জিজ্ঞাসা-১৩১: দাড়ি কাটা যে কবীরাহ গুনাহ তার দলীল কী? তারিখ-০৮/০৬/২০২২ ইংরেজি
|
মাওলানা মাহবুব কক্সবাজার থেকে
উত্তর। দাড়ি রাখার হুকুম কি? এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। বেতর, দুই ঈদের নামাজ যেমন ওয়াজিব। এ বিষয়ে আলেমদের কোন দ্বিমত নাই।
কুরআনুল কারিম দ্বারা দলিল: আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
আয়াত নং -০১
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ অর্থ: তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি যার উপর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল-সঠিক ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। সূরা রূম-৩০
কাজেই যারা দাড়ি কামায় তারা আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতিতে বিকৃত করে যা হারাম।
(২) أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَ অর্থ: তাঁরা সে সব মানব (নবি-রাসূল) যাদেরকে আল্লাহ তাআলা হেদায়েত দান করেছেন, কাজেই তাদের পথই তোমরা অনুসরণ কর। সূরা আনয়াম-৯০
দাড়ি রাখা এক লাখ চব্বিশ হাজার (এ রকম-বেশি আল্লাহ ভাল জানে) নবি-রাসূলের সম্মিলিত বা ঐক্যমতের সুন্নাত (এ সম্পর্কে ৪নং হাদিস দেখুন)। তাঁদের মুবারক-পবিত্র জামাতের অনুসরণ করতে উক্ত আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাদিসে নববি দ্বারা দলিল:
(১) انْهَكُوا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوا اللِّحَى» অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা গোঁফ বেশী ছোট রাখবে এবং দাড়ি বড় রাখবে। বুখারি-৫৪৬৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
(২) خَالِفُوا المُشْرِكِينَ: وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ অর্থ: তোমরা মুশরিকের বিপরীত কর, দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফকে কর ছোট। বুখারি; মুসলিম-২৫৯ ই.ফা.; মুসনাদে আহমদ-২১২৫২
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন
«وفروا اللحى «
অর্থ: দাড়ি বাড়াও (লম্বা-ঘন কর)। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১০৩।
সুপ্রিয় ভাইগণ। উপরোক্ত তিনটি হাদিসে আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাড়ির লম্বা করতে আমরের সীগা ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করা অবশ্য কর্তব্য/ওয়াজিব। তার দলিল হল পবিত্র কুরআনের এ আয়াতগুলো- (১) وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا অর্থ: রসূল তোমাদেরকে যা দেন; তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন; তা থেকে বিরত থাক। সূরা হাশর-০৭
(২) لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাঝে আছে উত্তম আদর্শ। তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।[৩৩ আল-আহযাব : ২১] ইবনে কাসির রহ. বলেছেন: এই মহান আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতিটি কথা, কাজ ও প্রতিটি মুহূর্ত অনুসরণের ব্যাপারে একটি মহান মূলনীতি। তাফসীরে ইবনে কাসির-৩/৭৫৬
(৩) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর এবং নির্দেশ মান্য কর রসূলের। সূরা নিসা-৫৯
(৪) দাড়ি রাখা আর মোচ কাটা শুধু অমুসলিমদের বিরোধিতাই নয় বরং এটা ফিতরাত বা স্বভাবজাত কাজও। যেমন,
«عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " قَالَ زَكَرِيَّا: قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ زَادَ قُتَيْبَةُ، قَالَ وَكِيعٌ: " انْتِقَاصُ الْمَاءِ: يَعْنِي الِاسْتِنْجَاءَ ».
অর্থ: দশটি বিষয় ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত: মোচ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধৌত করা, বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা, নাভীর নিচের চুল মুণ্ডানো, (হাম্মাম বা বাথরুমের প্রয়োজন পূরণের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি, যদি না তা হয় কুলি করা। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬১।
(৫) আমর ইবন শুয়াইব তার বাবা থেকে, আর তার বাবা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ [ص:57] تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى....
যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (চাল-চলন, বেশ-ভূষায় তাদের অনুকরণ করো না)। তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৯৫,
এ প্রসঙ্গে বোখারী শরিফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেছেন, তৎকালে মোশরেক-মজুসীরা দাড়ি ছেঁটে-কেটে ছোট করে রাখত। তাদের কেহ কেহ সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলত। সুতরাং দাড়ি সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা যে রূপ ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী, তদ্রূপ কেঁটে-ছেটে বিশেষ পরিমাণ হতে ছোট করে ফেলা ও ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী। সূত্র: বোখারি শরিফ -৬ষ্ঠখণ্ড: ২৫০ পৃ.আল্লামা আজিজুল হক রহ.
ইজমা দ্বারা দলিল:
واحدٍ الإجماعَ على ذلك؛ منهم ابن حزم بقولِه: ((واتَّفَقوا أنَّ حَلقَ جميعِ اللِّحيةِ مُثْلةٌ لا تجوزُ)). ولم يعلِّقْ عليه ابنُ تيمية، انظر: (مراتب الإجماع) (ص120)، وانظر: ((الإقناع في مسائل الإجماع)) (2/ 299)،
হাফেয আল্লামা আবু মুহাম্মদ আলি ইবন হাযম (মৃত: ৪৫৬ হি.) বলেন,
اتفق العلماء على أن قص الشارب وإعفاء اللحية فرض.
সমস্ত আলেম একমত যে, মোচ কাটা এবং দাড়ি রাখা ফরয (ওয়াজিব)।
শেখ আলী মাহফুয আল আযহারী বলেন,
وقال الشيخ علي محفوظ من علماء الأزهر: وقد اتفقت المذاهب الأربعة على وجوب توفير اللحية وحرمة حلقها. الإبداع في مضار الابتداع.
৪ মাযহাবের আলেমগণ একমত যে, দাড়িকে ঘন রাখা ওয়াজিব, শেভ করা হারাম।
فإن حلق اللحية محرم عند الحنفية، والمالكية، والحنابلة، ووجه عند الشافعية،
অর্থাৎ হানাফি,মালিকি, হাম্বলি ও শাফিয়ির মতে সেফ করা হারাম। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, ইফাইল লিহইয়াতু-১৪০৫৫
প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকহবিদগণও দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলা বা শেভ করাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।যেমন-
হানাফী মাযহাব:
হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররুল মুখতারে (২য় খণ্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছে,
قال في الدر المختار: ... وأما الأخذ منها وهي دون ذلك كما يفعله بعض المغاربة ومخنثة الرجال فلم يبحه أحد، وأخذ كلها فعل يهود الهند ومجوس الأعاجم. اهـ. انظر الدر المختار مع حاشية ابن عابدين رد المحتار 3/398 طبعة دار الكتب العلمية بتحقيق عادل عبد الموجود وزميله.
পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ি এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা হারাম। যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ি সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইয়াহুদি ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।”মালেকী মাযহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভি আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানি ৮ম খণ্ড ৮৯ পৃঃ)
মালেকী মাযহাব:
المالكية/
قال الحطاب في مواهب الجليل شرح مختصر خليل: وحلق اللحية لا يجوز وكذلك الشارب، وهو مثلة وبدعة، ويؤدب من حلق لحيته أو شاربه إلا أن يريد الإحرام بالحج ويخشى طول شاربه. اهـ. انظر: مواهب الجليل 1/313 طبعة دار الكتب العلمية بتحقيق زكريا عميرات.
১. মালেকী মাযহাব মতেও দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত ছেটে ফেলাও হারাম।
২. মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী আল-মালেকী সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আলমুফহিম এ লিখেন দাড়ি মুণ্ডানো ও উপড়ানো কোনোটাই বৈধ নয়।
৩. মালেকী মাযহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খণ্ড, ৮৯ পৃ.)
শাফেঈ মাযহাব:
قال ابن حجر الهيتمي في تحفة المحتاج: فرع: ذكروا هنا في اللحية ونحوها خصالا مكروهة منها نتفها وحلقها ... لأن ظاهر كلام أئمتنا كراهة الأخذ منها مطلقا... فائدة قال الشيخان [الرافعي والنووي] يكره حلق اللحية، واعترضه ابن الرفعة في حاشية الكافية بأن الشافعي رضي الله عنه نص في الأم على التحريم قال الزركشي وكذا الحليمي في شعب الإيمان وأستاذه القفال الشاشي في محاسن الشريعة وقال الأذرعي الصواب تحريم حلقها جملة لغير علة بها كما يفعله القلندرية
ইমাম শাফেঈ (রহ.) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আলউম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ি কর্তন করা হারাম। শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। হাওয়াশি শারওয়ানি ৯ম খণ্ড ৩৭৬ পৃ.
হাম্বলী মাযহাব:
১. শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেন,
الحنابلة/
قال ابن تيمية كما في الاختيارات: ويحرم حلق اللحية. اهـ.
দাড়ি মুণ্ডানো বা শেভ করা হারাম।
২. ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের মাযহাবের আলেমগণও দাড়ি শেভ করাকে হারাম বলেছেন। দালায়েলুল আ-সার।
কিয়াস দ্বারা দলিল: ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ»
অর্থ: যেসব পুরুষ নারীর সাথে এবং যেসব নারী পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশ-ভূষা গ্রহণ করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত হওয়ার বদ-দোআ করেছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৫; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪০৯৮; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৮৪; নাসাঈ, হাদীস নং ১৯০৪।
প্রিয় বন্ধুগণ! দাড়ি মুণ্ডানোর দ্বারা মহিলাদের সাদৃশ্য নয়?
দাড়ি সম্পর্কে আলেমদের মতামত: দাড়ি বিখ্যাত আলেমদের মতামত নিম্নে তুলে ধরা হল-
(১) ইমাম ইবন আবদিল বার্র রহ. (মৃত: ৪৬৩ হি.) তার তামহীদ কিতাবে বলেন,
يحرم حلق اللحية ولا يفعله إلا المخنثون من الرجال يعني بذلك المتشبهين بالنساء
দড়ি শেভ করা হারাম। আর এ কাজটি মুখান্নাচ বা নারীর বেশ ধারণকারীই করে, কোনো পুরুষের কাজ নয় এটি।
৩- ইমাম কুরতুবী (রহ.) (মৃত: ৬৭১ হি.) বলেন, দাড়ি শেভ করা বা উঠিয়ে ফেলা বা কাট-চাট করে ষ্টাইল করে রাখা নাজায়েয। দাড়ি রাখা, বাড়িয়ে ও ঘন করে রাখা ফরয। দাড়ি শেভকারী তার এ গোনাহকে সবার সামনে প্রকাশ করে, যা অতি কঠিন হারাম কাজ। সহীহ বুখারীর হাদীসে রয়েছে, রাসূল (ﷺ) বলেন,
«كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا المُجَاهِرِينَ،».
আমার উম্মতের সবাইকে আল্লাহর রহমতে মাফ করা হবে, তবে তারা ব্যতীত যারা গোনাহ ও নাফরমানীকে সকলের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়......। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৬৯।
৪- শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেন, قال ابن تيمية كما في الاختيارات: ويحرم حلق اللحية. اهـ.
দাড়ি শেভ করা হারাম।
৫- আবুল হাসান ইবনুল কাত্তান আল মালেকী রহ. বলেন, আলেমরা একমত যে, দাড়ি শেভ করা অঙ্গবিকৃতি করার মতো হারাম কাজ।
৬- সৌদী আরবের সামাহাতুশ শাইখ আল্লামা শায়খ ইবন বায (রহ.) (মৃত: ১৪২০ হি.) বলেন,
حلق اللحية أو قصها كله محرم ممنوع، لا يجوز للمسلم أن يقص لحيته ولا أن يحلقها
দাড়িকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ, ঘণ রাখা ও ছেড়ে দেওয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়। আর দাড়ি মুণ্ডানো (শেভ করা) ও ছোট করা হারাম।
৭- শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. (মৃত: ১৪২১ হি.) বলেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব, তা শেভ করা হারাম (কবীরা গুনাহ)।
৮- আলেমে দীন হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. তাঁর বিখ্যাত ইসলাহুর রুসুম গ্রন্থে লিখেছেন যে সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-আফুল লূহা ওয়া আহ্ফুস্ শাওয়ারেব যার অর্থ: তোমরা দাড়ি বড় কর ও মোচ ছোট কর। রাসূল (ﷺ) করেছেন ছিগায়ে আমর দ্বারা অর্থাৎ হুকুমবাচক ক্রিয়াপদ দ্বারা। আর আমর (আদেশ) হাকীকাতান (মূলত) ওয়াজিবের জন্য ব্যবহার হয়।
প্রশ্ন: ক। দাড়ি কি খাটো না লম্বা এ বিষয়ে কুরআনিক দলিল?
উত্তর: ক।
অনেক ভাই বলে রাসূল (ﷺ) দাড়ি রাখতে বলেছেন, সুতরাং রাখলেই চলবে; লম্বা করা প্রয়োজন নেই। তাদের জবাবে এ আয়াতে পেশ করছি- মহান আল্লাহ নবী হারূন আলাইহিস সালামের প্রসঙ্গ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যখন হারূন আলাইহিস সালাম তার ভাই মূসা আলাইহিস সালামকে বলেন,
﴿قَالَ يَبۡنَؤُمَّ لَا تَأۡخُذۡ بِلِحۡيَتِي وَلَا بِرَأۡسِيٓۖ إِنِّي خَشِيتُ أَن تَقُولَ فَرَّقۡتَ بَيۡنَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ وَلَمۡ تَرۡقُبۡ قَوۡلِي ﴾ [طه
হারূন বললেন: হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল ধরবেন না। আমি আশংকা করেছিলাম যে, আপনি বলবেন: তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো ও আমার কথা শোনায় যত্নবান হও নি। সূরা তহা- ৯৪
জ্ঞানবান ব্যক্তির কাছে প্রশ্ন। ইনসাফের সাথের বলুন দাড়ি যদি লম্বা না হতেন, হজরত মুসা আ. হারুন আ. কে টান দিলেন কি করে? সুতরাং এ আয়াত প্রমানিত হলো নবি-রসূলদের দাড়ি লম্বা ছিল। যুগ যুগ ধরে এ আমলই চলে আসছে।
প্রশ্ন: খ। দাড়ি কি পরিমাণ লম্বা রাখা উচিত বা ওয়াজিব?
উত্তর: খ। এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব।
হজরত ইবনে ওমর রা. যখন হজ করতেন, তখন নিজ দাড়িকে হাতের মুঠার মধ্যে ধরে একমুষ্ঠি চেয়ে বাড়তি অংশ কেটে ফেলতেন। বুখারি ২য় খণ্ড, ৮৭৫ পৃষ্ঠা। এরূপ আমল হজরত ওমর রা. এবং আবু হুরাইরা রা. হতেও বর্ণিত আছে। ফাতহুল বারি -১০/২৮৮
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস নং ২৫৯৯২, ২৫৯৯৯।
আল্লামা শামিরহ. লিখেছেন-
قال في الدر المختار: ... وَأَمَّا الْأَخْذُ مِنْهَا وَهِيَ دُونَ ذَلِكَ كَمَا يَفْعَلُهُ بَعْضُ الْمَغَارِبَةِ وَمُخَنَّثَةُ الرِّجَالِ فَلَمْ يُبِحْهُ أَحَدٌ، وَأَخْذُ كُلِّهَا فِعْلُ يَهُودِ الْهِنْدِ وَمَجُوسِ الْأَعَاجِمِ. اهـ. انظر الدر المختار مع حاشية ابن عابدين رد المحتار 3/398 طبعة دار الكتب العلمية بتحقيق عادل عبد الموجود وزميله.
অর্থাৎ যেভাবে কিছু মাগরেবের (স্পেন,মরক্কো) বাসিন্দা ও হিজড়া লোকেরা এক মুষ্ঠির চেয়ে খাট করে দাড়ি কেটে ফেলে, কোন ইমামের (আলেম) মতেই তা জায়েজ নাই। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামি ২য় খণ্ড; ১২২ পৃষ্ঠা।
অনেকে দাড়ি বেশি লম্বা করে, এটা ঠিক নয়। কারণ ইহুদিরা এখন লম্বা দাড়ি রাখে। আর হজরত ইবনে ওমর রা. এর চেয়ে আমরা বেশি সুন্নাতে অনুসারী নয়। তিনিই যখন এক মুষ্ঠির বাড়তি অংশ কেটে ফেলেছেন তথন আমাদের কি করণীয় ?
বিস্তারিত দেখুন- নায়লুল হাজাহ শরহে সুনানে ইবনেব মাজাহ-৩১৪ পৃষ্ঠা, মাআরেফে আবরার-১৪০ পৃষ্ঠা, দাড়ি কা ওজুব দাড়ি রাখার আবশ্যকীয়তা
উপসংহার:
মুমিন!
তুমি কি চাও না যে
তোমার মুখচ্ছবিটি হোক ঠিক ঐ রকম
যে রকম ছিল তোমার প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ
(ﷺ) এর মুখচ্ছবি ।
সূত্রঃ “মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস”-১৬২-১৬৫ পৃ.
লেখক : মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব, ইফতা)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক