জিজ্ঞাসা-১৫৫: কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের পর ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' বলা যাবে কিনা দলীল সহ জানানোর অনুরোধ করছি।
মাওলানা মো: আখতার হোসেন, যশোর থেকে----
জবাব: প্রথম কথা হলো, পবিত্র কুরআন মাজীদ শুরু করতে তা’উস ও তাসমিয়া (আয়ুজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ) পড়তে হবে এ কুরআন-হাদিস নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তেলাওয়াত শেষে কি পড়বে তা সুস্পষ্ট বলা হয়নি।
সুতরাং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের পর ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' বলা জরুরি/ সুন্নাত/মুস্তাহাব মনে করা বিদআত। যেহেতু তা নস দ্বারা প্রমাণিত নয়। দলীল:
নবী (ﷺ) বলেন:
((مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ )). رواه البخاري و مسلم و قال صلى الله عليه وسلم ((مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ )). رواه مسلم.
অর্থ: যে আমাদের দীনে নতুন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যক্ত। ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন: যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যার উপর আমাদের দীন নেই, তা পরিত্যক্ত। সূত্র: বুখারি-মুসলিম; লাজনায়ে দায়েমা: খ.৪, পৃ.১১৮
প্রশ্ন: কেউ যদি ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' জরুরি মনে না পড়ে, তাহলে কি বিদআত?
উত্তর: না, কেউ যদি ''সাদাকাল্লাহুল আজীম''' জরুরি বা সুন্নাহ কিংবা মুস্তাহাব মনে না পড়ে, তাহলে জায়েজ এবং বিদআত হবে না। আমাদের বড়দের থেকে ''সাদাকাল্লাহুল আজীম'' বলা অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেমন,
হাফেয ইবনুল জাযারি রহ. ‘আন-নাশর’ কিতাবে বলেন: আমার কতক শায়েখকে দেখেছি, তারা কুরআন খতম করে বলতেন ( তখন-''সাদাকাল্লাহুল আজীম'' বলতেন):
ربوقال القرطبي في تفسيره: قال الترمذي الحكيم أبو عبد الله في نوادر الأصول: ومن حرمته إذا انتهت قراءته أن يصدق ربه، ويشهد بالبلاغ لرسوله صلى الله عليه وسلم، ويشهد على ذلك أنه حق، فيقول: صدقت رب وبلغت رسلك، ونحن على ذلك من الشاهدين، اللهم اجعلنا من شهداء الحق، القائمين بالقسط، ثم يدعو بدعوات.
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ তার তাফসীরে বলেন: হাকিম তিরমিযি আবু আব্দুল্লাহ ‘নাওয়াদিরুল উসুল’ কিতাবে বলেন: কুরআনুল কারিমকে সম্মান প্রদর্শনের একটি দিক হচ্ছে, তিলাওয়াত শেষে আল্লাহকে সত্যারোপ করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমাদের নিকট দীন পৌঁছিয়েছেন তার সাক্ষ্য প্রদান করা; কুরআন হক এ কথারও সাক্ষ্য প্রদান করা, যেমন বলা:
صدقت رب وبلغت رسلك، ونحن على ذلك من الشاهدين، اللهم اجعلنا من شهداء الحق، القائمين بالقسط، ثم يدعو بدعوات.
এ থেকে আমাদের ধারণা চতুর্থ হিজরিতে এ বাক্যটির প্রচলন ঘটেছে, কারণ তিরমিযি আলহাকিম চতুর্থ শতাব্দির আলেম ছিলেন, তবে তার পূর্বেও এর প্রচলন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ ভালো জানেন।
সূত্র: তাফসির কুরতুবি-১/৪২; ‘নাওয়াদিরুল উসুল’- ইমাম হাকিম তিরমিযি রহ.; হাফেয ইবনুল জাযারি রহ. এর ‘আন-নাশর’
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক