘরের দরজার কাছে ইস্তিনজার জন্য ঢিলা-কুলূখ রাখবে এবং জুম'আর দিনে শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করবে। তাখরিজ: ৭৫০
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ الْمَهْرِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، حَدَّثَنِي مُعَاذُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ خُبَيْبٍ الْجُهَنِيُّ، قَالَ دَخَلْنَا عَلَيْهِ فَقَالَ لاِمْرَأَتِهِ مَتَى يُصَلِّي الصَّبِيُّ فَقَالَتْ كَانَ رَجُلٌ مِنَّا يَذْكُرُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ " إِذَا عَرَفَ يَمِينَهُ مِنْ شِمَالِهِ فَمُرُوهُ بِالصَّلَاةِ " . -
হিশাম ইবনু সা’দ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা মু’আয ইবনু ’আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব আল-জুহানীর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, শিশু কখন সালাত আদায় করবে? তার স্ত্রী বললেন, আমাদের মধ্যকার জনৈক ব্যক্তি এ বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেনঃ শিশু যখন ডান ও বাম (হাতের) পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে তখন তাকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিবে। তাখরিজ:৪৯৭
প্রশ্ন: গ। উভয় পক্ষের দলিলের সমন্বয় কি?
উত্তর: গ। উভয় পক্ষের দলিলের সমন্বয় হচ্ছে:
বুঝসম্পন্ন শিশুকে মসজিদে নিয়ে আসা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কারণ ছোটবেলা থেকে মসজিদে আসার অভ্যাস, শিশুমনে দারুণ প্রভাব ফেলে। কিন্তু বয়সে নিতান্ত ছোট হওয়ায় যেসব শিশু মসজিদের মর্যাদা ও নামাজের গুরুত্ব বোঝে না, অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে তাদের মসজিদে নিয়ে আসা অনুচিত। কারণ ছোট্ট শিশুদের কারণে মুসল্লিদের নামাজে সাধারণত বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। দলিল:
لا حرج في إحضار الصبي إلى المسجد ، بل ينبغي تعويده ذلك وتشجيعه عليه ، ما لم يكن في حضوره تشويش على المصلين أذى لهم بحركته ولعبه ، فلا ينبغي إحضاره حينئذ ؛ لأن المساجد لم تبن للعب واللهو ، وإنما بنيت للصلاة والخشوع والذكر والطمأنينة ،
শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে আসাতে দোষের কিছু নেই, বরং তাকে এতে অভ্যস্ত হওয়া উচিত এবং তাকে এটি করতে উৎসাহিত করা উচিত, যতক্ষণ না তার উপস্থিতি মুসল্লিদের বিরক্ত না করে এবং তার চলাফেরা ও খেলায় তাদের ক্ষতি না করে, সেক্ষেত্রে সে আনা উচিত নয়; কারণ মসজিদগুলো খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়নি, বরং সেগুলো নামাজ, শ্রদ্ধা, স্মরণ ও প্রশান্তির জন্য নির্মিত হয়েছে। সূত্র: আহকামুল মাসাজিদ -১৪২৩৬৮; শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনজিদ
সারকথা হলো, শিশুদেরকে মসজিদে যাতযাতের অভ্যস করে তোলা অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব, তবে মসজিদের পবিত্রতা সম্পর্কে বেখবর এমন শিশুদের মসজিদে আনা উচিত নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক