আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৬৬: মানুষের মৃত্যুর পর তাদের রুহ ইল্লিয়ীন বা সিজ্জিনে থাকবে এর কোন দলিল আছে?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৬৬৬:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

মানুষের মৃত্যুর পর তাদের রুহ ইল্লিয়ীন বা সিজ্জিনে থাকবে বলে যে জনশ্রুতি আছে তা কোন আয়াতে আছে? দয়াকরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানাবেন।

তারিখ:  ০৯/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা জিয়াউল হক ঢাকা   থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, মানুষের মৃত্যুর পর নেককারদের রুহ ইল্লিয়ীন আর কাফের-মুনাফিক- পাপিষ্ট ব্যক্তিদের সিজ্জিনে থাকবে, কথাটি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত। দলিল:


আয়াত নং -০১

كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٍ

এটা কিছুতেই উচিত নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে। সূরা মুতাফফিফীন-০৭


ব্যাখ্যা: এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ তাফসির কারণ নিম্নের হাদিস শরিফ এনেছেন -

হাদিস/আসার নং -০১

فقال له ابن عباس : حدثني عن قول الله : ( إن كتاب الفجار لفي سجين ) الآية ، قال كعب : إن روح الفاجر يصعد بها إلى السماء ، فتأبى السماء أن تقبلها ، ويهبط بها إلى الأرض فتأبى الأرض أن تقبلها ، فتهبط فتدخل تحت سبع أرضين ، حتى ينتهى بها إلى سجين ، وهو حد إبليس ، فيخرج لها من سجين من تحت حد إبليس ، رق فيرقم ويختم ويوضع تحت حد إبليس بمعرفتها [ ص: 284 ] الهلاك إلى يوم القيامة .

অর্থাৎ,  তখন আব্বাস (রাযি.) তাকে অনুরোধ করে বললেন, আপনি আমাকে আল্লাহর তায়ালার এই বাণীটিব্যাখ্যা করে শোনান- নিশ্চয় পাপাচারী ব্যক্তিদের আমলনামা ( অতীত কর্মবৃত্তান্ত) সিজ্জিনে সংরক্ষিত থাকবে। কা'ব (রাযি.) বলেন,চিরাচরিত প্রথা মোতাবেক মৃত্যুর পর পাপাচারী ব্যক্তির রূহ আসমানের দিকে ঊর্ধারোহন করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আসমান তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। তখন গত্যন্তর না পেয়ে জমিনে অবনমিত করে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের প্রথম স্তর তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। তখন তার এই কলুষিত আত্মাকে যমীনের সপ্তস্তরের নিম্নভাগে নিয়ে ফেলা হয়। যার ফলে তা সিজ্জিনে গিয়ে পতিত হয়। আর এটাই হলো ইবলিসের সীমানা/  আওতাভুক্ত অঞ্চল।  তখন ইবলিসের আওতাভুক্ত অঞ্চল সিজ্জিন থেকে একটি কাগজ বের করে তাতে এই রূহের নাম্বার বসানো হয়, এবং তাতে সীলমোহর এঁটে দেয়া হয়। এবং তা ইবলিসের আওতাভুক্ত রূহের তালিকায় সন্নিবেশিত হয়ে যায়। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ -৪/২৮৭-২৮৮: সুনানে আবু দাউদ -৪/৩৩৭; নাসায়ি -৪/৭৮


হাদিস/আসার নং-০২

ابن عباس، فجلس إلى جنب كعب، فقال: يا كعب أخبرني عن سِجِّين، فقال كعب: أما سجِّين: فإنها الأرض السابعة السفلى، وفيها أرواح الكفار تحت حدّ إبليس.

অর্থাৎ ইবনু আব্বাস (রাযি.) তখন হজরত কা'ব (রাযি.) এর সান্নিধ্যে গিয়ে বসলেন। এবং তাঁকে সম্বোধন করে বললেন, " পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত "সিজ্জিন" এর মর্মার্থ কী"? তখন হজরত কা'ব (রাযি.) বললেন, "   সিজ্জিন হলো, ভূ-পৃষ্ঠের সপ্তমস্তরের সর্বনিম্নভাগ। তাতে  ইবলীসের আওতাভুক্ত সীমানায়  সকল কাফেরের রূহ সংরক্ষিত রয়েছে।" সূত্র: তাফসিরে বাগবি; তাফসিরে তাবারি-৪৮৮ পৃষ্ঠা 


হাদিস নং -০৩

عن زاذان ، عن البراء قال : قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - " سجين " أسفل سبع أرضين ، و " عليون " في السماء السابعة تحت العرش .

অর্থাৎ,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, " কুরআনে উল্লিখিত 'সিজ্জীন'  দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সপ্তম জমীনের সর্বনিম্ন ভাগ। আর কুরআনে উল্লিখিত 'ইল্লিয়্যীন' -এর অবস্থান হলো, আরশের নিম্ন সংলগ্ন সপ্তম আকাশে। সূত্র: তাফসিরে বাগবি -৫৮৮;আলমাউসুআতুল আকাদিয়া-৫/১৫৯


আয়াত নং -০২

كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْأَبْرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ

কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে। সূরা মুতাফফিফীন-১৮


ব্যাখ্যা: এ আয়াত সম্পর্কে মুফাস্সিরগণ নিম্নের হাদিস শরিফ উল্লেখ করেছেন:

قال الأعمش عن شمر بن عطية عن هلال بن يساف قال : سأل ابن عباس كعبا وأنا حاضر عن سجين قال هي الأرض السابعة وفيها أرواح الكفار وسأله عن عليين فقال هي السماء السابعة وفيها أرواح المؤمنين 

অর্থাৎ, অর্থাৎ, আ'মাশ  হযরত শামার থেকে বর্ণনা করেন, হিলাল বিন ইয়াসাফ বলেন, ইবনু আব্বাস  (রাযি.) একবার হজরত কা'ব (রাযি.)কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত " সিজ্জীন" সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। উল্লেখ্য যে, আমিও সেখানে তাঁদের মাঝে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন যে, তা হলো সপ্তম জমীনে, যাতে কাফেরদের রূহ সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। এরপর আবার যখন তাকে "ইল্যিয়্যীন" এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলেন, তখন তিনি বললেন, " তা হলো সপ্তম আসমানে যাতে মুমীনদের রূহ সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।

একাধিক তাফসীরকারগণও এব্যাপারে অভিন্ন মতামত পেশ করে বলেন, " ইল্লিয়্যিন হল সপ্তম আসমানে।"সূত্র: তাফসিরে তাহারই, বাগবি; তাফসিরুল কুরআনিল আজিম -৮/৫৭ 


সারকথা হলো, মানুষের মৃত্যুর পর তাদের রুহ ইল্লিয়ীন বা সিজ্জিনে থাকবে, বলে যে জনশ্রুতি আছে তা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক